মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১০ বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এগিয়ে যাচ্ছে দেশ, পিছিয়ে পড়ছে বীমাশিল্প : এ কে এম মনিরুল হক, চেয়ারম্যান নিটল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লি.

  |   বৃহস্পতিবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২২   |   প্রিন্ট   |   338 বার পঠিত

এগিয়ে যাচ্ছে দেশ, পিছিয়ে পড়ছে বীমাশিল্প : এ কে এম মনিরুল হক, চেয়ারম্যান নিটল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লি.

মোটরযান বীমার অ্যাক্ট লায়াবিলিটি ইন্স্যুরেন্স বাতিল হওয়ার বিষয়ে নিটল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের চেয়ারম্যান এ কে এম মনিরুল হক বলেন, দেশের অর্থনীতি যখন উন্নতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে তখন প্রয়োজন ছিল বীমাশিল্পের উন্নয়ন ও সংস্কারের। কিন্তু আমরা দেখলাম, মোটর বীমা ক্ষেত্রে সংস্কারের পরিবর্তে তা ঐচ্ছিক (যা মূলত বন্ধ) করে দেয়ার শামিল। এই মোটর বীমা ঐচ্ছিক করাতে আসলে কে লাভবান হলো? সেটাই আজ একটি বড় প্রশ্ন!

আসলেই কি মোটর বীমা ঐচ্ছিক? সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮-এর ধারা ৬০-এর উপধারা (১), (২) বর্ণনা করেন বলেন, এক আছে, কোন মোটরযানের মালিক বা প্রতিষ্ঠান ইচ্ছা করিলে তাহার মালিকানাধীন যে কোনো মোটরযানের জন্য যে সংখ্যাক যাত্রী পরিবহনের জন্য নির্দিষ্টকৃত তাহাদের জীবন ও সম্পদের বীমা করিতে পারিবে। দুইয়ে আছে, মোটরযানের মালিক বা প্রতিষ্ঠান উহার অধীন পরিচালিত মোটরযানের জন্য যথা নিয়মে বীমা করিবেন এবং মোটরযানের ক্ষতি বা নষ্ট হওয়ার বিষয়টি বীমার আওতাভুক্ত থাকিবে এবং বীমাকারী কর্তৃক উপর্যুক্ত ক্ষতিপূরণ পাইবার অধিকারী হইবেন।

আইনের উপধারা লক্ষ্য করলে বুঝতে পারবেন, মোটরযানের মালিক বা প্রতিষ্ঠান ইচ্ছা করিলে জীবন ও সম্পদের বীমা করিতে পারিবে। এখানে ঐচ্ছিক করেছে কর্মাশিয়াল গাড়ির যাত্রীদের জান ও মালের বিষয়ে। কিন্তু ৬০-এর উপধারা (২) বলা হয়েছে, ‘মোটরযানের মালিক বা প্রতিষ্ঠান উহার অধীন পরিচালিত মোটরযানের জন্য যথা নিয়মে বীমা করিবেন’ এখানে যথানিয়মে বীমা করিবেন। এই করিবেন বলতে কিন্তু বাধ্যতামূলক বুঝায়।

তিনি বলেন, আমরা মনে করি সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮-এর ধারা ৬০-এর (২) নম্বর উপধারা যদি প্রথমে উল্লেখ করে পরে (১) নম্বর উপধারা উল্লেখ করতো তবে এই বিভ্রান্তির সৃষ্টি হতো না। তবে সবচাইতে বড় ক্ষতি হয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ- (বিআরটিএ) কর্তৃক পুলিশকে যে চিঠি দিয়েছে, সেখানে আইনের বিষয়টি এভাবে চিঠিতে উল্লেখ করে বলা হয়েছে যে, এ ধারা অনুযায়ী তৃতীয়পক্ষের ঝুঁকি বীমা বাধ্যতামূলক নয় এবং এই আইনের অধীনে তা লঙ্ঘন হলেও কোনো দণ্ডের বিধান নেই। তৃতীয়পক্ষের ঝুঁকি বীমা না থাকলে মোটরযান বা মোটরযানের মালিকের বিরুদ্ধে সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ অনুযায়ী কোনো মামলা দেওয়ার সুযোগ নেই।

থার্ড পার্টি বীমাকে নিষিদ্ধ আর কমপ্রিহেনসিভ বীমাকে ঐচ্ছিক করাতে গাড়ি ব্যবহারকারীরা বীমাবিমুখ হয়ে পড়েছে। ফলে একদিকে বীমাগ্রহীতারা বঞ্চিত হচ্ছে ক্ষতিপূরণ থেকে অন্যদিকে বীমা কোম্পানিগুলো বঞ্চিত হচ্ছে তাঁদের কাক্সিক্ষত আয় থেকে, যে আয় থেকে সরকার হারাচ্ছে তার বিপুল রাজস্ব (ভ্যাট, স্ট্যাম্প ও ট্যাক্স)। বীমাশিল্পের উপর নির্ভরতা যাচ্ছে কমে, বেড়ে যাচ্ছে অনিহা। যার প্রভাব সরাসরি বীমাশিল্পের উপর পড়ছে।

