আবুল কাশেম | রবিবার, ১৬ জানুয়ারি ২০২২ | প্রিন্ট | 195 বার পঠিত
চাকরি করেছেন স্বামী আর ব্যবসার নামে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন প্রকৌশলীর স্ত্রী। স্বামীর অর্জিত সম্পদের প্রায় আড়াইগুণ সম্পদ রয়েছে প্রকৌশলীর স্ত্রীর। এ চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসছে সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের (সওজ) সাবেক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী এ কিউ এম ইকরাম উল্লাহ ও তার স্ত্রী আতিকা খাতুনের বিরুদ্ধে। অবৈধ সম্পদ অর্জন ও তথ্য গোপনের অভিযোগে পৃথক দুই মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক)।
দুদকের মামলায় সওজের সাবেক প্রকৌশলী এ কিউ এম ইকরাম উল্লাহর মোট ৫ কোটি ৩৩ লাখ ৪ হাজার ৭৮৬ টাকা মূল্যের সম্পদের মধ্যে ৪ কোটি ৯৬ লাখ ৯৯ হাজার ৩৫০ টাকার স্থাবর ও ৩৬ লাখ ৫ হাজার ৪৩৬ টাকার অস্থাবর সম্পদ রয়েছে । আর তার স্ত্রী আতিকা খাতুনের অস্থাব সহ মোট সম্পদ রয়েছে ১৩ কোটি ১৫ লাখ ৫৭ হাজার ৬৭৪ টাকার।
এদিকে গত ১৩ জানুয়ারি দুদকের উপ-পরিচালক রাশেদুল ইসলাম বাদী হয়ে সমন্বিত ঢাকা জেলা কার্যালয়-১ এ সওজের সাবেক প্রকৌশলী এ কিউ এম ইকরাম উল্লাহ এবং তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪ এর ২৬(২) ও ২৭(১) ধারায় পৃথক দুই মামলা দায়ের করেন। গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা ও উপ পরিচালক মুহাম্মদ আরিফ সাদেক।
দুদকের মামলায় উল্লেখ করা হয় ,আসামী এ কিউ এম ইকরাম উল্লাহ ২০১৭ সালে ২৮ সেপ্টেম্বর দুদককে ১ কোটি ৩৬ লাখ ৮২ হাজার ৯৩৬ টাকার স্থাবর সম্পদ এবং ২৯ লাখ ১৯ হাজার ৬৪৪ টাকার অস্থাবর সম্পদসহ মোট ১ কোটি ৬৬ লাখ ২ হাজার ৫৮০ টাকার সম্পদের বিবরণী দাখিল করেছেন।
এ কিউ এম ইকরাম উল্লাহ ১৯৮৩ সালে বাখরাবাদ গ্যাস সিস্টেমস লি. এ সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে চাকরি করেন। সেখানে ৮/৯ মাস চাকরি করার পর বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে ১৯৮৪ সালে ২০ মার্চ সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরে ঢাকায় সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে চাকরিতে যোগদান করেন। পরবর্তীতে বিভিন্ন সময় পদোন্নতি পেয়ে ২০১৩ সালে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে পদোন্নতি পান। তিনি ২০১৭ সালে ২৮ ফেব্রুয়ারি চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন। চারকির এই সুযোগেই স্বামী ও স্ত্রী সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেন।
এ কিউ এম ইকরাম উল্লাহ ১৯৯২-৯৩ করবর্ষে আয়কর নথি খোলেন এবং রিটার্ন জমা দেন। তার গ্রহনযোগ্য আয়ের পরিমাণ পাওয়া যায় ২ কোটি ১৫ লাখ ৪৯ হাজার ৬৩৭ টাকা। তার মোট স্থাবর ও অস্থাবর নিট সম্পদের পরিমাণ ৪ কোটি ৯৬ লাখ ৯৯ হাজার ৩৫০ টাকা স্থাবর ও ৩৬ লাখ ৫ হাজার ৪৩৬ অস্থাবরসহ মোট ৫ কোটি ৩৩ লাখ ৪ হাজার ৭৮৬ টাকার। এর মধ্যে তিনি পারিবারিক ব্যয় করেছেন ৩৫ লাখ ১২ হাজার ৯৫২ টাকা। সুতরাং তার মোট অর্জিত সম্পদের মূল্য আয় ও ব্যয় মিলে ৫ কোটি ৬৮ লাখ ১৭ হাজার ৭৩৮ টাকা পাওয়া যায়। দুদকের অনুসন্ধানকালে ২ কোটি ১৫ লাখ ৪৯ হাজার ৬৩৭-টাকা আয়ের সাথে ৫ কোটি ৬৮ লাখ ১৭ হাজার ৭৩৮ টাকার সম্পদ অসামঞ্জস্য।
