আবুল কাশেম | শনিবার, ২৩ জুলাই ২০২২ | প্রিন্ট | 96 বার পঠিত
সেবামূলক রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ‘বাংলাদেশ রেলওয়ে’ দীর্ঘদিন যাবৎ নানা অনিয়ম. দুর্নীতি, জালিয়াতি, যাত্রী হয়রানী, টিকেট কালোবাজারী এবং লুটপাটের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। লাগামহীন লুটপাটের কারণে এই প্রতিষ্ঠানটি নিয়ে উচ্চ আদালত পর্যন্ত কড়াভাষায় মন্তব্য করতে বাধ্য হয়েছেন। রেলওয়ের কিছু সিন্ডিকেটের কারণেই দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। উচ্চ আদালতের নির্দেশনায় ‘রেলওয়ের’ দুর্নীতি ও লুটপাট সিন্ডিকেটের লাগাম টানতে প্রয়োজন সরকারের পক্ষ থেকে আরও কঠোর পদক্ষেপ।
এদিকে উচ্চ আদালত রেলওয়ের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেছেন, রেলওয়ে আমাদের জাতীয় সম্পদ। সে সম্পদ রক্ষার দায়িত্ব আপনাদের। কিন্তু আপনারা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করছেন না। মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনের ছাদে ওঠে। ট্র্রেনের দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে। আপনারা নিশ্চিন্তে ঘুমান। আপনারা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করুন। ‘আপনারা কি রেলকে গ্রাস করতে চাইছেন? রেলওয়ের এত অব্যবস্থাপনা কেন থাকবে? কেন টিকিট কালোবাজারি হবে? কেন মানুষ ট্রেনের ছাদে যাবে? রেলের এ অবস্থা চলতে পারে না। আদালত ঢাবি শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন রনির ৬ দফা দাবির বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠনে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে আগামী ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে জানাতে বলেছেন। ওইদিন পরবর্তী আদেশ দেবেন বলেও জানান আদালত। গত ২১ জুলাই হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত দ্বৈত বেঞ্চ রেলওয়ের এই অনিয়ম, লুটপাট,যাত্রী হয়রানী এবং টিকেট সিন্ডিকেট প্রসঙ্গে শুনানিকালে এমন মন্তব্য করেন। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের কিছু পর্যবেক্ষণ ও মৌখিক আদেশ দেন।
আদালতে ২১ জুলাই শুনানি করেন দুদকের আইনজীবী মো. খুরশিদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আন্না খানম কলী। এর আগে গত ২০ জুলাই রেলওয়ের অব্যবস্থাপনা-যাত্রী হয়রানির প্রতিবাদে কমলাপুর রেলস্টেশনে অবস্থান নেওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন হাওলাদার ওরফে রনির অবস্থানের কারণ জানতে চান হাইকোর্ট। একই সঙ্গে দুদক বিষয়টি জানে কি না, জানলে কী ব্যবস্থা নিয়েছে সেটাও জানতে চান আদালত।
সূত্র মতে, ‘বাংলাদেশ রেলওয়েকে’ দুর্নীতি মুক্ত ও লাগামহীন লুটপাট নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য মাঝে মধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষ থেকে অভিযান পরিচালনা করা হয়। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে জনবল নিয়োগে জালিয়াতি, ক্রয়ে দুর্নীতিসহ নানা অনিয়মের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার আত্মসাতের অভিযোগ মামলা দায়ের এবং আদালতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেছে দুদক। আরও কিছুর বিক্ষিপ্ত অভিযোগ অনুসন্ধান করছে। কিন্তু পুরো রেলওয়ের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে অস্বভাবিক শক্তিশালী সিন্ডিকেট। ওই সিন্ডিকেট ভাঙা অনেক কঠিন