| বৃহস্পতিবার, ২৪ মার্চ ২০২২ | প্রিন্ট | 393 বার পঠিত
নিটল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের চেয়ারম্যান এ কে এম মনিরুল হক। একাধারে সমাজসেবক, শিল্পপতি, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, লেখক হিসেবে নিজের কর্মদক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন সর্বক্ষেত্রে। এছাড়া কাজ করে চলেছেন বীমা খাত নিয়েও। এ খাতের উন্নয়নে নিজ কোম্পানিসহ ভূমিকা রাখছেন বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনেও। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম.কম ডিগ্রী লাভ করে ১৯৮২ সালে ব্যবসায়িক পেশা শুরু করেন এ কে এম মনিরুল হক। তিনি ফেডারেশন অফ বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই)’র পরিচালকসহ বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন (বিআইএ)’র ভাইস-প্রেসিডেন্ট হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। এ ছাড়া তিনি ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স (আইসিসি)র সদস্য পাশাপাশি আইবিসিসিআই, বিএমসিসিআই ও এমসিসিআই এর সাধারণ পরিষদের সদস্য। চর্তুমুখী প্রতিভার অধিকারী এ ব্যক্তি বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস নিয়ে কথা বলেছেন ব্যাংক বীমা অর্থনীতি পত্রিকার প্রতিনিধির সাথে।
ব্যাংক বীমা অর্থনীতি : বঙ্গবন্ধুর শৈশবের কোন দিকটি আপনার কাছে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বলে মনে হয়েছে?
এ কে এম মনিরুল হক : ‘মানুষ মানুষের জন্য’, এ কথাটি সেই ছেলেবেলায় বঙ্গবন্ধু উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন তাই তো তিনি ছোটবেলা থেকেই ছিলেন অত্যন্ত জনদরদী। মানুষের দুঃখ কষ্ট তিনি সহ্য করতে পারতেন না। মানুষের প্রতি প্রগাঢ় এই ভালোবাসা ছিল উল্লেখযোগ্য। যেমন একদিন স্কুল থেকে ফেরার পথে দেখেন গাছের নিচে এক বৃদ্ধ হাড়কাঁপানো শীতে জবুথবু হয়ে বসে আছেন। বঙ্গবন্ধুর গায়ের চাদর বৃদ্ধের গায়ে নিজ হাতে জড়িয়ে দিলেন। বাসায় ফিরলে মা জিজ্ঞাসা করলেন, খোকা, চাদর কী করেছিস? বঙ্গবন্ধু সত্য কথাই মাকে বললেন। মা ছেলেকে বুকে জড়িয়ে ধরে দোয়া করে বললেন, বড় হও, মানুষ হও।
বাবা ছাতা কিনে দিয়েছিলেন স্কুলে যাওয়া-আসার জন্য। একদিন রাস্তায় প্রখর রোদে এক বৃদ্ধাকে ভিক্ষা করতে দেখেন। তার গা থেকে ঘাম ঝরছিল। সমস্ত শরীর ভেজা। এই দৃশ্য দেখে বঙ্গবন্ধু মাথার ছাতাটি বৃদ্ধাকে দিয়ে দিলেন।
ছোটবেলা থেকেই বঙ্গবন্ধু রাজনীতিকে জনসেবা হিসেবে দেখেছেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়েছে। বাংলায় তখন খুব দুর্দিন। মানুষের অভাব, পেটে খাবার নেই, অনাহারে মানুষ মরছে, চারদিকে হাহাকার। বঙ্গবন্ধু মানবতার সেবায় দলবল নিয়ে নেমে পড়েছেন। মানুষের জন্য খাবার সংগ্রহ করেছেন। গোপালগঞ্জ হাইস্কুলে পড়ার সময় মুসলিম ছাত্রদের সাহায্যের জন্য তিনি একটা দল গড়ে তুলেছিলেন। বাড়ি বাড়ি গিয়ে মুষ্টি ভিক্ষা করতেন। নানাভাবে সাহায্য নিয়ে গরিব ছাত্রদের বইখাতা কিনে দিতেন। থাকার ব্যবস্থা করে দিতেন, অর্থ সাহায্য করতেন। ছোটবেলা থেকেই মানুষকে সংগঠিত করা আর মানুষের প্রয়োজনে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর এই যে শক্তি এটাই তাকে বাঙালির অনন্য সাধারণ এক মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
ব্যাংক বীমা অর্থনীতি : বঙ্গবন্ধু যে একজন জাতীয় নেতায় পরিণত হবে তাঁর ছোটবেলার কোন ঘটনা কি তাঁর ইঙ্গিত বহন করে?
