শুক্রবার ৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২১ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

Ad
x
এবি ব্যাংকে খেলাপি ৩০ কোটি টাকা

আবারও নিলামে অটবির সম্পত্তি

  |   বুধবার, ০২ জানুয়ারি ২০১৯   |   প্রিন্ট   |   1923 বার পঠিত

আবারও নিলামে অটবির সম্পত্তি

আবারও নিলামে উঠছে অটবির সম্পত্তি। এবার প্রায় ৩০ কোটি টাকা খেলাপি হওয়ার জেরে কোম্পানিটির জমি নিলামে তোলার ঘোষণা দিয়েছে বেসরকারি এবি ব্যাংক। ঋণ নিয়ে চলমান জটিলতার সুরাহা না হলে চলতি মাসের শেষদিকে অটবির বন্ধকি সম্পত্তি নিলামে বিক্রি করতে চায় পুঁজিবাজারের ব্যাংকটি। নিলাম ঠেকাতে তোড়জোড় শুরু করেছেন অটবির দায়িত্বশীলরা।

তথ্যমতে, বেসরকারি এবি ব্যাংকের প্রিন্সিপাল শাখায় অটবির প্রায় ২৯ কোটি ৭৮ টাকা ঋণ রয়েছে, যার পুরোটাই এখন খেলাপি। খেলাপি ঋণের বিপরীতে রাজধানীর শ্যামপুর-কদমতলী শিল্প এলাকার প্রায় তিন বিঘা ১৯ শতক জমি বন্ধক দিয়েছে অটবি। দফায় দফায় তাগিদ দিয়ে ঋণ আদায় করতে না পেরে সেই সম্পত্তি নিলামে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে এবি ব্যাংক। ব্যাংকটির প্রিন্সিপাল শাখার পক্ষ থেকে গত বছরের শেষদিকে দেওয়া ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ২২ জানুয়ারি ওই নিলাম অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। শ্যামপুরের ওই জমিতে অটবির নিজস্ব কারখানা রয়েছে।

অটবির সম্পত্তি নিলাম প্রসঙ্গে এবি ব্যাংকের দায়িত্বশীল কেউ আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে ‘খেলাপি ঋণ আদায়ে নেওয়া পদক্ষেপের অংশ হিসেবেই নিলামের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে’ বলে ব্যাংকটির নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে। নিলামের ঘোষণা দিলেও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ঋণ পরিশোধ কিংবা এ বিষয়ে ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনার সুযোগ রয়েছে অটবির।

অন্যদিকে ‘নিলামের ঘোষণায় উদ্বেগের কিছু নেই। ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে’ বলে জানিয়েছেন অটবির দায়িত্বশীলরা।
কোম্পানিটির প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) আরফিন আলী বলেন, ‘অটবি এখন কী অবস্থায় আছে, ঋণ পরিশোধে কী ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে, সে বিষয়ে এবি ব্যাংককে অবগত করা হয়েছে। কিছুদিন আগেও আমরা ব্যাংকের সঙ্গে কথা বলেছি। তারপরও ঋণ পরিশোধের বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। আশা করছি, আলোচনার মাধ্যমেই বিষয়টির সুরাহা হবে।’

তথ্যানুসন্ধানে মিলেছে, নিজেদের ব্যবসার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়, এমন খাতে বিনিয়োগের দায় বইতে গিয়ে অটবি এখন শীর্ষ ঋণখেলাপি। বিদ্যুৎ খাতে অটবির সহযোগী প্রতিষ্ঠান কোয়ান্টাম পাওয়ারের প্রায় ৬০০ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ রয়েছে। অন্যদিকে সহযোগী প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগের অর্থের জোগান দিতে গিয়ে অটবিও প্রায় ৪০০ কোটি টাকা ঋণে জড়িয়েছে। এর মধ্যে অর্ধেকই এখন খেলাপি। তাই দেশের শীর্ষ ঋণখেলাপি গ্রুপগুলোর মধ্যে অন্যতম অটবি। খেলাপি ঋণ আদায়ে এর আগে দু’দফায় কোম্পানিটির সম্পত্তি নিলামে তোলার ঘোষণা দিয়েছিল সাউথইস্ট ব্যাংক। ঋণ পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সেই নিলাম ঠেকিয়েছে অটবি।

