শুক্রবার ২৯ মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

ঈদের অর্থনীতি, অর্থনীতির ঈদ

এম এ খালেক   |   শুক্রবার, ২১ এপ্রিল ২০২৩   |   প্রিন্ট   |   80 বার পঠিত

ঈদের অর্থনীতি, অর্থনীতির ঈদ

রাত পোহালেই কাল পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর। বিশ্ব মুসলিম সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব হচ্ছে ঈদ-
উল-ফিতর। এক মাস কঠোর সিয়াম সাধনার পর মুসলিম সম্প্রদায় ঈদ-উল-ফিতর উদযাপন করে। শাব্দিকভাবে
‘ঈদ’ অর্থ হচ্ছে আনন্দ। এক মাস রোজা পালনের পর রোজা ভাঙ্গার আনন্দই হচ্ছে ঈদ-উল-ফিতর। প্রতিটি
ধর্মপ্রাণ মুসলমান ঈদ-উল ফিতর উদযাপনের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে। ঈদ-উল-ফিতরের সময় শরিয়তের
সীমার মধ্যে থেকে যে কোনোভাবে আনন্দ করার যায়। এটা ইসলাম সম্মত। কিন্তু তাই বলে ঈদ আনন্দের
নামে কোনো ধর্ম বিরোধি বা নৈতিকতা বিরোধি কোনো কাজ ইসলাম কখনোই সমর্থন করে না।

অনেকেই বলে থাকেন, ঈদ মুসলমানদের আনন্দ সবার। আসলে এ ধরনের কথার কোনো ভিত্তি নেই। কারণ
মুসলাম হলেই তার জন্য ঈদ-উল-ফিতর নয়। কারণ মুসলমান হয়েও অনেকেই রোজা পালন করেন না। যিনি বা
যারা রোজা পালন করেন না তার জন্য ঈদ নয়। ঈদ শুধু সেই ধর্মপ্রাণ মুসলমানের জন্য যিনি একমাস
কঠোর সিয়াম সাধানায় ব্যাপৃত থাকেন। ইসলাম ধর্ম ৫টি মৌলিক স্তম্ভ বা ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত।
এগুলো হচ্ছে, কালেমা, নামাজ, রোজা, হজ্জ্ব এবং যাকাত। এর মধ্যে প্রথম তিনটি কায়িক পরিশ্রমের
সঙ্গে সম্পৃক্ত। আর হজ্জ্ব শারিরিক এবং আর্থিক উভয় ধরনের সামর্থ্যরে উপর নির্ভরশীল। আর যাকাত শুধু
আর্থিক সামর্থ্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত। শারিরিক এবং আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান প্রত্যেক নর-নারীর জন্য
জীবনে অন্তত একবার হজ্জ্ব করা ফরজ। আর যার নিকট নেসাফ পরিমাণ অর্থ বা সম্পদ আছে তার উপর যাকাত
দেয়া ফরজ। যাকাত কোনো দান বা করুনা নয়। যাকাত হচ্ছে আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান ব্যক্তির
সম্পত্তিতে দরিদ্রের হক বা অধিকার। যাকাত শব্দটি এসেছে ‘যাক্কা’ শব্দ থেকে। যার অর্থ হচ্ছে পবিত্রকরণ।
যাকাত দানের মাধ্যমে একজন ব্যক্তির সম্পদ পবিত্রতা অর্জন করে।

ঈদ হচ্ছে একটি আনন্দ উপলক্ষ মাত্র। এর আসল লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য হচ্ছে পবিত্র রমজান। একটি বছর ১২ মাসে
সংগঠিত হয়। এর মধ্যে যে কোনো বিবেচনায় রমজান মাস হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ। আর কোনো মাসই
রমজান মাসের সমতুল্য নয়। রমজান মাস এত ফজিলত এবং গুরুত্বপূর্ণ হার কারণ হচ্ছে এই মাসেই মানব
জাতির মুক্তির সনদ মহা গ্রন্থ পবিত্র কোরআন শরীফ নাজিল হয়েছিল। রমজান মাসে শব-ই-কদরের রাতে সর্ব
প্রথম পবিত্র কোরআন শরীফ অবতীর্ণ হয়েছিল। সুরা ক্বদর এ বলা হয়েছে, এই মাসে এমন একটি রাত
আছে যা হাজার মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। হাজার মাস অর্থাৎ ৮৩ দশমিক ৩৩ বছর। এই রাতটি হচ্ছে পবিত্র শব-
ই-কদর। এমনিতেও রমজান মাসে যে কোনো এবাদত করলে তার সওয়াব ৭০ গুন বৃদ্ধি করা হয়। আল্লাহ্ধসঢ়;তায়ালা
প্রতিটি এবাদতের জন্য সওয়াব নির্ধারণ করে দিয়েছেন। কিন্তু একমাত্র ব্যতিক্রম হচ্ছে পবিত্র রমজান।