এ কে এম মনিরুল হক : ইংরেজিতে একটা প্রবাদ আছে, Morning shows the day. বঙ্গবন্ধু যে নেতা হবেন তা তাঁর শৈশবে ইঙ্গিত বহন করেছিল। নেতৃত্বগুণ যেন শেখ মুজিবের সহজাত। স্কুলজীবনে ভারত স্বাধীনতা আন্দোলনের সৈনিক হামিদ মাস্টারের হাতে দীক্ষা নেন তিনি। প্রিয় শিক্ষক হামিদ মাস্টারের সঙ্গে ধর্মগোলা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ছেলেবেলায়ই শেখ মুজিবের ভেতর সাংগঠনিক অভিজ্ঞতার সূত্রপাত হয়। গ্রামে ফুটবল দলের নেতৃত্ব দিতেও পটু ছিলেন শেখ মুজিব। দু’গ্রামের লোকের মধ্যে বিদ্যমান হানাহানি ও মারামারি মীমাংসা করেছেন। জন্মগতভাবেই শেখ মুজিবের ছিল দুঃখী ও মেহনতি মানুষের প্রতি একটি অতি সংবেদনশীল হৃদয়। শোষিত মানুষের এ দুঃখ-বঞ্চনা তাকে গভীরভাবে পীড়া দিতো।
দেশের মানুষের প্রতি অকৃত্রিম এবং তীব্র ভালোবাসাই তাঁকে জনকল্যাণে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ করে তোলে এবং পরবর্তীতে রাজনীতিই তাঁর ধ্যান-জ্ঞান এবং সার্বক্ষণিক চিন্তা-চেতনার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।
এই স্কুলে অধ্যয়নকালে ১৯৩৯ সালে অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী শেরেবাংলা এ. কে. ফজলুল হক ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী স্কুল পরিদর্শনে এলে পথরোধ করে স্কুলের জরাজীর্ণ ছাত্রাবাস মেরামতের প্রতিশ্রুতি আদায়ের মাধ্যমে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। আর এভাবেই নিজের মাঝে লুকায়িত রাজনীতির বীজ সোহরাওয়ার্দীর সংস্পর্শে এসে অঙ্কুরোদগম হয় অর্থৎ তিনি দীক্ষা লাভ করেন।
ব্যাংক বীমা অর্থনীতি : বঙ্গবন্ধু ১৯৬০ সালের ১ মার্চ তৎকালীন আলফা ইন্স্যুরেন্স চাকরির পাশাপাশি দেশমাতৃকার স্বাধীনতার আন্দোলন কাজ করেছেন এ বিষয়টি কিভাবে মূল্যায়ন করেছেন?