তিনি বলেন, পৃথিবীর বহু উন্নত দেশের মতো আমাদের দেশেও মোটর বীমা বাধ্যতামূলক ছিল। যা ১৯৮৩ সালের মোটরযান সংক্রান্ত পুরোনো আইনে তৃতীয়পক্ষের ঝুঁকি বীমা আইনে শুধু বাধ্যতামূলকই ছিল না, এর অধীনে দণ্ডের বিধানও র্ছিল। তবে ২০১৮ সালের নতুন সড়ক পরিবহন আইনে তা বাতিল করা হয়, যা ২০১৯ সালের নভেম্বরে কার্যকর হয় যা কিনা মোটর বীমাকে চিরতরে বন্ধ করে দেবার পথ কে সুগম করে। একটি সভ্য সমাজের বীমা ছাড়া গাড়ি রাস্তায় চলবে তা কিন্তু কল্পনাতীত।

শুধু বাংলাদেশ নয়, পৃথিবীর অনেক দেশ বিশেষ করে অনুন্নত থার্ড ওয়ার্ল্ডের দেশগুলোতে, ইন্স্যুরেন্স বাধ্যতামূলক না করলে, কেউ তা করতে চায় না। তাই কর্তৃপক্ষ দেশকে সভ্যতার মানদণ্ডে নেয়ার জন্য বাধ্য হয়ে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ইন্স্যুরেন্সকে বাধ্যতামূলক করে থাকে। যার উদাহরণ রয়েছে আমাদের আশেপাশের সার্কভুক্ত দেশ ভারত, পাকিস্থান, শ্রীলংকা, ভুটান, নেপাল শুধু তাই নয় এই উপমহাদেশের দেশগুলো ছাড়াও ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া এমনকি মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতেও মোটর ইন্স্যুরেন্স বাধ্যতামূলক। অন্ততঃপক্ষে মোটর থার্ডপার্টি ইন্স্যুরেন্স ছাড়া রাস্তায় গাড়ি চালানো যাবে না। কারণ মোটর বীমা শুধু অর্থনীতি সাথেই সম্পৃক্ত নয় এর সাথে জড়িয়ে আছে সামাজিক ও মানবিক দায়বদ্ধতা।

মূলত এই দায়বদ্ধতা থেকেই মোটর বীমা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আর মোটর বীমার একটি পলিসি হচ্ছে তৃতীয়পক্ষের দায়বদ্ধতা বীমা যা থার্ডপার্টি ইন্স্যুরেন্স নামেই পরিচিত। এই পলিসি গাড়ির মালিক, পরিবহন মালিক বা বীমা কোম্পানির স্বার্থরক্ষার্থে করা হয়নি এর প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে জনস্বার্থ। বিশেষ করে তৃতীয়পক্ষের স্বার্থ অর্থাৎ জনস্বার্থ ( জান ও মাল) রক্ষা করা।

আমরা জানি, একটি দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নেয়ার অন্যতম একটি ভিত্তি হচ্ছে যোগাযোগব্যবস্থা। আমাদের দেশের মূল যোগাযোগব্যবস্থা হচ্ছে সড়ক পরিবহন। যে লক্ষ্যে সরকার নিরালসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। যার ফলশ্রুতিতে সরকার নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছে যা অর্থনীতির ভিত্তিতে সোনালি সোপান হিসেবে কাজ করবে। দেশের জিডিপি বছরে ১ দশমিক ২ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে এবং দক্ষিণাঞ্চলীয় জিডিপি ২.৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেতে পারে। অথচ যান-পরিবহনের দুর্ঘটনা যেভাবে প্রতিনিয়ত প্রাণ নিধনের দুর্বিষহ প্রতিযোগিতায় নেমেছে তাতে একদিকে বিনষ্ট হচ্ছে সম্পদ অন্যদিকে হারাচ্ছে প্রাণ। যা পুরো জাতিকে এক বিচলিত আর আশঙ্কাগ্রস্ত করেছে প্রতিনিয়ত।

অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, গরীব ও নিরীহ যাত্রী/পথচারী সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করে বা শারীরিক অনিষ্টতায় ভোগে বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই নিরীহ ব্যক্তি বা পরিবারের আশ্রয়স্থল হতে পারতো তৃতীয়পক্ষের মোটর বীমা। তৃতীয়পক্ষ মোটর বীমা সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত অসহায় ব্যক্তির পরিবারকে ক্ষতিপূরণ এবং আহতদের চিকিৎসার খরচ প্রদানের দায়িত্ব নিতে পারতো।

আমি বলতে চাই, বর্তমান সরকার দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখার জন্য তথা বীমাশিল্পে অর্থবহ পরিবর্তন আনার ক্ষেত্রে সকল স্টেকহোল্ডারদের নিকট গ্রহণযোগ্য বাধ্যতামূলক মোটর বীমা পুনরায় চালু করলে বীমাশিল্পে নতুন দিগন্ত উন্মোচন হবে বলে আমার বিশ্বাস।

 

Facebook Comments Box
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ১২:৩৪ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২২

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।