নিজস্ব প্রতিবেদক | শনিবার, ০৯ মে ২০২০ | প্রিন্ট | 497 বার পঠিত
করোনাভাইরাস বিপর্যয় নেমে আসার বছর দুই আগে থেকেই খরা যাচ্ছিল দেশের বেসরকারি খাতে ঋণ বিতরণে। প্রায় এক যুগের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছিল বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি। ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত এক বছরে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ৯ দশমিক ২০ শতাংশ। যদিও ব্যাংকারদের বক্তব্য হলো পরিসংখ্যানে দৃশ্যমান ঋণ প্রবৃদ্ধির মধ্যে নতুন ঋণ খুবই কম। এক্ষেত্রে অনাদায়ী সুদ ও সরকারি কার্যাদেশের বিপরীতে অর্থায়নই বেশি। আর ফেব্রুয়ারি, মার্চ ও এপ্রিলে ব্যাংকগুলোর নতুন ঋণ বিতরণ নেই বললেই চলে। এ পরিস্থিতিতেও প্রাতিষ্ঠানিক আমানত নিয়ে টানাটানিকে ভালো চোখে দেখছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংকও।
বেশি সুদ দিয়ে এক ব্যাংক থেকে আমানত বাগিয়ে নিচ্ছে অন্য ব্যাংক। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আমানতের সুদহার উঠে যাচ্ছে ৯ শতাংশের বেশি। যদিও সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী, ১ এপ্রিল থেকে দেশের সব ব্যাংকের ঋণের সুদহার সর্বোচ্চ ৯ শতাংশে নেমে আসার কথা।
নভেল করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সুনামির এ সময়েও ব্যাংকগুলো কেন বেশি সুদে আমানত ভাগাচ্ছে, তার জবাব খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ব্যাংকারদের অভিযোগ, রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী এমন চেয়ারম্যান বা পরিচালকদের ব্যাংকগুলোই বেশি সুদে আমানত টানছে। এতে বিশেষ কিছু ব্যাংকের আমানত বাড়লেও কমছে অন্য ব্যাংকগুলোর। ফলে প্রতিষ্ঠানিক আমানত ধরে রাখা নিয়ে বিপদে পড়েছেন অনেক ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীরা। আমানত বেরিয়ে যাওয়ায় নতুন প্রজন্মের ব্যাংকগুলোর পরিস্থিতি দিন দিন খারাপ হচ্ছে।
ব্যাংকের হাতে তারল্য বাড়াতে অনেকগুলো নীতির ছাড় দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তার পরও প্রাতিষ্ঠানিক আমানত নিয়ে কাড়াকাড়ি কেন বন্ধ হচ্ছে না, তা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন অন্তত ছয়টি ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহী। মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুুবুর রহমান এ প্রসঙ্গে বলেন, সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের ঘোষণা অনুযায়ী, ব্যাংকগুলো ১ এপ্রিল থেকে ঋণের সুদহার ৯ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। কিন্তু সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী, আমানতের সুদহার ৬ শতাংশে নামেনি। কথা ছিল ব্যাংকিং খাতে ১ এপ্রিল থেকে ৬-৯ বাস্তবায়ন হবে। এক্ষেত্রে আমানতের সুদহার ৬ শতাংশ হলেই ঋণের সুদহার ৯ শতাংশে নামার কথা। কিন্তু আমরা ঋণের সুদহার কমালেও আমানতের সুদহার কমেনি।
তিনি জানান, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান তো দূরের কথা, সরকারি প্রতিষ্ঠানের আমানতও ৬ শতাংশ সুদে পাওয়া যায়নি। রাষ্ট্রায়ত্ত কোনো ব্যাংকও ৯ শতাংশ সুদের নিচে তিন মাস মেয়াদি আমানত দিচ্ছে না। কিছু ব্যাংক ৮ শতাংশের বেশি সুদ দিয়েও প্রাতিষ্ঠানিক আমানত সংগ্রহ করছে। কস্ট অব ফান্ড যোগ করলে এ সুদহার ১১ শতাংশে গিয়ে ঠেকে। ওই ব্যাংকগুলো ৯ শতাংশ সুদে কীভাবে ঋণ দেবে, তা আমার কাছে বোধগম্য নয়।
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে খোঁজ নিয়েও এসব তথ্যের সত্যতা পাওয়া যায়। সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী ১ এপ্রিল থেকে ঋণের সুদহার হবে সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ। আমরা সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকগুলোকে ফিক্সড ডিপোজিট (এফডি) হিসেবে যে আমানত দিই, তা ব্যাংকের বিনিয়োগ। এজন্য ৯ শতাংশ সুদের নিচে কোনো ব্যাংককে তিন মাস মেয়াদি আমানত দেয়া হচ্ছে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, এখন পর্যন্ত সিআরআর, রেপো ও সরকারি সিকিউরিটিজের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক যেসব সিদ্ধান্ত দিয়েছে, তার মাধ্যমে ব্যাংকগুলোর হাতে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগযোগ্য তারল্য গিয়েছে। ব্যাংকের এডি রেশিও সীমা ২ শতাংশ বাড়ানোর ফলে এডিআর সমন্বয়ের দুশ্চিন্তাও নেই। করোনায় সৃষ্ট অর্থনৈতিক বিপর্যয় সামাল দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন তহবিলও গঠন করেছে। তার পরও ব্যাংকগুলো কেন আমানত নিয়ে টানাটানি করছে, তা খতিয়ে দেখা হবে।
তবে একাধিক ব্যাংক এমডির অভিযোগ হলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক ১ এপ্রিল থেকে ঋণের সর্বোচ্চ সুদহার বেঁধে দিলেও আমানতের সুদের বিষয়ে কোনো প্রজ্ঞাপন দেয়নি। ফলে ব্যাংকগুলো ইচ্ছামতো সুদ দিয়ে আমানত টেনে নিচ্ছে। ব্যাংকের পরিচালকদের ঋণ দেয়ার উদ্দেশ্যেই হয়তো বেশি সুদে আমানত টানা হচ্ছে বলে অভিযোগ তাদের।
Posted ৫:৫৪ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ০৯ মে ২০২০
bankbimaarthonity.com | saed khan