৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত ২০১৮ হিসাব বছরে সম্মিলিতভাবে ব্র্যাক ব্যাংকের কর-পরবর্তী মুনাফায় ৩ দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এককভাবে আগের বছরের তুলনায় মুনাফা বেড়েছে ৫ দশমিক ৭ শতাংশ। সমাপ্ত হিসাব বছরের জন্য বিনিয়োগকারীদের ১৫ শতাংশ স্টক লভ্যাংশ দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে ব্র্যাক ব্যাংক।

বুধবার রাজধানীতে ব্র্যাক ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে ‘আর্নিংস ডিসক্লোজার’ অনুষ্ঠানে এসব কথা জানিয়েছেন ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সেলিম আরএফ হোসাইন। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে ব্যাংকটির করপোরেট ব্যাংকিং বিভাগের প্রধান তারেক রিফাত উল্লাহ খান, রিটেইল ব্যাংকিং বিভাগের প্রধান নাজমুর রহিম, এসএমই ব্যাংকিং বিভাগের প্রধান সৈয়দ আব্দুল মোমেন, ট্রেজারি ও এফআইএস বিভাগের প্রধান শহীদ ইকবাল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সেলিম বলেন, প্রবল প্রতিযোগিতামূলক ব্যবসায়িক পরিবেশ ও জাতীয় নির্বাচনকেন্দ্রিক অনিশ্চয়তা সত্ত্বেও ব্র্যাক ব্যাংক তার আর্থিক সাফল্য ধরে রেখেছে। গত তিন বছরের সফলতায় একটি শক্তিশালী ব্যাংক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। সাম্প্রতিক সাফল্যের ওপর ভিত্তি করে আমরা ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য, দেশের সেরা আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়া। মানবসম্পদ ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নে বিনিয়োগ বাড়িয়ে আমরা আমাদের কার্যকারিতা ও উৎপাদনশীলতা বাড়াতে সক্ষম হয়েছি।

২০১৮ হিসাব বছরের আর্থিক ফলাফল উপস্থাপন করে তিনি বলেন, এককভাবে ব্র্যাক ব্যাংক ২০১৮ সালে আগের বছরের তুলনায় নিট মুনাফায় ৫ দশমিক ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৮ সালে আমাদের কর-পরবর্তী মুনাফা হয়েছে ৫৫৪ কোটি টাকা, আগের বছর যা ছিল ৫২৫ কোটি টাকা। এ সময়ে সম্মিলিতভাবে আমাদের কর-পরবর্তী মুনাফা হয়েছে ৫৬৭ কোটি টাকা, আগের বছর যা ছিল ৫৪৯ কোটি টাকা। সম্মিলিত নিট মুনাফায় ৩ দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

তিনি বলেন, সর্বশেষ হিসাব বছরে ব্র্যাক ব্যাংকের এককভাবে ৮৮২ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা হয়েছে। যদিও আগের বছর পরিচালন মুনাফা ছিল ৯০৫ কোটি টাকা। গত বছর সম্মিলিতভাবে আমাদের পরিচালন মুনাফা হয়েছে ৯৩৯ কোটি টাকা, ২০১৭ সালে যা ছিল ৯৪২ কোটি টাকা।

নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত হিসাব বছরে সম্মিলিতভাবে ব্র্যাক ব্যাংকের শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ৫ টাকা ১৭ পয়সা। ২০১৭ হিসাব বছরে সম্মিলিত ইপিএস ছিল ৪ টাকা ৮৬ পয়সা। ২০১৮ হিসাব বছরে সম্মিলিতভাবে ব্যাংকটির নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ৩২ টাকা ৮৭ পয়সা, আগের হিসাব বছরে যা ছিল ২৪ টাকা ৮০ পয়সা। ২০১৮ এককভাবে ব্র্যাংক ব্যাংকের ইপিএস হয়েছে ৫ টাকা ১৭ পয়সা, আগের হিসাব বছরে যা ছিল ৫ টাকা ৯১ পয়সা।

সমাপ্ত হিসাব বছরের জন্য শেয়ারহোল্ডারদের ১৫ শতাংশ স্টক লভ্যাংশ প্রদানের সুপারিশ করেছে ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদ। লভ্যাংশসহ অন্যান্য বিষয় পর্যালোচনার জন্য আগামী ৩০ এপ্রিল সকাল ১০টায় সাভারে ব্র্যাক সিডিএমে বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) আহ্বান করা হয়েছে। এর জন্য রেকর্ড ডেট নির্ধারণ করা হয়েছে ১১ এপ্রিল।

এর আগে ২০১৭ হিসাব বছরের জন্য শেয়ারহোল্ডারদের ২৫ শতাংশ স্টক লভ্যাংশ দিয়েছিল ব্র্যাক ব্যাংক। তার আগের হিসাব বছরে ২০ শতাংশ স্টক লভ্যাংশের পাশাপাশি ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ পেয়েছিলেন ব্যাংকটির শেয়ারহোল্ডাররা।

বৃহস্পতিবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ব্যাংকটির শেয়ারের দর দশমিক ৩৯ শতাংশ কমে সর্বশেষ ৭৭ টাকা ৪০ পয়সায় হাতবদল হয়। সমাপনী দর ছিল ৭৭ টাকা ৩০ পয়সা। গত এক বছরে শেয়ারটির দর ৬৩ টাকা থেকে ১০৮ টাকা ৮০ পয়সার মধ্যে ওঠানামা করে।

ব্র্যাক ব্যাংকের অনুমোদিত মূলধন ২ হাজার কোটি টাকা। পরিশোধিত মূলধন ১ হাজার ৭২ কোটি ৫০ লাখ টাকা। রিজার্ভে রয়েছে ১ হাজার ২১৬ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। মোট শেয়ার সংখ্যা ১০৭ কোটি ২৫ লাখ ২৮৫। এর মধ্যে ৪৪ দশমিক ৩ শতাংশ রয়েছে উদ্যোক্তা-পরিচালকদের হাতে। এছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ, বিদেশী বিনিয়োগকারীদের কাছে ৪১ দশমিক ৭২ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে বাকি ৬ দশমিক ৩৩ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।

সর্বশেষ নিরীক্ষিত বার্ষিক ইপিএস ও বাজারদরের ভিত্তিতে ব্র্যাক ব্যাংকের শেয়ারের মূল্য আয় অনুপাত বা পিই রেশিও ১৪ দশমিক ৯৫, অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনের ভিত্তিতে যা ১৫ দশমিক ৯৭।