শনিবার ২৩ নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৮ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

Ad
x
চারিত্রিক স্খলন-ব্যভিচারের অভিযোগ

মীর রাশেদ বিন আমানের দেশ ত্যাগ

বিশেষ প্রতিবেদক   |   বুধবার, ৩১ জানুয়ারি ২০২৪   |   প্রিন্ট   |   1530 বার পঠিত

মীর রাশেদ বিন আমানের দেশ ত্যাগ

 

 

 

নানা অনিয়ম অর্থ আত্মসাৎ একাধিক নারী কর্মচারীর সাথে অবৈধ সম্পর্ক এবং নীতি নৈতিকতা জলাঞ্জালি দিয়ে প্রথম স্ত্রীর অনুমতি ছাড়াই প্রতিষ্ঠানের নিম্নপদস্থ এক নারী কর্মীকে বিয়ে করে আলোচনার ঝড় তুলেছেন সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের বরখাস্তকৃত সিইও মীর রাশেদ বিন আমান। নিজের অপকর্মের দায় অস্বীকার করে এবং নিজের অপরাধ ঢাকতে উল্টো ঢালাও অভিযোগ করছেন কোম্পানির চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন পরিচালকদের বিরুদ্ধে। তার এসব অপকর্মে প্রতিষ্ঠানটির সুনাম ক্ষুন্নের পাশাপাশি বীমা সেক্টরে ইমেজ সংকট সৃষ্টি হচ্ছে।

আমানের বিরুদ্ধে কোম্পানির তহবিল তছরূপ ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের এক্সিকিউটিভ মোস্তফা গোলাম এমরান বাদী হয়ে সম্প্রতি রামপুরা থানায় মামলাটি দায়ের করেন। এতে মীর রাশেদ বিন আমানসহ কোম্পানির সাবেক সাত কর্মকর্তার নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করা হয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে প্রতারণামূলক বিশ্বাসভঙ্গ করে অর্থ আত্মসাৎসহ হুমকি প্রদানের অপরাধে পেনাল কোড ১৮৬০ এবং দন্ডবিধির ৪০৮/৪২০/৫০৬ ধারায় মামলা করা হয় (মামলা নং-৪ তারিখ ১১/০১/২০২৪)। এই মামলায় ইতোমধ্যে রাশেদসহ সাত আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।

রাশেদ বিন আমান সম্পর্কে জানা যায়, অস্বচ্ছল পরিবারে জন্ম নিয়েও অস্ট্রেলিয়ায় পড়ালেখা করার সুযোগ পান তিনি। রাশেদের সাথে প্রেমের সম্পর্ক ছিলো সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের মেয়ে ফৌজিয়া কামরুন তানিয়ার। সে সময়ে রাশেদের পড়া লেখার সমস্ত খরচ বহন করেন তানিয়া। ২০০৯ সালে ২২ জানুয়ারি সোনারগাঁ হোটেলে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় তাদের। বিয়ের পর রাশেদ তার শ্বশুর মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের সহায়তায় কয়েক কোটি টাকা দিয়ে ড্রাগন ইনফরমেশন এন্ড টেকনোলজি কোম্পানি লিমিটেড (ডিআইটিসিএল) নামে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেন। কিন্তু সেখানে তিনি ব্যবসায়ে সফলতা অর্জণ করতে পারেননি। এরপর ২০১৩ সালে রাশেদ সোনালী লাইফে চাকরিতে যোগদান করেন। সোনালী লাইফে গিয়েও তিনি ইআরপি সফটওয়্যার ক্রয় করেন উক্ত প্রতিষ্ঠান হতে। সোনালী লাইফে ইআরপি সফটওয়্যার বাবদ কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। পরবর্তীতে সোনালী লাইফে তিনি ধাপে ধাপে পদোন্নতি পেয়ে সিইও (সিসি) হওয়ার পরই শুরু হয় তার দুর্নীতির মহোৎসব। অফিসে গড়ে তুলেন নিজের অপকর্মের সহযোগী নেটওয়ার্ক। পাশাপাশি চলতে থাকে একাধিক নারীর সঙ্গে তার অবৈধ সম্পর্ক। রাশেদ অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়েছেন অফিসের সহকর্মীসহ নানা বয়সী নারীদের সঙ্গেও। এই অবৈধ সম্পর্কের পরিণতিতে বিয়ে করতে হয় একই প্রতিষ্ঠানের নারী কর্মী ফাতেমা তামান্না সুইটিকে।