এ কে এম মনিরুল হক : ১৯৫৮ সালের ৭ অক্টোবর পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট মেজর জেনারেল ইস্কান্দার মির্জা ও সামরিক বাহিনী প্রধান জেনারেল আইয়ুব খান সামরিক শাসন জারির মাধ্যমে দেশের সকল প্রকার রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে দেন এবং ১১ অক্টোবর বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে একের পর এক মিথ্যা মামলা দায়ের করেন। এভাবে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে নানা রকম হয়রানি করতে থাকে পাকিস্তান সরকার। অন্যদিকে ১৯৫৯ সালে আইয়ুব খান শুরু করে দেন ‘মৌলিক গণতন্ত্র’। আইয়ুব খান সেই মামলা প্রত্যাহার করে মুক্তি দিলেও তাঁর ওপর নানা শর্তারোপ ছিল। তাঁর রাজনীতি যেমন নিষিদ্ধ ছিল তেমনি আবার যাতায়াতও ছিল নিয়ন্ত্রিত। ঢাকার বাইরে যেতে গেলে পুলিশের অনুমতি লাগতো।
শেখ মুজিব বিশ্ব মানবতার প্রতীক, মুক্তিকামী-স্বাধীনতাকামী ও নিপীড়িত-নির্যাতিত মানুষের শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে এক অবিনাশী আলোকবর্তিকা। তাঁর কথার মতো তাকে দাবায়ে রাখা যায়নি। বঙ্গবন্ধু যখন ভাবছিলেন কীভাবে তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় থাকবেন ঠিক সেই সময়ে আলফা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি থেকে বঙ্গবন্ধুকে চাকুরির প্রস্তাব দেয়া হয়। মানুষ হিসেবে বঙ্গবন্ধু ছিলেন অত্যন্ত বিচক্ষণ ও দূরদর্শী। তিনি ভাবলেন এর চাইতে ভালো সুযোগ আর হতে পারে না। কারণ এই চাকরি সুবাদে সারাদেশে ঘুরে বেড়াতে পারবেন। জনগণকে একত্রিত করতে পারবেন। তাই তিনি ২৭ ডিসেম্বর মুক্তি পাওয়ার পর বঙ্গবন্ধু ১৯৬০ সালের ১ মার্চ আলফা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে তখনকার পূর্ব পাকিস্তানে শাখা প্রধান হিসেবে যোগদান করেন। আইয়ুব খান বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্ট করতে চেয়েছিলেন কিন্তু ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি চাকরি তাঁর জন্য শাপে বর হয়েছিল।
তিনি ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির দায়িত্ব নেওয়ার পর সেখানে তিনি তাজউদ্দিন আহমেদকে চাকুরি দেন। কারণ তিনি তাঁকে অত্যন্ত ভালোবাসতেন শুধু তাই নয় তিনি আমাদের সাবেক মেয়র হানিফকেও পিএ হিসেবে নিয়োগ দেন। যাতে তাঁর রাজনৈতিক এজেন্ডাগুলো বাস্তবায়ন করতে পারেন।
ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে কাজ করার সময় বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার সংগ্রামের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। যদিও নিষেধাজ্ঞা ছিল কিন্তু তিনি বসে থাকেননি। ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে যোগ দেওয়ার ফলে একটা সুযোগ হয়েছে তখনকার পূর্ব পাকিস্তান অর্থাৎ বাংলাদেশের বিভিন্ন বড় বড় জেলায় ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির কাজে তিনি যেতেন। পুলিশ পারমিশন নিয়ে যেতে হতো, কিন্তু যাওয়ার সুযোগটা সৃষ্টি হয়। এই সুযোগে তিনি যে কাজগুলো করেছেন সেটা সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ।
রাজনৈতিক দর্শন ছিল পূর্ণ স্বাধীনতামুখী। বাংলাদেশকে তিনি স্বাধীন করবেন, মুক্ত করবেন এই চিন্তা-চেতনা তাঁর সবসময় ছিল।
স্বাধীনতা সংগ্রামের লক্ষ্যে কাজ করার জন্য বিশিষ্ট ছাত্রনেতাদের নিয়ে গঠন করেন ‘স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ’ নামের একটি গোপন সংগঠন। সারা বাংলায় প্রতিটি থানায় এবং মহকুমায় গঠন করেন ‘নিউক্লিয়াস’। লক্ষ্য ছিল স্বাধীনতার জন্য যে সংগ্রাম হবে বা
আগামীতে যদি যুদ্ধ হয় তার জন্য আগাম প্রস্তুতি নেওয়া।
আলফা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির অফিসে বসে অবিসংবাদিত নেতার শেখ মুজিব স্বাধীনতার বীজ বপন করেছিলেন। দিনের পর দিন বসে বসে তিনি এই ৬ দফা প্রণয়ন করেন যার টাইপ করেছিল তারই বিশ্বস্ত পি এস মোহাম্মদ হানিফ। এই ৬ দফা আসলে আমাদের বাঙালির মুক্তির সনদ, আমাদের স্বাধীনতার ভিত্তি। সেই ভিত্তিটাই তিনি সেখানে বসেই তৈরি করেন।
তাই আমি মনে করি স্বাধীনতাযুদ্ধের প্রথম *মুক্তিযোদ্ধা* হিসেবে বীমাশিল্পকে ঘোষণা করা উচিত। এই শিল্পই জাতির পিতাকে রাজনীতিতে সক্রিয় রেখেছিল, চাকরির অন্তরালে তিনি সারাদেশ রাজনৈতিক প্রচারণা চালিয়েছিলেন এবং জনগণকে একত্রিত করেছিলেন। সর্বোপরি ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে সুন্দর একটা পরিবেশ পেয়েছিলেন বলেই তাঁর পক্ষে বোধ হয় ছয় দফা প্রণয়ন করা সহজ হয়েছিল। তাই দেশের স্বাধীনতার মূল্যায়নে সবচেয়ে এগিয়ে আছে বীমাশিল্প, তাই আমাদের আহবাণ থাকবে জাতির কাছে বীমাশিল্পকে *মুক্তিযোদ্ধা* হিসাবে ঘোষণা করার জন্যে।
ব্যাংক বীমা অর্থনীতি : বীমাখাতে বঙ্গবন্ধুর সম্পৃক্তাকে কীভাবে দেখেছেন?
