শনিবার ২৩ নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৮ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

Ad
x

সাধারণ বীমায় পদোন্নতি প্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   সোমবার, ১৬ আগস্ট ২০২১   |   প্রিন্ট   |   622 বার পঠিত

সাধারণ বীমায় পদোন্নতি প্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ

মামলার কারণে দীর্ঘ ৮ বছর বন্ধ ছিল সিনিয়র কর্মকর্তাদের পদোন্নতি। ফলে তাদের মধ্যে নেমে এসেছিল হতাশা। অফিসের দৈনন্দিন কার্যক্রমেও যার প্রভাব পরিলক্ষিত হচ্ছিল। তবে সম্প্রতি এ অবস্থার পরিত্রাণ ঘটে। পদোন্নতির সুবাতাস বইতে থাকায় কর্মকর্তাদের মাঝে ফিরে আসে প্রাণচাঞ্চল্য। কিন্তু ভিত্তিহীন কিছু অভিযোগকে কেন্দ্র করে পদোন্নতি বঞ্চিত হচ্ছে সুপারিশকৃত কয়েকজন, এমন গুঞ্জনে ফের সার্বিক কার্যক্রমে নেমে আসে স্থবিরতা। এমনটাই ঘটছে রাষ্ট্রায়ত্ত সাধারণ বীমা করপোরেশনে।

সূত্র জানায়, গত ৯ মে প্রতিষ্ঠানের মানবসম্পদ উন্নয়ন কমিটি জেনারেল ম্যানেজার বা জিএম পদে পদোন্নতির জন্য করপোরেশনের ১২ জন ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজারের মধ্যে বাছাই করে ৭ জনকে যোগ্য বিবেচনা করে। সে সময় ওয়াসিফুল হক, মো. জাকির হোসেন, বিবেকানন্দ সাহা, খসরু দস্তগীর আলম, এসএম শাহ আলম, শেখ পারভীন সুলতানা ও মোহাম্মদ সেলিমকে পদোন্নতি দিতে বোর্ডের অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করা হয়। তবে চূড়ান্ত অনুমোদনের আগে এসব কর্মকর্তার বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও গোয়েন্দা সংস্থার ছাড়পত্রের শর্ত দেয় পরিচালনা পর্ষদ।

ইতোমধ্যে পদোন্নতির সুপারিশ পাওয়া ওই সব কর্মকর্তার বিষয়ে গোয়েন্দা সংস্থা থেকে প্রতিবেদন প্রদান করা হলেও দুদক থেকে এখনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে সূত্র জানায়, দুদকের প্রতিবেদন না এলেও সুপারিশপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের মধ্যে কেবল ৪ জনকে পদোন্নতি দিতে গোপনে তোড়জোড় শুরু করেছে পর্ষদের একটি অংশ। যাদের অনেকেই রাজনৈতিক ভিন্ন মতাদর্শের অনুসারী হিসেবে চিহ্নিত। এদের তৎপরতায় পদোন্নতির তালিকা কয়েকজনকে ভিত্তিহীন অভিযোগে বাদ দেয়ার প্রচেষ্টা চলছে। অথচ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নন-ক্যাডার কর্মকর্তা ও কর্মচারী (জ্যেষ্ঠতা ও পদোন্নতি) বিধিমালা-২০১১ এর ৫ ধারায় বলা আছে- “কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলার অভিযোগনামা দাখিল বা দুর্নীতি দমন কমিশন কর্তৃক দায়েরকৃত মামলার চার্জশিট দাখিল বা ফৌজদারি মামলা দায়েরের সরকারি মঞ্জুরি প্রদান করা হইলে উক্তরূপ কারণে কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী গ্রেফতার হইলে উক্ত মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তিনি পদোন্নতির জন্য বিবেচিত হইবেন না।” এক্ষেত্রে বাদপড়াদের বিষয়ে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। তাছাড়া গোয়েন্দা প্রতিবেদনে এটাও বলা হয় যে, এসব বেনামী অভিযোগের কোনো সত্যতা পায়নি নিয়ন্ত্রক সংস্থা। তাহলে কিসের ভিত্তিতে ও কেন তাদের বাদ দেয়ার অপচেষ্টা চলছে, সেটাই হয়ে উঠেছে এখন মুখ্য বিষয়। অভিযোগ রয়েছে, অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থের জন্যই এমনটা করা হচ্ছে। খাত বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশ ও জাতিকে পিছনের দিকে টেনে নিতে একটি বিশেষ মহল সর্বদা আগস্ট মাসকে টার্গেট করে। এই আগস্টেই জাতি অভিভাবকহীন হয়ে পড়ে, এই মাসেই সরকার প্রধানের ওপর হামলা হয় এবং এ মাসেই সাধারণ বীমায় অপশক্তির মতাদর্শীদের পুরস্কৃত করার চেষ্টা চলছে। বোর্ডের অভিযুক্ত ওই অংশের সদস্যদের শুভবুদ্ধির উদয় না হলে সাধারণ বীমা প্রতিযোগিতামূলক বাজারে দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়নে পিছিয়ে পড়বে বলে তারা মন্তব্য করেন।

