শনিবার ২০ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৭ বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নতুন এলসি খুলতে নানামুখী জটিলতায় আমদানিকারকরা

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   শুক্রবার, ০১ মে ২০২০   |   প্রিন্ট   |   362 বার পঠিত

নতুন এলসি খুলতে নানামুখী জটিলতায় আমদানিকারকরা

করোনাভাইরাসের কারণে নাজুক পরিস্থিতিতে পড়েছে রফতানি বাণিজ্য। এতে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমায় দেশের বাজারে মার্কিন ডলারের সংকট সৃষ্টি হয়েছে; বাড়ছে দাম। আমদানি দায় পরিশোধে বাড়তি মূল্যে কিনতে হচ্ছে ডলার। এতে একদিকে আগের খোলা এলসির (ঋণপত্র) দায় পরিশোধে হিমশিম হাচ্ছে ব্যাংকগুলো, অন্যদিকে নতুন এলসি খুলতেও নানামুখী জটিলতায় পড়তে হচ্ছে নিত্যপণ্য ও শিল্পের কাঁচামাল আমদানিকারকদের।
ব্যাংকার ও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কয়েকটি কারণে এলসি নিয়ে সমস্যা হচ্ছে। এর মধ্যে প্রধান কারণ ডলারের সংকট। এছাড়া করোনার কারণে বিভিন্ন অফিস বন্ধ থাকায় প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট বা আমদানির কাগজপত্র পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে সঠিক সময় দায়-দেনা পরিশোধে সমস্যা হচ্ছে। পাশাপাশি চলমান পরিস্থিতিতে ব্যাংকগুলোর আয় কম। ফলে অনেক ব্যাংকেরই এলসি খোলার সক্ষমতা কমে গেছে। তাই নতুন এলসি খোলার আগ্রহ কম। এদিকে সংকট মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজারে ডলার বিক্রি করছে। কিন্তু ব্যাংকগুলোর কাছে পর্যাপ্ত অর্থ না থাকায় ওই সুযোগও গ্রহণ করতে পারছে না। ব্যবসা-বাণিজ্য মন্দা থাকায় ব্যাংকের আয়ও কমে গেছে। ফলে ঋণ দেয়া সক্ষমতা নেই অনেক ব্যাংকের। রফতানি ও রেমিট্যান্স প্রবাহ স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এ সংকট সহসা কাটবে না বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। তবে দেশের মানুষের চাহিদা ও অর্থনীতি সচল রাখতে শিল্পের কাঁচামাল এবং প্রয়োজনীয় নিত্যপণ্য আমদানি এলসি বিশেষ ব্যবস্থায় চালু রাখা জরুরি বলছেন অর্থনীতিবিদরা।

আমদানিকারকরা বলছেন, ডলার সংকটের কথা বলে বেশিরভাগ ব্যাংক এলসি খুলতে চাচ্ছে না। আবার যেসব ব্যাংক এলসি খুলতে চাচ্ছে তাদেরকে বিদেশি সাপ্লায়াররা তা গ্রহণ করতে চাচ্ছে না। কারণ ইতিপূর্বে ওইসব ব্যাংক প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী এলসির দেনা সময়মতো পরিশোধ করতে পারেনি। আবার সীমিত আকারে ব্যাংক খোলার কারণে কাজের সময় কমে গেছে। ব্যাংকাররা দুই শিফটে কাজ করছেন। এতে এক দিনের কাজ চার থেকে পাঁচ দিন বেশি সময় লাগছে। যার কারণে এলসি খুলতে বিলম্ব হচ্ছে। খরচও বেড়ে যাচ্ছে। এমন অবস্থায় সময়মতো এলসি জটিলতা সমাধান না হলে প্রয়োজনের সময় শিল্পের কাঁচামাল আনা সম্ভব হবে না। ফলে উৎপাদন প্রক্রিয়া বন্ধ থাকবে। তাই যেকোনো মূল্যে এলসি খোলার জটিলতা সমাধানের দাবি জানিয়েছে ব্যবসায়ীরা।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, রফতানি-রেমিট্যান্স কমে যাওয়ায় ব্যাংক খাতে ডলারের সংকট দেখা দিয়েছে। এ মুহূর্তে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে উচিত ডলার সরবরাহ ঠিক রাখা। পাশাপাশি নিত্যপণ্য ও শিল্পের কাঁচামাল আমদানি যেন ব্যাহত না হয় সেদিকেও লক্ষ্য রাখা। কারণ এলসি জটিলতায় যদি সঠিক সময় পণ্য ও কাঁচামাল না আসে তাহলে উৎপাদন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হবে। এতে একদিকে পণ্যের সরবারহ কমে যাবে, অন্যদিকে বেড়ে যাবে নিত্যপণ্যের দাম।

