বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১২ বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সাবেক কর্মকর্তাদের অবহেলায় দীর্ঘদিন যাবত দুর্ভোগ

ডেল্টা লাইফে সফটওয়্যার জটিলতায় স্থবির কার্যক্রম

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   সোমবার, ০২ আগস্ট ২০২১   |   প্রিন্ট   |   286 বার পঠিত

ডেল্টা লাইফে সফটওয়্যার জটিলতায় স্থবির কার্যক্রম

ভারত থেকে কেনা সফটওয়্যারে সৃষ্ট জটিলতায় দীর্ঘদিন যাবত তথ্য সংরক্ষণ করা হয়নি। তবে সমস্যা চিহ্নিত হওয়ার পর প্রস্তুতকারক কোম্পানির সাথে যোগাযোগ করা হলে তাতে সাড়া মেলেনি। ফলে পরিশোধযোগ্য পলিসি, মেয়াদোত্তীর্ণ পলিসি এবং পলিসি লোন সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো দীর্ঘদিন যাবত সঠিকভাবে সংরক্ষণের অভাবে গড়মিল দেখা দিয়েছে। ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা ও পরিদর্শন বিভাগের তদন্তে এমনই তথ্য উঠে এসেছে। বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যে ডেল্টা লাইফের প্রশাসকের পক্ষ থেকে নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষকে চিঠির মাধ্যমে অবহিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।

জানা গেছে, ডেল্টা লাইফের আই-ওয়ান সফটওয়্যার সংশ্লিষ্ট ব্যয় ও ব্যবহার সম্পর্কে একটি তদন্ত চালায় কোম্পানির অভ্যন্তরীন নিরীক্ষা ও পরিদর্শন বিভাগ। এ তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে জানিয়ে গত ১৩ জুন আইডিআরএ চেয়ারম্যানের কাছে পত্র প্রেরণ করে কোম্পানির নবনিযুক্ত প্রশাসক রফিকুল ইসলাম। প্রতিবেদনের অনুলিপিতে বলা হয়- ৮ জুলাই ২০১৪ তারিখে আই-ওয়ান সফটওয়্যার ক্রয়ে ভারতের হানসা সলিউশন ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেডের সাথে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি। যার লাইসেন্স ও ইম্পিøমেন্টেশন ফি ধরা হয় ৪ লাখ ৫০ হাজার ইউএস ডলার। এর পাশাপাশি রক্ষণাবেক্ষণের কাজে নিয়োজিতদের আনুসঙ্গিক ব্যয় এর সাথে যুক্ত হবে। তবে এখন পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি এই খাতে ৩ কোটি ৩৮ লাখ ৩৭ হাজার ১৮০ টাকা খরচ করেছে।

কিন্তু এই সফটওয়্যার ক্রয়ের ক্ষেত্রে কোন দরপত্র আহ্বান করেনি। যা কোম্পানির স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে আইডিআরের বিভিন্ন পদক্ষেপ ও নির্দেশনার লঙ্ঘন। তাছাড়া প্রতিষ্ঠানটির সাথে সফটওয়্যার মেইনটেন্যান্স চুক্তি না করে আগের সফটওয়্যার ‘লোন ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার’ বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে পলিসি লোনের কোন তথ্য পায়নি তদন্ত দল। সমস্যা সমাধানে হানসা সলিউশন ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেডের সাথে যোগাযোগ করলে তারাও কোন সাড়া দিচ্ছে না।

এ বিষয়ে কোম্পানির আইটি বিভাগের প্রধানের সাথে কথা বললে জানান- প্রথমে গণ-গ্রামীন বীমা বিভাগের পলিসি লোন বিভাগ থেকে আই-ওয়ান সফটওয়্যারের বিভিন্ন সমস্যার বিষয়ে আইটি বিভাগকে জানায়। এর প্রেক্ষিতে হানসা সলিউশনকে মৌখিক ও লিখিতভাবে জানানো হলেও তাদের থেকে কোন স্থায়ী সমাধান পাওয়া যায়নি।