অন্যদিকে যাদেরকে পদোন্নতি দেয়া হবে বলে জানা গেছে, তাদের মধ্যে দুইজনের বিষয়ে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে সরকার-বিরোধী রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ততার তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে সূত্রটি। জানা গেছে, উল্লিখিত দুইজনের মধ্যে একজন ছাত্র অবস্থায় সরাসরি ছাত্রদলের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন, যদিও এখন কোনো রাজনীতির সাথে জড়িত না বলে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। তাছাড়া বর্তমান কর্মস্থলে সহকর্মী এবং অধঃস্তন কর্মকর্তা বা কর্মচারীদের সাথে তার আচরণ সন্তোষজনক নয়। আর অপরজন কোনো রাজনীতির সাথে সরাসরি সম্পৃক্ততা না থাকলেও পরিবারের অধিকাংশ সদস্যই বর্তমান সরকার বিরোধী মতাদর্শে বিশ্বাসী।

এদিকে পদোন্নতির তালিকায় থাকা এসএম শাহ আলম বলেন, ‘আমি মূলত জোনাল অফিসে বসি। তাই এ বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। তবে শুনেছি পদোন্নতির তালিকায় আমিসহ ৭ জনকে সুপারিশ করা হয়েছে।’ এ বিষয়ে জানতে সাধারণ বীমা করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহরিয়ার আহসানের সাথে যোগাযোগ করা হয়। তিনি বলেন, ‘পদোন্নতির তালিকা থেকে কাউকেই বাদ দেয়া হয়নি। এখন পর্যন্ত এটি পেন্ডিং অবস্থায় আছে। দুদকের রিপোর্ট পেলেই এ নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’

অন্যদিকে করপোরেশনের চেয়ারম্যান জিয়াউল ইসলামের কাছেও এ অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে তাকে বলা হয়, স্বাধীনতার সপক্ষে ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিরোধী রাজনৈতিক আদর্শে বিশ্বাসীদের প্রাধান্য দিয়ে পদোন্নতি দেয়া হচ্ছে। এমনটা ঘটনা কী সাধারণ বীমার উন্নয়নে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের পরিপন্থী হবে না? প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে চেয়ারম্যান জানান, তিনি বর্তমানে শারীরিকভাবে অসুস্থ আছেন। এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ভালো বলতে পারবেন।

বীমা সংশ্লিষ্টদের মতে, প্রধানমন্ত্রীর গৃহীত উন্নয়ন কার্যক্রমকে প্রশ্নবিদ্ধ করতেই পরিকল্পিতভাবে সরকারবিরোধী লোকদের পুরস্কৃত করা হচ্ছে। তাদের বেতন-ভাতা ও পদোন্নতি দিয়ে সরকারি কাজে শৈথল্য দেখিয়ে অগ্রযাত্রা ব্যাহত করার পাঁয়তারা করছে একটি মহল। সরকারের প্রায় প্রতিটি প্রতিষ্ঠানেই এরা ঘাপটি মেরে থাকে। অপেক্ষায় থাকে সুযোগের। দেশের সকল মেগা প্রজেক্টে অগ্রণী ভূমিকা রাখছে এ প্রতিষ্ঠানটি, মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ এবং পুনঃবীমা খাতে প্রচুর দক্ষ জনবলের চাহিদা রয়েছে। সেখানে এমন ঘটনা ঘটলে তা পুনঃবীমা খাতের উন্নয়ন ও অগ্রগতির বাধার শামিল। তাই এখনই এদের চিহ্নিত করে জবাবদিহিতার আওতায় এনে দেশের অগ্রযাত্রাকে ত্বরান্বি¦ত করতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানান তারা।

 

Facebook Comments Box
top-1
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ১১:০৬ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ১৬ আগস্ট ২০২১

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
প্রকাশক : সায়মুন নাহার জিদনী
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।