বুধবার ১৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২ পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

Ad
x

ডিএসই এটিবি প্ল্যাটফর্মে রেনাটার প্রেফারেন্স শেয়ারের লেনদেন শুরু

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫   |   প্রিন্ট   |   27 বার পঠিত

ডিএসই এটিবি প্ল্যাটফর্মে রেনাটার প্রেফারেন্স শেয়ারের লেনদেন শুরু

দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ডে (এটিবি) প্রথমবারের মতো কোনো কোম্পানির প্রেফারেন্স শেয়ারের আনুষ্ঠানিক লেনদেন শুরু হয়েছে।

 

আজ  ডিএসই এটিবি প্ল্যাটফর্মে রেনাটা পিএলসি কর্তৃক ইস্যুকৃত প্রেফারেন্স শেয়ারের লেনদেন উদ্বোধন করা হয়। এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম এবং রেনাটা পিএলসি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ এস কায়সার কবির।

এ উপলক্ষে ডিএসই’র ট্রেনিং একাডেমি, নিকুঞ্জে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ও রেনাটা পিএলসি’র মধ্যে তালিকাভুক্তিকরণ সংক্রান্ত একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন ডিএসই’র প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা ও ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আসাদুর রহমান, এফসিএস এবং রেনাটা পিএলসি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও সৈয়দ এস কায়সার কবির। এ সময় উপস্থিত ছিলেন রেনাটা পিএলসি’র প্রধান অর্থ কর্মকর্তা মোস্তফা আলিম আওলাদ, কোম্পানি সেক্রেটারি মো. জুবায়ের আলম এবং ইস্যু ম্যানেজার সিটি ব্যাংক ক্যাপিটাল-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মো. সোহেল হক।

অনুষ্ঠানে ওটিসি মার্কেট ডিপার্টমেন্টের প্রধান ও সহকারী জেনারেল ম্যানেজার সৈয়দ ফয়সাল আব্দুল্লাহর সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন ডিএসই’র প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা ও ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আসাদুর রহমান। তিনি বলেন, রেনাটা পিএলসি’র প্রেফারেন্স শেয়ার তালিকাভুক্তির মাধ্যমে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে একটি নতুন ধরনের প্রোডাক্টে লেনদেনের সুযোগ তৈরি হয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, এই প্রথম প্রেফারেন্স শেয়ারকে ইক্যুইটি সিকিউরিটিজ হিসেবে ডিএসই’র অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ডে তালিকাভুক্ত করা হলো, যা বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত।

তিনি আরও বলেন, প্রেফারেন্স শেয়ার এমন একটি সিকিউরিটিজ যেখানে ইক্যুইটি ও ডেট উভয় ধরনের বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান থাকায় একে হাইব্রিড সিকিউরিটিজ বলা হয়। ডিএসই এটিবি গঠনের ফলে সাধারণ শেয়ারের বাইরে এ ধরনের হাইব্রিড ইনস্ট্রুমেন্ট তালিকাভুক্তির সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, যা পুঁজি উত্তোলনের ক্ষেত্রে একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে। রেনাটা কৌশলগতভাবে তাদের লেভারেজ রেশিও বজায় রাখতে এই প্রেফারেন্স শেয়ার ইস্যু করেছে বলে তিনি জানান। এতে করে কোম্পানি ইক্যুইটি ও ঋণের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে পারছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, এই উদ্যোগ অন্যান্য কোম্পানিকেও প্রেফারেন্স শেয়ারের মাধ্যমে পুঁজি উত্তোলনে উৎসাহিত করবে এবং এর ফলে ইস্যুকারী ও বিনিয়োগকারী উভয়ই উপকৃত হবে।

রেনাটা পিএলসি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও সৈয়দ এস কায়সার কবির বলেন, প্রেফারেন্স শেয়ার ইস্যুর পেছনে একটি জটিল ও চ্যালেঞ্জপূর্ণ প্রক্রিয়া কাজ করে, যা মোটেও সহজ নয়। রেনাটার ক্ষেত্রে মুদ্রার আকস্মিক ও বড় ধরনের অবমূল্যায়নের ফলে কোম্পানির পরিকল্পিত বিনিয়োগ ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়। যেখানে প্রাথমিকভাবে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ পরিকল্পনা ছিল, সেখানে তা বেড়ে প্রায় ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকায় পৌঁছে, যা ছিল সম্পূর্ণ অনাকাঙ্ক্ষিত।

