মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১০ বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আজ ভয়াল ১২ নভেম্বর

বিবিএনিউজ.নেট   |   মঙ্গলবার, ১২ নভেম্বর ২০১৯   |   প্রিন্ট   |   417 বার পঠিত

আজ ভয়াল ১২ নভেম্বর

আজ ভয়াল ১২ নভেম্বর। ১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বর বাংলাদেশের উপকূলবাসীর জন্য স্মরণীয় দিন। এদিন বাংলাদেশের উপকূলের ওপর দিয়ে বয়ে যায় সবচেয়ে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়। যার নাম ছিল ‘ভোলা সাইক্লোন’। এই ঘূর্ণিঝড় লণ্ডভণ্ড করে দেয় উপকূল। প্রাণ হারানোর পাশাপাশি, ঘরবাড়ি হারিয়ে পথে বসেন বহু মানুষ। এই ঘূর্ণিঝড় কাঁপিয়ে দিয়েছিল গোটা বিশ্বকেও।

এটি সিম্পসন স্কেলে ক্যাটাগরি ৩ মাত্রার ঘূর্ণিঝড় ছিল। ৮ নভেম্বর বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়টি শক্তিশালী হয়ে উত্তর দিকে অগ্রসর হতে থাকে। ১১ নভেম্বর এর সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৮৫ কিলোমিটারে পৌঁছায়। ওই রাতেই ১২ নভেম্বর উপকূলে আঘাত হানে ‘ভোলা সাইক্লোন’।

জলোচ্ছ্বাসের কারণে উপকূলীয় অঞ্চল ও দ্বীপসমূহ প্লাবিত হয়। ওই ঘূর্ণিঝড়ে প্রায় পাঁচ লাখ লোকের প্রাণহানি ঘটে। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ছিল ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলা। ওই সময়ে সেখানকার ১ লাখ ৬৭ হাজার মানুষের মধ্যে ৭৭ হাজার মানুষ প্রাণ হারান। একটি এলাকার প্রায় ৪৬ শতাংশ মানুষ প্রাণ হারানোর ঘটনা ছিল অত্যন্ত হৃদয়বিদারক।

’৭০-এর ঘূর্ণিঝড়ে মনপুরা উপকূলে প্রায় ৭ হাজার মানুষ প্রাণ হারায়। তখন সেখানে আবহাওয়া পূর্বাভাস শোনার জন্য বেতার ও টেলিভিশন ছিল না। এমনকি ছিল না কোনো আশ্রয়কেন্দ্রও। নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা থাকলেও এত মানুষের প্রাণহানি হতো না মনে করছেন স্থানীয় বাসিন্দরা।

ঘূর্ণিঝড়ে বিপর্যস্ত মনপুরাবাসীকে সমবেদনা জানাতে হেলিকাপ্টারে উড়ে এসেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

ভোলা সাইক্লোনের আগে এবং পরে উপকূলের ওপর দিয়ে অনেকগুলো ঘূর্ণিঝড় বয়ে গেছে। কিন্তু ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানির বিচারে ১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বরের ঘূর্ণিঝড় সবচেয়ে ভয়ংকর বলে প্রমাণিত।

বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ’৭০-এর আগে ১৮৭৬ সালে ‘বাকেরগঞ্জ সাইক্লোন’ ঘূর্ণিঝড়ে প্রায় ২ লাখ লোক প্রাণ হারিয়েছিল। এরমধ্যে এক লাখ লোকের মৃত্যু হয় দুর্ভিক্ষ ও মহামারিতে। ১৫৮২ সালেও বাকেরগঞ্জ তথা বর্তমান বরিশাল অঞ্চলে আরেকটি ঘূর্ণিঝড়ের কথা জানা যায়। ওই ঘূর্ণিঝড়েও প্রাণ হারান ২ লাখ লোক।

১৯৭০-এর পরের ঘূর্ণিঝড়গুলোর মধ্যে ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিলের ঘূর্ণিঝড় ছিল ভয়াবহ। এতে প্রায় এক লাখ ৪০ হাজার লোকের প্রাণহানি ঘটে। এছাড়া ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর সিডর, ২০০৮ সালের ৩ মে নার্গিস, ২০০৯ সালের ২৫ মে আইলা, ২০১৩ সালের ১৬ মে মহাসেন, ২০১৪ সালের ২৮ অক্টোবর নিলোফার, ২০১৬ সালের ২১ মে রোয়ানুসহ বেশকিছু ছোটবড় ঘূর্ণিঝড় উপকূলে আঘাত হানে। তবে ’৭০-এর ঘূর্ণিঝড়ের ভয়াবহতা অন্যকোনো ঝড় অতিক্রম করতে পারেনি।

উপকূল সুরক্ষায় ১৪ দাবি:
বাংলাদেশের উপকূল সুরক্ষার জন্য ১৪টি জরুরি বিষয়ে সরকারের নজর দেওয়ার দাবি উঠেছে স্থানীয়দের মধ্য থেকে। বিষয়গুলো হচ্ছে-

১) জনসংখ্যা অনুপাতে আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়াতে হবে।
২) আশ্রয়কেন্দ্রের যথাযথ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে।
৩) আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার বিষয়ে মানুষের সচেতনতা বাড়াতে হবে।
৪) আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার সড়ক ভালো থাকতে হবে।
৫) সতর্ক সংকেত বিষয়ে মানুষদের আরও সচেতন করতে হবে।
৬) আবহাওয়ার সঙ্গে মিল রেখে যথাযথ সংকেত দিতে হবে।
৭) শক্ত ও উঁচু বেড়িবাঁধ নির্মাণ করতে হবে।
৮) মাঠ পর্যায়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটিকে আরও আগে থেকে সক্রিয় হতে হবে।
৯) উৎপত্তিস্থল থেকে ঘূর্ণিঝড় সংকেত জানানো শুরু করতে হবে।
১০) উপকূলের সব মানুষকে রেডিও নেটওয়ার্ক-এর আওতায় আনতে হবে।
১১) গণমাধ্যমকে সারাবছর উপকূলে নজরদারি রাখতে হবে।
১২) গণমাধ্যমে উপকূলের জন্য বিশেষ স্থান বরাদ্দ করতে হবে।
১৩) জরুরি সময়ে দ্বীপ-চরের তথ্য আদান-প্রদানে তথ্য নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে হবে।
১৪) তরুণ প্রজন্মের মধ্যে সচেতনতা ও সক্ষমতা গড়ে তুলতে হবে।

Facebook Comments Box
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ১০:২৩ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১২ নভেম্বর ২০১৯

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।