শনিবার ২৭ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব আহরণ হলে ব্যবসায়ীরা সব সুবিধা পাবেন: অর্থমন্ত্রী

  |   শুক্রবার, ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯   |   প্রিন্ট   |   761 বার পঠিত

কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব আহরণ হলে ব্যবসায়ীরা সব সুবিধা পাবেন: অর্থমন্ত্রী

সরকার কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব আহরণ করতে পারলে ব্যবসায়ীদের সব সুবিধা দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। গতকাল বিভিন্ন বাণিজ্য সংগঠন ও ব্যবসা-বাণিজ্যসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এ কথা বলেন তিনি।

রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে প্রথমবারের মতো এ মতবিনিময় সভা করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।

অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী জানান, রাজস্ব আহরণ বাড়াতে দেশের সব উপজেলায় কর কার্যালয় করা হবে। ভ্যাটের আওতা বাড়াতে যেখানেই বিদ্যুৎ সুবিধা আছে, সেখানকার সব দোকানেই ভ্যাট মেশিন স্থাপন করা হবে। এসবের মধ্য দিয়ে সরকারের কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব আহরণ হলে ব্যবসায়ীরা সব সুবিধা পাবেন। সরকার ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে তখন উইন-উইন সিচুয়েশন থাকবে। তবে অসাধু ব্যবসায়ীরা কোনো ধরনের সুবিধা পাবেন না।

বৈঠকের শুরুতেই আ হ ম মুস্তফা কামাল ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা কেউ খালি হাতে যাবেন না। দেশের অর্থনীতির ৮০ শতাংশের বেশি আপনারা অবদান রাখছেন। আগে প্রতিশ্রুতি দিয়ে রাখা হতো না। কিন্তু এখন প্রকৃত ব্যবসায়ীদের জন্য সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা থাকবে। আমাদের এখন চাহিদা অনেক বেড়ে গেছে। রাজস্ব দেয়ার মাধ্যমে সেই চাহিদা পূরণ করেন, তারপর যেভাবে চাইবেন সেভাবে সহযোগিতা দেয়া হবে।

ব্যবসায়ীদের মধ্যে হতাশা দেখার কথা জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, প্রত্যেকবারই তাদের আশ্বাস দেয়া হয়, কিন্তু পরবর্তী সময়ে সরকার তা পুরোপুরি পূরণ করে না। এ বৈঠকের পর আর কোনো ব্যবসায়ী অভিযোগ করবেন না যে, আমরা তাদের দিকে সাহায্যের হাত প্রসারিত করছি না।

মতবিনিময় সভার পর অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, বৈঠকে ব্যবসায়ীরা ব্যাংকঋণের সুদের হার কমানো, করহার কমানো, খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনা এবং ব্যবসায়িক সূচকের উন্নতির জন্য বেশকিছু সুপারিশ করেছেন। এছাড়া খাতভিত্তিক কয়েকটি অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে বেশকিছু প্রতিবন্ধকতার কথা জানানো হয়েছে। বৈঠকে ব্যবসায়ীরা তাদের সমস্যা ন্যায্যভাবেই তুলে ধরেছেন। আমাদের দায়িত্ব হলো সেগুলো সমাধানের পথে এগিয়ে যাওয়া।

তিনি জানান, কীভাবে কাজ করতে হবে তা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন। ব্যাংকঋণের সুদের হার বেশি হওয়ায় স্প্রেডও বেশি। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে ব্যবসায়ীদের কষ্ট না দিয়ে কাজ করা হবে। আমাদের উন্নয়নের স্বার্থে রাজস্ব আহরণের চাহিদা বেড়ে গেছে। রাজস্ব আহরণ বাড়াতে হবে। আমাদের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ২ লাখ ৯৬ হাজার কোটি টাকা। তাই আগে চাহিদা পূরণ করেন, তারপর যেভাবে চাইবেন সেভাবেই সহায়তার চেষ্টা করা হবে।