দুদকের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে তার বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত ৩ কোটি ৫২ লাখ ৬৮ হাজার ১০১ টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের তথ্য গোপন এরমধ্যে অবৈধভাবে অর্জিত ২ আরো কোটি ৪০ লাখ টাকার তথ গোপন করার জন্য ব্যাংক থেকে উত্তোলনের মাধ্যমে স্থানান্তর করেছেন বলে তথ্য পেয়েছে দুদক। তিনি অবৈধভাবে অর্জিত ২ কোটি ৪০ লাখ টাকা গোপন করার জন্য ব্যাংক থেকে উত্তোলনের মাধ্যমে স্থানান্তরের প্রমাণ পেয়েছে। যার স্বপক্ষে তিনি কোনো দলিল দেখাতে পারেননি।
অপরদিকে এ কিউ এম ইকরাম উল্লাহের স্ত্রী আসামি আতিকা খাতুনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলায় ১১ কোটি ৯৭ লাখ ২ হাজার ৯২৬ টাকার অস্থাবর এবং ১ কোটি ১৮ লাখ ৫৪ হাজার ৭৪৮ টাকার স্থাবরসহ মোট ১৩ কোটি ১৫ লাখ ৫৭ হাজার ৬৭৪ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।
দুদকের অনুসন্ধানে আতিকার বিরুদ্ধে ৮ কোটি ৯১ লাখ ৭২ হাজার ১১৮ টাকার অবৈধ সম্পদের প্রমাণ পেয়েছে। এরমধ্যে ৬ কোটি ২২ লাখ ২১ হাজার ৯২৬ টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপনের অভিযোগ রয়েছে।এ অভিযোগে আতিকা খাতুনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৬(২) ও ২৭(১) ধারায় পৃথক একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
আসামী আতিকা খাতুনের মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, তার ঠিকানা-নাভানা অর্কিড, ফ্ল্যাট নং- ৩/এ, বাসা নং- ১২, রোড- ১১৮, গুলশান-০২। তিনি দুদকে দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে ৫ কোটি ৭৪ লাখ ৮১ হাজার টাকার স্থাবর সম্পদ এবং ১ কোটি ১৮ লাখ ৫৪ হাজার ৭৪৮ টাকার অস্থাবর সম্পদসহ মোট ৬ কোটি ৯৩ লাখ ৩৫ হাজার ৭৪৮ টাকার সম্পদের হিসেব দাখিল করেন।
পরে আতিকা খাতুনের সম্পদ বিবরণী যাচাইকালে তার নামে ১১ কোটি ৯৭ লাখ ২ হাজার ৯২৬ টাকার স্থাবর সম্পদ এবং ১ কোটি ১৮ লাখ ৫৪ হাজার ৭৪৮ টাকার অস্থাবর সম্পদসহ মোট ১৩ কোটি ১৫ লাখ ৫৭ হাজার ৬৭৪ টাকার সম্পদের তথ্য পায় দুদক। আসামী আতিকা খাতুন ৬ কোটি ২২ লাখ ২১ হাজার ৯২৬ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপন এবং সম্পদ বিবরণীতে মিথ্যা তথ্য প্রদান করেছেন।
আসামী আতিকা খাতুন একজন তৈরী পোষাক ও হস্তশিল্প সামগ্রী বিক্রেতা/ব্যবসায়ী। ঢাকার বেইলী রোডে নাভানা বেইলী স্টার শপিংমলের দোতলায় ‘আনিকাস’ নামক তৈরী পোষাকের দোকান রয়েছে। তিনি ১৯৯০-৯১ করবর্ষে আয়কর নথি খোলেন এবং রিটার্ণ জমা দেন। তার আয়কর নথি (ইটিআইএন: ৬৯৮৭৩০৩১২৯৯০/ সার্কেল- ১৪৮, কর অঞ্চল-৭, ঢাকা) ও অন্যান্য রেকর্ড পর্যালোচনায় সকল দায়দেনাসহ আতিকা খাতুনের গ্রহনযোগ্য আয়ের পরিমাণ পাওয়া যায় ৪ কোটি ৫২ লাখ ৪৮ হাজার ৫২৪ টাকা। ফলে তার বিরুদ্ধে ৮ কোটি ৯১ লাখ ৭২ হাজার ১১৮ টাকার জ্ঞাত আয় বর্হিভূূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ পেয়েছে দুদক।
Posted ১১:৪৯ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ১৬ জানুয়ারি ২০২২
bankbimaarthonity.com | rina sristy