বৃহস্পতিবার ১০ অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৫ আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

৬ মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৯ হাজার কোটি টাকা কম আদায়

নাজুক রাজস্ব আয়

ব্যাংক বীমা অর্থনীতি ডেস্ক   |   বৃহস্পতিবার, ১৭ জানুয়ারি ২০১৯   |   প্রিন্ট   |   888 বার পঠিত

নাজুক রাজস্ব আয়

সরকারি আয়ের প্রধান উৎস রাজস্ব আদায়ের অবস্থা বেশ খারাপ। চলতি অর্থবছরে প্রথম থেকেই এ অবস্থা চলছে। প্রত্যাশা অনুযায়ী রাজস্ব আয় না হওয়ায় সরকারের ঋণ গ্রহণের চাপ বাড়ছে। এ প্রবণতা সরকারের জন্য উদ্বেগজনক বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। তাদের মতে, রাজস্ব আদায় কম হলে ব্যাংকিং চ্যানেল থেকে ঋণ গ্রহণ বাড়ে। ফলে সুদ পরিশোধে চাপ আসে, যা সামষ্টিক অর্থনীতিকে ব্যাহত করে। বাজেট ঘাটতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণ জোরদারের পরামর্শ দেন তারা।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাময়িক হিসাব অনুযায়ী, চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর সময়ে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ২৯ হাজার কোটি টাকা কম রাজস্ব আদায় হয়েছে। এ সময়ে রাজস্ব আয় গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় মাত্র সাড়ে ৫ শতাংশ বেড়েছে। গত অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে রাজস্ব আহরণে প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১৫ শতাংশ। এর আগের অর্থবছরে ছিল যা প্রায় ১৮ শতাংশ।

এনবিআরের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরে জুলাই থেকে ডিসেম্বরে ১ লাখ ২৬ হাজার ২৭ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আয় হয় ৯৭ হাজার ২৪০ কোটি টাকা। এর মধ্যে আমদানি পর্যায়ে ৪০ হাজার ৫৬৯ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আহরণ হয় ৩০ হাজার ৫২০ কোটি টাকা। স্থানীয় ভ্যাটে ৫০ হাজার ২৪ কোটি টাকার বিপরীতে আয় ৩৭ হাজার ৯৬৪ কোটি টাকা এবং আয়করে ৩৫ হাজার ৪৩৩ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আয় ২৮ হাজার ৭৫৬ কোটি টাকা। এবার বাজেট ঘোষণায় এনবিআরের মাধ্যমে মোট আহরণের লক্ষ্য ধরা হয় ২ লাখ ৯৬ হাজার কোটি টাকা। গত অর্থবছর থেকে ২৯ শতাংশ বেশি আয় ধরে এটি প্রাক্কলন করা হয়।

সংশ্নিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জাতীয় নির্বাচনের বছরে অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্বাভাবিক থাকলেও রাজস্ব আদায় তেমন বাড়ছে না। এই সময়ে রাজস্ব আহরণ কম হওয়ার তেমন যৌক্তিকতা খুঁজে পাননি অর্থনীতিবিদরা। তাদের মতে, অর্থনীতিতে এমন কিছু ঘটেনি, যার জন্য রাজস্ব আয় আগের চেয়ে কমে যাবে। এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, জাতীয় নির্বাচনের কারণে রাজস্ব আয়ে প্রভাব পড়েছে। তবে নির্বাচনের পরে আয় বাড়বে। তিনি বলেন, রাজস্ব আয় বাড়াতে বিশদ কর্মপরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারলে অর্থবছর শেষে ঘাটতি অনেক কমে আসবে। তিনি দাবি করেন, চলতি অর্থবছর রাজস্ব আয়ের যে লক্ষ্য দেওয়া হয়, তা অত্যন্ত উচ্চাভিলাষী।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল দায়িত্ব গ্রহণের পর অর্থ মন্ত্রণালয়সহ এনবিআরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে রাজস্ব আহরণকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেবেন বলে জানিয়েছেন। যেভাবে হোক চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য অর্জনে এনবিআরকে নির্দেশ দেন তিনি। অর্থমন্ত্রীর নির্দেশের পর রাজস্ব কর্মকর্তাদের নিয়ে জরুরি বৈঠক করেন এনবিআর চেয়ারম্যান। গত সপ্তাহে অনুষ্ঠিত বৈঠকে নির্ধারিত লক্ষ্য পূরণে সংশ্নিষ্ট সব কমিশনারকে নির্দেশ দেন তিনি। বৈঠকে আমদানি শুল্ক্ক কম আহরণের কারণ জানতে চান। শুল্ক্ক বিভাগের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কারণ ব্যাখ্যা করে বলা হয়, উচ্চ শুল্ক্কের পণ্যের আমদানি আগে যে হারে হতো, গত কয়েক মাসে তা কমে গেছে। এ সময়ে নিম্ন শুল্ক্কহারের পণ্য যেমন সিমেন্টের কাঁচামাল ক্লিংকার, শিল্পে ব্যবহূত কাঁচামাল ও যন্ত্রাংশ আমদানি বেশি হয়েছে।

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি পোশাকসহ বিভিন্ন খাতে কর ছাড় দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া গ্যাস খাত থেকে বেশি ভ্যাট আদায় হয়। এলএনজির দাম সহনীয় রাখতে সম্প্রতি এর সম্পূরক শুল্ক্ক কমানো হয়। এ ছাড়া নির্বাচন ঘিরে উন্নয়ন কাজের গতি স্তিমিত হয়ে পড়েছে। এসব কারণে রাজস্ব আয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা সংশোধন করা হবে। এটি কমিয়ে ২ লাখ ৬৬ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হতে পারে।

Facebook Comments Box
top-1
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ১০:৫৩ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৭ জানুয়ারি ২০১৯

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।