এ কে এম মনিরুল হক : এক কথায় বঙ্গবন্ধু বীমাশিল্পে কর্মজীবন শুরু করেছিলেন এটা আমাদের পরম সৌভাগ্য। আজ আমরা স্বাধীন দেশে একজন বীমাশিল্পের চেয়ারম্যান হতে পরেছি এর সম্পূর্ণ কর্তৃত্ব বঙ্গবন্ধু। আমরা এই শিল্পকে নিয়ে গর্বিত। তাছাড়া জনমানবের কল্যাণ ও সেবা করার মতো মহান ব্রত এই শিল্পে থেকে সম্ভব। বঙ্গবন্ধু বীমাশিল্পের সাথে যুক্ত থাকার কারণেই আজ আমরা একটি জাতীয় বীমা দিবস উদযাপন করতে পারছি।
বীমাখাতে বঙ্গবন্ধুর যোগদানের দিনকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য ১ মার্চ জাতীয় বীমা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এই দিবসের তাৎপর্য সম্পর্কে কিছু বলবেন কি? জাতীয় বীমা দিবস খাতের উন্নয়ন কীভাবে অবদান রাখতে পারে বলে মনে করেন?
কালের মহানায়ক, স্বাধীনতার মহান স্থপতি, সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬০ সালের ১ মার্চ তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের আলফা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে যোগ দেন। তাঁর স্মরণে যোগদানের দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখার লক্ষ্যে ২০২০ সালে ১ মার্চ জাতীয় বীমা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়ে। ফলে বীমাশিল্পের দীর্ঘদিনের যে ইমেজ সঙ্কট ছিল তা থেকে মুক্তি মিলেছে। সরকারের এমন যুগোপযোগী পদক্ষেপের কারণে বীমাশিল্পের উপর মানুষের আস্থা বৃদ্ধি পাবে ফলে ব্যবসা বৃদ্ধি পাবে এবং জিডিপি তে অবদান রাখতে পাড়বে।
ব্যাংক বীমা অর্থনীতি : বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও জাতীয় শিশুদিবস উপলক্ষে আপনারা কোন পদক্ষেপ নিয়েছেন কি?
এ কে এম মনিরুল হক : শিশু দিবস পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময় পালিত হয়। আমরা জানি, শিশু দিবস পালনকারী প্রথম দেশ তুরস্ক। তুরস্কের অধিবাসীরা শিশু দিবস প্রথম পালন করেন ২৩ এপ্রিল, ১৯২০ সালে। ১৯৯৬ সালে প্রথম বাংলাদেশে জাতীয় শিশু দিবস পালন করা হয়। শিশুদের প্রতি বঙ্গবন্ধুর দরদ ছিল অপরিসীম। তাই তাঁর জন্মদিনকে শিশুদের জন্য উৎসর্গ করে জাতীয় শিশু দিবস ঘোষণা করা হয়। এদিনে আমাদের প্রিয় বাংলাদেশকে শিশুদের জন্য নিরাপদ আবাসভূমিতে পরিণত করার নতুন শপথ নিতে হবে সবার।
আমরা এই দিনে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা করেছি। দিনের শুরুতে বঙ্গবন্ধুসহ ১৫ আগস্টের সকল শহিদের আত্মার মাগফিরাতে জন্য দোয়া মাহফিলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমরা বঙ্গবন্ধু জীবনী শিশুদের জানানো জন্য বিশেষ আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছি। শিশুদের রচনা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে। বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ, বঙ্গবন্ধুর জীবনী ও মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রামাণ্য চলচ্চিত্র প্রদর্শনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। আমাদের বিভিন্ন শাখা অফিসগুলোতে আলোকসজ্জা করা হবে। এছাড়া দুস্থদের মাঝে খাবার বিতরণ করা হবে।
ব্যাংক বীমা অর্থনীতি : বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত বীমাখাতকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার লক্ষে আপনারা কীভাবে কাজ করে যাচ্ছেন?
