শুক্রবার ২৯ মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতে সঞ্চয় ও উদ্বৃত্ত তহবিলে ঘাটতি

বাজার মনিটরিং দুর্বলতায় ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে বিনিয়োগ

এস জেড ইসলাম   |   মঙ্গলবার, ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২১   |   প্রিন্ট   |   297 বার পঠিত

বাজার মনিটরিং দুর্বলতায় ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে বিনিয়োগ

দীর্ঘদিন যাবৎ মুনাফার উন্নতি নেই। বিনিয়োগকারীদের নামেমাত্র লভ্যাংশ দিচ্ছে। কমছে শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য। এরপরও ডি-লিস্টিং বা ওটিসিতে স্থানান্তরিত হচ্ছে না প্রতিষ্ঠান। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সুরক্ষায় সঞ্চয় ও উদ্বৃত্ত তহবিলে যে অর্থ বরাদ্দ থাকার কথা তাও নেই। বরং অনেকেরই এই তহবিলে লোকসান বেড়েছে আশঙ্কাজনকভাবে। পুঁজিবাজারের খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের কোম্পানিগুলো নিয়ে বিনিয়োগকারীদের এমন অভিযোগ বহু পুরোনো। এজন্য সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ এবং স্টক এক্সচেঞ্জের বাজার মনিটরিংয়ে দূর্বলতার অভিযোগ করেন বিনিয়োগকারীরা। যথাযথ মনিটরিং না থাকায় কোম্পানিগুলো বিনিয়োগকারীদের সাথে প্রতারণা করছে বলে অভিমত বিশ্লেষক ও বিনিয়োগকারীদের।

বিনিয়োগকারী সূত্রে জানা যায়, খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতে ১৯টি কোম্পানি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের তালিকাভুক্ত। এরমধ্যে হাতেগোনা কয়েকটি কোম্পানির অবস্থা ভালো থাকলেও বেশিরভাগই মুনাফার প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়। তবে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে জেমিনি সি ফুড, মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক, মেঘনা পেট ইন্ডাস্ট্রিজ, রহিমা ফুড করপোরেশন এবং শ্যামপুর সুগার মিল্স লিমিটেড।

এরমধ্যে জেমিনি সি ফুডের রিজার্ভ ও সারপ্লাসে লোকসান রয়েছে ৪ কোটি ৬০ লাখ টাকা। অনুমোদিত মূলধন ৪০ কোটি টাকা মধ্যে পরিশোধিত মূলধন রয়েছে মাত্র ৪ কোটি ৬৯ লাখ ৬০ হাজার টাকা। যার মধ্যে উদ্যোক্তাদের রয়েছে ৩৩.৬৫ শতাংশ। আশির দশকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুিক্তর পরও পরিশোধিত মূলধন কম থাকায় এর আর্থিক অবস্থা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছে বিনিয়োগকারীরা। তাছাড়া ডিএসইর সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী প্রতিষ্ঠানটির স্বল্পমেয়াদী ঋণের পরিমাণ ৪৩ কোটি ৯৯ লাখ ৪০ হাজার টাকা এবং দীর্ঘমেয়াদী ঋণ রয়েছে ২০ লাখ ৩০ হাজার টাকা। আর্থিক এমন তথৈবচ অবস্থার পরও ‘এ’ ক্যাটাগরির কোম্পানি স্বীকৃতি পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বিনিয়োগকারীরা।

মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক ইন্ডাস্ট্রিজের রিজার্ভ ও সারপ্লাসে লোকসান আছে ১১১ কোটি ২৭ লাখ টাকা। অনুমোদিত মূলধন ৮০ কোটি টাকা মধ্যে পরিশোধিত মূলধন রয়েছে মাত্র ১৬ কোটি টাকা। যার মধ্যে উদ্যোক্তাদের রয়েছে ৫০ শতাংশ। পুঁজিবাজারে তালিকাভুিক্তর ২০ বছর পরও পরিশোধিত মূলধন কম থাকায় এর আর্থিক অবস্থা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা। ডিএসইর সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী প্রতিষ্ঠানটির দীর্ঘমেয়াদী ঋণ রয়েছে ৬৪ কোটি ২৭ লাখ ৮০ হাজার টাকা। তাছাড়া পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রতিষ্ঠানটি বিনিয়োগকারীদের কোন লভ্যাংশ না দেয়ায় ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে অবস্থান করছে।