২০২১ সালের ২৬ মে তিনি গোপনে বিয়ে করেন কোম্পানির কর্মী ফাতেমা তামান্না সুইটিকে। সুইটি ছিলেন এক তালাকপ্রাপ্ত নারী। প্রথম স্বামীর ঘরে তার এক সন্তান রয়েছে। বিয়ে করেই খান্ত হয়নি রাশেদ। দ্বিতীয় বউয়ের চাহিদার যোগান দিতে নানা অনিয়ম ও অর্থআত্মসাৎ করেন। কিছুদিনের মধ্যে দ্বিতীয় স্ত্রীকে কিনে দিয়েছেন রাজধানীর মালিবাগে বিলাসহুল ফ্ল্যাট ও গাড়ি। এই ফ্ল্যাটে বসেই দ্বিগুন উৎসাহে অফিসের বাইরে জালিয়াতির নানা কাজ করতেন রাশেদ ও তার সহযোগীরা। তবে শুধু সুইটির জন্য বিলাসবহুল গাড়ি নয়, রাশেদ নিজেও একাধিক বিলাসবহুল গাড়ি ব্যবহার করেন। সিইও হিসেবে তিনি মাসে সাড়ে চার লাখ টাকা বেতন পেতেন। এর বাইরে তার আয়ের আর কোনো উৎস নেই। তারপরও গত কয়েক বছরে রাশেদ পাঁচটি বিলাসবহুল গাড়ি ব্যবহার করেছেন। যার কোনোটির দামই কোটি টাকার কম নয়। রাশেদ অবৈধভাবে দ্বিতীয় বিয়ে করলেও প্রথম স্ত্রী ফৌজিয়া কামরুন তানিয়ার অনুমতি নেয়নি। তার দুই ছেলে কথাও চিন্তা করেনি রাশেদ।

রাশেদের এসব অপকর্ম সম্পের্কে আইনজীবীরা বলেন, মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ ১৯৬১-এর ৬ ধারামতে, দ্বিতীয় বিয়ের ক্ষেত্রে সালিশি পরিষদের কাছে অনুমতি না নিলে বিয়ে নিবন্ধন হবে না। আর তাই প্রথম স্ত্রীর অনুমতি না নিয়ে দ্বিতীয় বিয়ে অবৈধ বলে গণ্য হবে। এ অবস্থায় ভিকটিম প্রতিকার পেতে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দন্ডবিধি আইন-১৮৬০-এর ৪৯৪-এর বিধানমতে মামলা করতে পারবেন। এ সময় স্বামীর দ্বিতীয় বিয়ের কাবিননামা আদালতে দেখাতে হবে। অনুমতিহীন বিয়ের বিষয়ে স্বামীর অপরাধ প্রমাণিত হলে সাত বছর পর্যন্ত কারাদন্ড ও অর্থদন্ডে দন্ডিত হবে। এ ছাড়া সন্তান থাকলে তার ভরণপোষণ দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে পারিবারিক আদালতে ভরণপোষণ চেয়ে মামলা করতে পারবে। সবগুলো আইনই মূলত পারিবারিক শান্তি রক্ষার জন্য করা হয়েছে।

এদিকে, বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, রাশেদ কোম্পানির আরো ১৫০ কোটি টাকা লোপাটের অপেক্ষায় ছিলেন। তার দুর্নীতির খবর প্রকাশ হওয়ায় এখন গা ঢাকা দিয়েছেন। প্রথম স্ত্রীর অনুমতি না নিয়ে অবৈধ ভাবে দ্বিতীয় বিয়ে করায় তার নামে জামিন অযোগ্য মামলা হয়েছে। তিনি অস্ট্রেলিয়ান পাসপোর্টধারী সে সুবাদে তিনি সেখানে পালিয়ে গেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

Facebook Comments Box
top-1
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ১০:৩০ অপরাহ্ণ | বুধবার, ৩১ জানুয়ারি ২০২৪

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

(1677 বার পঠিত)
বিজ্ঞাপন
(1608 বার পঠিত)
বিজ্ঞাপন
(1284 বার পঠিত)
বিজ্ঞাপন
(1100 বার পঠিত)

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
প্রকাশক : সায়মুন নাহার জিদনী
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।