নিজস্ব প্রতিবেদক | ০৯ জুন ২০২০ | ২:৫২ অপরাহ্ণ
মানব পাচার ও অর্থ পাচারের অভিযোগে কুয়েতে আটক বাংলাদেশের বেসরকারি এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান এবং লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) কাজী শহিদ ইসলাম ওরফে পাপুলকে রিমান্ডে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে দেশটির পাবলিক প্রসিকিউটর। কুয়েতের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) আবেদনের প্রেক্ষিতে এ নির্দেশ দেওয়া হয়। ।
এ প্রসঙ্গে বাংলোদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম জানান, এ বিষয়ে আমি এখনও অফিসিয়ালি কিছু জানি না। পত্র-পত্রিকার সংবাদ দেখে কোন পদক্ষেপ নেওয়া যায় না। অফিসিয়াল নির্দেশনা আসার পর পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
গত ৬ জুন স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ৯টায় কুয়েতের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সদস্যরা মুশরেফ আবাসিক এলাকা থেকে পাপুলকে আটক করে তাদের দফতরে নিয়ে যায়। কুয়েতে বাংলাদেশ দূতবাসের বরাত দিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তার আটকের খবর নিশ্চিত করে। তার বিরুদ্ধে মানব পাচার ও অবৈধ মুদ্রা পাচারের অভিযোগে দায়ের হয়েছে।
সিআইডি জানতে পেরেছে, কুয়েতে পাপুলের একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তিনি কুয়েতে ভিসা বাণিজ্যের নামে মানব পাচার ও অবৈধ মুদ্রা পাচার চক্রের সঙ্গে যুক্ত। সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই ভিত্তিক ইংরেজি দৈনিক গালফ নিউজের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
এছাড়া কুয়েত থেকে প্রকাশিত আরব টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিআইডি কর্মকর্তারা পাঁচ বাংলাদেশিকে জেরা করে জানতে পেরেছে তাদের প্রত্যেকেই কুয়েত যেতে সাংসদ পাপুলকে তিন হাজার দিনার করে দিয়েছিলেন। এছাড়াও প্রতি বছর তারা ভিসা নবায়নের জন্য সাংসদকে বাড়তি টাকা দিয়েছেন। তাদের সাক্ষ্যের ভিত্তিতে এমপি কাজী শহিদের বিরুদ্ধে মানব পাচার ও অবৈধ মুদ্রা পাচারের অভিযোগ এনেছেন তদন্ত কর্মকর্তারা।
গালফ নিউজের প্রতিবেদন অনুযায়ী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, কুয়েতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত তাকে সেখানে ব্যবসায়ের কারণে উত্থাপিত একটি মামলায় এমপি পাপুলকে আটকের কথা জানিয়েছেন।
এদিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও কুয়েতে বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাংসদ কাজী শহিদ গত মার্চে কুয়েত সফরে যান। তবে ব্যক্তিগত ভাবে যাওয়ায় তিনি সবুজ পাসপোর্টে নিয়ে কুয়েত গেছেন। সাধারণত মন্ত্রী, সাংসদ, কূটনীতিকেরা লাল পাসপোর্ট নিয়ে বিদেশ সফর করেন। যা তাদের কূটনৈতিক প্রাধিকার দিয়ে থাকে বিদেশের মাটিতে।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে মানবপাচারকারী সিন্ডিকেটগুলোর বিরুদ্ধে কুয়েত সরকার সাঁড়াশি অভিযান শুরু করে। ধরপাকড় শুরু হলে নতুন একটি কোম্পানির নাম আলোচনায় চলে আসে। ওই কোম্পানি ১০ হাজার কর্মী কুয়েতে নিয়ে তাদের কাছ থেকে দুই কোটি দিনার আদায় করেছে। ওই সময় সংসদ সদস্য কাজী শহীদ ইসলাম পাপুলের নামে কুয়েতে মানবপাচারে হাজার কোটি টাকার কারবারের অভিযোগ উঠে এসেছে। তাকে নিয়ে কুয়েতের গণমাধ্যমগুলো রিপোর্টও প্রকাশ করেন।
সবশেষ জাতীয় নির্বাচনে ১৪ দলীয় জোট ও জাতীয় পার্টির সমঝোতার মাধ্যমে মনোনয়ন পেয়েছিলেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোহাম্মদ নোমান। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন পাপুল। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে তিনি স্বতন্ত্র নির্বাচন করেন। পরে এক পর্যায়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান জাতীয় পার্টির প্রার্থী। আলোচনা ছিল মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে পাপুল ওই প্রার্থীকে নির্বাচন থেকে সরিয়ে দেন। বিষয়টি নির্বাচনের সময়ই বেশ আলোচিত ছিল।
বাংলাদেশ সময়: ২:৫২ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০৯ জুন ২০২০
bankbimaarthonity.com | saed khan