বিবিএনিউজ.নেট | বুধবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২০ | প্রিন্ট | 330 বার পঠিত
বিতর্কিত ব্যবসায়ী ও সংসদ সদস্য কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলকে অবৈধ অর্থ লেনদেনে সহায়তার অভিযোগ উঠেছে প্রাইম ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আজম জে চৌধুরীর বিরুদ্ধে।
সম্প্রতি এ ধরনের একটি অভিযোগ জমা পড়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক)। বিষয়টির সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত আজম জে চৌধুরীর বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা জারির অনুরোধ জানিয়েছেন অভিযোগকারী।
দুই মাস আগে দুদকের সংশ্লিষ্ট শাখায় অভিযোগটি জমা পড়ে। এতে উল্লেখ করা হয়, প্রাইম ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আজম জে চৌধুরীর প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় হুন্ডির মাধ্যমে প্রাইম ব্যাংকে ৪০ কোটি টাকা জমা করেছেন শহিদ ইসলাম পাপুল।
ফাহাদ মাদানি ইসলাম নামের ওই অভিযোগকারী এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের উদ্যোক্তা শেয়ারহোল্ডার বলে জানা গেছে। এ ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংকে পাপুল ও তার পরিবারের সদস্যদের অবৈধ অর্থ জমা আছে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য কাজী শহিদ ইসলাম পাপুল এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের একজন পরিচালক এবং তিনি মানব পাচারের সঙ্গে জড়িত। আর মানব পাচারের মাধ্যমে অর্জিত অর্থ লেনদেনে যারা সহযোগিতা করেছেন তাদের মধ্যে একজন আজম জে চৌধুরী। এ কারণে আজম জে চৌধুরীসহ পাপুলকে সহায়তাকারী ব্যক্তিদের দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা আরোপের আবেদন জানানো হয়েছে।
তবে এ অভিযোগকে ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে উল্লেখ করেছেন আজম জে চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘এ অভিযোগ সর্বৈব মিথ্যা ও বানোয়াট। আমার সুনাম ক্ষুণ্ন করার উদ্দেশ্যে স্বার্থান্বেষী মহল এ ধরনের অভিযোগ করে থাকতে পারে।’ তিনি বলেন, ‘আমি চেয়ারম্যান থাকাকালে প্রাইম ব্যাংক থেকে কোনো ধরনের সুবিধা নেইনি। এমনকি আমাদের কোনো পরিচালকও ব্যাংকের ঋণ বিতরণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেন না। তাছাড়া ব্যাংকে কোনো অর্থ জমা করার বিষয়ে পরিচালনা পর্ষদের কোনো সদস্যের ভূমিকা থাকে না। কাজেই এ ধরনের অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই।’
ওই অভিযোগে মানব পাচারের মাধ্যমে পাপুলের অর্জিত সম্পদের একটি বিবরণ দেওয়া হয়েছে। বিবরণ মতে, মানব পাচারের অর্থ দিয়ে পাপুল এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের ৫০ কোটি টাকার শেয়ার কিনেছেন। স্ত্রীর নামে কিনেছেন ৪০ কোটি টাকার শেয়ার। একই ব্যাংকে পাপুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলামের নামে ৪০ কোটি টাকার এবং নিজের নামে ১০ কোটি টাকার সঞ্চয়ী আমানত রয়েছে বলে এতে উল্লেখ করা হয়। এছাড়া বড় মেয়ে ওয়াফা ইসলামের নামে এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকে ২০ কোটি টাকার স্থায়ী আমানত, স্ত্রীর ছোট বোন জেসমিন প্রধানের নামে ১০ কোটি টাকার স্থায়ী আমানত, স্ত্রীর আরেক ছোট বোন ইয়াসমিন প্রধানের নামে চার কোটি টাকার স্থায়ী আমানত, স্ত্রীর নামে সোনালী ব্যাংকের ওয়েজ আর্নার্স শাখায় ৫০ কোটি টাকার বন্ড, বড় মেয়ে ওয়াফা ইসলামের নামে একই ব্যাংকের একই শাখায় ৪০ কোটি টাকার ওয়েজ আর্নার্স বন্ড, পাপুল নিজ নামে ১০ কোটি টাকার ওয়েজ আর্নার্স বন্ড এবং অবৈধ অর্থ দিয়ে বড় ভাই ইঞ্জিনিয়ার মনজুরুল ইসলামের নামে ১০ কোটি টাকার ওয়েজ আর্নার্স বন্ড কিনেছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
অভিযোগে পাপুলের পরিবারের সদস্যদের নামে আরও যেসব সম্পদের বিবরণ দেওয়া হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে- গুলশান-১ ও গুলশান-২-এ স্ত্রী ও কন্যাদের নামে পৃথক ফ্ল্যাট। এর মধ্যে একটি ফ্ল্যাটের আয়তন ৯ হাজার বর্গফুট এবং এটির মূল্য ২৯ কোটি টাকা বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আর ফ্ল্যাটটির সাজসজ্জার পেছনে আট কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে স্ত্রীর ছোট বোন জেসমিন প্রধানের নামে দুটি গাড়ি কেনা হয়েছে। একই সঙ্গে স্ত্রীর নামে তার নিজ উপজেলায় ৯১ কোটি টাকার সম্পত্তি কেনা হয়েছে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
অভিযোগের তথ্যমতে, পাপুল তার স্ত্রীর ছোটবোন জেসমিন প্রধানের নামে জেডব্লিউ লিলাবালী নামে একটি কোম্পানি খুলে সেটির ব্যাংক হিসাবে শতকোটি টাকা জমা করেছেন এবং এ প্রতিষ্ঠানের নামে মোটা অঙ্কের ঋণ নেওয়া হয়েছে। আর এ কোম্পানির যাবতীয় তথ্য আয়কর নথিতে গোপন করা হয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়। পাশাপাশি এরই মধ্যে কুয়েত সরকার কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলের ১৩৮ কোটি টাকা জব্দ করেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, মানব পাচার ও অর্থ পাচারের অভিযোগে ৬ জুন কুয়েতে গ্রেপ্তার হন লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য কাজী শহীদ ইসলাম ওরফে কাজী পাপুল। কুয়েতে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার পর মানব পাচার ও অর্থ পাচারের অভিযোগে ১০০ জনেরও বেশি ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্টদের গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। অভিযুক্তদের তালিকায় এমপি কাজী পাপুলের নামও ছিল। কুয়েতে ব্যবসা রয়েছে তার। মার্চের শেষদিক থেকে কুয়েতেই অবস্থান করছিলেন তিনি।
Posted ১:৪৫ অপরাহ্ণ | বুধবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২০
bankbimaarthonity.com | Sajeed