শনিবার ২৩ নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৮ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

Ad
x

শেয়ারবাজারে কৃত্রিম কারসাজির সন্দেহ

  |   বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০১৯   |   প্রিন্ট   |   742 বার পঠিত

শেয়ারবাজারে কৃত্রিম কারসাজির সন্দেহ

২০১০ সালে বড় ধসের পর আইন-কানুনে নানামুখী সংস্কারের পরও স্থিতিশীলতা ফেরেনি পুঁজিবাজারে। ৯ বছর পর আবারও অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে বাজার। বিগত কয়েক বছর ‘কিছুটা’ ভালো থাকার পর হঠাৎ পুঁজিবাজারে শেয়ার বিক্রির চাপ বাড়লেও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা নিষ্ক্রিয় থাকায় কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

তাঁরা বলছেন, আতঙ্ক ও অনাস্থা থেকে ক্ষুদ্র ও সাধারণ বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি করলেও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা নিষ্ক্রিয়। ব্রোকারেজ হাউস, ব্রোকার ডিলার মার্চেন্ট ব্যাংক ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা নিজেদের স্বার্থ আদায়ে কৃত্রিমভাবে বাজারকে প্রভাবিত করছে। তাঁদের অভিযোগ, বাজারকে নিম্নমুখী রেখে আগামী বাজেটে কর ছাড়সহ কিছু দাবি আদায় করতে পুঁজিবাজারকে ব্যবহার করা হচ্ছে। তা না হলে এক মাস আগে যে বাজারে এক হাজার কোটি টাকার লেনদেন হয়, বাজেটের আগে এখন ২০০ বা ৩০০ কোটি টাকা কেন?

এদিকে পুঁজিবাজারে অব্যাহত পতনের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে বিনিয়োগকারীরা আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খায়রুল হোসেনের পদত্যাগ দাবি করেছেন।

পুঁজিবাজারসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারল্য সংকট, সঞ্চয়পত্র ও আমানতে সুদের হার বৃদ্ধি, মন্দ বা দুর্বল কম্পানির আইপিও, নগদ না দিয়ে বোনাস লভ্যাংশে শেয়ারের জোগান বেড়েছে। পতনের বাজারেও স্পন্সর ও ডিরেক্টরদের শেয়ার বিক্রি বেড়ে যাওয়ায় চাহিদা ও জোগানে অসমতা সৃষ্টি হয়েছে।

মার্চেন্ট ব্যাংকসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগসংক্রান্ত এক্সপোজার বা বিনিয়োগসীমা নিয়ে জটিলতায় তাঁরা বিনিয়োগ করতে পারছেন না। ব্যাংকের সাবসিডিয়ারি হিসাবে কোনো প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীও শেয়ারে বিনিয়োগ করতে ব্যর্থ হচ্ছে। এ ছাড়া তারল্য সংকটে পর্যাপ্ত ফান্ড না থাকায় বিনিয়োগ সক্ষমতাও কমেছে।

এমটিবি ক্যাপিটাল লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খায়রুল বাশার আবু তাহের মোহাম্মদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘পুঁজিবাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর কোনো অংশগ্রহণ নেই। যদি থাকত তবে পুঁজিবাজারের অবস্থা এতটা নিচে নামত না। ব্যাংকের সাবসিডিয়ারি বা সহযোগী প্রতিষ্ঠানের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগসীমাসংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের এক্সপোজার জটিলতায় হাত গুটিয়ে বসে থাকতে হচ্ছে। কারণ এই সীমা অতিক্রম করলে জরিমানা গুনতে হবে। তবে পুঁজিবাজারকে সাপোর্ট দিতে এক্সপোজার সংজ্ঞায় পরিবর্তন আনা প্রয়োজন।’

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তথ্যানুযায়ী, গত বছরের ডিসেম্বরে নির্বাচনের সময় মন্দাবস্থায় পড়েছিল পুঁজিবাজার। জানুয়ারিতে নতুন সরকার গঠনের পর চাঙ্গা হয়ে ওঠে পুঁজিবাজার। কিন্তু জানুয়ারির শেষে বেসরকারি ঋণ প্রবাহের লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হলে আবারও নিম্নমুখী হয় বাজার। এ সময়ের পর থেকে ক্রমেই নিম্নমুখী পুঁজিবাজার।

তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গত ফেব্রুয়ারি আর বর্তমানের বাজার চিত্র সম্পূর্ণ উল্টো। ১ ফেব্রুয়ারি থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক কমেছে প্রায় সাড়ে ৬০০ পয়েন্ট। আর লেনদেনও এক-তৃতীয়াংশে নেমেছে। বাজার মূলধন কমেছে ২৪ হাজার কোটি টাকা। শেয়ার হাতবদলের সংখ্যাও প্রায় অর্ধেকে নেমেছে।

ডিএসইর হিসাব অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতে ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা, সূচক ছিল পাঁচ হাজার ৮২১ পয়েন্ট আর বাজার মূলধন ছিল চার লাখ ১৬ হাজার ৩৬০ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। কিন্তু মঙ্গলবার ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ২৬৯ কোটি ৯১ লাখ টাকা। সূচক দাঁড়িয়েছে পাঁচ হাজার ২৪৮ পয়েন্টে আর বাজার মূলধন তিন লাখ ৯২ হাজার ৩০৮ কোটি ৫৩ লাখ টাকা।

বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি মিজানুর রশীদ চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মন্দ আইপিওতে বাজারে বিনিয়োগকারীর অনাস্থা সৃষ্টি হয়েছে। বছরের পর বছর পচা কম্পানিকে পুঁজিবাজারে আনা হয়েছে। যে বাজারে হাজার কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে, সেখানে এখন ৩০০ কোটি টাকার লেনদেন। মার্চেন্ট ব্যাংক, ব্রোকারেজ হাউস ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা কোথায়? তারা বাজারে নেই। কারণ তারা নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে চায়। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের নিয়ে কেউ ভাবে না। কমিশনও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।’

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের একটি ব্রোকারেজ হাউসের শীর্ষ ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দুর্বল কম্পানি ও মুদ্রাবাজারের কারণে পুঁজিবাজার ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়েছে। কিন্তু আস্থা এতটায় কমে গেছে, যা ফেরানো সম্ভব হচ্ছে না। তালিকাভুক্ত কম্পানিও বিনিয়োগকারীর স্বার্থ না দেখে নিজেরাই ব্যবসা করছে। নগদ লভ্যাংশ কমে গেছে, বোনাস শেয়ার ইস্যুতে শেয়ারে জোগান বেড়েছে কিন্তু চাহিদা সৃষ্টি হচ্ছে না। স্পন্সর ও ডিরেক্টররাও শেয়ার বিক্রি করছে। এই অবস্থায় নতুন আইপিও অনুমোদন বন্ধ ও স্পন্সরদের শেয়ার বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা আনা জরুরি বলে মনে করেন তিনি।

বিনিয়োগকারীদের বিক্ষোভ
পুঁজিবাজারে অব্যাহত পতনে মতিঝিলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সামনে মঙ্গলবার বিক্ষোভ করেছে বিনিয়োগকারীরা। এতে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যানকে আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পদত্যাগের সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। পদত্যাগ না করলে বিনিয়োগকারীরা কঠোর আন্দোলন করবে বলে ঘোষণা দেন বাংলাদেশ পুজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি মিজানুর রশীদ চৌধুরী।

Facebook Comments Box
top-1
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ৩:৪৯ অপরাহ্ণ | বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০১৯

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
প্রকাশক : সায়মুন নাহার জিদনী
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।