| শনিবার, ০৫ জানুয়ারি ২০১৯ | প্রিন্ট | 1257 বার পঠিত
একটি প্রতিষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন বিভাগ-প্রধানের সাফল্যের ওপর নির্ভর করে ওই প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বা সিইও’র সাফল্য। সিইও সফল হলে প্রতিষ্ঠানটির মুনাফা বেশি হয়। খুশি হন শেয়ারহোল্ডাররা। চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে সিইও’র সুনাম। প্রতিষ্ঠানের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও), কোম্পানি সচিব, চিফ কমপ্লায়েন্স অফিসার, চিফ মার্কেটিং অফিসারসহ এইচআর প্রধানরা থাকেন পাদপ্রদীপের আড়ালে। টপ ম্যানেজমেন্টের বড় অংশ হলেও তারা আলোচনার বাইরে থাকতে পছন্দ করেন। অন্তর্মুখী এসব কর্মকর্তা সব সময় কেবল প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য বাস্তবায়নে ব্যস্ত থাকেন। সেসব কর্মকর্তাকে নিয়ে আমাদের নিয়মিত আয়োজন ‘টপ ম্যানেজমেন্ট’। সাম্প্রতিক একটি গণমাধ্যমের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে এবার ব্যাংক এশিয়া লিমিটেডের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) মোহাম্মদ ইব্রাহিম খলিল, এফসিএ। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মো. হাসানুজ্জামান পিয়াস।
মোহাম্মদ ইব্রাহিম খলিল, এফসিএ, ব্যাংক এশিয়া লিমিটেডের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও)। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষে সম্পন্ন করেছেন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্সি পেশাগত ডিগ্রি। তিনি দি ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশের (আইসিএবি) একজন সম্মানিত ফেলো
প্রশ্ন: ক্যারিয়ার গড়ার পেছনের গল্প দিয়ে শুরু করতে চাই…
মোহাম্মদ ইব্রাহিম খলিল, এফসিএ: ২০০৫ সালে একনাবিন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্সি (সিএ) ফার্মে যোগ দিই। ২০০৯ সালে সিএ পাস করি এবং এবি ব্যাংকে যোগ দিই। এরপর ২০১২ সালে ব্যাংক এশিয়ায় যোগদান করি হেড অব অ্যাকাউন্টস হিসেবে। পদোন্নতি পেয়ে বর্তমানে ব্যাংক এশিয়ার সিএফও হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি।
প্রশ্ন: পেশা হিসেবে ফাইন্যান্সকে কেন বেছে নিলেন?
ইব্রাহিম খলিল: ফাইন্যান্সকে পেশা হিসেবে নেওয়ার অন্যতম কারণ হলো, ফাইন্যান্সকে প্রতিষ্ঠানের হার্ট বলা হয়। ব্যাংক কিংবা নন-ব্যাংকিং ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউট, হাসপাতাল, ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি, এমনকি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায়ও ফাইন্যান্স অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। আর একজন ফাইন্যান্স পেশাজীবী হিসেবে প্রতিষ্ঠানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন, নেতৃত্ব দিতে পারেন; সর্বোপরি দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখতে পারেন।
প্রশ্ন: প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য বাস্তবায়নে সিএফও’র ভূমিকা ও গুরুত্ব সম্পর্কে কিছু বলুন…
ইব্রাহিম খলিল: প্রতিষ্ঠানের মালিক অর্থাৎ শেয়ারহোল্ডাররা সব সময় চান প্রতিষ্ঠানের আর্থিক উন্নতি। একই সঙ্গে তারা প্রতিষ্ঠানে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা এবং টেকসই উন্নয়ন যেন নিশ্চিত হয় সে বিষয়ে ওয়াকিবহাল থাকেন। শেয়ারহোল্ডারদের এসব প্রত্যাশা মাথায় রেখে প্রতিষ্ঠান প্রধান (সিইও) এগিয়ে যান। সিইওকে পেছন থেকে প্ল্যানিং, বাজেটিং, কন্ট্রোলিং ও কলাকৌশলগত নানা সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং তার যথাযথ বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখেন সিএফও। প্রতিষ্ঠানে কমপ্লায়েন্স কমপ্লাই করা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে সাহায্য করেন তিনি। এছাড়া সিএফও ফাইন্যান্সের পাশাপাশি বর্তমানে ব্যবসার নানা সিদ্ধান্ত গ্রহণে সাহায্য করা এবং খুব কাছে থেকে তা পর্যবেক্ষণের সুযোগ পান। অর্থাৎ শেয়ারহোল্ডারদের প্রত্যাশা বাস্তবায়নে সিএফও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
প্রশ্ন: ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং অ্যাক্ট (এফআরএ) কোম্পানির ওপর কেমন প্রভাব ফেলবে বলে মনে করেন?
