শনিবার ২০ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৭ বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অস্থায়ী বরাদ্দে স্থায়ীভাবে ১৪৮ দোকান নির্মাণ

শিগগিরই নীলক্ষেতের অবৈধ মার্কেট গুড়িয়ে দিচ্ছে ডিএসসিসি

আবুল কাশেম   |   মঙ্গলবার, ১১ অক্টোবর ২০২২   |   প্রিন্ট   |   118 বার পঠিত

শিগগিরই নীলক্ষেতের অবৈধ মার্কেট গুড়িয়ে দিচ্ছে ডিএসসিসি

রাজধানীর নীলক্ষেতে বহুল আলোচিত ‘লেপ-তোশকের একতলা মার্কেটের’ ফাঁকা ছাদের ওপর ছাদে ‘অবৈধভাবে’ দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় নির্মিত ১৪৮টি দোকান ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। কারণ কয়েক শত কোটি টাকার অবৈধ লেনদেন ও ভয়াবহ জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে একতলা পাকা মার্কেটের ছাদের ওপর তিনতলা মার্কেট নির্মাণ করা হয়েছে। সিটি করপোরেশনের আইন ও বিধি লঙ্ঘণ করে ডিএসসিসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ী নেতারা ক্ষমতার অপব্যবহার ও পরস্পর যোগসাজশে অবৈধ লেনদেনের বিনিময়ে পুরনো একতলা মার্কেটের ফাঁকা ছাদের ওপর অস্থায়ীভাবে নিজ খরচে দোকান বরাদ্দ করেছেন। আরও অভিযোগ রয়েছে, অস্থায়ী দোকান বরাদ্দ নিয়ে পাকা তিনতলা ভবন নির্মাণের দৃষ্টতা স্থাপন করেছেন সংশ্লিষ্টতা।

এখানেই শেষ নয়, ওই মার্কেটের অস্থায়ী বরাদ্দের দোকানগুলোকে নানা কৌশলে দ্বিতীয় দফায় অবৈধ লেনদেনের মাধ্যমে স্থায়ী বরাদ্দ করার হয়। ওই মার্কেটে মোটি ১৮৫টি দোকান আছে। এরমধ্যে নিতলায় সিটি করপোরেশনের স্থায়ীভাবে বরাদ্দ করা ৩৭ দোকান রয়েছে। এর বাইরে অবৈধ ১৪৮টি দোকান। ডিএসসিসির বর্তমান মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নুর তাপসের দায়িত্ব গ্রহণের পর সাবেক প্রশাসক ও সাবেক মেয়রের আমলে সংঘটিত এসব অনেক বড় বড় চাঞ্চল্যকর জালিয়াতির ঘটনা বেরিয়ে আসছে।

এদিকে ডিএসসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. রাসেল সাবরিন ‘দৈনিক ব্যাংক বীমা অর্থনীতি’ পত্রিকার এই প্রতিনিধিকে বলছেন, নীলক্ষেতে ‘লেপ-তোশকের একতলা মার্কেটের’ ছাদের ওপর ‘অবৈধভাবে’ নির্মাণ করা দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলার অবৈধ দোকান ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ওই মার্কেটের সব অবৈধ দোকানের অংশ বিশেষ ভাঙার কর্মসূচি নেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, মেয়রের পক্ষ থেকে অনুমতি পাবার পর শিগগিরই এই মার্কেটের অবৈধ অংশ ( দাকান) ভেঙে ফেলা হবে।