এ কে এম মনিরুল হক : যুগ এগিয়ে যাচ্ছে তার সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হলে বীমাশিল্পেও ডিজিটালাইজড করতে হবে, যা এখন সময়ের দাবি। প্রযুক্তি ব্যবহার করলে কার্যক্রমে অনেক স্বচ্ছতা আসবে। আজকাল সবধরনের সেবাই অনলাইনভিত্তিক হয়ে গেছে। তাই আমি মনে করি, বীমা সেবাকে জনপ্রিয় করতে এই সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে বীমা কোম্পানি ও বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সরকারি-বেসরকারি কোম্পানিগুলোকে একত্রে কাজ করতে হবে। ইতিমধ্যে আমরা সফলভাবে অনলাইনে মোটরবীমা প্রদান করেছি। আমরাই প্রথম ডিজিটাল বীমার ইতিহাসে ‘নিরাপদ প্রাইভেট কার ইন্স্যুরেন্স পলিসি’ বাজারে নিয়ে এসেছি যা একটি মাইল ফলক। এখন মানুষ ঘরে বসেই তাঁর গাড়ির বীমা করতে পারে। তাছাড়া আমরা অত্যন্ত আনন্দের সাথে জানাছি আজকে এই বীমা দিবস আর সেই সাথে মার্চ মাসকে বীমা সেবা মাস হিসেবে সামনে রেখে নিটল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি InsuRobo নামে দেশে বীমাশিল্পে প্রথমরের মতো একটি ভার্চুয়াল চ্যাটবট চালু করতে যাচ্ছে। যা কোম্পানিকে ডিজিটালাইজেশনে আরেকধাপ এগিয়ে নিবে। এই ভার্চুয়াল প্লাটফর্ম দ্বারা, নিটল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির সাথে গ্রাহকদের ডিজিটালি সংযোগ স্থাপিত হবে! চ্যাটবট চালু করার উদ্দেশ্য হচ্ছে, আমরা যেন ২৪/৭ আমাদের গ্রাহক লাইভ মেসেজ সেবা দিতে পারি। সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখেই InsuRobo নামে এই প্রোগ্রামটির সৃষ্টি। যা একটি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স প্রোগ্রাম দ্বারা খুব সহজেই আর তৎক্ষণাৎভাবে সেবা দিতে সক্ষম।
ব্যাংক বীমা অর্থনীতি : এ সেক্টরের উন্নয়নে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও জাতীয় শিশুদিবসকে কাজে লাগিয়ে প্রতিষ্ঠানের প্রচারে কোনো ভূমিকা আছে বলে মনে করেন কি?
এ কে এম মনিরুল হক : বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও জাতীয় শিশুদিবসকে কাজে লাগিয়ে শুধু প্রতিষ্ঠানের প্রচারে ভূমিকাই না বরং সারা সেক্টর তথা দেশের উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। কথায় আছে আজকের শিশু আগামীদিনের ভবিষ্যৎ। তাই এই দিবসে শিশুদের মধ্যে বঙ্গবন্ধু ও বীমা সম্পর্কে সচেতনা বৃদ্ধি করা সম্ভব। আর এই সচেতনতার মধ্য দিয়েই শিশুরাই একদিন বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ে তুলবে।
ব্যাংক বীমা অর্থনীতি : আমাদের দেশের ব্যাকিং সেক্টর যেভাবে বিকশিত হয়েছে বীমাখাত সেভাবে বিকশিত হতে পারছে না এর কারণ কি?
