বুধবার ১ মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৮ বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রেস অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট পরিচালিত

মিউচ্যুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগকারীদের ১৩ শ’ কোটি টাকা গেল কই

আদম মালেক   |   রবিবার, ৩০ মে ২০২১   |   প্রিন্ট   |   498 বার পঠিত

মিউচ্যুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগকারীদের ১৩ শ’ কোটি টাকা গেল কই

রেস অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি লিমিটেডের ওপর আস্থা রেখে মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলির ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়ে বিনিয়োগকারীরা। কিন্তু রেস পরিচালিত কোনো ফান্ডই বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণ করতে পারেনি। প্রত্যেকটি মিউচ্যুয়াল ফান্ডেরই করুন দশা। সবগুলো ফান্ডই বিক্রি হচ্ছে অভিহিত মূল্যের কমে। কোনো কোনোটি অভিহিত মূল্যের অর্ধেকেরও নিচে নেমে গেছে। সব ক’টি ফান্ড রিজার্ভ ঘাটতির বোঝা বয়ে বেড়াচ্ছে। এদিকে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই রেস অ্যাসেট বিনিয়োগকারীদের কাগুজে লভ্যাংশ দিয়ে আসছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কিছু নগদ লভ্যাংশ দিলেও তা ২/৩ শতাংশের বেশি নয়। কিন্তু গত অর্থবছরে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের নামমাত্র লভ্যাংশটুকুও দিতে পারেনি। তাদের লাভের খাতা শূন্য। রেসের ১০টি ফান্ড দর হারিয়েছে ১২৭৮ কোটি ১৬ লাখ ৮১ হাজার ৫৯৬ টাকা ৭০ পয়সা। তাই বাজার সংশ্লিষ্টদের প্রশ্ন রেস অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট পরিচালিত মিউচ্যুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগকারীদের অর্থ গেল কই?

বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ, পুঁজিবাজার চাঙ্গা কারর ক্ষেত্রে আশার বাণী শুনিয়েছিল রেস অ্যসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি। স্বপ্ন দেখিয়েছিল বিনিয়োগকারীদের। কোম্পানির চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ শরাফত দৌঁড়-ঝাঁপের মধ্যমে ১০টি মিউচ্যুয়াল বাগিয়ে নেন। ইবিএল ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড, পপুলার লাইফ ফার্স্ট, আইএফআইসি ব্যাংক ফার্স্ট, ফার্স্ট জনতা মিউচুয়াল ফান্ড, পিএইচপি ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড, ইবিএল এনআরবি মিউচুয়াল ফান্ড, এবি ব্যাংক ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড, ফার্স্ট বাংলাদেশ ফিক্সড ইনকাম ফান্ড ও এক্সিম ব্যাংক ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড ও ট্রাস্ট ব্যাংক ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড। কিন্তু এসব ফান্ড পরিচালনায় রেস ম্যানেজমেন্ট পেশাদার আচরণ করতে পারেনি। এ কারণে মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলো লোকসানের ভার বয়ে বেড়াচ্ছে। বিনিয়েগকারীদের হাতে রি-ইনভেস্টমেন্ট ইউনিটের (আরআইইউ) মাধ্যমে কাগুজে লভ্যাংশ ধরিয়ে দেয়া হয়। আর এভাবে দীর্ঘদিন ধরে বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়। তাই বিনিয়োগকারীদের কেউ কেউ চান রেস অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির কবল থেকে মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলোর মুক্ত করা হোক। আবার কেউ বা ফান্ডগুলোর অবসায়ন চান। বাজার সংশ্লিষ্টদের অনেকেই এসব বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে সহমত পোষণ করেছেন। তারাও এসব ফান্ড অবসায়নের পক্ষে মত দেন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সম্পদ ব্যবস্থাপক হিসেবে নিজের দক্ষতা, সততা ও পেশাদারিত্ব প্রমাণের বহু আগেই রেস অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের হাতে ১০টি মিউচুয়াল ফান্ডের দায়িত্ব দেয়ার সিদ্ধান্তটি ছিল অবিবেচনাপ্রসূত। প্রথম ও দ্বিতীয় ফান্ডটির পর যে উদ্যোক্তারা রেসকে তাদের ফান্ডের দায়িত্ব দিয়েছেন, তারা ভুল করেছেন। নিয়ন্ত্রক সংস্থারও উচিত হয়নি এত অল্প সময়ে এতগুলো মিউচুয়াল ফান্ড তাদের হাতে তুলে দেয়া।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও বিশিষ্ট পুঁজিাবাজার বিশেষজ্ঞ আবু আহমেদ বলেন, মিউচ্যুয়াল ফান্ডে বাজার হারানোর জন্য অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিগুলোর অদক্ষতা যেমন দায়ী তেমনি কর্তৃপক্ষের সততার অভাবও রয়েছে। সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের উচিৎ ফান্ডগুলো ভেঙ্গে দিয়ে বিনিয়োগকারীদের মাঝে বন্টন করা।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ সূত্রে জানা যায়, রেস অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের পরিচালিত ফার্স্ট জনতা মিউচুয়াল ফান্ড ২০১০ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। বিদায়ী অর্থবছরে কোম্পানিটি এই ফান্ডে বিনিয়োগকারীদের মুনাফা বঞ্চিত করেছে। তার আগের বছর ৩ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল। আলোচ্য অর্থবছরে ফার্স্ট জনতা মিউচ্যুয়াল ফান্ড ইউনিট প্রতি ১ টাকা ২৬ পয়সা লোকসান দিয়েছে। ইউনিটপ্রতি সম্পদমূল্য (এনএভি) নেমেছে ৯ টাকা ৩২ পয়সায়, যার ক্রয়মূল্য ছিল ১১ টাকা ১৯ পয়সা । ফান্ডটি ৩৫ কোটি ৭৮ লাখ টাকার রিজার্ভ ঘাটতিতে রয়েছে।

