গীতিকার কেজি মোস্তাফা | শনিবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২১ | প্রিন্ট | 493 বার পঠিত
যদি বলা হয়, খোন্দকার গোলাম মুস্তাফা। তাহলে কেউই তাকে চিনবেন না। কিন্তু গীতিকার কে জি মোস্তফার নাম উচ্চারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে একজন বিখ্যাত মানুষের মুখোচ্ছবি আমাদের চোখের সামনে ভেসে উঠবে।
বাংলাদেশে বিখ্যাত তিনজন কে জি মোস্তফা ছিলেন। এদের একজন সাংবাদিক কে জি মুস্তাফা; যিনি বর্তমানে লোকান্তরিত। অন্যজন বিশিষ্ট ডিজাইনার কে জি মোস্তফা; যিনি বাংলাদেশের মুদ্রিত প্রথম টাকার ডিজাইন করে ইতিহাসের অংশ হয়ে আছেন। আর অপর অবশিষ্ট জন হচ্ছেন- বহু গুণে গুণান্বিত কে জি মোস্তাফা। যিনি একাধারে গীতিকার, কবি, সাংবাদিক, সম্পাদক এবং কলামিস্ট। কিন্তু সব পরিচয় ছাপিয়ে তিনি গীতিকার হিসেবেই বেশি পরিচিতি লাভ করেছেন। বিশেষ করে উপ-মহাদেশের প্রখ্যাত সঙ্গীত শিল্পী তালাত মাহমুদের গাওয়া রাজধানীর বুকে ছবির ‘তোমারে লেগেছে এত যে ভালো, চাঁদ বুঝি তা জানে।’ এই বিখ্যাত গানের জন্যই কে জি মোস্তফা সমধিক পরিচিত। তিনি বিভিন্ন ধরনের ১ হাজারেরও বেশি গান লিখেছেন। তার লেখা অধিকাংশ গানই জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
সম্প্রতি দৈনিক ব্যাংক বীমা অর্থনীতি পত্রিকার পক্ষ থেকে কবি ও গীতিকার কে জি মোস্তফার একটি সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়। সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন, দৈনিক ব্যাংক বীমা অর্থনীতি পত্রিকার ব্যবস্থাপনা সম্পাদক এম এ খালেক।
সাক্ষাৎকারটির গুরুত্বপূর্ণ অংশ এখানে তুলে ধরা হলো:
দৈনিক ব্যাংক বীমা অর্থনীতি: আপনার বাল্যকাল এবং লেখাপড়া সম্পর্কে কিছু বলবেন কি?
কে জি মোস্তাফা: আমার জন্ম ১৯৩৭ সালের ১ জুলাই। যদিও এটা আমার প্রকৃত জন্ম দিন নয়। কারণ তখন সাধারণত অভিভাবকগণ সন্তানের জন্ম তারিখ লিখে রখেতেন না। আমার জন্ম নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ থানার ছনুয়া গ্রামে নানার বাড়িতে। আমাদের পরিবার এলাকায় অত্যন্ত সম্ভ্রান্ত পরিবার হিসেবে খ্যাত ছিল। আমাদের পারিবারিক উপাধি হচ্ছে খোন্দকার। আমার বাবার নাম খন্দকার আলী আহমদ। তিনি আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিক কোনো কাজে নিয়োজিত ছিলেন না। আমাদের পরিবার স্থানীয়ভাবে পীর বংশ হিসেবে পরিচিত ছিল। বাবা ধর্মকর্ম নিয়েই ব্যস্ত ছিলেন। মা হাবিবা খাতুন ছিলেন গৃহবধু। আমি পারিবারিক পছন্দে বিয়ে করি। আমার স্ত্রীর নাম বেগম শামসুন নাহার,গৃহবধু। বাল্যকালে আমি গ্রামীণ পরিবেশে মানুষ হয়েছি। গ্রামীণ পরিবেশ আমার খুবই ভালো লাগে। এই গ্রামীণ পরিবেশই হয়তো আমাকে কবি হতে সহায়তা করেছে। ছোট বেলায় স্বাভাবিকভাবে সবাই চঞ্চল থাকে। আমিও তার ব্যতিক্রম ছিলাম না। আমি ছিলাম দুরন্ত এক কিশোর। এখনো মনে পড়ে জঙ্গলে জঙ্গলে বুনোফল খোঁজার স্মৃতি। নাম না জানা পাখির কিচির-মিচির ডাক। পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীর কলতান,আদিগন্ত ফসলের মাঠ আমাকে এখনো স্মৃতিকাতর করে। আমার ৪ ভাই এক বোনের মধ্যে আমি সবার বড়। মামা বাড়িতে মক্তব