বিষয়। কারণ এই প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে এবং বাহির থেকে নিয়ন্ত্রণকারীদের সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে শুধু দুদক কিংবা প্রশাসন স্বাভাবিক নিয়মে চেষ্টা করলেও সহসা সফলতা আনতে পারবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। উচ্চ আদালতের নির্দেশনার আলোকে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে ‘বাংলাদেশ রেলওয়ের’ নানা দুর্নীতি ও লাগামহীন লুটপাটের সঙ্গে জড়িত সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে সাড়াশি অভিযানের সিদ্ধান্ত প্রয়োজন। এই সিন্ডিকেটের লাগাম টেনে ধরতে হলে, সরকারের পক্ষ থেকে কঠোর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে হবে।
সূত্র মতে, আদালত দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান ও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিককে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রনির আন্দোলনের বিষয়ে খোঁজ-খবর নিতে বলেন। আদালতে ২১ জুলাই রেলওয়ের যুগ্ম মহাপরিচালক (অপারেশন) সালাহ উদ্দিন, ট্রাফিক ও রেলওয়ের বাণিজ্যিক পরিচালক মো. নাহিদ হাসান খাঁন এবং ‘সহজ ডটকমের’ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. জুবায়ের হোসেন হাজির হয়েছেন।
আদালতে দাঁড়িয়ে রেলের যুগ্ম মহাপরিচালক এ এম সালাউদ্দিন বলেন, মাই লর্ড এটা যাত্রী ছাদে ওঠা বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না। কিছু সীমাবদ্ধতা আছে, তবু এটা আমাদের ব্যর্থতা। আদালত জানতে চান, ছাদে বা দাঁড়িয়ে গেলেও তো তারা কি টাকা দিচ্ছেন? এটা তো দুর্নীতি। আর ছাদে যাত্রী ওঠা বন্ধ করতে পারছেন না; এই অসহায়ত্ব প্রকাশ করলে কি দেশ চলবে? এটা কোনো কথাই না। আপনাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে। অসম্ভব বলে কিছু নেই। এগুলো ঠিক হতে আর কতদিন সময় লাগবে? দেশ স্বাধীনের তো ৫০ বছর হয়ে গেছে। আদালত আরও বলেন, সব ক্ষেত্রে কিছু সিন্ডিকেটের কারণেই দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে।
দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান আদালতকে বলেন, মাই লর্ড গত ২০ জুলাই ভোক্তা অধিকার ‘সহজ ডটকমের অনিয়ম পেয়ে দুই লাখ টাকা জরিমানা করেছে, যেখান থেকে অভিযোগকারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রনি ৫০ হাজার টাকা পাবেন।
রেলে অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা বন্ধ করতে গত ১৯ জুলাই রেলের মহাপরিচালক ধীরেন্দ্র নাথ মজুমদারকে ৬ দফা দাবি সম্বলিত স্মারকলিপি প্রদান করেন ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন রনি। তিনি গত ৭ জুলাই থেকে কমলাপুর রেলস্টেশনে অবস্থান নেন। রনির অভিযোগ, গত ১৩ জুন বাংলাদেশ রেলওয়ের ওয়েবসাইট থেকে ঢাকা-রাজশাহী রুটের ট্রেনের আসন নিবন্ধনের চেষ্টা করেন তিনি। কিন্তু মুঠোফোনে আর্থিক সেবাদাতা সংস্থা বিকাশ থেকে ভেরিফিকেশন কোড দিয়ে তার পিন কোড ছাড়াই অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা কেটে নেওয়া হয়। কিন্তু ট্রেনের কোনো আসন পাননি, এমনকি কেন টাকা নেওয়া হলো, তার কোনো রশিদও দেওয়া হয়নি। গত ২৬ মার্চ থেকে দেশে অনলাইনে ট্রেনের টিকিট বিক্রি শুরু করে টিকেটিং প্ল্যাটফর্ম সহজ ডটকম। তবে শুরু থেকেই এ সেবা নিয়ে হয়রানির অভিযোগ তোলেন যাত্রীরা।
Posted ৮:৪০ অপরাহ্ণ | শনিবার, ২৩ জুলাই ২০২২
bankbimaarthonity.com | rina sristy