নিজস্ব প্রতিবেদক | শুক্রবার, ২৮ মে ২০২১ | প্রিন্ট | 647 বার পঠিত
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৩ কোম্পানির অস্বাভাবিক আয় বৃদ্ধির কারণে আর্থিক প্রতিবেদন নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে বাজার সংশ্লিষ্টরা। কোম্পানিগুলো হলো- বস্ত্র খাতের ম্যাকসন্স স্পিনিং ও মেট্রো স্পিনিং এবং সিমেন্ট খাতের এমআই সিমেন্ট। বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, করোনার কারণে নেতিবাচক প্রভাবে প্রায় প্রতিটি ব্যবসায় মন্দা পরিস্থিতি চলছে আন্তর্জাতি অর্থনীতিতে। এর প্রভাব বাংলাদেশের কোম্পানিগুলোতেও পড়েছে। যে কারণে কোম্পানিগুলো থেকে বেতন-ভাতা কমানোসহ কর্মী ছাঁটাই করা হচ্ছে, সেখানে কিভাবে কোম্পানিগুলোর আয় বাড়ে। যেখানে করোনা পরিস্থিতির আগে কোম্পানিগুলো সন্তোষজনক আয় তো দেখাতে পারেনি বরং কোনো কোনো কোম্পানি লোকসান দেখিয়েছে। তাই করোনার মধ্যে কিভাবে এসব কোম্পানির মুনাফা কাটিয়ে আয় বেড়েছে।
মাকসন্স স্পিনিং : চলতি হিসাববছরের তৃতীয় প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ’২১) কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ৬৪ পয়সা। গত বছর একই সময়ে কোম্পানিটির ইপিএস ছিল ৩ পয়সা। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় কোম্পানিটির আয় বেড়েছে ৬১ পয়সা বা ২০৩৩ শতাংশ। করোনার আগে যে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি আয় হয় ৩ পয়সা, সেখানে করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও কিভাবে আয় ৬৪ পয়সা হয় বা ২০৩৩ গুণ বাড়ে?
অন্যদিকে, চলতি হিসাববছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে (জুলাই’২০-মার্চ’২১) কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে ১ টাকা ১৫ পয়সা। গত বছর একই সময়ে কোম্পানিটির ইপিএস ছিল ৫ পয়সা। অর্থাৎ গত বছরের একই সময়ের তুলনায় আয় বেড়েছে ১ টাকা ১০ পয়সা বা ২২০০ শতাংশ।
এর আগে কোম্পানিটির প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর‘২০) শেয়ারপ্রতি আয় দেখিয়েছে ১১ পয়সা। আগের বছর একই সময়ে কোম্পানিটির লোকসান ছিল ২ পয়সা। করোনার আগে কোম্পানিটি লোকসান দেখিয়ে করোনার মধ্যে কিভাবে আয় দেখিয়েছে। কারণ করোনার আগে গত বছর ২৭ মার্চ থেকে লকডাউনে প্রায় ৩ মাস কল কারখানা বন্ধ ছিল। এর মধ্যে কিভাবে কোম্পানিটি লোকসান কাটিয়ে মুনাফায় ফিরে আসে।
এরপর দ্বিতীয় প্রান্তিকেও কোম্পানিটি মুনাফা বৃদ্ধি দেখিয়েছে আগের বছরের তুলনায়।
দ্বিতীয় প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর’২০) কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছে ৪০ পয়সা, যা আগের বছর একই সময়ে ছিল ৪ পয়সা। অর্থাৎ আগের বছরের তুলনায় আয় বেড়েছে ৩৬ পয়সা বা ৯০০ শতাংশ।
মেট্রো স্পিনিং : চলতি হিসাববছরের তৃতীয় প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ’২১) কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে ৪২ পয়সা। গত বছর একই সময়ে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি লোকসান ছিল ২০ পয়সা। অর্থাৎ করোনার আগে কোম্পানিটি লোকসান দেখিয়ে করোনার নেতিবাচক পরিস্থিতিতে কিভাবে মুনাফা এভাবে বাড়ে, সেটাই অবাক করার মতো।
চলতি হিসাববছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে (জুলাই’২০-মার্চ’২১) কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে ৬২ পয়সা। গত বছর একই সময়ে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি লোকসান ছিল ১৭ পয়সা। করোনার আগে যেখানে কোম্পানিটি লোকসান দেখিয়েছে, করোনার পরিস্থিতিতে মন্দা ব্যবসা পরিস্থিতিতেও কোম্পানিটি এতো বড় মুনাফা দেখিয়েছে, যা সন্দেহজনক হিসেবে দেখছে বাজার সংশ্লিষ্টরা।
এর আগে কোম্পানিটির প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই‘২০-সেপ্টেম্বর‘২০) শেয়ারপ্রতি আয় দেখিয়েছে ৫ পয়সা। আগের বছর একই সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান দেখিয়েছে ৪ পয়সা।
দ্বিতীয় প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর’২০) কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছে ১৫ পয়সা, যা আগের বছর একই সময়ে ছিল ৭ পয়সা। অর্থাৎ আগের বছরের তুলনায় আয় বেড়েছে ৮ পয়সা বা ১১৪.২৮ শতাংশ।
এম আই সিমেন্ট (ক্রাউন সিমেন্ট) : চলতি হিসাববছরের তৃতীয় প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ’২১) কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ২ টাকা ৭০ পয়সা। গত বছর একই সময়ে কোম্পানিটির ইপিএস ছিল ২৯ পয়সা। আয় বেড়েছে ২ টাকা ৪১ পয়সা বা ৮৩১ শতাংশ। করোনার আগে এতো কম আয়ের কোম্পানি করনোর নেতিবাচক পরিস্থিতিতে মুনাফায় এতো বড় উল্লম্ফন কীভাবে সম্ভব? এতো আলাদিনের চেরাগকেও হার মানায়।
চলতি হিসাববছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে অর্থাৎ ৯ মাসে (জুলাই’২০-মার্চ’২১) কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে ৪ টাকা ৭৩ পয়সা। অথচ করোনার আগে গত বছর একই সময়ে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি লোকসান ছিল ১ টাকা ৬০ পয়সা। মুনাফায় এতো ফারাক মহামারির মধ্যে কী কখনো সম্ভব?
করোনার আগে কোম্পানিগুলো যেখানে মুনাফা দেখাতে হিমশিম খেয়েছে, সেখানে করোনার নেতিবাচক পরিস্থিতিতে কিভাবে এত বেশি আয় দেখিয়েছে। নিশ্চয়ই আর্থিক প্রতিবেদনে ঘাপলা আছে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, করোনার পরিস্থিতির কারণে যেখানে প্রতিটি ব্যবসায় মন্দাবস্থা বিরাজ করছে, সেখানে কোম্পানি ৩টির এত বেশি মুনাফা অস্বাভাবিক বলে মনে হচ্ছে। আসলে এসব প্রতিবেদন স্বচ্ছ্ব কিনা তা খতিয়ে দেখা দরকার। কোম্পানিগুলো কি এমন যাদুর চেরাগ পেয়েছে যে, করোনার মধ্যেও তাদের ঘরে মুনাফার ঝলক নেমেছে।
Posted ১১:৫৬ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ২৮ মে ২০২১
bankbimaarthonity.com | saed khan