শনিবার ৫ অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২০ আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রেকর্ড ব্যয়ে রেলপথ নির্মাণ: কিলোমিটারপ্রতি ৭১ কোটি টাকা

বিবিএনিউজ.নেট   |   বৃহস্পতিবার, ১৪ মার্চ ২০১৯   |   প্রিন্ট   |   816 বার পঠিত

রেকর্ড ব্যয়ে রেলপথ নির্মাণ: কিলোমিটারপ্রতি ৭১ কোটি টাকা

জনসাধারণকে সহজ, আরামদায়ক ও নিরাপদ পরিবহন সেবা দিতে সিলেট-আখাউড়া রুটে ২২৫ কিলোমিটার ডুয়েলগেজ রেলপথ নির্মাণ করবে সরকার। ১৬ হাজার ১০৪ কোটি ৪৪ লাখ টাকা ব্যয়ে এ রুটের বিদ্যমান মিটারগেজ রেললাইনকে ডুয়েলগেজে রূপ দেওয়া হবে। রেলপথ নির্মাণে চীনা সরকার জিটুজির ভিত্তিতে ১০ হাজার ৬৫৪ কোটি টাকা ঋণ দেবে।

বাংলাদেশ রেলওয়ের ‘আখাউড়া থেকে সিলেট সেকশনের মিটার গেজ রেললাইনকে ডুয়েল গেজে রূপান্তর’ প্রকল্পের আওতায় এমন উদ্যোগ। এ প্রকল্পে প্রতি কিলোমিটার ডুয়েল গেজ রেলপথ নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৭১ কোটি ৫৭ লাখ টাকা।

কয়েক বছর ধরে প্রকল্পটি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে ঘুরপাক খাচ্ছে। এর আগে এ প্রকল্পে প্রতি কিলোমিটার ডুয়েল গেজ রেলপথ নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছিলো ৬৯ কোটি ৮ লাখ টাকা। বেশি ব্যয় ধরার কারণে প্রকল্পটি একনেক সভায় উপস্থাপন করা হয়নি। অথচ আবারও বেশি ব্যয় নির্ধারণ করে প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য নতুন করে কার্যক্রম শুরু করেছে সংশ্লিষ্ট বিভাগ।

এর আগে তিনটা ডুয়েল গেজ রেলপথ নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু এত বেশি ব্যয় চাওয়া হয়নি। এবার চোখ কপালে ওঠার মতো ব্যয় চাওয়া হয়েছে প্রস্তাবিত প্রকল্পে।

রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ৫৩৮ কোটি ৪৩ লাখ টাকা ব্যয়ে ঈশ্বরদী থেকে পাবনার ঢালারচর পর্যন্ত নতুন রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প চলমান আছে। এ রুটের মোট দৈর্ঘ্য ৭৮ দশমিক ৮০ কিলোমিটার। ফলে কিলোমিটার প্রতি ব্যয় পড়ছে মাত্র ৬ কোটি ৮৩ লাখ টাকা।

৩৩৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘মধুখালী থেকে কামারখালী হয়ে মাগুরা শহর পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ’ প্রকল্প চলমান আছে। এ রুটের মোট দৈর্ঘ্য ২৩ দশমিক ৯০ কিলোমিটার। ফলে কিলোমিটার প্রতি ব্যয় পড়ছে ১৩ কোটি ৯৮ লাখ টাকা।

১৮৮ কোটি ৪৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সেকশনে বিদ্যমান মিটার গেজ রেললাইনের সমান্তরাল ডুয়েল গেজ রেললাইন নির্মাণ’ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এ রুটের দৈর্ঘ্য ২১ দশমিক ৫৩ কিলোমিটার। ফলে কিলোমিটার প্রতি ব্যয় হয়েছে মাত্র ৮ কোটি ৭৫ লাখ টাকা।

অথচ প্রস্তাবিত প্রকল্পের ব্যয় সমজাতীয় প্রকল্পের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি। বিদ্যমান লাইন রেখে দুই কিলোমিটার করে বাইপাস লাইন নির্মাণ করা হবে। পুরো রুট জুড়েই বাইপাস লাইন নির্মাণ করা হবে রেলপথটি সচল রাখার জন্য। পরবর্তীতে বাইপাস লাইন তুলে ফেলা হবে।

প্রতি কিলোমিটারে ৭১ কোটি টাকার বেশি ব্যয় প্রসঙ্গে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম প্রধান আ. ন. ম. আজিজুল হক বলেন, কয়েকবার প্রকল্পের পিইসি সভা হয়েছে। আশা করেছি দ্রুত সময়ে একনেক সভায় প্রকল্পটি উঠবে। বেশি ব্যয় ফ্যাক্টর নয়। রেলপথটা নির্মাণ জরুরি।

তিনি আরও বলেন, ডুয়েলগেজ করার কারণে ব্যয় বেশি হচ্ছে। কারণ বিদ্যমান লাইন সচল রেখে রেলপথটি নির্মাণ করতে হচ্ছে। ফলে ব্যয় বেশি হচ্ছে। দুই কিলোমিটার করে বাইপাস লাইন নির্মাণ করে ডুয়েলগেজ রেলপথ নির্মাণ করা হবে। এভাবে প্রকল্পের আওতায় ১৭৬ কিলোমিটার বাইপাস লাইন নির্মাণ করা হবে। এর ফলে ব্যয়ও বাড়ছে। তারপরও সরকার যে সিদ্ধান্ত নেয় তাই হবে।