পাঠ শেষে আমি বজরা এম ই স্কুলে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হই। এই স্কুল থেকে আমি মহসীন বৃত্তি পরীক্ষায় বৃত্তি লাভ করি। এরপর ১৯৫০ সালে অজপাড়াগাঁ থেকে এসে নোয়াখালি জেলা স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি হই। ১৯৫৬ সালে নোয়াখালি জেলা স্কুল থেকে প্রথম বিভাগে লেটারসহ ম্যাট্রিক পাশ করি। অভিভাবকগণ এ সময় আমার জন্য চাকরির ব্যবস্থা করলেন। কিন্তু স্কুল শিক্ষকরা এতে বাধ সাধলেন। তারা আমার মতো মেধাবি ছাত্রকে এ সময় চাকরিতে পাঠানোর পক্ষপাতি ছিলেন না। তাদের অনুরোধে অবশেষে আমাকে স্থানীয় চৌমুহনী কলেজে আইএ ক্লাশে ভর্তি করাতে রাজি হলেন। ইন্টারমিডিয়েট পাশ করার পর ১৯৫৬ সালে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা অনার্সে ভর্তি হই। ১৯৬০ সালে আমি বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে এম এ ডিগ্রি অর্জন করি। বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে ১৯৫৮ সালে আমি দৈনিক ইত্তেহাদ পত্রিকায় শিক্ষানবিশ সাংবাদিক হিসেবে কাজ শুরু করি। এরপর দীর্ঘ দিন বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক,পাক্ষিক পত্রিকায় সাংবাদিকতা করেছি। এক সময় সরকারি চাকরি এবং ব্যবসায়ের সঙ্গেও জড়িত ছিলাম। ১৯৭০ সালে পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে মনোনীত হলেও মুক্তিযুদ্ধের কারণে সেই চাকরিতে যোগদান করা থেকে বিরত থাকি। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময় থেকেই গান লেখা শুরু করি। আমি কবিতা লিখতাম। কিছু কিছু গানও লিখতাম। একদিন বিশিষ্ট কবি আবু হেনা মোস্তফা কামাল আমাকে বললেন,তোমার কবিতার গীতিময়তা খুব বেশি। তুমি গান লিখলে ভালো করবে। তার পরামর্শে আমি গান লেখায় আগ্রহী হয়ে উঠি। গান লিখতে শুরু করি। আমার কাঁচা হাতের লেখা গান সমপাঠি শিল্পীবন্ধুরা সুর করে গাইতেন। তখন জাতীয় প্রচার মাধ্যম বলতে ছিল কেবল রেডিও। আমি তখনো রেডিও’তে তালিকাভুক্ত গীতিকার হতে পারিনি। এমন সময় অনেকটা অপ্রত্যাশিতভাবেই রাজধানীর বুকে ছবিতে গান লেখার সুযোগ পেলাম। রাজধানীর বুকে ছবিতে আমার লেখা গান গেয়েছিলেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত শিল্পী তালাত মাহমুদ। এর পর আর আমাকে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয় নি।
দৈনিক ব্যাংক বীমা অর্থনীতি: এই করোনাকালে আপনার দিন কিভাবে কাটছে? গান লেখা কি আগের মতোই চলছে নাকি বন্ধ আছে?
কে জি মোস্তাফা: আমি আগের মতোই নিয়মিত গান লিখছি। যখনই মনের মাঝে কোনো গানের লাইন আসে আমি লিখে ফেলি। কিন্তু ভালো সুরকারের অভাবে গান সেভাবে প্রচার করা যাচ্ছে না। আগেকার দিনে রবীন ঘোষ, সত্য সাহার মতো সুরকার ছিলেন। এখন সেই মানের সুরকার নেই বললেই চলে। আমার লেখা প্রচুর গান এখন সুর ছাড়া পড়ে আছে। সর্বশেষ শেলু বড়ুয়া কিছু গানের সুর করেছেন। আরো একটি ছেলে মামুন জাহিদ আমার গানের সুর করেছিলেন। মামুন জাহিদ আমার লেখা গান নিয়ে সম্পূর্ণ তার কণ্ঠে একটি ক্যাসেট বের করেছেন।
দৈনিক ব্যাংক বীমা অর্থনীতি: এখন যেভাবে গানের চর্চা হচ্ছে তাকে আপনি কিভাবে ব্যাখ্যা করবেন?
