বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১২ বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিশ্বব্যাপী পোশাকের আমদানি কমেছে ২৩ শতাংশ

বিবিএ নিউজ.নেট   |   বৃহস্পতিবার, ২২ এপ্রিল ২০২১   |   প্রিন্ট   |   246 বার পঠিত

বিশ্বব্যাপী পোশাকের আমদানি কমেছে ২৩ শতাংশ

কোভিড-১৯ মহামারির কারণে ২০২০ সালের জানুয়ারি-আগস্ট সময়ে বিশ্বব্যাপী পোশাকের আমদানি ২৩ শতাংশ কমে গেছে। সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) এবং ইনস্টিটিউট ফর পলিসি স্টাডিজ অফ শ্রীলঙ্কার (আইপিএস) গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে।
‘বাংলাদেশ এবং শ্রীলঙ্কার পোশাক খাতের পুনরুদ্ধার : ভ্যালু-চেইন-ভিত্তিক সমাধান কি সম্ভব?’ শীর্ষক এক আন্তর্জাতিক সংলাপে এ তথ্য জানানো হয়েছে। সিপিডি, আইপিএস এবং ৫২টি চিন্তক প্রতিষ্ঠানের আন্তির্জাতিক পর্যায়ের নেটওয়ার্ক সাউদার্ন ভয়েজের সহযোগিতায় এই সংলাপটি আয়োজন করা হয়। গত ২১ এপ্রিল সিপিডি থেকে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

সংলাপে বক্তরা বলেন, ‘পোশাক খাতের ভ্যালু চেইনের ক্ষেত্রে বৈশ্বিক পর্যায়ে যে মধ্যমেয়াদি পুনরুদ্ধারের চেষ্টা চলছিল তা দীর্ঘমেয়াদে চলা কোভিড-১৯ মহামারিরত সৃষ্ট চাহিদা মন্দার কারণে ব্যাহত হচ্ছে। ২০২০ সালের জানুয়ারি-আগস্ট সময়ে বিশ্বব্যাপী পোশাকের আমদানি ২৩ শতাংশ কমেছে।’

তারা বলেন, ‘শুধুমাত্র জাতীয়-স্তরের হস্তক্ষেপের মাধ্যমে এই মধ্যমেয়াদি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা ক্রমাগত কঠিন হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশ এবং শ্রীলঙ্কাসহ অনেক সরবরাহকারী দেশের পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া অত্যন্ত ধীর গতিতে চলেছে। এ প্রেক্ষিতে ‘ভ্যালু-চেইন ভিত্তিক সমাধান’ এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।’

সংলাপে অংশ নিয়ে সিপিডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, ‘আইএলও সরবরাহকারী দেশগুলোকে আন্তর্জাতিক চাহিদা ব্যবস্থাপনার পুনর্গঠনের জন্য আন্তর্জাতিক ক্রেতা দেশগুলোকে একত্রিত করার ক্ষেত্রে একটি উদ্যোক্তা ভূমিকা গ্রহণের বিষয়টি বিবেচনা করতে পারে। সরকার, নিয়োগকারী এবং শ্রমিকসহ ত্রিপক্ষীয় সংলাপ করা উচিৎ, যাতে কেবল কোভিড সঙ্কটের তাৎক্ষণিক প্রভাব নয়, দীর্ঘমেয়াদি সংকট সমাধানের জন্য বেকার বীমা ব্যবস্থার পারস্পরিক সমন্বিত ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে।’

সিপিডি’র সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান সংলাপে সভাপতিত্ব করেন। তিনি বলেন, ‘পোশাক খাতের ভ্যালু-চেইনের সকল অংশীজনরা অতিমারিতে প্রভাবিত হয়েছিল, তাই এই গবেষণার ফলাফলগুলো গুরুত্বপূর্ণ। এই খাতকে টেকসই করে সমধানের দিকে এগিয়ে যেতে সকল অংশীজনের কিছু নির্দিষ্ট ভূমিকা পালন করতে হবে।’
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন সংলাপে স্বাগত বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, ‘সিপিডি এবং আইপিএস সম্প্রতি স্থানীয় পোশাকের পুনরুদ্ধার বিষয়ে একটি ভ্যালু-চেইন ভিত্তিক সমাধানের সম্ভাবনা বিশ্লেষণ করার জন্য যৌথভাবে সাউদার্ন ভয়েজের সহযোগিতায় একটি গবেষণা পরিচালনা করেছে।’

মহামারির কারণে বিশ্বব্যাপী পোশাক খাতে ভ্যালু-চেইনের যে ক্ষতি হয়েছে তা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই গবেষণা সরবরাহকারী দেশসমূহ বিশেষত বাংলাদেশ এবং শ্রীলঙ্কায় যে চ্যালেঞ্জগুলো তৈরি হয়েছে তা মোকাবিলায় সহায়তা করবে।’