এদিকে মেঘনা পেট ইন্ডাস্ট্রিজে রিজার্ভ ও সারপ্লাসে লোকসান আছে ১৭ কোটি ৬ লাখ টাকা। অনুমোদিত মূলধন ৩০ কোটি টাকা মধ্যে পরিশোধিত মূলধন রয়েছে ১২ কোটি টাকা। যার মধ্যে উদ্যোক্তাদের রয়েছে ৫০ শতাংশ। প্রতিষ্ঠানটি ২০০১ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। ডিএসইর সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী প্রতিষ্ঠানটির দীর্ঘমেয়াদী ঋণ রয়েছে ১৪ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। তাছাড়া পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ না দেয়ায় এটিও ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে অবস্থান করছে।

রিজার্ভ ও সারপ্লাসে লোকসান থাকা আরেক কোম্পানি রহিমা ফুড করপোরেশন লিমিটেড। ডিএসইর তথ্যানুযায়ী প্রতিষ্ঠানটির লোকসানের পরিমাণ ৮৫ লাখ টাকা। পুঁজিবাজারে ১৯৯১ সালে এটি তালিকাভুক্ত হয়। অনুমোদিত মূলধন ৫০ কোটি টাকার বিপরীতে পরিশোধিত মূলধন রয়েছে ২০ কোটি টাকা। এর মধ্যে উদ্যোক্তাদের ৩৭.৩৮ শতাংশ অংশীদারিত্ব রয়েছে। ডিএসইর তথ্যানুযায়ী প্রতিষ্ঠানটির কোন ঋণ নেই। তবে বিগত পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে লভ্যাংশ না দিলেও প্রতিষ্ঠানটি ‘এ’ ক্যাটাগরিতে অবস্থান করছে।

রিজার্ভ ও সারপ্লাসে লোকসান থাকা সর্বশেষ প্রতিষ্ঠান শ্যামপুর সুগার মিল্স লিমিটেড। ডিএসইর তথ্যানুযায়ী প্রতিষ্ঠানটির লোকসানের পরিমাণ ৪৯৯ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। ১৯৯৬ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। অনুমোদিত মূলধন ৫০ কোটি টাকার বিপরীতে পরিশোধিত মূলধন রয়েছে ৫ কোটি টাকা। পরিশোধিত মূলধনে বাংলাদেশ সরকারের ৫১ শতাংশ অংশীদারিত্ব রয়েছে। ডিএসইর তথ্যানুযায়ী প্রতিষ্ঠানটির দীর্ঘমেয়াদী ঋণ ১৯০ কোটি ৯ লাখ ৯০ হাজার টাকা। বিগত পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে লভ্যাংশ না দেয়ায় প্রতিষ্ঠানটি ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে অবস্থান করছে।

এ নিয়ে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও ডিএসইর বর্তমান পরিচালক এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট রকিবুর রহমান বলেন, এ কোম্পানিগুলোর ডিভিডেন্ড নেই, মুনাফা নেই। পরিচালকরা দুই শতাংশ শেয়ারধারণ করছে না। অডিট রিপোর্টেও সমস্যা। এদেরকে ডি-লিস্টিং করে ওটিসিতে পাঠাতে হবে। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় বিএসইসিকে জোর পদক্ষেপ হবে। কেন এসইসি তা করছেন না এটা আপনারা জিজ্ঞেস করুন। বিনিয়োগকারী কোন শেয়ার কিনবে বা কোনটা কিনবে না সেটা তার ব্যাপার। কিন্তু তাদের স্বার্থ রক্ষা করা এসইসি’র দায়িত্ব। যদি এসইসি দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয় তবে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে।

Facebook Comments Box
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ১১:২৮ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২১

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০৩১  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।