ইব্রাহিম খলিল: ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিংয়ে স্বচ্ছতা আনা ও যথাযথভাবে পর্যবেক্ষণের উদ্দেশ্যে আইনটি করা হয়েছে। এখন এর সঠিকভাবে বাস্তবায়ন দরকার। দক্ষ পেশাজীবীদের ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলে (এফআরসি) রাখতে হবে, তাদের কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। ভুল রিপোর্ট তৈরি করলে তাদের জবাবদিহি ও শাস্তির আওতায় যখন আনা হবে, তখন অবশ্যই যে মহৎ উদ্দেশ্যে আইন করা হয়েছে, তার সুফল জনগণ ভোগ করতে পারবে।
প্রশ্ন: বাংলাদেশের করনীতিকে কীভাবে মূল্যায়ন করেন?
ইব্রাহিম খলিল: করনীতি আরও ব্যবসাবান্ধব করতে হবে। আয়করের ক্ষেত্রে ডাবল ট্যাক্সেশন বলে একটি বিষয় রয়েছে। এটি নিয়ে চিন্তার সুযোগ রয়েছে। করদাতাদের করদানে উৎসাহ দিতে হবে। এছাড়া করহার কমানো উচিত।
প্রশ্ন: বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানগুলোয় করপোরেট গভর্ন্যান্স সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী?
ইব্রাহিম খলিল: করপোরেট গভর্ন্যান্সের প্রধান স্টেকহোল্ডার হলেন শেয়ারহোল্ডার, ডিরেক্টরস, ম্যানেজমেন্ট, সাপ্লায়ার ও কাস্টমার। কার্যকর করপোরেট গভর্ন্যান্সের জন্য সব স্টেকহোল্ডারকে এগিয়ে আসা উচিত। আর প্রতিষ্ঠানগুলোয় কার্যকর করপোরেট গভর্ন্যান্স প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি), কেন্দ্রীয় ব্যাংক (বাংলাদেশ ব্যাংক) নানা ধরনের নির্দেশিকা ও প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে চেষ্টা করে যাচ্ছে। কিন্তু ব্যাংক, নন-ব্যাংকিং ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউটসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে করপোরেট গভর্ন্যান্স অনেক ভালো থাকলেও অধিকাংশ তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানই প্রাইভেট লিমিটেডের মতো আচরণ করে। আশা করি, দীর্ঘ সময় ব্যবসার সফলতার উদ্দেশ্যে তারা প্রতিষ্ঠানে করপোরেট গভর্ন্যান্স প্রতিষ্ঠায় কাজ করবে।
প্রশ্ন: ব্যাংক সেক্টরে একজন সিএফও’র জন্য চ্যালেঞ্জিং বিষয় কী?
