শনিবার ২৩ নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৮ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

Ad
x
ফারইস্ট লাইফের অর্থ আত্মসাৎ

সাবেক পরিচালক খালেক ও ছেলে রুবায়াত ৫দিনের রিমান্ডে

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   সোমবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২২   |   প্রিন্ট   |   162 বার পঠিত

সাবেক পরিচালক খালেক ও ছেলে রুবায়াত ৫দিনের রিমান্ডে

অর্থ আত্মসাৎ মামলায় ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের সাবেক পরিচালক এমএ খালেক ও তার ছেলে কোম্পানির সাবেক পরিচালক রুবায়াত খালেকের ৫ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। পিতা পুত্রসহ ওই কোম্পানির সাবেক চেয়ারম্যান, সাবেক পরিচালকদের বিরুদ্ধে প্রায় দুই হাজার ৮ শত কোটি টাকা লুটপাট ও আত্মসাতের অভিযোগে ডিএমপি রমনা মডেল থানায় মামলা রয়েছে।

সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রশীদের আদালতে তাদের হাজির করে পুলিশ। এই মামলার তদন্তের স্বার্থে তাদের বিরুদ্ধে ১৫ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। পরে আবেদন শুনানি শেষে বিচারক পিতা ও পুত্রের বিরুদ্ধে ৫ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

জানা যায়, এর আগে দ্বিতীয় দফায় একদিনের রিমান্ড শেষে ফারইস্ট লাইফের সাবেক চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলামকে রোববার (১৮ সেপ্টেম্বর) আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর মামলার তদন্তের জন্য তাকে ফের ১২ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। পরে ওই আবেদন শুনানি শেষে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শহিদুল ইসলাম আসামী নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে ৪দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগে ১৬ সেপ্টেম্বর তার বিরুদ্ধে একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

১৩ সেপ্টম্বর এই মামলার অপর আসামী কোম্পানিটির সাবেক পরিচালক এমএ খালেক, তার ছেলে সাবেক পরিচালক রুবায়াত খালেককে আদালতে হাজির করা হয়। এরপর শাহবাগ থানায় করা মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তাদের ১৫ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। অন্যদিকে, আসামির পক্ষের আইনজীবীরা রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক তাদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে দুদিন জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দেন।

সূত্র মতে, ফারইস্ট লাইফের সাবেক চেয়ারম্যান ও সাবেক পরিচালকদের বিরুদ্ধে নজিরবিহীন লুটপাটের তথ্য পাবার পর ২০২১ সালের ১ সেপ্টেম্বর কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেয় পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। পর্ষদ ভেঙে দেওয়ার পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটিতে ১০ জন স্বতন্ত্র পরিচালকও নিয়োগ দেওয়া হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন ড. মুহাম্মদ রহমত উল্লাহকে চেয়ারম্যান করে নতুন পর্ষদে পরিচালক হিসেবে রাখা হয় মোহাম্মদ সানাউল্লাহ অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটসের সিইও মোহাম্মদ সানাউল্লাহ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং ও বিমা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলাম, অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব মো. মোফাজ্জল হোসেন, অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল গাজী মো. খালিদ হোসেন, স্নেহাশীষ অ্যান্ড কোম্পানির পার্টনার স্নেহাশীষ বড়ুয়া, একাত্তর মিডিয়ার প্রধান সম্পাদক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মোজাম্মেল হক, জি সেভেন সিকিউরিটিজের চেয়ারম্যান সাজেদুর রহমান, জনতা ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. জিকরুল হক এবং নর্দান ইসলামী ইন্স্যুরেন্সের সাবেক চেয়ারম্যান জহিরুল ইসলাম চৌধুরীকে।

বিএসইসি থেকে এমন পদক্ষেপ নেওয়ার ১৫ দিনের মাথায় কোম্পানিটির সিইও পদ থেকে হেমায়েত উল্লাহকে বহিষ্কার করে বিমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ। আইডিআরএ’র এ সংক্রান্ত চিঠিতে বলা হয়, কোম্পানি পরিচালনার ক্ষেত্রে হেমায়েত উল্লাহর বিভিন্ন অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা, আর্থিক অনিয়ম, বিমা পলিসি গ্রাহক ও বিমাকারীর স্বার্থের জন্য ক্ষতিকর এবং নিয়ম পরিপন্থি কর্মকাণ্ডের তথ্য বিভিন্ন মাধ্যমে আইডিআরএ’র নজরে এসেছে। বিমা গ্রাহকদের অভিযোগসহ অনিয়মের তথ্য-প্রমাণ রয়েছে।

এছাড়া হেমায়েত উল্লাহর বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করে নিজ ভোগদখলে রেখে এবং মিথ্যা তথ্য সম্বলিত সম্পদ বিবরণী দাখিলের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) মামলা করেছে এবং তার বিদেশ গমনে জারি করেছে নিষেধাজ্ঞা। এ সংক্রান্ত তথ্য আইডিআরএ’র কাছে রয়েছে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।

সুত্র মতে. ২০২১ ২১ ডিসেম্বর হেমায়েত উল্লাহকে কোনো বিমা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ না দিতে নির্দেশ দেয় আইডিআরএ। সব বিমা কোম্পানির চেয়ারম্যান ও সিইও বরাবর পাঠানো এ সংক্রান্ত চিঠিতে বলা হয়, হেমায়েত উল্লাহ ২০১১ থেকে ২০২১ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্নভাবে ফারইস্ট লাইফেল ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। তিনি বিমা আইন, ২০১০ ও বিমা আইনের বিভিন্ন বিধিবিধান অনুযায়ী কোম্পানি পরিচালনার জন্য দায়ী থাকবেন মর্মে তার নিয়োগপত্রে সুস্পষ্টভাবে শর্ত আরোপ করা হয়েছিল। কিন্তু দায়িত্বকালে কোম্পানিতে ব্যাপক অনিয়ম সংঘটিত হয়েছে মর্মে সম্প্রতি বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়। এ জন্য তিনি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দায়ী।

এদিকে বিএসইসির এক তদন্তে উঠে আসে, বিভিন্ন ব্যাংকে রাখা কোম্পানির আমানতের বিপরীতে অবৈধ ঋণ সুবিধা নিয়ে ৪২১ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন উদ্যোক্তা পরিচালক এমএ খালেক।

স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানে অবৈধ বিনিয়োগ ও ঋণের মাধ্যমে কোম্পানির ৬৫৯ কোটি টাকা পাচার করেছেন নজরুল, এমএ খালেক ও অন্যান্য পরিচালক। কোম্পানির কর্মচারীদের নামে দুটি সমবায় সমিতি বানিয়ে আরও ১৯১ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন তারা। সব মিলিয়ে ২ হাজার ১২৯ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচার করেছেন। তবে আত্মসাতের পরিমাণ আরও বেশি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ বিভিন্ন ব্যাংকে রাখা আমানতের ১ হাজার ৬৮২ কোটি টাকার কোনো হিসাব এখনো পাওয়া যায়নি।

Facebook Comments Box
top-1
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ৮:০৯ অপরাহ্ণ | সোমবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২২

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
প্রকাশক : সায়মুন নাহার জিদনী
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।