ডিএসসিসির সূত্র মতে, ২০১২ সালে প্রশাসকদের আমলে ক্ষমতার অপব্যবহার করে নীলক্ষেত এলাকায় কথিত ‘লেপ তোশকের মার্কেটের’ ফাঁকা ছাদের ওপর প্রথম ও দ্বিতীয় তলায় ৭৪টি দোকান মাসিক প্রতি বর্গফুট ১৫ টাকা ভাড়ার অস্থায়ী বরাদ্দ দেয়া হয়। অস্থায়ী অনুমতিতে উল্লেখ রয়েছে নিজ খরচে ওই মার্কেটে দোকান নির্মাণের। এখন প্রশ্ন উঠেছে নিজ খরচে পাকা মার্কেটে স্থায়ী দোকান নির্মাণের অনুমতি কিভাবে অস্থায়ী হয়। এই জালিয়াতির ঘটনায় জড়িতদের মধ্যে শুধুমাত্র দক্ষিণ সিটির সার্ভেয়ার মুহাম্মদ মুরাদ হোসেন ও সৈয়দ রুমান ও কানুনগো মোহাম্মদ আলীকে বরখাস্ত করা হয়েছে এবং তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে। তবে ডিএসসিসির তৎকালীন প্রশাসক, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা, সম্পত্তি বিভাগের বাকী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এখনো আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি।

অথচ ডিএসসিসির সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা-সংক্রান্ত বিধিবিধান বা আইনে সিটি করপোরেশনের জায়গায় অস্থায়ীভাবে মাসিক ভাড়ায় বরাদ্দ গ্রহীতাদের পাকা ভবন নিজ খরচে নির্মাণের অনুমতি প্রদানের বিধান না থাকা সত্ত্বেও বাণিজ্যিক মূল্যবান ও গুরুত্বপূর্ণ জমি ওই চক্রটি পরস্পর যোগসাজশে অস্থায়ীভাবে দোকান বরাদ্দ দিয়ে শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এ মার্কেটের দোকান নং ৫০ থেকে ৮৩/১-এর পেছনে পরিত্যক্ত জায়গা বরাদ্দের জন্য দক্ষিণ সিটির তৎকালীন প্রশাসক বরাবর আবেদন করেন নীলক্ষেত সিটি করপোরেশন মার্কেট দোকান মালিক সমিতির সভাপতি এ কে এম সামছুদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন। আবেদনপত্রের সঙ্গে আগের বৈধ বরাদ্দপ্রাপ্ত নিচতলার ৩৭ জন দোকান-মালিকের নাম, ঠিকানা ও সইসহ একটি তালিকা ছিল। ওই তালিকার প্রতিটি পৃষ্ঠার নিচে সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সই ছিল। নিচতলা বরাদ্দ প্রাপ্তরা শুধু তাদের লাগোয়া দক্ষিণ পাশের পরিত্যক্ত জন্য ব্যবহারের জন্য চেয়ে ছিলেন। বহুতল মার্কেট নির্মাণ কিংবা ওপর তলা বরাদ্দের জন্য আবেদন করেননি।

সংশ্লিষ্ট নথিতে দেখা যায়, পরিত্যক্ত জায়গা ও দোকানগুলোর ওপরে প্রথম ও দ্বিতীয় তলার ছাদ নিজ খরচে করপোরেশনের আর্থিক সহায়তা ছাড়া মার্কেট সংস্কার কাজসহ দোকান নির্মাণের এবং অস্থায়ী বরাদ্দের বিষয়ে আবেদন রয়েছে। আবেদনের সঙ্গে ওই তালিকা পরিবর্তন করে আরও নতুন ৭৪ জনের নাম সংযুক্ত করে প্রথম ও দ্বিতীয় তলার কল্পিত ছাদের দোকান বরাদ্দ নম্বর ও বরাদ্দ প্রাপকের একটি তালিকা সংযুক্ত করা হয়েছে। যুক্ত এই তালিকায় আগে বৈধ বরাদ্দপ্রাপ্ত নিচতলার লেপ-তোশক মার্কেটের ৩৭ জনের সইও ঠিক নয় এবং নীলক্ষেত্র সিটি করপোরেশনের মার্কেট দোকান মালিক সমিতির (দক্ষিণ) সভাপতি ও সম্পাদকের সই নেই। যাতে শুধু ডিএসসিসির সার্ভেয়ার সৈয়দ রুমান, কানুনগো মোহাম্মদ আলী ও তৎকালীন সম্পত্তি কর্মকর্তার অনুস্বাক্ষর রয়েছে।