চীন থেকে নেওয়া ঋণের সুদ পরিশোধ করতে হবে সার্ভিস চার্জসহ ২ দশমিক ৪৫ শতাংশ হারে। ২০১৫ সালে ১৫ সেপ্টেম্বর চায়না রেলওয়ে ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যুরো গ্রুপ কোম্পানির সঙ্গে এ প্রকল্পের বিষয়ে একটা সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। এর ফলেই ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রকল্পটি চলতি সময় থেকে ২০২৫ সালের জুন মেয়াদে বাস্তবায়ন করবে রেলপথ মন্ত্রণালয়।

অর্থনীতি, পর্যটন এবং অভ্যন্তরীণ ও আঞ্চলিক কানেকটিভিটির কারণে আখাউড়া-সিলেট সেকশনটি একটি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় রুটে পরিণত হয়েছে বিধায় প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া, বিজয়নগর উপজেলা হয়ে হবিগঞ্জের মাধবপুর, শায়েস্তাগঞ্জ, মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল, কুলাউড়া, কমলননগর, সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ ও সিলেট উপজেলা দিয়ে যাবে রেলপথটি।

বর্তমানে সিলেট-আখাউড়া রুটে মিটার গেজ রেলপথ আছে। এ রেলপথের পাশ দিয়ে সমান্তরাল ০ দশমিক ৬৭ মিটার দূরত্ব দিয়ে একটি আলাদা লাইন টেনে দিলেই ডুয়েল গেজ রেলপথ হয়ে যাবে। ফলে মিটার গেজ ও ব্রড গেজ ট্রেন চলতে পারবে এ রুট দিয়ে। এ পদ্ধতিতে রেলপথ নির্মাণ করলে ৭ হাজার ৮৫২ কোটি টাকায় প্রকল্প বাস্তবায়ন করা সম্ভব। কিন্তু সব কিছু ভেঙে নতুন আঙ্গিকে নির্মাণ করা হচ্ছে রেলপথ, ফলে বাড়ছে ব্যয়ও।

রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশ অংশে নির্ধারিত লোড ক্যাপাসিটিতে ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ে নেটওয়ার্ক স্থাপন করা হবে। এ রুটে কন্টেইনার পরিবহনে স্পিড ও লোডের সীমাবদ্ধতা থাকবে না বিধায় জাতীয় এবং আঞ্চলিক-আন্তর্জাতিক ফ্রেইট ও বিজি কন্টেইনার ট্রেন পরিচালনা সেবা চালু করা হবে। প্রকল্পের আওতায় ২৩৯ দশমিক ১৪ কিলোমিটার ট্র্যাক নির্মাণ করা হবে। এরমধ্যে ১৭৬ দশমিক ২৪ কিলোমিটার মেইন লাইন এবং ৬২ দশমিক ৯০ কিলোমিটার লুপ লাইন।

৪৯টি মেজর ব্রিজ, ২২টি সিগন্যালিং স্টেশন, ২০০ একর ভূমি অধিগ্রহণ, ১৭ হাজার বর্গ মিটার আবাসিক ভবন, ব্যারাক ও ডরমেটরির কাজ করা হবে। প্রকল্পের আওতায় দেশি ও চায়নিজ পরামর্শক থাকবে ২ হাজার ৯৯৬ জন।

মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সিলেট বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ বিভাগী শহর। এ অঞ্চলটি তেল, গ্যাস, ক্যালসিয়াম কার্বনেট খনিজ সম্পদের সব থেকে বড় উৎস। চা উৎপাদনেও সিলেট প্রধান অঞ্চল। নানা গুরুত্বের কথা বিবেচনা করেই দ্রুত সময়ে ডুয়েল গেজে রূপ দেয়া সিলেট-আখাউড়া রুটকে।

রেলপথ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব মোহাম্মদ ফারুকুজ্জামান বলেন, চীনা ঋণে সিলেট-আখাউড়া রুটে ডুয়েলগেজ রেলপথ নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পের সব কাজ শেষের দিকে। বিদ্যমান মিটারগেজ রেললাইন ভেঙে নতুন করে ডুয়েল গেজ রেলপথ নির্মাণ করা হবে। মিটারগেজ রেললাইনকে রেখে কাজ করা সম্ভব নয়। সবকিছু ভেঙে ফেলে নতুন করে ডুয়েল গেজ করতে হবে। কারণ প্রস্তাবিত ডুয়েল গেজের নকশা আলাদা। বিদ্যমান মিটার গেজের সমস্ত ব্রিজ-কালভার্ট ভেঙে নতুনভাবে নির্মিত হবে। যে কারণে প্রকল্পের ব্যয়ও বেশি।

Facebook Comments Box
top-1
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ২:৪৯ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৪ মার্চ ২০১৯

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

রডের দাম বাড়ছে
(11355 বার পঠিত)

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।