দৈনিক ব্যাংক বীমা অর্থনীতি: এখন যে সব গানের চর্চা হচ্ছে তার দীর্ঘ মেয়াদি আবেদন খুবই কম। তাৎক্ষণিকভাবে কিছুটা উদ্দীপনার সৃষ্টি করে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে গানের চেয়ে যন্ত্রের প্রাধান্য লক্ষ্য করা যায়। যন্ত্রই এখন গানের ক্ষেত্রে মুখ্য হয়ে উঠেছে। আমার নিকট যন্ত্রের যন্ত্রনা বিরক্তিকর মনে হয়। যন্ত্রের কারণে গানের কথা বুঝা যায় না। গানের মেলোডি আর আগের মতো পাওয়া যায় না। এখনকার গান সাময়িক উত্তেজনা সৃষ্টি করে। গান শেষ হয়ে যাবার পর তার রেশ খুঁজে পাওয়া যায় না।
দৈনিক ব্যাংক বীমা অর্থনীতি: আমরা শুনেছি, রাজধানীর বুকে ছবিতে আপনার গান লেখার কথা ছিল না। কিন্তু আপনি অপ্রত্যাশিতভাবে এই ছবিতে গান লিখেন। সেই ঘটনাটি বলবেন কি?
কে জি মোস্তাফা: পূর্বেই বলেছি,বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়ে আমি গান লেখা শুরু করি। সে সময় কিছুটা সুনাম অর্জিত হয়। কিন্তু বেতারে তখনো তালিকাভুক্ত গীতিকার হতে পারিনি। তখন রাজধানীর বুকে নামে একটি বাংলা ছবি তৈরির কাজ চলছিল। ছবির পরিচালক ছিলেন এহতেশাম এবং সঙ্গীত পরিচালক রবীন ঘোষ। এই সময় ভারতের বিখ্যাত শিল্পী তালাত মাহমুদ ঢাকায় বেড়াতে আসেন। এহতেশাম তার ছবির জন্য তালাত মাহমুদকে দিয়ে গান করাতে চাইলেন। দেশের খ্যাতিমান একজন গীতিকারের এই ছবির জন্য গান লেখার কথা ছিল। কিন্তু যে কোনো কারণেই হোক তিনি গান লিখতে পারেন নি। তখন ছবির সুরকার এবং পরিচালক হন্যে হয়ে একজন গীতিকারের অনুসন্ধান করতে থাকলেন। ভালো কোনো গীতিকার পাওয়া যাচ্ছিল না। নায়ক-অভিনেতা আজিম (তখনো সিনেমায় অভিনয় শুরু করেন নি) জানতেন আমি গান লিখি। তিনি রবীন ঘোষের নিকট মাঝে মাঝে আমার গানের প্রশংসা করতেন। এই অবস্থায় আজিম আমাকে ঐ ছবির জন্য গান লেখার প্রস্তাব দিলেন এবং আমাকে সঙ্গে করে সঙ্গীত পরিচালক রবীন ঘোষের উয়ারীর বাসায় গেলেন। রবীন ঘোষ আমাকে ছবির সিকুয়েন্স বুঝালেন। হারমোনিয়ামে একটি গানের সুর বাজালেন এবং সেই সুরের উপর লিখতে বললেন। আমি তো কিংকর্তব্যবিমূঢ়। আগে কখনো এমন করে আমি ছবির গান লিখিনি। আমি গান লিখতাম মনের আনন্দে, কারো ফরমাইশে নয়। কোনোভাবেই গান লিখতে পারছিলাম না। আমি আমার অক্ষমতা প্রকাশ করি। কিন্তু রবীন ঘোষ নাছোড়বান্দা আমাকে বারবার উৎসাহ দিতে থাকলেন। তিনি আমাকে যতই তাগিদ দেন আমি ততই নার্ভাস হয়ে পড়ি। এভাবে ২/৩ ঘন্টা কেটে গেলো। এক সময় আমি ভাবলাম, যা