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠাতা নিতুন কুণ্ডুর মৃত্যুর পর গতি হারায় অটবি। মূল ব্যবসার বদলে বিদ্যুৎ খাতে বড় বিনিয়োগ করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছে প্রতিষ্ঠানটি। অভিজ্ঞতা ছাড়াই কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিনিয়োগ, পুরোনো যন্ত্রপাতি আমদানি আর সময়মতো উৎপাদনে আসতে না পেরে বিপাকে পড়ে কোয়ান্টাম পাওয়ার। বাড়তি বিনিয়োগের ব্যয় মেটাতে অটবির নামেও আটটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ খাতে সহযোগী প্রতিষ্ঠানের ভুল বিনিয়োগের দায় এখন অটবিকে বইতে হচ্ছে। সহযোগী প্রতিষ্ঠান কোয়ান্টাম পাওয়ারের সঙ্গে সঙ্গে এখন অটবিও শীর্ষ ঋণখেলাপি। আটটি বেসরকারি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে প্রায় ২০০ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ নিয়ে দেশের শীর্ষ ঋণখেলাপির তালিকায় নাম লিখিয়েছে অটবি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি (প্রায় ১৫৬ কোটি টাকা) খেলাপি ঋণ রয়েছে বেসরকারি সাউথইস্ট ব্যাংকে। ওই ঋণ আদায়ের জন্য এর আগে দু’দফায় অটবির গুলশান মডেল টাউনের প্লট, ১৬ কাঠা জমি ও ছয়তলা ভবন নিলামে তোলার ঘোষণা দিয়েছিল ব্যাংকটি। পরে আলোচনা ও ঋণ পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দিয়ে নিলাম ঠেকিয়েছে অটবি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আগ্রহ থাকলেও ঋণ পরিশোধের সামর্থ্য অটবির নেই। তাই সময়মতো পরিশোধ করতে না পারায় অটবির খেলাপি ঋণের অঙ্ক বাড়ছে। আর কোম্পানির ব্র্যান্ডভ্যালুর ওপর ভর করে দেওয়া ঋণ এখন সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এবি ও সাউথইস্ট ব্যাংক ছাড়াও আইএফআইসি, ইস্টার্ন, আল-আরাফাহ্ ইসলামী, ওয়ান, লংকাবাংলা ফাইন্যান্স ও আইআইডিএফসিতেও খেলাপি ঋণ রয়েছে অটবির। সব মিলিয়ে প্রতিষ্ঠানটির মোট ঋণ পৌনে ৪০০ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। একইভাবে অটবির সহযোগী প্রতিষ্ঠান কোয়ান্টাম পাওয়ারের সরকারি-বেসরকারি ১৩টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা ঋণ রয়েছে। এর মধ্যে ১০টি প্রতিষ্ঠানেই প্রায় ৬০০ কোটি টাকা খেলাপি হয়েছে কোম্পানিটি।

উল্লেখ্য, অটবি চিত্রশিল্পী ও ভাস্কর নিতুন কুণ্ডুর হাতে গড়ে ওঠা ফার্নিচার প্রস্তুত-বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান। প্রচলিত কাঠের বদলে মেটালিক ফার্নিচারের ধারণা থেকেই ১৯৭৫ সালে অটবির পথচলা শুরু। এর পরের উত্থান গল্পের মতো। অটবির পর আরও কিছু ফার্নিচার প্রস্তুত-বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলেও প্রতিষ্ঠানটি ফার্নিচারের বাজারে এগিয়ে রয়েছে। ১৯৯৯ সালে মেটালিকের পাশাপাশি লেমিনেটেড বোর্ডের ফার্নিচার বাজারে আনে অটবি। পণ্যের বৈচিত্র্য ও বিপণন পদ্ধতির কল্যাণে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে এখন বিদেশেও রফতানি হচ্ছে অটবির পণ্য।

Facebook Comments Box
top-1
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ১২:৪৭ অপরাহ্ণ | বুধবার, ০২ জানুয়ারি ২০১৯

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
প্রকাশক : সায়মুন নাহার জিদনী
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।