আল্লাহতায়ালা বলেন, বান্দা আমার সন্তুষ্টির জন্য আমার উদ্দেশ্যে সারা দিন রোজা রাখে। তাই তার প্রতিদান
আমি নিজ হাতে দেবো। তবে যে কোনো পাপ মোচন বা আল্লাহ্ধসঢ়;র ক্ষমা প্রাপ্তির জন্য আমাদের অবশ্যই
হালাল রুজি ভক্ষণ করতে হবে। কারণ যে কোনো এবাদত কবুলের পূর্বশর্ত হচ্ছে হালাল রুজি। যে ব্যক্তি
হারামভাবে উপার্জিত অর্থ বা সম্পদ দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন তিনি আল্লাহ্ধসঢ়;র ক্ষমতা পাবার আশা
করতে পারেন না। আল্লাহ্ধসঢ়; ইচ্ছে করলে বান্দার সব ধরনের পাপ মার্জনা করতে পারেন কিন্তু বান্দার হক নষ্টকারির
অপরাধ কোনোভাবেই ক্ষমতা করবেন না।

হক দু’ রকম। একটি হচ্ছে আল্লাহর হক। আল্লাহ্ধসঢ়;র হক হচ্ছে বান্দা তার এবাদত-বন্দেগি করবে।

কোনো কারণে আল্লাহর হক আদায়ে বান্দা যদি গাফিলতি করেও ফেলে
আল্লাহ তার নিজ গুনে তা ক্ষমা করে দিতে পারেন। কিন্তু বান্দার হক আল্লাহ কখনোই ক্ষমতা করবেন না যতক্ষণ
বান্দা হক নষ্টকারিকে ক্ষমা না করবেন। যেমন, কেউ যদি কোনো মানুষের নিকট থেকে ঘুষ গ্রহণ করেন
বা কারো নিকট থেকে অর্থ ধার নিয়ে তা ইচ্ছাকৃতভাবে পরিশোধ না করেন তাহলে সেই অপরাধ আল্লাহ
কখনোই ক্ষমা করবেন না। কিছু মানুষ আছে যার বান্দার হক নষ্ট করে মসজিদে গিয়ে এবাদত-মোনাজাতে
ব্যস্ত থাকেন। এদের এই এবাদত কখনোই আল্লাহ্ধসঢ়;র দরবারে গৃহীত বা কবুল হবে না। আর যিনি কোনো
বান্দার হক নষ্ট করবেন না তিনি যদি আল্লাহর এবাদত বন্দেগি একটু কমও করেন তাহলেও তিনি আল্লাহর
ক্ষমা পেতে পারেন। কাজেই আমাদের উদ্দেশ্য হওয়া উচিৎ কারো হক নষ্ট না করা। রমজান মাসে আল্লাহর নিকট
বেশি করে পানাহ চাওয়া। রমজান মাস হচ্ছে আল্লাহ্ধসঢ়;র ক্ষমা প্রাপ্তির একটি বড় সুযোগের মাস। তাই