এদিকে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ফার্স্ট বাংলাদেশ ফিক্সড ইনকাম ফান্ডও লভ্যাংশ বিতরণে বিনিয়োগকারীদের উল্টোপিঠ প্রদর্শন করেছে। আগের বছর এই প্রতিষ্ঠানের বিতরণকৃত নগদ লভ্যাংশ ছিল ৩ শতাংশ। আলোচিত সময়ে ইউনিটপ্রতি লোকসান হয়েছে এক টাকা ৫৫ পয়সা। বিনিয়োগকারীদের ইউনিটপ্রতি সম্পদের ক্রয় মূল্য ১০ টাকা ৬৯ পয়সা হলেও এ সময় তা হ্রাস পেয়ে ৯ টাকা ১৩ পয়সায় নেমে এসেছে। কোম্পানিটির ১০টি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে সবেচেয়ে বেশী রিজার্ভ ঘাটতিতে রয়েছে ফার্স্ট বাংলাদেশ ফিক্সড ইনকাম ফান্ড। বর্তমানে এর রিজার্ভ ঘাটতির পরিমাণ ১১৭ কোটি ৭১ লাখ টাকা।

এক্সিম ব্যাংক ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড ৩০ জুন সমাপ্ত অর্থবছর পর্যন্ত লভ্যাংশ বিতরণে বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে যৌক্তিক আচরণ করেনি। এই ফান্ডে বিনিয়োগকারীদের কোনো লভ্যাংশ জোটেনি। অবশ্য আগের অর্থবছর ৩ দশমিক ৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল। আলোচিত সময়ে প্রতিষ্ঠানটির ইউনিটপ্রতি লোকসান হয়েছে এক টাকা ২৮ পয়সা। এ সময় ইউনিটপ্রতি সম্পদমূল্য দর হারিয়ে ৯ টাকা ৩১ পয়সায় নেমেছে। অথচ এ সম্পদ ক্রয়ে বিনিয়োগকারীদের ইউনিট প্রতি ১১ টাকা ৬ পয়সা খরচ করতে হয়েছে। মিউচ্যুয়াল ফান্ডটি রিজার্ভের অবস্থা নৈরাশ্যজনক। বর্তমানে ১৭ কোটি ৭৫ লাখ টাকার ঘাটতি বহন করছে।

৩০ জুন সমাপ্ত অর্থবছরে ইবিএল ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড লভ্যাংশ প্রদানে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। বিগত অর্থ বছরে লভ্যাংশ দিয়েছে মাত্র ৩ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে ইউনিটপ্রতি লোকসান গুনতে হয়েছে এক টাকা ৩৫ পয়সা। এ সময় ফান্ডটির ইউনিট প্রতি সম্পদ মূল্যও কমেছে। ইউনিটপ্রতি সম্পদমূল্য কমে ৯ টাকা ১৫ পয়সা নেমেছে, যার ক্রয় মূল্য ১১ টাকা এক পয়সা। রিজার্ভ সংরক্ষণের অবস্থাও সুখকর নয়। ঘাটতি রয়েছে ২৯ কোটি ৬৪ লাখ টাকার রিজার্ভ।
গত অর্থবছর লভ্যাংশ না দিয়ে বিনিয়োগকারীদের হতাশ করেছে ট্রাস্ট ব্যাংক ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড। আগের বছর এই প্রতিষ্ঠান লভ্যাংশ দিয়েছিল ৩ দশমিক ৫ শতাংশ। আলোচিত সময়ে ইউনিটপ্রতি আয়েও নেতিবাচক ধারা পরিলক্ষিত হয়। এ সময় প্রতি ইউনিটে ক্ষতি হয়েছে এক টাকা ৩৭ পয়সা। প্রতিইউনিটে সম্পদমূল্য (এনএভি) ৯ টাকা ২৯ পয়সায় নেমেছে, যার জন্য বিনিয়েগাকারীদের ব্যয় করতে হয়েছে ১১ টাকা চার পয়সা। ফান্ডটির রিজার্ভের চিত্র নৈরাশ্যজনক। কোম্পানির ঋণাত্মক রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪০ কোটি ৫৯ লাখ টাকা।

আইএফআইসি ব্যাংক ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড সমাপ্ত অর্থবছরে শেয়ারহোল্ডারদের মুনাফা বঞ্চিত করেছে। আগের অর্থবছর প্রদান করে ৩ শতাংশ মুনাফা প্রদান করেছিল। আলোচ্য সময়ে কোম্পানির ইউনিটপ্রতি লোকসান দাঁড়ায় এক টাকা ৫৮ পয়সা। ইউনিটপ্রতি সম্পদমূল্য (এনএভি) কমে আট টাকা ৯৭ পয়সায় দাঁড়িয়েছে, যার ক্রয়মূল্য ১১ টাকা দুই পয়সা। এই ফান্ডটিও রিজার্ভ সংরক্ষণ করতে পারেনি বরং বর্তমানে ২৮ কোটি ৫০ লাখ টাকার ঘাটতি রয়েছে।

পপুলার লাইফ ফার্স্ট, পিএইচপি ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড, এবি ব্যাংক ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড ও ইবিএল এনআরবি মিউচুয়াল ফান্ডও সব সূচকে পিছিয়ে রয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে রেস অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ শরাফতের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। এমনকি ম্যাসেজ পাঠানো হলেও কোনো সাড়া মেলেনি।

Facebook Comments Box
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ১২:২০ অপরাহ্ণ | রবিবার, ৩০ মে ২০২১

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।