ইব্রাহিম খলিল: সিএফও’র অন্যতম দায়িত্ব প্রতিষ্ঠানের ফাইন্যান্সিয়াল স্টেটমেন্ট সত্য ও স্পষ্ট এ বিষয়গুলো নিশ্চিত করা। এটি একটি চ্যালেঞ্জ। আবার ব্যাংকের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত একটি চ্যালেঞ্জ হলো ‘ব্যাসেল-৩’ বাস্তবায়ন করা। একই সঙ্গে পর্যাপ্ত মূলধন বজায় রাখা কিংবা রক্ষণাবেক্ষণ করা অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ। আর ব্যাংক খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো সবচেয়ে বেশি নিয়ম-কানুনের মধ্য দিয়ে চলে। প্রতিনিয়ত বিভিন্ন রেগুলেটরি প্রতিষ্ঠানের আইন-কানুন মেনে চলার পাশাপাশি দিকনির্দেশনার সবকিছুতে আপডেট থাকা এবং তা বাস্তবায়ন করা চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়ে। এছাড়া শেয়ারহোল্ডারদের প্রত্যাশা নিশ্চিত করাও কম চ্যালেঞ্জের নয়।
প্রশ্ন: পেশা হিসেবে সিএফও’কে কীভাবে মূল্যায়ন করেন?
ইব্রাহিম খলিল: সিএফও পদটি প্রতিষ্ঠানের ‘সি স্যুট’ পজিশন; যেমন সিইও (চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার), সিওও (চিফ অপারেটিং অফিসার) প্রভৃতির একটি। ‘সি স্যুট’ পজিশনের পদ হিসেবে এটি অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ, আকর্ষণীয় ও চ্যালেঞ্জিং। কারণ সিএফও প্রতিষ্ঠানের রেগুলেশনের পাশাপাশি ‘বিজনেস অপারেশন’র সঙ্গে জড়িত থাকায় ব্যয় কমিয়ে সর্বাধিক মুনাফা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
প্রশ্ন: ফাইন্যান্স পেশা আরও গ্রহণযোগ্য করার জন্য কী কী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত বলে মনে করেন?
ইব্রাহিম খলিল: কেবল অ্যাকাউন্টিং-ফাইন্যান্সের জ্ঞানের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেই হবে না। প্রতিষ্ঠানের অন্যান্য বিভাগের কাজ, ব্যবসার নিয়ম-কানুন, অপারেশন, অর্থনীতি সম্পর্কে জানতে হবে। ব্যবসায়িক নানা তথ্য বিশ্লেষণ করে তা ম্যানেজমেন্টের কাছে যথাযথভাবে উপস্থাপন করতে হবে। তাহলেই ম্যানেজমেন্ট এসব বিষয় গুরুত্বসহকারে নেবে। সংগত কারণে ফাইন্যান্স পেশাজীবীদের অধিক গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হবে।
প্রশ্ন: যারা এ পেশায় ক্যারিয়ার গড়তে চান, তাদের উদ্দেশে আপনার পরামর্শ…
ইব্রাহিম খলিল: গবেষণায় দেখা গেছে, এক থেকে ১০ বছর পর শতকরা ৯৫ ভাগ অ্যাকাউন্ট্যান্ট শুধু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (আর্টিফিসিয়ালি ইনটেলিজেন্সি) কিংবা প্রযুক্তির কারণে তাদের চাকরি হারাবেন। তাই কেবল অ্যাকাউন্ট্যান্ট হলেই চলবে না, বরং পেশাগত অ্যাকাউন্ট্যান্ট হতে হবে। যাদের উদ্ভাবনী শক্তি আছে, যারা নানা ধরনের ব্যবসায়িক কৌশল প্রদানে সক্ষম, তারাই কেবল আগামী দিনে নেতৃত্ব দিতে পারবেন। তাই এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। প্রতিনিয়ত আপডেট থাকতে হবে। প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। নতুন যেসব প্রযুক্তি, যেমন- কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ব্লক চেইন প্রভৃতি বিষয় সম্পর্কে গভীরভাবে জানতে হবে। উপস্থাপন দক্ষতা থাকতে হবে।
সূত্র : শেয়ারবিজ।
Posted ১২:১০ অপরাহ্ণ | শনিবার, ০৫ জানুয়ারি ২০১৯
bankbimaarthonity.com | Sajeed