বুধবার ১ মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৮ বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আকিজ তাকাফুল লাইফ ইন্স্যুরেন্স

ভুয়া শিক্ষা সনদ নিয়ে আলমগীরের নিয়োগ অনুমোদন পেতে তোড়জোড়

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪   |   প্রিন্ট   |   336 বার পঠিত

ভুয়া শিক্ষা সনদ নিয়ে আলমগীরের নিয়োগ অনুমোদন পেতে তোড়জোড়

 

নতুন বীমা প্রতিষ্ঠান আকিজ তাকাফুল লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ভারপ্রাপ্ত মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আলমগীর চৌধুরীর শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও তার নিয়োগ অনুমোদনে তোড়জোড় শুরু করেছে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ। এ জন্য সম্প্রতি কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) কাছে আবেদন করেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

 

সূত্রটি জানায়, আলমগীর চৌধুরীর নিয়োগ অনুমোদন চেয়ে এর আগেও আইডিআরএ’র কাছে আবেদন করেছিলেন কোম্পানির চেয়ারম্যান। তবে সিইও নিয়োগ ও অপসারণ প্রবিধানমালা ২০১২-এর পূর্ণাঙ্গ শর্ত পূরণ না হওয়ায় নিয়োগ অনুমোদন করেনি কর্তৃপক্ষ। ওই শর্তগুলোর মধ্যে আলমগীর চৌধুরীর শিক্ষাগত ও পেশাগত যোগ্যতার ঘাটতি ছিল। সেই ঘাটতি এখানো শতভাগ রয়ে গেছে।

আলমগীর চৌধুরীর শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে শুরু থেকেই জালিয়াতির অভিযোগ রয়েছে। তিনি আকিজ তাকাফুল লাইফে চাকরির জন্য যে জীবনবৃত্তান্ত দিয়েছেন সেখানে তার সর্বশেষ শিক্ষাগত যোগ্যতা দেখানো হয় মাস্টার্স অব বিজনেস এডমিনিস্ট্রেশন বা এমবিএ। এই ডিগ্রিটি তিনি পান মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগ থেকে।

জীবনবৃত্তান্ত অনুযায়ী, তিনি ২০০৪ সালে বিতর্কিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘দ্যা ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লা’ থেকে এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করেন। একই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে একবছর আগে ২০০৩ সালে তিনি ব্যবস্থাপনা বিষয়ে ব্যাচেলর অব বিজনেস এডমিনিস্ট্রেশন বা বিবিএ ডিগ্রি অর্জন করেন। আলমগীর চৌধুরীর দুটো ডিগ্রিই ‘ভুয়া’ বলে দাবি করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক একাধিক শিক্ষার্থী ও শিক্ষক।

দ্যা ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লা অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আবল কালাম আজাদ উজ্জল গণমাধ্যমে বলেছেন, দ্য ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লা ১৯৯৫ সালে যাত্রা শুরু করে। তবে নানা অনিয়মের কারণে ২০০৬ সালে বন্ধ হয়ে যায়। এই সময়ের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ থেকে সর্বমোট ২৪১ জন শিক্ষার্থী ডিগ্রি লাভ করেছেন। তাদের মধ্যে আলমগীর চৌধুরী নামে কোনো শিক্ষার্থী নেই। বীমা সংশ্লিষ্টরাও তার এই শিক্ষাসনদ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।

তাছাড়া এমবিএ ডিগ্রি অর্জনের ১৬ বছর পর ২০২০ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর স্বদেশ ইসলামী লাইফে চাকরির জন্য দাখিল করা জীবনবৃত্তান্তে তিনি শিক্ষাগত যোগ্যতা উল্লেখ করেন বি.কম। যা ১৯৯৪ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি অর্জন করেন।