পুঁজিবাজার ও আর্থিক খাতের বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, সরকার খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। খেলাপি ঋণ সম্পর্কে আমি যা বলছি, তা-ই বাস্তবায়ন হবে। আমি বলার পর খেলাপি ঋণ বাড়েনি। এটা ডেইলি বেসিসে হয় না। খেলাপি ঋণ কমানো হবে। এটা না করলে ব্যাংকিং খাত দুর্বল হয়ে পড়বে। ব্যাংকগুলোর আর্থিক প্রতিবেদন স্পেশাল অডিটের মাধ্যমে পর্যালোচনা করেই সুদের হার নির্ধারণ করা হবে। পুঁজিবাজারে তিন ধাপে ট্যাক্স কাটা হয়। এভাবে কয়েক ধাপে না কেটে একবারে কাটা হবে। পুঁজিবাজারের উন্নয়নে সবকিছু করা হবে। পুঁজিবাজারের যেটা খারাপ, সেটি দূর করতে কাজ করা হবে। অন্যদিকে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার এখনই কমানো যাবে না। ধীরে ধীরে সমন্বয় করা যায় কিনা তা ভেবে দেখা হবে।

খেলাপি ঋণ অবলোপনের বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, অবলোপন করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের খেলাপি ঋণ কমানোর সার্কুলারের বিষয়ে তিনি বলেন, এটি আমার সঙ্গে পরামর্শ করেই গভর্নর করেছেন।

রাজস্ব আহরণে এনবিআরকে শক্তিশালী করা হচ্ছে জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমরা রাজস্ব বোর্ডের ওপর ট্যাক্স টার্গেট বসিয়ে দেব না। তারা কী পরিমাণে কর আদায় করতে পারবে, সেটা আমাদের জানাবে। সে অনুসারেই লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করব। তবে করের হার না বাড়িয়ে করজাল বাড়ানো হবে। দেশের ৪৯২টি উপজেলায় ট্যাক্সের অফিস হবে। রাজস্ব আদায় বাড়াতে জনবল বৃদ্ধিসহ আধুনিকায়ন করা হবে এনবিআর। তাদের যা প্রয়োজন হবে সেটিই দেয়া হবে।

দেশের ব্যবসায়িক পরিবেশের উন্নতি কবে হবে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দেশের ব্যবসা সূচকের উন্নতি করা সরকারের অন্যতম আকুতি। এটাকে উন্নতি করতে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান কাজ করবেন। আমাদের তিন মাস সময় দিন। আমরা ব্যবসা সূচকের উন্নতি করব। সুদের হার কমানো থেকে শুরু করে অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা হবে।

বৈঠক শেষে এফবিসিসিআই সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, হয়রানিমুক্ত বিনিয়োগ পরিবেশ আমরা চাই। সরকার চায় বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের মাধ্যমে অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে সরকারের রাজস্ব লক্ষ্য পূরণে আমাদের সহযোগিতা। এ দুইয়ের মধ্যে সমন্বয় ঘটাতে আমরা একযোগে কাজ করতে চাই। আমরা আশ্বাসের ওপর বিশ্বাস রাখতে চাই। সমস্যাগুলো সমাধানে করণীয় নির্ধারণ করবেন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো। অনেক ক্ষেত্রে ডাবল ট্যাক্স, দু-তিনবার ট্যাক্সও দিতে হয়। এক্ষেত্রে মন্ত্রী বলেছেন, ট্যাক্স কমিয়ে এনে করজাল বাড়িয়েও লক্ষ্য পূরণ করা সম্ভব।

মতবিনিময় সভায় প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ছাড়াও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট শেখ কবির, এফসিএমএ প্রেসিডেন্ট মাহবুব উল আলম, বিএলএফসিএর প্রেসিডেন্ট খলিলুর রহমান, বিডার চেয়ারম্যান, স্কিল ডেভেলপমেন্ট অথরিটির চেয়ারম্যানসহ সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রধান এবং বিভিন্ন বাণিজ্য সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া এমসিসিআই সভাপতি নিহাদ কবির, এমসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি নাসিম মঞ্জুর, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন চৌধুরী, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এম খায়রুল হোসেন ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক সভাপতি শাকিল রিজভীও এতে অংশ নেন।

Facebook Comments Box
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ৩:২১ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।