তিনি বলেন, খুব অল্প সময়ের মধ্যে এই অবমূল্যায়ন হওয়ায় রেনাটাকে ঋণের ওপর নির্ভর করতে হয়, যদিও প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘদিন কার্যত ঋণমুক্ত অবস্থায় ছিল। রাইট শেয়ার ইস্যু করলে সংখ্যাগরিষ্ঠ শেয়ারহোল্ডারের মালিকানা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেত, তাই বিকল্প অর্থায়নের পথ হিসেবে প্রেফারেন্স শেয়ার ইস্যুকে উপযুক্ত সমাধান হিসেবে বেছে নেওয়া হয়। কারণ, প্রেফারেন্স শেয়ার ভোটাধিকারবিহীন এবং এতে মালিকানায় বড় ধরনের ডাইলিউশন ঘটে না।

সৈয়দ এস কায়সার কবির আরও বলেন, প্রেফারেন্স শেয়ারের লভ্যাংশ হার ট্রেজারি বন্ডের রেফারেন্স রেটের ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হয়েছে, যা সাধারণত ঝুঁকিমুক্ত বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচিত। যদিও এটি একটি নতুন ধরনের আর্থিক উপকরণ হওয়ায় এর বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় প্রায় নয় মাস সময় লেগেছে। এই সময়ে ট্রেজারি বন্ডের সুদের হার কমে গেলেও প্রেফারেন্স শেয়ারের কার্যকর রিটার্ন প্রায় ১৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা বিনিয়োগকারীদের জন্য আকর্ষণীয়।

তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, আগামী এক থেকে দুই বছরের মধ্যে রেনাটার আর্থিক অবস্থান দৃশ্যমানভাবে উন্নত হবে এবং প্রতিষ্ঠানটি আবারও ঋণমুক্ত অবস্থান ও শক্তিশালী নেট মার্জিনে ফিরে যেতে পারবে। প্রেফারেন্স শেয়ারকে তিনি ঝুঁকি ভাগাভাগির একটি কার্যকর মাধ্যম হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, লাভ না হলে লভ্যাংশ দেওয়ার বাধ্যবাধকতা নেই। ক্যাপিটাল মার্কেটে আইপিও বা রাইট শেয়ারই একমাত্র অর্থায়নের পথ নয়, বরং মূলধন কাঠামোকে টেকসই করতে বিকল্প ও উদ্ভাবনী আর্থিক উপকরণ জরুরি।

 

অনুষ্ঠানে ডিএসই’র চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম বলেন, ক্যাপিটাল মার্কেটে স্টক এক্সচেঞ্জের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হলেও এখনো প্রতিষ্ঠান ও বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রত্যাশিত আস্থাভিত্তিক ও কাস্টমার-সেন্ট্রিক সম্পর্ক পুরোপুরি গড়ে ওঠেনি। তবে বিদ্যমান সংস্কৃতি ভেঙে আরও কার্যকর, স্বচ্ছ ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের লক্ষ্যে ডিএসই কাজ করে যাচ্ছে।

 

তিনি বলেন, রেনাটা পিএলসি’র দীর্ঘ কমপ্লায়েন্স ইতিহাস, শক্তিশালী করপোরেট গভর্নেন্স ও সুসংগঠিত শেয়ারহোল্ডিং কাঠামোর কারণে প্রেফারেন্স শেয়ার ইস্যুর সিদ্ধান্ত দ্রুত নেওয়া সম্ভব হয়েছে। যদিও বিএসইসি ও ডিএসই’র যৌথ অনুমোদন প্রক্রিয়ায় কিছুটা সময় লেগেছে, ভবিষ্যতে নতুন রেগুলেশন, প্রক্রিয়াগত সংস্কার ও ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে এই প্রক্রিয়া আরও সহজ ও দ্রুত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

