শুক্রবার ২৬ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৩ বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সঞ্চয় একাউন্টে রেমিট্যান্স বিনিয়োগ করতে অনুরোধ আইওএম’র

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   মঙ্গলবার, ১৬ জুন ২০২০   |   প্রিন্ট   |   277 বার পঠিত

সঞ্চয় একাউন্টে রেমিট্যান্স বিনিয়োগ করতে অনুরোধ আইওএম’র

দক্ষ অভিবাসীরা পরিবারের সদস্যদের অনুরোধ করে সঞ্চয় একাউন্টে রেমিট্যান্স বিনিয়োগ করতে অনুরোধ জানিয়েছে জাতিসংঘের অভিবাসন বিষয়ক সংস্থা আইওএম। একই সঙ্গে বাংলাদেশে বিদেশফেরত অভিবাসী কর্মীদের পুনঃরেকত্রীকরণে সহায়তা প্রদান এবং অপবাদ সংস্কৃতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।

আজ মঙ্গলবার (১৬ জুন) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আন্তর্জাতিক ফ্যামিলি রেমিটেন্স দিবসে উপলক্ষ্যে সব জনগোষ্ঠীকে এই আহ্বান জানায় আইওএম।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আন্তর্জাতিক সংস্থাটি জানায়, কোভিড-১৯ মহামারি সৃষ্ট অর্থনৈতিক ও শ্রম সঙ্কটের ফলে হাজার হাজার অভিবাসী কর্মী বছর শেষে দেশে ফিরে আসবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। মন্দা সংক্রান্ত কারণে চাকরি ছাটাইয়ের ফলে শুধুমাত্র রেমিটেন্স গ্রহণকারী পরিবারগুলোই নয়, প্রভাবিত হবে তাদের কমিউনিটিও।

জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর দেয়া তথ্য অনুযায়ী, শুধুমাত্র ২০১৯ সালেই সাত লাখ অভিবাসী কর্মী দেশ ছেড়ে বিদেশে যান কর্মসংস্থানের খোঁজে। ২০১৯ সালে প্রবাসীরা বাংলাদেশে ১৮.৩২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিটেন্স পাঠায়, যা দক্ষিণ এশিয়ায় তৃতীয় সর্বোচ্চ। বাংলাদেশে পাঠানো রেমিটেন্সের ৭৩ শতাংশের বেশি রেমিটেন্স আসে উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশসমূহ থেকে। বাংলাদেশে রেমিটেন্স প্রবাহ সরাসরি এদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নকে প্রভাবিত করে এবং অরক্ষিত জনগোষ্ঠীর জন্য একটি লাইফলাইন হিসাবে কাজ করে।

আজ মঙ্গলবার (১৬ জুন), ‘বাংলাদেশে অভিবাসন, ফ্যামিলি রেমিটেন্স, সম্পদ এবং দক্ষতার শ্রেণীবিভাগ’ বিষয়ক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে আইওএম। ২০১৯ সালে এক হাজার রেমিটেন্স-নির্ভর পরিবারের উপর পরিচালিত জরিপ ও মূল অংশীদারদের সাথে গুনগত আলোচনার ফলে উঠে আসা ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে এই প্রতিবেদনে।

জরিপে দেখা গেছে, উচ্চতর দক্ষতাসম্পন্ন কর্মীরা স্বল্প দক্ষতাসম্পন্ন কর্মীদের তুলনায় অধিক অর্থ দেশে পাঠায়। দক্ষতা বৃদ্ধির ফলে ২০০৯ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে রেমিটেন্স বৃদ্ধি পেয়েছে মাসিক হারে প্রায় ২৫৫ মার্কিন ডলার পর্যন্ত। অভিবাসীদের দক্ষতার উপর নির্ভর করে রেমিট্যান্স কীভাবে বিনিয়োগ এবং সঞ্চয় করা হবে। দক্ষ অভিবাসীরা পরিবারের সদস্যদের অনুরোধ করে সঞ্চয় একাউন্টে রেমিট্যান্স বিনিয়োগ করতে। আর অদক্ষ অভিবাসীরা অপরদিকে তাদের রেমিট্যান্স মূলত লোন পরিশোধে খরচ করে। উচ্চতর দক্ষতাসম্পন্ন অভিবাসী কর্মীরা ভালো বেতনের চাকরিতে নিয়োগ পান এবং দীর্ঘ সময় ধরে স্বল্প দক্ষ কর্মীদের তুলনায় অধিকতর রেমিটেন্স পাঠিয়ে থাকেন।

গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশি অভিবাসী কর্মী এবং রেমিটেন্স প্রেরকদের মধ্যে অধিকাংশই পুরুষ (৯৮ শতাংশ)। এদের প্রায় ১২ শতাংশ অভিবাসী কর্মী একেবারেই স্কুলে যাননি এবং প্রায় ৮০ শতাংশ পড়াশোনা করেছেন মাধ্যমিক পর্যন্ত। জরিপে অংশগ্রহণকারী প্রবাসী শ্রমিকদের মধ্যে অর্ধেক অংশ কাজ করেছেন কোনো প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানির কর্মচারি হিসেবে (৪৯শতাংশ) এবং প্রায় এক-চতুর্থাংশ (২৬ শতাংশ) কাজ করেছে শ্রমিক হিসেবে, যার মধ্যে দিন মজুরি, খণ্ডকালীন শ্রমিক আছেন। বাংলাদেশের অভিবাসী কর্মীরা অন্য দেশের দক্ষ কর্মীদের তুলনা কম অর্থ পাঠাতে পারেন বা অর্থনৈতিকভাবে কম লাভবান হন। কারণ অদক্ষ এবং স্বল্প দক্ষ কর্মীরা যে পরিমাণ অর্থ প্রেরণ করেন তা দক্ষ কর্মীদের তুলনায় অনেক কম।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঢাকা এবং চট্টগ্রামে রেমিটেন্স গ্রহণকারী পরিবারের সংখ্যা সর্বোচ্চ (৭৬ শতাংশ)। রেমিটেন্স গ্রহণকারী পরিবারের মোট ৬৫ শতাংশ পরিচালনা করেন নারী, যারা মূলত বেকার এবং সাধারণত রেমিটেন্সকে অ-আয় উৎপাদনমূলক কর্মকাণ্ডে খরচ করেন।

জরিপ মতে, রেমিটেন্স মূলত স্বল্পমেয়াদী প্রয়োজন মেটাতে ব্যবহৃত হয় এবং সম্পদের বৈচিত্র্য আনতে বা আর্থিক স্থিতিস্থাপকতা তৈরি করতে খুব কমই ব্যবহৃত হয়, যা রেমিটেন্সের উপর পরিবারের নির্ভরতা আরো বাড়িয়ে তোলে। প্রবাসী এবং তাদের পরিবারের স্বল্প অর্থনৈতিক জ্ঞান তাদেরকে টেকসই উপার্জন, রেমিটেন্স ব্যবস্থাপনা এবং সম্পদ তৈরির ক্ষেত্রে এক অনিশ্চিত পরিস্থিতির মুখে ঠেলে দেয়।

গবেষণায় যে সব সুপারিশসমূহ উঠে এসেছে তা হলো-
প্রথমত, জেন্ডার-সংবেদনশীল দক্ষতা বিকাশের জন্য বিনিয়োগ করতে হবে এবং পরিবারের অর্থনৈতিক জ্ঞান এবং রেমিটেন্স পরিচালনার ক্ষমতা তৈরি করতে হবে।

দ্বিতীয়ত, শিক্ষা এবং দক্ষতা বৃদ্ধিতে বিনিয়োগ করতে হবে যাতে করে স্বল্প দক্ষ অভিবাসী কর্মী আরো বেশি অর্থ উপার্জন করতে পারে এবং ঋণের চক্র ভেঙে বেড়িয়ে আসতে পারে।

তৃতীয়ত, বিপদাপন্নতা হ্রাসে এবং আর্থিক স্বাধীনতার পথে সহায়তা প্রদানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে যেন উন্নত ঋণ ব্যবস্থাপনা এবং সঞ্চয়ের আনুষ্ঠানিককরণ নিশ্চিত হয়।

চতুর্থ, নারীদের অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক নীতি গ্রহণ করতে হবে যাতে করে অর্থনীতির পরিমাপ এবং টেকসই কৌশলসমূহ বিবেচনা করে সম্পদ উৎপাদন এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের সকল ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে।

সর্বশেষে, অভিবাসী এবং রেমিটেন্স প্রাপকদের জেন্ডার-সংবেদনশীল অর্থনৈতিক শিক্ষা এবং পরামর্শ দেয়ার জন্য পার্টনারশিপ গঠনের সুপারিশ করা হয় এই গবেষণায়।

গবেষণা ফলাফল বিষয়ে আইওএম বাংলাদেশ মিশন প্রধান গিওরগি গিগাওরি বলেন, অন্য যেকোন সময়ের তুলনায় এখন আমাদের মন্দা-প্রভাবিত রেমিটেন্স নির্ভর মানুষকে সহায়তায় অধিক নজর দিতে হবে। আমাদের অভিবাসী কর্মীদের দক্ষতা বিকাশকে অগ্রাধিকার প্রদানের জন্য সরকারকে সহায়তা করা প্রয়োজন যাতে অভিবাসী কর্মীরা বাংলাদেশে রেমিটেন্স প্রবাহ বৃদ্ধি করতে পারে। একইসাথে তাদের পরিবার, বিশেষ করে নারীদের অর্থনৈতিক শিক্ষা প্রদানে গুরুত্ব দিতে হবে, যাতে করে রেমিটেন্স উৎপাদনমুখী খাতে বিনিয়োগ নিশ্চিত হয় এবং রেমিটেন্স নির্ভর পরিবারগুলোর স্থিতিস্থাপকতা ও অর্থনৈতিক স্বাধীনতা তৈরি হয়।

Facebook Comments Box
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ৫:০৭ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১৬ জুন ২০২০

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

রডের দাম বাড়ছে
(11192 বার পঠিত)

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।