তবে দাবী বিভাগের মো. আব্দুল হাই (সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট) জানান, এ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বদলির কারনে গত ২০ মে গণ-গ্রামীন প্রজেক্টের দাবী বিভাগের দায়িত্ব গ্রহন করি। আগের দায়িত্বপ্রাপ্তরা দীর্ঘদিন যাবত অ্যাকাউন্টিং সফটওয়্যারের সাথে দাবীর সফটওয়্যারের সমন্বয় করেননি। আবার ম্যানুয়েল তথ্য সংরক্ষণ বন্ধ থাকায় বর্তমানে যথাযথ তথ্য দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। তিনি বলেন- দীর্ঘদিন থেকেই এ সমস্যা থাকায় জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। সফটওয়্যারে তথ্য সংরক্ষণ যথাযথ না থাকা, ভুল তথ্য সংরক্ষণ ও তথ্য হালনাগাদ না থাকার মতো সমস্যা সমাধানে অনেক সময়ের প্রয়োজন। এছাড়া ঋণ বিতরণ ও আদায়ের তথ্য সংরক্ষণে সমস্যা সৃষ্টি হওয়ায় তা পোস্টিং করা সম্ভব হচ্ছে না বলেও জানান তিনি। ফলে এক্ষেত্রেও অ্যাকাউন্টিং সফটওয়্যারের সাথে ঋণ তথ্য মিলছে না।

এমন অবস্থার প্রেক্ষিতে তদন্ত দলের পরামর্শ হলো- হানসা সলিউশনের আই-ওয়ান সফটওয়্যার দিয়ে কার্যক্রম চালানো মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। ভবিষ্যতে যথাযথ ডাটা আপডেট পেতে আই-ওয়ান সফটওয়্যার থেকে বের হয়ে আসতে হবে এবং বিকল্প সফটওয়্যারের প্রয়োজন অতীব জরুরী।

এ বিষয়ে কোম্পানি থেকে কি পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তা জানতে প্রশাসক রফিকুল ইসলামের কাছে ফোন করা হয়। তিনি জানান- বিষয়টি নিয়ে আমাদের অডিট চলছে। তাই এখনই সবকিছু বলা যাচ্ছে না। তবে এসব অনিয়ম উল্লেখ করে মামলা করা হয়েছে। এখন আদালতই সবকিছুর সিদ্ধান্ত নেবে।

নতুন সফটওয়্যারের মেইনটেন্যান্স চুক্তি না করেই আগের সফটওয়্যার বন্ধ করায় পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনা পর্ষদের যোগসাজশে তথ্য গোপনের কোন পরিকল্পনা ছিল কিনা, এ নিয়ে সন্দেহ তৈরী হয়েছে সংশ্লিষ্টদের মাঝে। এ বিষয়ে আইডিআরএ’র মন্তব্য জানতে মুখপাত্র এস এম শাকিল আক্তারকে ফোন করা হলে তিনি বলেন- মূলত সফটওয়্যার কিনতে যে ব্যয় হয়েছে তা হলো ব্যবস্থাপনা ব্যয়। এটা মূলত ম্যানেজমেন্টের হতেই হয়েছে। তবে এজন্য পরিচালনা পর্ষদের অনুমতি নিতে হয়। ডেল্টার সাবেক পর্ষদের কর্তৃত্ব ছিল মঞ্জুর রহমানের হাতে, অপরদিকে তার মেয়ে ছিল ম্যানেজমেন্টের প্রধান। এক্ষেত্রে অনুমোদন নিতে কোন বেগ পেতে হয়নি। তবে বিষয়টি নিয়ে আমরা শুনানীর আয়োজন করবো।

বর্তমান পরিস্থিতিতে শুনানী সম্ভব হবে কিনা জানতে চাইলে বলেন- লকডাউনের চলাকালে শুনানী সম্ভব না। কেননা শুনানীতে অনেক তথ্যপ্রমাণ উপস্থাপন করা দরকার হয় যা স্বশরীরে না হলে হয় না। তাই আগামী ৫ আগস্ট লকডাউন শিথিল হলে পরবর্তীতে শুনানীর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

Facebook Comments Box
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ৫:২৭ অপরাহ্ণ | সোমবার, ০২ আগস্ট ২০২১

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।