মূল বক্তব্য উপস্থাপনায় সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম এবং আইপিএসের অর্থনীতিবিদ কিথমিনা হিউজ জানান, গবেষণায় দেখা গেছে যে বড় দেশগুলো এই মহামারির সময়ে সীমাবদ্ধ সংখ্যক সোর্সিং দেশগুলোতে বেশি গেছে। চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় ক্রেতাদের কাছে থেকে তেমন কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি।

মাহামারিকালে (জানুয়ারি থেকে জুন ২০২০) ক্রেতারা রফতানি আদেশ দেয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কাসহ বেশ কয়েকটি বড় সরবরাহকারী দেশকে বঞ্চিত করেছে।

তারা জানান, বিশ্লেষণে দেখা যায়, সরবরাহকারী দেশগুলোতে অতিরিক্ত দুই বিলিয়ন ডলার মূল্যের অর্ডার পুনরায় বিতরণ করা যেতে পারে যদি কোভিড পূর্ব সময়ের রফতানির আদেশের অংশ বজায় রাখা সম্ভব হয়।

সমীক্ষায় প্রস্তাব করা হয়েছে, যেকোনো বড় বৈশ্বিক সঙ্কটের ক্ষেত্রে কমপক্ষে সংকট পূর্ব পর্যায়ের রফতানি আদেশ নিশ্চিত করার জন্য একটি পুনঃবিতরণ পদ্ধতি অব্যাহত রাখতে হবে, বিশেষত যেসব দেশ আর্থিকভাবে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে।

সংলাপের বিশেষ বক্তা শ্রীলঙ্কার স্ট্রেটেজিক ট্রান্সফরমেশন এমএএস হোল্ডিংস’র পরিচালক হুসনি সালিহ মন্তব্য বলেন, ‘ভ্যালু-চেইনের মান বেড়ে যায় যদি সকল অংশীজন একসঙ্গে কাজ করে, বিশেষ করে এ রকম সংকটময় পরিস্থিতিতে। তুলনামূলকভাবে বৈচিত্র্যময় তবে বিদ্যমান ভ্যালু-চেইনের মধ্যে সহনশীলতা তৈরির মাধ্যমে বর্তমান এবং ভবিষ্যতের সংকট সফলভাবে মোকাবিলা করা সম্ভব।’

সংলাপের আরেক বিশেষ বক্তা বাংলাদেশ অ্যাপারেল এক্সজেঞ্জ’র প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও মোস্তাফিজ উদ্দিন বলেন, ‘চলমান সংকটে ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে দায়বদ্ধ ব্যবসাযয়িক আচরণের অভাব রয়েছে। ব্র্যান্ডগুলো তাদের সরবরাহকারীদের ব্যবসায়িক অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করা উচিত এবং দায়িত্বপূর্ণভাবে কাজ করা উচিত।’

শ্রীলঙ্কার ডিজাইন কালেক্টিভ স্টোরের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিনু বিক্রমাসিংহে বলেন, ‘তার মতো ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা এই অতিমারির জন্য চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন, বিশেষ করে ঋণ পাওয়া ও নতুন পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে। অনলাইন বাণিজ্য এই অতিমারিতে একটা বড় ভূমিকা রেখেছে।’

গ্লোবাল প্রডাকশন এইচঅ্যান্ডএম গ্রুপের হেড অব সাসটেইনেবিলিটি পিয়েরের মতে, এই অতিমারিরি কারণে ব্যবসা সহজতর করায় আধুনিকায়নের তাৎপর্য উঠে এসেছে।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার বিবেচনা করা উচিত যে কীভাবে বাজারকে পণ্য বৈচিত্র্য, পণ্যগুলোর সঙ্গে সংযুক্ত পরিষেবাদি এবং অতীতের তুলনায় উচ্চতর ব্যবসায়ের সম্ভাবনা অর্জনের ক্ষেত্রে বাজারকে আরও প্রস্তুত করা যায়।’

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) বেটার ওয়ার্ক ড্যান রিস বলেন, ‘শুধু খাত-ভিত্তিক পরিমাপ বিদ্যমান চ্যালেঞ্জগুলোর সমাধান করতে পারবে না। সহনশীলতা তৈরি করতে এবং শ্রমিকদের রক্ষা করতে অংশীজনদের মধ্যে আস্থা ও সহযোগিতা এবং একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রয়োজন।’

 

Facebook Comments Box
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ২:৫৯ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২২ এপ্রিল ২০২১

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

রডের দাম বাড়ছে
(11192 বার পঠিত)

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।