বুধবার ২৪ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১১ বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অতালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজ

আইসিবির বিনিয়োগ ১ হাজার ১৭৮ কোটি টাকা

বিবিএনিউজ.নেট   |   রবিবার, ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২০   |   প্রিন্ট   |   207 বার পঠিত

আইসিবির বিনিয়োগ ১ হাজার ১৭৮ কোটি টাকা

দেশের পুঁজিবাজারে ভূমিকা রাখার উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান হিসেবে ১৯৭৬ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)। তবে সময়ের পরিক্রমায় বিনিয়োগ সক্ষমতা অনেকাংশে কমে গেছে একসময়ের দেশের পুঁজিবাজারের সবচেয়ে প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠানটির। তারল্য সংকটের মধ্যেও বিভিন্ন অতালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৭৮ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে আইসিবি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে গঠিত হওয়া আইসিবির পুঁজিবাজারবহির্ভূত খাতে বিনিয়োগ করা সঠিক হয়নি। এতে পুঁজিবাজারে প্রতিষ্ঠানটির বিনিয়োগ সক্ষমতা কমেছে।

আইসিবির ২০১৮-১৯ হিসাব বছরের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, ৩০ জুন ২০১৯ শেষে বিভিন্ন ধরনের তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজে প্রতিষ্ঠানটির বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ৬৭ কোটি টাকা। আগের হিসাব বছরে এর পরিমাণ ছিল ১০ হাজার ১৭৩ কোটি টাকা। অন্যদিকে ২০১৮-১৯ হিসাব বছর শেষে বিভিন্ন ধরনের অতালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজে প্রতিষ্ঠানটির বিনিয়োগের পরিমাণ ১ হাজার ১৭৮ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে, যা আগের বছরে ছিল ১ হাজার ২৪৫ কোটি টাকা।

আইসিবির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক জিয়াউল হক খন্দকার, যিনি পরবর্তী সময়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির চেয়ারম্যানেরও দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বলেন, ২০০২-০৩ সালের দিকে এডিবির পরামর্শে আইসিবিতে বেশকিছু সংস্কার করা হয়। এরপর দীর্ঘ সময় ধরে প্রতিষ্ঠানটিতে সেভাবে কোনো সংস্কার হয়নি। আইসিবির নিয়ন্ত্রণ সরকারের কাছে রেখেই সংস্কারের মাধ্যমে এটিকে আরো কার্যকর করা যেতে পারে। আইসিবি কিন্তু সব সময়ই অলিখিতভাবে মার্কেট মেকারের দায়িত্ব পালন করেছে। বর্তমানে আইনিভাবেই এ দায়িত্ব নেয়ার সুযোগ রয়েছে। আইসিবিকে সে দায়িত্ব নিতে হবে। এজন্য অবশ্য পর্যাপ্ত অর্থের প্রয়োজন রয়েছে। সামনে দেশের পুঁজিবাজারে ডেরিভেটিভস আরো বেশকিছু নতুন পণ্য আসবে। নিত্যনতুন এসব পণ্যে বিনিয়োগের জন্য অনেক অর্থেরও প্রয়োজন হবে। তাই সংস্কার ও পুনর্গঠনের মাধ্যমে আইসিবির সক্ষমতা বাড়াতে হবে, যাতে প্রতিষ্ঠানটি পুঁজিবাজারে কার্যকরভাবে তার ভূমিকা পালন করতে পারে।

অতালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজের মধ্যে ২০১৮-১৯ হিসাব বছর পর্যন্ত বিভিন্ন কোম্পানির প্লেসমেন্ট শেয়ারে আইসিবির বিনিয়োগের পরিমাণ ১৫৪ কোটি টাকা, আগের বছরে যা ছিল ২০০ কোটি টাকা। ৩০ জুন ২০১৯ শেষে বিভিন্ন কোম্পানির প্রেফারেন্স শেয়ারে আইসিবির বিনিয়োগ দাঁড়িয়েছে ২০১ কোটি টাকায়। এর আগের বছর শেষে যা ছিল ১৮৫ কোটি টাকা। আর আলোচ্য সময়ে অতালিকাভুক্ত মিউচুয়াল ফান্ডে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানটির বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮১৮ কোটি টাকায়। আগের বছর শেষে যা ছিল ৮৫৮ কোটি টাকা। অবশ্য অতালিকাভুক্ত মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করা হলে সে অর্থ সংশ্লিষ্ট ফান্ডের মাধ্যমে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ হয়ে থাকে। ফলে পরোক্ষভাবে এ অর্থ পুঁজিবাজারে ফিরে আসে। কিন্তু প্রেফারেন্স শেয়ার ও আইপিওর আগে প্লেসমেন্ট শেয়ারে বিনিয়োগ করা হলে সেটি পুঁজিবাজারে ফিরে আসার কোনো সম্ভাবনা নেই। প্লেসমেন্ট শেয়ারে বিনিয়োগের পর সে কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার পর লকইন পিরিয়ড শেষে শেয়ার বিক্রি করে টাকা ফিরে পেতে কমপক্ষে চার-পাঁচ বছর সময় লেগে যায়। এতে করে প্লেসমেন্ট শেয়ারে বিনিয়োগ করা হলে দীর্ঘ সময়ের জন্য তহবিলটি আটকে যায়।

আইসিবির আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে ৩০ জুন ২০১৯ পর্যন্ত ৮৯টি কোম্পানির প্লেসমেন্ট শেয়ারে প্রতিষ্ঠানটির বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৭২৮ কোটি টাকা। আর ২০টি কোম্পানির প্রেফারেন্স শেয়ারে বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৩৬৫ কোটি টাকা।