পারি একটা কিছু লিখে দেই, যাতে তিনি বাতিল করে আমাকে ছেড়ে দেন। আমি রবীন ঘোষকে বললাম, আপনি সুরটা আর একবার বাজান। তিনি কয়েক বার গুনগুন করে সুরটা শুনালেন এবং হরমোনিয়ামে বাজালেন। অনেক ভেবে চিন্তে ছবির কাহিনীর সঙ্গে মিল রেখে লিখলাম, ‘তোমারে লেগেছে এত যে ভালো চাঁদ বুঝি তা জানে’ উৎসাহিত হয়ে রবীন ঘোষ আমাকে পরের লাইন লিখতে বললেন। আমি লিখলাম ‘রাতেরও বাসরে দোসর হয়ে তাই সে আমারে টানে।’ ইতোমধ্যেই পরিচালক এহতেশাম এসে হাজির। তাকে শুনানো হলো। তিনি গুরুগম্ভীর হয়ে কি যেনো ভাবলেন। তারপর বললেন, চমৎকার হয়েছে। বাকীটা লিখে ফেলো। আমি ভাবতে পারিনি এতটা সহজে অনুমোদন পেয়ে যাবো। সহসা আমার মনে প্রচন্ড আত্ম বিশ^াসের সৃষ্টি হলো। আমি পুরো গান লিখতে সক্ষম হলাম। তারপর তালাত মাহমুদের কন্ঠে গানটি রেকর্ড করা হলো। এভাবেই সৃষ্টি হলো একটি কালজয়ী গান, যা এখনো সমানভাবে জনপ্রিয়। আমি মোট ১৭টি ছবিতে গান লিখেছি। অনেক গানই বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। কিন্তু কোনো গানই রাজধানীর বুকে ছবির সেই গানটার জনপ্রিয়তাকে অতিক্রম করতে পারেনি। আমার জানা মতে, অন্তত ১০জন কণ্ঠ শিল্পী এই গানটি রিমেক করেছেন। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ,সাহিত্যিক ও গবেষক হুমায়ুন আজাদ একটি পত্রিকায় সাক্ষাৎ দানকালে বলেছিলেন,আমাদের দেশে এ পর্যন্ত মাত্র ৪টি আধুনিক গান তৈরি হয়েছে, যার মধ্যে তোমারে লেগেছে এত যে ভালো ১ নম্বর। আসলে এখন আমার অন্যসব পরিচিতিকে ছাড়িয়ে এই গানটি আমার একমাত্র আইডেনটিটি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
দৈনিক ব্যাংক বীমা অর্থনীতি: অনেকেই গীতিকারদের কবি হিসেবে স্বীকৃতি দিতে চান না। আপনার দৃষ্টিতে কবিসত্তা এবং গীতিকার সত্তার মধ্যে কোনো সাংঘর্ষিক ব্যাপার আছে কি?
কে জি মোস্তাফা: গীতিকার এবং কবিসত্তার মধ্যে কোনো সাংঘর্ষিক ব্যাপার থাকার কথা নয়। বিশ^কবি রবীন্দ্র নাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, পল্লী কবি জসীম উদ্দিন, শামসুর রাহমান, আবু হেনা মোস্তাফা কামাল, মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মূলত কবি। কিন্তু তারা গীতিকার হিসেবেও চিরস্মরণীয়। আমি মনে করি, গীতিকার এবং কবিসত্তা পরস্পর পরস্পরের পরিপূরক।
দৈনিক ব্যাংক বীমা অর্থনীতি: আপনি তো জীবনে অনেক পুরস্কার এবং সম্মাননা পেয়েছেন। প্রথম পুরস্কার প্রাপ্তির অনুভূতি কেমন ছিল?