সিটি করপোরেশনের রাজস্ব বিভাগের এক কর্মকর্তা আক্ষেপ করে বলেন, ‘এ মার্কেটটি ২০১২ সালের দিকে একতলা ছিল আর ছাদ ছিল। সিটি করপোরেশনের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ছাদের ওপর কিছু দোকান ‘হাওয়াই’ বরাদ্দ দেন, যার কোনও ভিত্তি নেই। কারণ ছাদে কোনও দোকান বরাদ্দ হয় না। খোলা জায়গায়, স্থায়ী স্থাপনার ওপর সিটি করপোরেশন কখনও অস্থায়ী বরাদ্দ দেয় না।’

তিনি জানান, যারা বরাদ্দ দিয়ে ছিলেন, কারও চাকরি নেই এবং তারা বরাদ্দের এ ফাইল ও গায়েব করে দেয়। মার্কেটটি সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখা যায়, তিনতলা মার্কেটটি এখন পুরোটি ইট-সিমেন্টের ভবন। নিচতলায় আছে বেডিংয়ের দোকান। আর ওপর তলায় কিছু টেইলার্স, প্রেস ও কোচিং সেন্টার যার বেশির ভাগই ভাড়া দেওয়া। এখানে দুই তলায় মার্কেট মালিক সমিতির কার্যালয় রয়েছে।

জানা যায়, স্থায়ী বরাদ্দের দাবিতে এ মার্কেটের দোকান মালিক ও বর্তমান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আবু শাহাদাত লাবলু ২০১৩ সালে একটি মামলাও করেন। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘হাইকোর্ট বলছেন আমরা সবাই বৈধ। রায়ের কপি সিটি করপোরেশন জমা দেওয়া আছে। আদালত বলেছেন, যারা অস্থায়ী বরাদ্দ নিয়ে দখলে রেখেছে, তারা বৈধ। অবৈধ যদি কেউ বলে, এটা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। আমরা মার্কেট নির্মাণ করার পর সিটি করপোরেশন বরাদ্দ দেওয়ার জন্য নিজ খরচে বুয়েটের দ্বারা ভবনের সক্ষমতা ও পরীক্ষা করা হয়।’ তিনি জানান, বর্তমানে এ মার্কেটে ১৮৫টি দোকান আছে আর সিটি করপোরেশন বলছে নিচতলার ৩৭ দোকান মালিক শুধু বৈধ। ‘হাওয়াই’ বরাদ্দ দেওয়া ১৪৮ দোকান।

মো. আবু শাহাদাত লাবলু গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা আবেদন করে ছিলাম স্থায়ী বরাদ্দ দেওয়ার। তারা আমাদের অস্থায়ী বরাদ্দ দেয়। পর্ববর্তীতে আমাদের নিজ খরচে নির্মাণ করতে অনুমতি দেওয়া হয়। এর পেছনেও কয়েক কোটি টাকা ভাগাভাগির অভিযোগ উঠেছে। পরে ২০১৭ সালে ডিএসসিসির তৎকালীন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ বেলালের আমলে ওই অবৈধ মার্কেটের ছাদের ওপর ছাদে অস্থায়ীভাবে নির্মিত দোকানগুলোকে স্থায়ীভাবে বরাদ্দ দেয়া হয়।’ এসব বিষয়ে ডিএসসিসির সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (বর্তমানে অবসরে) খান মোহাম্মদ বেলালের সাথে এই প্রতিকেদক তার মুঠো ফোনে কথা বলেন। তিনি জানান, নীলক্ষেতে ওই মার্কেটে ছাদের ওপর ছাদের নিজ খরচে অস্থায়ী দোকান বরাদ্দ দেওয়া কিংবা স্থায়ীভাবে বরাদ্দের সঙ্গে তার কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। তার আমলে এসব ঘটনা হয়নি। এসব বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না।

Facebook Comments Box
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ৬:১৪ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১১ অক্টোবর ২০২২

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।