এ কে এম মনিরুল হক : এ কথা অনস্বীকার্য যে আমাদের দেশে ব্যাংকিং সেক্টর যেভাবে বিকশিত হয়েছে বীমাখাত সেভাবে বিকশিত হয়নি। তাঁর প্রধান এবং প্রথম ইমেজ সংকট। তাছাড়া দেশের মানুষ বীমা সচেতন নয়। অনেক ক্ষেত্রে রয়েছে আস্থার অভাব। কারণ দেশ স্বাধীন হবার পর বঙ্গবন্ধু মাত্র সাড়ে তিন বছর সময় হাতে পেয়েছিলেন, যা একটি যুদ্ধবিধস্ত দেশকে গড়ে তোলার জন্য অতি নগণ্য সময়। তবুও বীমাশিল্পের বিশৃঙ্খলা রোধে তিনি ১৯৭২ সালের ২৬ মার্চ Bangladesh Insurance (Emergency Provision) Order ১৯৭২ জারি করেন। এতে ১৯৩৮ সালের বীমা আইনটি বাংলাদেশের বীমা আইন বলে বিবেচিত হবে বলে ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে একই সালের ৮ আগস্ট রাষ্ট্রপতির ৯৫নং আদেশ বলে তৎকালীন ৭৫টি বীমা প্রতিষ্ঠানকে জাতীয়করণ করে প্রথমে ৫টি সংস্থায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। যথা- ১. বাংলাদেশ জাতীয় বীমা করপোরেশন, ২. কর্ণফুলী বীমা করপোরেশন, ৩. তিস্তা বীমা করপোরেশন, ৪. সুরমা জীবন বীমা করপোরেশন এবং ৫. রূপসা জীবন বীমা করপোরেশন। অতপর ১৯৭৩ সালের ১৪ই মে বীমা করপোরেশন অধ্যাদেশ (Insurance Corporation Ordinance 1972) ঘোষণার মধ্য দিয়ে ৫টি বীমা সংস্থাকে ২টি সংস্থার অধীনে আনা হয়। যথা- জীবন বীমা করপোরেশন ও সাধারণ বীমা করপোরেশন।
কিন্তু দুঃখ বিষয় হলেও সত্য যে পরবর্তী সরকারগুলো এই বীমাখাতের প্রতি তেমন সুদৃষ্টি দেয়নি। ফলে ১৯৩৬ সালের আইন দ্বারা বীমাশিল্প পরিচালিত হয়ে আসছিল প্রায় ৩৫ বছর। ২০১০ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশনেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রীই প্রথম এই শিল্পের প্রতি নজর দেন। তিনি বীমা আইন ২০১০ প্রণয়ন করেন এবং এই আইনের অধীনে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ গঠন করেন। আইন ও নির্দেশিকার অধীনে দেশের ৮১টি বীমা কোম্পানীগুলোর তদারকির ভার বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ ন্যস্ত করেন এবং পাশাপাশি এই বীমাখাতকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে স্থানান্তর করেন এবং জাতীয় বীমা নীতি ২০১৪ প্রণয়ন করেন।
শুধু তাই নয়, তিনি জাতীয় জীবনে বীমার গুরুত্বকে উপলব্ধি করে এই সেকটরকে একটি জাতীয় দিবস উপহার দেন। আমরা আজ ১ মার্চ জাতীয় বীমা দিবস পালন করছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এই উপহারের মধ্য দিয়ে বীমাশিল্প তাদের হারানো গৌরব আর ঐতিহ্যকে ফিরে পেয়েছে। আমার জানা মতে, দেশের কোনো ইন্ডাস্ট্রির এমন কোনো জাতীয় দিবস নেই। আমরা গর্বিত, আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিরকৃতজ্ঞ।
আজ আমরা আমাদের ইমেজ সংকট কাটিয়ে উঠতে পারছি। দেশে খুব শিগগিরই চালু হতে যাচ্ছে ‘ব্যাংকাস্যুরেন্স’। এটি এমন একটি সমন্বিত ব্যবস্থা, যেখানে গ্রাহক, বীমা কোম্পানি ও ব্যাংক সবাই লাভবান হবে; লাভবান ও সমৃদ্ধ হবে দেশ। দেশের অর্থনীতিতে নতুন গতির সঞ্চার হবে, স্ফীত হবে জাতীয় আয় ও জিডিপি। আমরা আশা করি, বীমা আর ব্যাংক একসাথে হাতে হাত ধরে সাফল্যের পথে এগিয় যাবে।
Posted ৫:১২ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৪ মার্চ ২০২২
bankbimaarthonity.com | rina sristy