সবারই উচিৎ হবে অতীতে সংঘঠিত গুনাহ থেকে আল্লাহর দরবারে বিনীতভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করা।
আল্লাহ হয়তো তার মহত্বগুনে বান্দার কৃত অপরাধ ক্ষমা করতেও পারেন। কিন্তু যারা বান্দার হক নষ্ট করেছেন
তাদের উচিৎ হবে এই সময় বান্দার হক ফিরিয়ে দেবার চেষ্টা করা এবং তার কৃত অপরাধের জন্য সংশ্লিষ্ট
বান্দার নিকট থেকে ক্ষমা চেয়ে নেয়া। তাহলে আল্লাহ হয়তো তাকে ক্ষমা করতে পারেন। আর যদি তা না করা
হয় অর্থাৎ যার বা যাদের হক নষ্ট করা হয়েছে তারা যদি ক্ষমা না করে তাহলে আল্লাহও সেই ব্যক্তিকে ক্ষমা
করবেন না। কাজেই শুধু এবাদত করলেই হবে না। যে কোনো এবাদত কবুল হবার পূর্বশর্ত হচ্ছে হালাল
রুজি। অনেকেই আছেন যারা কর্মক্ষেত্রে ঘুষ-দুর্নীতিতে যুক্ত থাকেন। একই সঙ্গে নিয়মিত আল্লাহ্ধসঢ়;র
এবাদত করেন। তারা মনে করেন, আল্লাহ্ধসঢ়;র এবাদতের মাধ্যমে পাপ খন্ডন করবেন। কিন্তু আসলে এটা
সম্পূর্ণরূপেই ভুল ধারনা। কারণ কারো রোজগার যদি হালাল না হয় তাহলে তিনি কোনোভাবেই আল্লাহর
ক্ষমা পাবেন না। আর কারো রুজি যদি হালাল হয় এবং তিনি যদি কারো হক নষ্ট না করেন তাহলে
ছোটখাটো অপরাধ আল্লাহ মাফ করে দিতে পারেন।

প্রত্যেকটি আনন্দ আয়োজনের একটি অর্থনৈতিক দিক থাকে। পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর শুধু আনন্দ আয়োজন
মাত্র নয়। জাতীয় অর্থনীতিতে মাহে রমজান ও পবিত্র ঈদ-উল-ফিতরের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। বিশেষ করে
রোজার মাসে কিছু কিছু খাদ্য পণ্যের চাহিদা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। প্রতিদিন ইফতারের সময় যে সব
খাদ্য পণ্য আমরা গ্রহণ করি তার চাহিদা এই সময় বৃদ্ধি পায়। সব শ্রেণি পেশার মানুষ ঈদের আগে
সাধ্যমতো নতুন জামা-কাপড় এবং জুতা ইত্যাদি ক্রয় করে থাকে। বিভিন্ন সূত্রে দাবি করা হয়, সারা
বছর যে পরিমাণ জামা-কাপড় বিক্রি হয় তার অন্তত ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশই এই রোজার মাসে বিক্রি হয়।

বছরের অন্য সময় যারা জামা-কাপড় ক্রয় করতে পারেন না তারাও ঈদের আগে চেষ্টা করেন কিভাবে পরিবারের
সদস্যদের নতুন কাপড় দেয়া যায়। ঈদের অর্থনীতি কোনোভাবেই অস্বীকার করা যায় না। পবিত্র রমজান শুরু
হলেই দেশের অর্থনীতিতে চাঙ্গাভাব শুরু হয়। বিশেষ করে রাজধানীর মার্কেটগুলো এ সময় বেশ জমে উঠে।
কিন্তু এবার বঙ্গবাজার হকার্স মার্কেটে সংঘঠিত অগ্নিকান্ডের ঘটনা সংশ্লিষ্ট সবাইকে ভাবিয়ে
তুলেছে। অনেকই অভিযোগ করছেন, বঙ্গবাজারের এই অঙ্গিকান্ড কোনো স্বাভাবিক ঘটনা নয়।

এর পেছনে বিশেষ কোনো মহলের উদ্দেশ্য আছে। বঙ্গবাজার হাকার্স মার্কেটের এই অগ্নিকান্ড অনেকেরই
ঈদ আনন্দ মাটি করে দিয়েছে। তারপরও রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহরের সুপার মার্কেটগুলো ক্রেতা-
বিক্রেতার ভীড়ে জমে উঠেছে। মানুষ এখন বড়ই কষ্টে আছে। বিশেষ করে অস্বাভাবিক উচ্চ মাত্রার মূল্যস্ফীতি
দেশের সাধারণ মানুষের জন্য বিপর্যয় ডেকে এনেছে। মার্চ মাসে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৯ দশমিক ৩৩
শতাংশ। আগামীতে মূল্যস্ফীতি আরো বাড়তে পারে। সেই অবস্থায় উচ্চ মাত্রার মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করাই
হবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। মানুষ শত দু:খের মাঝেও হাসতে পারে। তাই শত অভাব-অনটন থাকা সত্বেও তারা
ঈদের আনন্দ উপভোগ করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।

Facebook Comments Box
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ৬:০০ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ২১ এপ্রিল ২০২৩

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

রডের দাম বাড়ছে
(11169 বার পঠিত)

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০৩১  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।