 

ডিএসই চেয়ারম্যান আরও বলেন, কোভিড-পরবর্তী অভিঘাত, ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা, ম্যাক্রোইকোনমিক চাপ, মুদ্রার অবমূল্যায়ন ও সুদের হার বৃদ্ধির কারণে অনেক সুপরিচালিত প্রতিষ্ঠানের ওপর ঋণের চাপ বেড়েছে। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে ব্যাংকনির্ভরতা কমিয়ে ক্যাপিটাল মার্কেটকে আরও সক্রিয়ভাবে ব্যবহার করা জরুরি। এক্ষেত্রে অর্ডিনারি শেয়ার, প্রেফারেন্স শেয়ার ও দীর্ঘমেয়াদি ডেট ইনস্ট্রুমেন্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। রেনাটার উদ্যোগকে তিনি একটি ইতিবাচক উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেন।

 

তিনি জানান, বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য প্রেফারেন্স শেয়ার ও বন্ড নিয়মিত ও পুনরাবৃত্তিমূলক অর্থায়নের কার্যকর মাধ্যম হতে পারে। ভবিষ্যতে এসব ইন্সট্রুমেন্টের ক্ষেত্রে রিপেমেন্ট কমপ্লায়েন্স মূল্যায়নের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের আস্থা আরও বাড়বে। ডিএসই’র লক্ষ্য ব্যাংকিং খাতের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা কমিয়ে পুঁজিবাজারভিত্তিক অর্থায়ন জোরদার করা।

 

উল্লেখ্য, রেনাটা পিএলসি প্রাইভেট প্লেসমেন্টের মাধ্যমে প্রেফারেন্স শেয়ার ইস্যু করে মোট ৩২৫ কোটি টাকা উত্তোলন করেছে। এই প্রেফারেন্স শেয়ার নন-কিউমুলেটিভ, নন-পার্টিসিপেটিভ এবং সম্পূর্ণরূপে সাধারণ শেয়ারে রূপান্তরযোগ্য। প্রতিটি প্রেফারেন্স শেয়ারের অভিহিত মূল্য ১ হাজার ৯০০ টাকা।

 

এই প্রেফারেন্স শেয়ারের মেয়াদ সাবস্ক্রিপশন সমাপ্তির তারিখ ১৯ অক্টোবর ২০২৫ থেকে ছয় বছর, অর্থাৎ ২০৩১ সাল পর্যন্ত। তৃতীয় বছরের শেষ থেকে শুরু করে প্রতি বছর এক ধাপে মোট চার ধাপে নির্ধারিত ৪৭৫ টাকা রূপান্তর মূল্যে সাধারণ শেয়ারে রূপান্তর করা হবে। ফলে তৃতীয় বছরের শেষ থেকে প্রতি বছর এটিবিতে তালিকাভুক্ত এই প্রেফারেন্স শেয়ারের মূল্য ধাপে ধাপে ১ হাজার ৯০০ টাকা থেকে কমে ৪৭৫ টাকায় নেমে আসবে। সাধারণ শেয়ারে রূপান্তরিত না হওয়া অংশের বিপরীতে পর্যাপ্ত কর-পরবর্তী নিট মুনাফা থাকলে বিনিয়োগকারীরা বছরে ১৫ শতাংশ হারে লভ্যাংশ পাবেন।

 

রেনাটার প্রেফারেন্স শেয়ার তালিকাভুক্তির মাধ্যমে বর্তমানে ডিএসই এটিবি প্ল্যাটফর্মে দুইটি ইক্যুইটি এবং সাতটি বন্ডসহ মোট নয়টি সিকিউরিটিজ লেনদেনে রয়েছে, যা বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে বিকল্প ও উদ্ভাবনী অর্থায়নের নতুন সম্ভাবনার ইঙ্গিত দিচ্ছে।

Facebook Comments Box
বিষয় :

Posted ৬:৩২ অপরাহ্ণ | সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

Page 1

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
প্রকাশক : সায়মুন নাহার জিদনী
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।