নিজস্ব প্রতিবেদক | বৃহস্পতিবার, ১৬ মার্চ ২০২৩ | প্রিন্ট | 69 বার পঠিত
হজ যাত্রীদের বিমান ভাড়া কমানোর সুপারিশ করেছে সংসদীয় কমিটি। বিমান ভাড়া ১ লাখ ৯৭ হাজার ৭৯৭ টাকা থেকে কমিয়ে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা করার সুপারিশ করেছে কমিটি। ১৫ মার্চ সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত ধর্ম মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে এ সুপারিশ করা হয়। বৈঠকে হজ যাত্রীদের মেডিক্যাল টিমে হার্ট, অ্যাজমা ও ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের অন্তর্ভুক্তির সুপারিশ করা হয়।
কমিটি হজ যাত্রীদের সহায়তার জন্য সৌদি আরবের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের অন্তর্ভুক্তির কার্যক্রমকে দ্রুত সমাপ্তির সুপারিশ করে।
বৈঠকে সংসদীয় কমিটির সভাপতি মো. হাফেজ রুহুল আমীন মাদানী সভাপতিত্ব করেন। এসময় সংসদ সদস্য সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী, জিন্নাতুল বাকিয়া, মোসা. তাহমিনা বেগম এবং রত্না আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে চলতি বছরের ঘোষিত অযৌক্তিক হজের প্যাকেজের সংশোধন করে টাকা কমানোর উদ্যোগ নিতে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিনকে দায়িত্ব দিয়েছেন হাইকোর্ট। উচ্চ আদালত বলেছেন, হজে যেতে ইচ্ছুক সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে আপনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলুন। খরচ কী ভাবে কমানো যায় সে বিষয়ে উদ্যোগ নিন। এইভাবে মনগড়া হজ প্যাকেজের মেনে নেওয়া যায় না।
গত ১৪ মার্চ বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর হাইকোর্ট বেঞ্চ অ্যাটর্নি জেনারেলকে উদ্দেশে এ কথা বলেন। তখন আদালতে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, হজের যে প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে, এটা সরকারের পলিসি ডিসিশন। এই বিষয়ে আদালত আদেশ দিতে পারেন না। তখন আদালত বলেন, এটার সঙ্গে জনস্বার্থ জড়িত। তাই এ বিষয়ে শুনতে বাধা নেই। পরে আদালত এই রিট আবেদনের শুনানি মুলতবি করেন।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট গাজী মো. মহসীন। হজ প্যাকেজ নিয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন হাইকোর্টে দাখিল করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, ডলারের দাম বৃদ্ধি, বিমান ভাড়া বৃদ্ধি, বাসা ভাড়া ও মোয়াল্লেম ফি বাড়ায় হজ প্যাকেজের দাম বাড়ানো হয়েছে।
সরকারি ও বেসরকারিভাবে সমন্বয় করে হজের খরচ নির্ধারণ করা হয়েছে। হজে যেতে বাংলাদেশ অংশে যে ব্যয় হয়, তার পরিমাণ আড়াই লাখ টাকা। আর সৌদি অংশের ব্যয় সাড়ে ৪ লাখ টাকা। ফলে সৌদি অংশে যে ব্যয় হয় সেখানে সরকারের কিছু করার থাকে না। এটা আন্তর্জাতিকভাবেই সমন্বয় করতে হয়। এছাড়া বাংলাদেশ অংশে যে আড়াই লাখ টাকা ব্যয়ের কথা বলা হয়েছে, সেখানে বিমান ভাড়া বেড়েছে, ডলারের মূল্য বেড়েছে, আবার সৌদি আরবের বাসা ভাড়া ও মুয়াল্লিম ফি সেগুলোও বেড়েছে।
গত ১২ মার্চ হজের প্যাকেজ মূল্য কমিয়ে পুনরায় প্যাকেজ ঘোষণা করতে রিট দায়ের করা হয়। রিটে বাংলাদেশ বিমান ও সৌদি এয়ারলাইন্স ছাড়াও যেকোনো এয়ারলাইন্সে টিকিট কেটে হজে যাওয়ার নির্দেশনা চাওয়া হয়।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আশরাফ উজ জামান জনস্বার্থে এ রিট দায়ের করেন। রিটে ধর্ম সচিব, বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়।
গত ৬ মার্চ হজের প্যাকেজ মূল্য সংশোধন করে চার লাখ টাকা নির্ধারণ করতে সরকারকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও আল কোরআন স্টাডি সেন্টারের প্রধান সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট আশরাফ উজ জামান ধর্ম মন্ত্রণালয়কে এ নোটিশ পাঠান।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, সৌদি আরব, ইরান, তুরস্কের সরকারকে নোটিশের অনুলিপি পাঠানো হয়েছে। সাতদিনের মধ্যে হজের প্যাকেজ পুনর্র্নিধারণ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়। অন্যথায় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও নোটিশে জানানো হয়। ৭ দিন পার হলেও হজের প্যাকেজ কমানোর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় এ রিট দায়ের করা হয়েছে বলে জানান আইনজীবী আশরাফ উজ জামান।
গত ৬ মার্চ আইনজীবী আশরাফ উজ জামান বলেছিলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ-সৌদি-বাংলাদেশ রুটে প্লেন ভাড়া ৭৬ হাজার টাকা থেকে এক লাখ ১০ হাজার টাকা। প্রতি বছর দুই দেশের সরকার হজ যাত্রীদের সৌদি ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের টিকিট কিনতে বাধ্য করে। এ কারণে টিকিট কিনতে হজ যাত্রীদের স্বাধীনতা ধ্বংস হয়।
এসব কারণসহ বিভিন্ন বিষয় উল্লেখ করে চার লাখ টাকার মধ্যে হজ প্যাকেজ-২০২৩ সংশোধন, পরিবর্তন এবং পুনর্র্নিধারণ করতে নোটিশে অনুরোধ করা হয়। সরকারি ব্যবস্থাপনায় চলতি মৌসুমে হজের খরচ ছয় লাখ ৮৩ হাজার ১৮ টাকা নির্ধারণ করেছে সরকার। অন্যদিকে কোরবানি ছাড়াই এবার বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ যাত্রীদের জন্য সর্বনিম্ন খরচ নির্ধারণ করা হয়েছে ছয় লাখ ৭২ হাজার ৬১৮ টাকা। আগের বছর এটি ছিল পাঁচ লাখ ২২ হাজার ৭৪৪ টাকা। অর্থাৎ আগের বছরের চেয়ে দেড় লাখ টাকা বেড়েছে।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ২৭ জুন পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে। এ উপলক্ষ্যে গত ৯ জানুয়ারি সৌদি সরকার ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে দ্বি-পাক্ষিক চুক্তি সই হয়। চুক্তি অনুযায়ী এ বছর হজ যাত্রীর কোটা এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন নির্ধারিত হয়েছে। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১৫ হাজার জন ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় এক লাখ ১২ হাজার ১৯৮ জন পবিত্র হজ পালন করতে পারবেন। এ বছর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে সৌদি আরবে গমনকারী শতভাগ হজ যাত্রীর প্রি-অ্যারাইভাল ইমিগ্রেশন ‘মক্কা রোড চুক্তি’ অনুযায়ী বিমানবন্দরেই অনুষ্ঠিত হবে।
Posted ৭:০১ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৬ মার্চ ২০২৩
bankbimaarthonity.com | rina sristy