স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে বিবিএ-এমবিএ ডিগ্রি থাকার পরও আলমগীর চৌধুরী মাত্র দুই বছর আগে দাখিল করা জীবনবৃত্তান্তে কেন শুধু বি.কম ডিগ্রি উল্লেখ করেছেন।
এর আগে ট্রাস্ট ইসলামী লাইফে চাকরির জন্য জমা দেওয়া জীবনবৃত্তান্তে তিনি শিক্ষাগত যোগ্যতা উল্লেখ করেন বি.কম পাস। এ সময় তিনি স্নাতকোত্তর পাসের কোনো তথ্য দেননি।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আলমগীর চৌধুরীর শিক্ষাসনদ নিয়ে যে ধোঁয়াশা রয়েছে তা মোটামুটি ‘ওপেন সিক্রেট’। তিনি আসলেই পড়ালেখা কতোটুকু করেছেন তা খুঁজে বের করা দরকার। মিথ্যা তথ্য দিয়ে সিইও হয়ে থাকলে তার শাস্তি হওয়া দরকার।

মিথ্যা তথ্য দিয়ে সিইও নিয়োগের আবেদন করলে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর ক্ষেত্রে আইডিআরএ কী পদক্ষেপ নিতে পারে তা জানতে চাইলে কর্তৃপক্ষের মুখপাত্র ও পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘‘ভুয়া শিক্ষাসনদ জমা দিয়ে সিইও হওয়ার সুযোগ নেই’’ –এমন আবেদন কেউ পাঠালে আইডিআরএ তা না-মঞ্জুর করবে। এ বিষয়ে আইডিআরএ কঠোর রয়েছে। ইতিমধ্যে আমরা এমন একাধিক আবেদন না-মঞ্জুর করেছি।

শুধু শিক্ষাগত যোগ্যতা নয়; সিইও নিয়োগে অভিজ্ঞতার যে শর্ত নির্ধারণ করা আছে আলমগীর চৌধুরীর তা পূরণ হয়নি বলেও জানা গেছে।

তিনি ২০২১ সালের ২৭ জুন আকিজ তাকাফুল লাইফ ইন্স্যুরেন্সে অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে যোগদান করেন। ২০২২ সালের ২২ সেপ্টেম্বর বীমা কোম্পানিটির ১১তম বোর্ড সভায় তাকে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা পদে নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সেই হিসাবে ২০২১ সালের ২৭ জুন থেকে ২০২২ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিনি কোম্পানিটির অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে মাত্র এক বছর তিন মাস দায়িত্ব পালন করেন।

বীমা কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) পদে নিয়োগ অনুমোদন পেতে এই পদের নিচের পদে কমপক্ষে তিন বছরের অভিজ্ঞতার প্রয়োজন হয়। প্রয়োজনীয় সেই অভিজ্ঞতা তার ছিলো না।

আকিজ তাকাফুল লাইফ ইন্স্যুরেন্সে অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে যোগদানের আগে তিনি ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সে উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে কাজ করেছেন। ওই কোম্পানিতে তিনি সহকারী ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে যোগদান করেন। দায়িত্ব পালনের এক পর্যায়ে ২০১৬ সালের ২৪ জানুয়ারি ট্রাস্ট লাইফ কর্তৃপক্ষ তাকে উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে পদোন্নতি দেয়। উক্ত পদে তিনি ২ বছর ছয় মাস চাকরি করেন। ট্রাস্ট ইসলামী লাইফে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার অব্যবহিত পদ অতিরিক্তি ব্যবস্থাপনা পরিচালক। কিন্তু আলমগীর চৌধুরী কখনো ট্রাস্ট লাইফে অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে দায়িত্ব পালন করেননি। আর কোম্পানির উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদ হচ্ছে তৃতীয় ধাপের। তাই সিইও’র নিচের পদে তার তিন বছর কাজের অভিজ্ঞতা নেই।

জাল শিক্ষাসনদ ও অভিজ্ঞতার শর্ত পূরণ না হওয়ার বিষয়ে জানতে আলমগীর চৌধুরীর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জালিয়াতির বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, ‘এটা দেখার দায়িত্ব আইডিআরএ’র। তারা যাচাই-বাছাই করে দেখেছেন। আপনারা আইডিআরএ’র সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। অভিজ্ঞতার বিষয়ে তিনি বলেন, এটা আইডিআরএ বুঝবে; এটা তাদের দায়িত্ব। তিনি বলেন, নতুন আইনে সিইও পদের জন্য দুই বছরের অভিজ্ঞতার কথা বলা হয়েছে।

 

Facebook Comments Box
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ৯:২৯ অপরাহ্ণ | বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।