নিজস্ব প্রতিবেদক | রবিবার, ১৪ আগস্ট ২০২২ | প্রিন্ট | 157 বার পঠিত
শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন ব্যাংকগুলোর প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, ‘দেশে শিল্প বিকাশে সরকারের পাশাপাশি ব্যাংকগুলোকে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে। বড় শিল্পের নামে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে পরিশোধ করবেন না, রাতারিতি লুট করে বড় হবেন, এটা হতে দেওয়া যাবে না। ঋণের নামে লুটপাট বঙ্গবন্ধুর নীতি ও আদর্শের পরিপন্থি।’
তিনি বলেন, ‘শুধু ডলার বিক্রি করে লাভ করার জন্য এতগুলো ব্যাংকের অনুমোদন দেওয়া হয়নি। এটা নৈতিকতার মধ্যে পড়ে না।’ শুধু মুনাফা করাই ব্যাংকের কাজ নয়। তাদেরকে অবশ্যই জাতীয় দায়িত্ব পালন করতে হবে। সেজন্যই তাদের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। নগরাঞ্চলে বড় গ্রাহকদের ঋণ দিয়ে শহর-গ্রামের মধ্যে বৈষম্য বাড়ানো ব্যাংকের কাজ নয়। বরং উন্নয়ন সুষম করার দায়িত্ব।’
রোববার (১৪ আগস্ট) এফবিসিসিআই কার্যালয়ে আয়োজিত বঙ্গবন্ধুর এসএমই উন্নয়ন ভাবনা ও বর্তমান প্রেক্ষাপট শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিল্পমন্ত্রী এসব কথা বলেন। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করে এসব কথা বলেন এফবিসিসিআইয়ের প্যানেল উপদেষ্টা ও সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।
মন্ত্রী আলোচকদের বক্ত্যের জবাবে বলেন, ‘এসএমই নিয়ে সবাই কথা বলে, কিন্তু কোনও কাজ করে না।’ সরকারি পর্যায়ের সীমাবদ্ধতাগুলো দ্রুত কাটিয়ে ওঠার আশ্বাস দিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘এসএমই ফাউন্ডেশনকে আর্থিকভাবে সক্ষম করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘ব্যাংকগুলোকে অবশ্যই জাতীয় দায়িত্ব পালন করতে হবে। সেজন্যই তাদেরকে লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। নগরাঞ্চলে বড় গ্রাহকদের ঋণ দিয়ে শহর-গ্রামের মধ্যে বৈষম্য বাড়ানো ব্যাংকের কাজ নয়। বরং উন্নয়ন সুষম করার দায়িত্ব।’ মন্ত্রী বলেন, ‘এসএমই নিয়ে সবাই কথা বলেতে পারেন, কিন্তু কোন কাজ করে না। সরকারি পর্যায়ের সীমাবদ্ধতাগুলো দ্রুত কাটিয়ে ওঠার আশ্বাস দিয়ে মন্ত্রী বলেন, এসএমই ফাউন্ডেশনকে আর্থিকভাবে সক্ষম করতে হবে।’
শিল্পমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর আর্দশ, নির্দেশনা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিল্প বিকাশে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি বলেন,সারা বিশ্বে টালমাটাল চলছে। আমরা আমদানি নির্ভর। এসএমই খাতে ঋণ সহায়তা বাড়াতে হবে। শহর গ্রামের বৈষম্য কমাতে হবে।’
ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম মূল প্রবন্ধে উল্লেখ করেন, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো তাদের মোট বিতরণ করা ঋণের মাত্র ১৮ শতাংশ দেয় দেশের এসএমই খাতে। যা পায় মাত্র ৯ শতাংশ ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রতিষ্ঠান। বাকি ৯১ শতাংশ এসএমই ব্যাংক ঋণের সহায়তাবঞ্চিত। এছাড়াও গত কয়েক বছরে ব্যাংকের মোট ঋণের অনুপাতে এসএমই ঋণের হার কমেছে। যা দেশের টেকসই উন্নয়নের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। তাই ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের ঋণ দিতে ব্যাংকগুলোকে আহ্বান জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশে এসএমই খাতের উন্নয়ন করে ৈৈবষম্য কমিয়ে আনতে চেয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। দেশের বর্তমান ক্রমবর্ধমান বৈষম্যের পেছনে এসএমই খাতের বিকাশ না হওয়াকে দায়ী করেন এই অর্থনীতিবিদ। বিশ্বব্যাংকের হিসাবে দেশের এসএমই ঋণের সম্ভাব্য বাজার ২৬ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। কিন্তু ব্যাংকের ঋণ কাঠামোতে এসএমই খাত অবহেলিত। তাই এই বিশাল লাভজনক খাতে ব্যাংকগুলো নজর দিচ্ছে না।
এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, এসএমই অর্থনীতির মেরুদন্ড। কিন্তু এই খাতে ব্যাংকগুলোর ঋণ দিতে অনীহা রয়েছে। তারা সহজে বড় গ্রাহকদের ঋণ দিতে পছন্দ করে। কেননা এতে ব্যাংকারদের কষ্ট কম হয়। এসএমই খাতের মূল সমস্যা অর্থায়ন উল্লেখ করে সভাপতি বলেন, করোনাকালে প্রধানমন্ত্রী এসএমই খাতে ২২ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছিলেন। বৃহৎ খাতের ঋণ তিন মাসের মধ্যে বিতরণ হলেও, এসএমই খাতের ঋণ ২ বছরেও বিতরণ হয়নি। কেননা ব্যাংকগুলো এসএমই উদ্যোক্তাদের টাকা দেওয়ার ক্ষেত্রে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে না ।
এফবিসিসিআই সভাপতি ব্যাংকগুলোর ডলার নিয়ে ব্যবসা করার বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডলার বিক্রিতে মুনাফার হার নির্ধারণ করে দেওয়া উচিত। কোনও কোনও ব্যাংক ডলার বিক্রিতে ৪২৫ শতাংশ পর্যন্ত মুনাফা করছে। এমন চললে দেশ গভীর সংকটে পড়বে।’
এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. মো. মাসুদুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, বড় শিল্প যেভাবে সরকারি নীতি সহায়তা পায়, ছোট উদ্যোক্তারা সেভাবে পান না। কর ও শুল্ক কাঠামোর কারণে স্থানীয় বাজার থেকে কাঁচামাল ও মধ্যবর্তী পণ্য না কিনে বিদেশ থেকে আমদানি উৎসাহিত হচ্ছে।
এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মো. মফিজুর রহমান বলেন, এসএমই বিকাশে সরকারের আর্থিক আনুকূল্য ও প্রকল্প আনুকূল্য পাওয়া যায় না। ২০১৯ সালের এসএমই নীতিমালা বাস্তবায়নের জন্য ২ হাজার ১৪১ কোটি টাকার বাজেট হলেও তার বিপরীতে কোন অর্থ পাওয়া যায়নি।
সেমিনারে আরও বেঙ্গল কর্মাশিয়াল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারিক মোর্শেদ, এফবিসিসিআইয়ের উপদেষ্টা মঞ্জুর আহমেদ, এফবিসিসিআইয়ের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআইয়ের সহ-সভাপতি মো. আমিন হেলালী, মো. হাবীব উল্ল্যাহ ডনসহ পরিচালকরা। সেমিনারটি সঞ্চালনা করেন এফবিসিসিআইয়ের মহাসচিব মোহাম্মদ মাহফুজুল হক।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ ও ২০৪১ সালে উন্নত বাংলাদেশ গড়তে প্রতি বছরে ২০ লাখ নতুন কর্মসংস্থান তৈরি করতে হবে। এজন্য প্রধান ভূমিকা পালন করবে ক্ষুদ্রও মাঝারি খাত। তাই তাদের পাশে ব্যাংকগুলোকে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান সভাপতি। প্রয়োজনে খাতভিত্তিক সমিতি ও জেলা চেম্বারের সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় চুক্তির মাধ্যমে ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের ঋণ দেওয়ার জন্য ব্যাংকগুলোকে আহ্বান জানান তিনি।
এফবিসিসিআই’র সিনিয়র সহ-সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু এসএমই খাতের অর্থায়ন নিশ্চিত করতে বিশেষায়িত ব্যাংক প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করেন। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের বিকাশে উপজেলা পর্যায়ে বিসিক শিল্পনগরী স্থাপন ও অর্থনৈতিক অঞ্চলে এসএমই’র জন্য প্লট বরাদ্দের আহ্বান জানান।
এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. মাসুদুর রহমান অভিযোগ করেন, বড়শিল্প যেভাবে সরকারি নীতি সহায়তা পায়, ছোট উদ্যোক্তারা সেভাবে পান না। কর ও শুল্ক কাঠামোর কারণে স্থানীয় বাজার থেকে কাঁচামাল ও মধ্যবর্তী পণ্য না কেনায় বিদেশ থেকে আমদানি উৎসাহিত হচ্ছে। এসময় তিনি সরকারি প্রকল্পের জন্য স্থানীয় বাজার থেকে কেনায় বাধ্যবাধকতা আরোপের আহ্বান জানান।
এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মো. মফিজুর রহমান বলেন, এসএমই বিকাশে সরকারের আর্থিক আনুকূল্য ও প্রকল্প আনুকূল্য পাওয়া যায় না। ২০১৯ সালের এসএমই নীতিমালা বাস্তবায়নের জন্য ২ হাজার ১৪১ কোটি টাকার বাজেট হলেও তার বিপরীতে কোনও অর্থ পাওয়া যায়নি বলে জানান এসএমই ফাউন্ডেশনের এমডি।
Posted ৮:৩৯ অপরাহ্ণ | রবিবার, ১৪ আগস্ট ২০২২
bankbimaarthonity.com | rina sristy