কে জি মোস্তাফা: আমি যখন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করছিলাম তখন প্রতি বছরই ডাকসু’র উদ্যোগে সাহিত্য ও সংস্কৃতি প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হতো। প্রথম,দ্বিতীয় এবং তৃতীয় স্থান অর্জনকারিদের উপাচার্য স্বাক্ষরিত সনদপত্র দেয়া হতো। ১৯৫৯ সালে অন্য কবিদের সঙ্গে আমিও সাহিত্য প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করি। ফলাফল ঘোষণায় দেখা গেলো সবাইকে টেক্কা দিয়ে আমি প্রথম স্থান অধিকার করেছি। এটা আমার জন্য ছিল অপ্রত্যাশিত এবং অভাবনীয়। নির্বাচন কমিটির প্রধান ছিলেন ড. সাজ্জাদ হোসেন। আনন্দে এবং সংকোচে আমি এতটাই অভিভুত হয়ে পড়ি যে পর দিন আমি আহমেদ শরীফ স্যারের ক্লাশে যাইনি। শুনেছি সে দিন নাকি আহমেদ শরীফ স্যার কবিয়ালকে নয়, একজন সত্যিকার কবিকে অভিনন্দন জানানোর জন্য খুঁজছিলেন। উল্লেখ্য, আহমেদ শরীফ স্যার আমার কবিতা লেখার কথা জানতেন। তিনি আমাকে কবিয়াল বলে সম্বোধন করতেন। পরবর্তী জীবনে আমি অনেক পুরস্কার-স্বীকৃতি পেয়েছি। কিন্তু সে দিনের সেই পুরস্কার এবং স্বীকৃতি আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ স্বীকৃতি বলে মনে করি।
দৈনিক ব্যাংক বীমা অর্থনীতি: কবিতা লেখা নিয়ে কোনো মজার ঘটনা বলবেন কি?
কে জি মোস্তাফা: বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে বন্ধু-বান্ধবের ঈর্ষা এবং পরিহাস উপেক্ষা করে আমার কাব্যচর্চা চলতে থাকে। বিভিন্ন দৈনিক,সাপ্তাহিক এবং অন্যান্য পত্রিকায় নিয়মিত কবিতা পাঠাতাম। সব কবিতাই যে প্রকাশিত হতো তা নয়। সেই সময় একটি জাতীয় দৈনিকের সাহিত্য সম্পাদক ছিলেন একজন বিখ্যাত কবি। তিনি আমার কবিতা ছাপতেন না। একদিন মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি চাপলো। আমি একটি কবিতা লিখে তার নিচে লিখে দিলাম মূল কবি কুং ফুং এবং অনুবাদে কে জি মোস্তফা। পরের সপ্তাহে আমি বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করলাম কবিতাটি অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে প্রকাশিত হয়েছে।
দৈনিক ব্যাংক বীমা অর্থনীতি: আপনার জীবনের কোনো অলৌকিক ঘটনার কথা বলবেন কি?
কে জি মোস্তাফা: আমার জীবনে বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে আমি যার কোনো ব্যাখ্যা খুঁজে পাইনি। ১৯৪৭/৪৮ সালের কথা। আমরা ৫জন ছাত্র মহসীন বৃত্তি পরীক্ষা দেবার জন্য শহরে যাচ্ছিলাম। স্টেশনে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। ট্রেন স্টেশনে এসে উপস্থিত। এমন সময় অপরিচ্ছন্ন বেশ-ভূষায় এক ব্যক্তি কোলাহলের মধ্য আমার নাম ধরে ডাকাডাকি করতে লাগলো। তিনি কাছে এসে বললেন, যা তুই বৃত্তি পাবি। ইতোমধ্যেই ট্রেন এসে হাজির। আমরা ট্রেনে উঠে পড়ি। বন্ধুরা আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করতে থাকলো। উল্লেখ্য, প্রতি বছর আমাদের স্কুল থেকে দু’জন ছাত্রকে বৃত্তির জন্য পাঠানো হতো। সাধারণত একজনই বৃত্তি পেতো। সে বার মোট ৫জনকে বৃত্তির জন্য পাঠানো হয়। আমার সিরিয়াল ছিল ৫ নম্বরে। কাজেই আমার বৃত্তি পাবার সম্ভাবনা ছিল না। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় ফার্স্ট বয় এবং আমি বৃত্তি পেলাম। বিষয়টি আমার নিকট এখনো অলৌকিক ঘটনা বলেই মনে হয়। এর কোনো ব্যাখ্যা আমি এখনো খুঁজে পাইনি।
/এস
Posted ৫:৩০ অপরাহ্ণ | শনিবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২১
bankbimaarthonity.com | rina sristy