বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১২ বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাড়ছে ব্যক্তি করমুক্ত আয়সীমা

  |   বুধবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৩   |   প্রিন্ট   |   222 বার পঠিত

২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাড়ছে ব্যক্তি করমুক্ত আয়সীমা

উচ্চ মূল্যস্ফীতির বাজারে কিছুটা স্বস্তি পেতে যাচ্ছে দেশের সাধারণ মানুষ। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে ব্যক্তি করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানোর নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে এই সীমা তিন লাখ টাকা হলেও তা বাড়িয়ে সাড়ে তিন লাখ থেকে চার লাখ টাকা হতে পারে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে একদিকে মানুষের আয় কমেছে, অন্যদিকে বাজারে জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। দুটি মিলিয়ে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে। আর সার্বিকভাবে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের বার্ষিক করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন মহলের বিশিষ্টজনরা। তাদের দাবির বিষয়টি ইতিবাচকভাবে নিয়েছে এনবিআর। তবে বিষয়টি এখনও চূড়ান্ত হয়নি।

এনবিআরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্যক্তিখাতে করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানোর ক্ষেত্রে সায় দিয়েছেন। তবে জাপান সফর শেষে তিনি দেশে ফিরে এলে বিষয়টি সুরাহা হবে। তার আগে নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না আসলে করমুক্ত আয়সীমা কত হবে। তবে পরিমাণটি বাড়বে বলে জানিয়েছেন তিনি।

বর্তমানে একজন ব্যক্তির মাসিক আয় ২৫ হাজার টাকার বেশি হলেই তিনি করের আওতায় আসছেন। তবে এক্ষেত্রে আয়সীমা সাড়ে তিন লাখ টাকা করা হলে করের আওতায় আসতে একজন ব্যক্তির মাসিক আয় ২৯ হাজার ১৬৬ টাকার ওপর হতে হবে। এই সীমা চার লাখ টাকা নির্ধারণ করলে অর্থাৎ মাসিক আয় ৩৩ হাজার ৩৩৩ টাকার বেশি হলে তাকে কর দিতে হবে।

এনবিআরের অনুষ্ঠিত প্রাক-বাজেট আলোচনায় ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানোর সুপারিশ করেছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইসহ অন্যান্য ব্যবসায়ী সংগঠন। জীবনযাত্রার ব্যয়, মূল্যস্ফীতি ও সমসাময়িক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় করমুক্ত আয়সীমা চার লাখ টাকায় উন্নীত করার দাবি করা হয়েছে।

করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানোর যুক্তি হিসেবে এফবিসিসিআই বলেছে, একজন করদাতার সাধারণ জীবনযাপনের জন্য বার্ষিক যে পরিমাণ ন্যূনতম অর্থের প্রয়োজন, সে পরিমাণ অঙ্ক করমুক্ত রাখলে কর ফাঁকির প্রবণতা কমে আসবে এবং কর প্রদানে সক্ষম জনগণ কর দিতে এগিয়ে আসবেন। ব্যক্তিগত করভার কমালে সম্পদ ও মূলধন পাচারের প্রবণতা হ্রাস পাবে এবং সঠিক সময়ে আয় প্রদর্শন উৎসাহিত হবে; যা দেশের বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও অধিক রাজস্ব আহরণে সহায়ক হবে।

প্রাক-বাজেট আলোচনায় বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি বিশেষ করে খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে। তাই মূল্যস্ফীতির চাপ সামলাতে আগামী বাজেটে করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো উচিত।

এনবিআর কর্মকর্তারা আরও জানান, করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানোর চিন্তা করা হলে বিপুলসংখ্যক করদাতা করজাল থেকে বেরিয়ে যাবেন। আর যারা করজালে থাকবেন, তাদের করের পরিমাণ কমবে। এ কারণে বর্তমানে প্রান্তিক করদাতাদের করজালে ধরে রাখতে বিকল্প চিন্তাও করছেন কর কর্মকর্তারা।

জানা গেছে, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে ব্যক্তিপর্যায়ে বার্ষিক তিন লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ে কোনো কর নেই। তবে তিন লাখের বেশি থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ে ৫ শতাংশ হারে কর রয়েছে। ১০ থেকে ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ে ১০ শতাংশ, ৪০ লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ের ওপর ১৫ শতাংশ, ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত ২০ শতাংশ এবং ৫০ লাখ টাকার বেশি আয়ের ওপর ২৫ শতাংশ কর দিতে হয়।

অন্যদিকে নারী ও জ্যেষ্ঠ নাগরিকদের জন্য করমুক্ত আয়সীমা তিন লাখ টাকা। প্রতিবন্ধী করাদাতাদের জন্য সাড়ে চার লাখ টাকা এবং যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের সীমা ৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকা।

সর্বশেষ ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে করমুক্ত আয়সীমা আড়াই লাখ থেকে বাড়িয়ে তিন লাখ টাকা করা হয়। এর আগে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বার্ষিক করমুক্ত আয়সীমা ২ লাখ ২০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে আড়াই লাখ টাকা করা হয়েছিল।

সূত্র জানায়, বিশ্বজুড়ে মহামারি কোভিড ১৯-এর প্রভাব এবং উচ্চ মূল্যস্ফীতি দেখা দেওয়ায় অনেকের প্রকৃত আয় কমে যাওয়ায় ব্যবসায়ী, অর্থনীতিবিদসহ সমাজের নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ চলতি বাজেটেই করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানোর দাবি জানিয়েছিল। কিন্তু এটি অপরিবর্তিত রাখা হয়। তবে চলমান ইউক্রেন যুদ্ধে মূল্যস্ফীতির হার অত্যধিক বাড়তে থাকায় দাবি আরও জোরালো হয়েছে।

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে দেশে ৮৫ লাখের বেশি কর শনাক্তকরণ নম্বরধারী (টিআইএন-ধারী) আছেন। তাদের মধ্যে ৩০ লাখের মতো টিআইএন-ধারী প্রতি বছর আয়কর রিটার্ন জমা দেন, যদিও সব টিআইএন-ধারীর রিটার্ন দেওয়া বাধ্যতামূলক। করহারের ন্যায্যতা নিশ্চিত করা গেলে রিটার্ন জমার পরিমাণ আরও বাড়বে।

এ প্রসঙ্গে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানোর প্রস্তাব নতুন নয়। কোভিডের আগে থেকেই এই প্রস্তাব রয়েছে। এখন এনবিআরের পক্ষ থেকে যে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে সেটা ইতিবাচক। শেষ পর্যন্ত এটা বাস্তবায়ন হলে নিম্ন আয়ের মানুষ বা নিম্ন আয়ের যারা ট্যাক্স পেয়ার তাদের ব্যাপারে একটা ইতিবাচক পদক্ষেপ হবে।’

এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘এই যে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে তার মানে দাঁড়াচ্ছে এর প্রয়োজন আছে। এর থেকে বেশি বা কম হতে পারত- এ রকম লজিক হতে পারে। তবে সরকারের রাজস্বের বিষয়টিও মাথায় রাখা দরকার।’

Facebook Comments Box
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ৩:৪৮ অপরাহ্ণ | বুধবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৩

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

রডের দাম বাড়ছে
(11192 বার পঠিত)

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।