আইসিবির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফায়েকুজ্জামান বলেন, পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতায় আইসিবির বিশাল ভূমিকা রয়েছে। আর এ কারণেই প্রতিষ্ঠানটির সৃষ্টি। তবে প্রত্যাশিত ভূমিকা রাখতে প্রতিষ্ঠানটির সক্ষমতা বৃদ্ধিতে গুরুত্ব দিতে হবে। এর আগেও বিভিন্ন সময়ে আইসিবিতে বেশকিছু সংস্কার হয়েছে। বিদ্যমান বাস্তবতায় প্রতিষ্ঠানটিকে আরো কার্যকর করতে প্রয়োজনীয় সংস্কারের উদ্যোগ নিতে হবে। এক্ষেত্রে বিশ্বের অন্যান্য দেশের সমজাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর ভূমিকার বিষয়টিও পর্যালোচনা করা যেতে পারে। সার্বিকভাবে সামনের দিনগুলোতে আইসিবি যাতে আরো কার্যকরভাবে তার বৈচিত্র্যময় ভূমিকা রাখতে পারে, সেদিকে গুরুত্ব দেয়া উচিত।

গত কয়েক বছরে আইসিবির বিনিয়োগের পরিমাণ ক্রমেই কমেছে। ২০১৬-১৭ হিসাব বছরে প্রতিষ্ঠানটি ৫ হাজার ১২৬ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। ২০১৭-১৮ হিসাব বছরে বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৯ কোটি টাকা। সর্বশেষ ২০১৮-১৯ হিসাব বছরে প্রতিষ্ঠানটি ২ হাজার ৯৮৬ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। বিনিয়োগ কমার সঙ্গে সঙ্গে এর বিপরীতে প্রতিষ্ঠানটির রিটার্নের হারও কমেছে। ২০১৬-১৭ হিসাব বছরে বিনিয়োগের বিপরীতে রিটার্ন ছিল ৭ দশমিক ৯১ শতাংশ। ২০১৭-১৮ হিসাব বছরে এটি বেড়ে ১০ দশমিক ৭২ শতাংশে দাঁড়ায়। তবে পরের ২০১৮-১৯ হিসাব বছরে বিনিয়োগের বিপরীতে রিটার্ন কমে ১ দশমিক ৫৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

আইসিবির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, আইসিবিকে সব সময়ই তহবিলের সন্ধানে থাকতে হয়। তবে সময়মতো তহবিল না পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগের জন্য তারল্য সংকট তৈরি হয়। এক্ষেত্রে আইসিবিকে পুরনো ধ্যানধারণা ত্যাগ করে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। তহবিল সংগ্রহের নিত্যনতুন উৎস খুঁজে বের করতে হবে, যাতে বিনিয়োগের জন্য পর্যাপ্ত তারল্য সরবরাহ নিশ্চিত করা সম্ভব হয়। ভালো কোম্পানির প্লেসমেন্ট শেয়ারে বিনিয়োগ করা যেতে পারে। অন্যদিকে প্রয়োজন হলে শেয়ার বিক্রিও করতে হবে। কারণ শেয়ার বিক্রি করে তহবিল জোগাড় করতে না পারলে বিনিয়োগ সম্ভব হবে না। তাই একদিকে যেমন শেয়ার বিক্রি করতে হবে, অন্যদিকে সেই অর্থ নতুন করে বিনিয়োগও করতে হবে। এতে বাজারে লেনদেনের পরিমাণ বাড়বে।

মন্ত্রণালয়, বিএসইসি, আইসিবি, স্টেকহোল্ডার ও বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে কমিটি গঠন করে আইসিবির দুর্বলতা ও ঘাটতিগুলো চিহ্নিত করে সমাধানের উদ্যোগ নিতে হবে বলে মনে করছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ও বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম। তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, আমি মনে করি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চেয়ে সব পক্ষের প্রতিনিধির মাধ্যমে একটি কমিটি গঠন করে আইসিবির সংস্কারের উদ্যোগ নিলে সেটি বেশি কার্যকর হবে। আমি যখন বিএসইসির দায়িত্বে ছিলাম তখন কিন্তু আইসিবি ভালোভাবেই তার ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হয়েছে। তাই কী কারণে আইসিবির বিনিয়োগ সক্ষমতা কমে গেল, সেটি নির্মোহ দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করতে হবে। আর অতালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজে বিনিয়োগের যথার্থতার বিষয়টি অনুসন্ধানের মাধ্যমে উঠে আসবে বলে মনে করছেন তিনি।

প্রসঙ্গত, গত ২৫ আগস্ট সরকারের পরামর্শে আইসিবি পুনর্গঠনে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বিএসইসি। বিজ্ঞপ্তিতে পরামর্শক নিয়োগের বিষয়ে বলা হয়েছে, দেশের পুঁজিবাজারকে সহায়তা করাই ছিল আইসিবি গঠনের উদ্দেশ্য। কিন্তু কয়েক বছর ধরে, বিশেষ করে ২০১৮-১৯ ও ২০১৯-২০ হিসাব বছরে, প্রতিষ্ঠানটি ধারাবাহিক লোকসানে ছিল এবং মূলধন হারিয়েছে। উৎপাদন খাত ও ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ঋণের অর্থ আদায় করতে না পারায় প্রতিষ্ঠানটির অবস্থা আরো শোচনীয় হয়ে পড়েছে এবং এ ধরনের প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেয়াটা কোনোভাবেই পুঁজিবাজারের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়।

 

Facebook Comments Box
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ২:৩৬ অপরাহ্ণ | রবিবার, ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২০

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।