এলসি খোলার সমস্যা বিষয়ে জানতে চাইলে বেসরকারি মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, করোনায় বিশ্বব্যাপী সংকট সৃষ্টি হয়েছে। রফতানি কমে যাওয়ায় ব্যাংকগুলোর কাছে চাহিদার তুলনায় ডলার চাপ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার বিক্রি করে কিছু সাপোর্ট দিচ্ছে। তবে রফতারি-রেমিট্যান্স প্রবাহ স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এ অবস্থার উন্নতি হবে না।

অনেক ব্যাংক এলসির দায় পরিশোধে বিলম্ব করছে, ফলে নতুন করে এলসি সাপ্লায়াররা গ্রহণ করছে না- এ বিষয়ে ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন এবিবির সাবেক এই নেতা বলেন, চলতি বছরের শুরু থেকে করোনার কারণে আমদানি-রফতানি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। আন্তর্জাতিক কুরিয়ার সার্ভিসগুলো সময়মতো এলসির ডকুমেন্ট পাঠায়নি। তাই অনেক ব্যাংক যথা সময়ে বিল পরিশোধ করতে পারেনি। ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে এখন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ইলেক্ট্রনিক্স সিস্টেমে ডকুমেন্ট পাঠাচ্ছে কিছু প্রতিষ্ঠান। আশা করছি দ্রুত এ বিষয়ে সমাধান হবে।

তিনি বলেন, যেহেতু চলমান সংকট বিশ্বব্যাপী, এটা আমাদের একা সমাধান করা সম্ভব নয়। তাই এ সংকট উত্তোরণে কিছুটা সময় লাগছে। অভ্যন্তরীণ যে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে, আমরা চাচ্ছি দ্রুত তা সমাধান করতে। বেশিকিছু সমাধান হয়ে গেছে। এখন বহির্বিশ্বের সমস্যাগুলোও সমাধানের চেষ্টা করছি। তবে আশার কথা, আমাদের অনেক রফতানি আদেশ এখনো বহাল আছে, তাই দ্রুতই কাটাতে পারবো।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, এখন আন্তব্যাংক রেটে ডলারের দাম ৮৪ টাকা ৯৫ পয়সা। তবে বাজারের বাস্তবতা ভিন্ন। বেশ কিছু ব্যাংক ডলার সংকটের কারণে পণ্য আমদানি দায় পরিশোধে ডলারের মূল্য নিচ্ছে সাড়ে ৮৬ থেকে ৮৭ টাকা। খুচরা পর্যায় দাম আরও বেশি। কোনো কোনো ব্যাংক খুচরা ডলার বিক্রি করছে ৮৮ থেকে সাড়ে ৮৮ টাকা পর্যন্ত, যা এ যাবৎকালে সবোর্চ্চ।

এদিকে ডলারের এ সংকটের সময়ে আমদানি কার্যক্রম অব্যাহত রাখা ও ডলারের সরবারহ নিশ্চিত করতে ডলার বিক্রি করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

জানা গেছে, বিভিন্ন ব্যাংকের প্রয়োজনে চলতি অর্থবছরে ৭২ কোটি ৫০ লাখ ডলার বিক্রি বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে করোনাভাইরাসের চলমান পরিস্থিতিতে বিভিন্ন জায়গায় লকডাউন ও সাধারণ ছুটির সময় বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাছে প্রায় ২০ কোটি ডলারের মতো বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
ব্যংকবিমাঅর্থনীতি/এসএ/খান

Facebook Comments Box
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ১২:২২ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ০১ মে ২০২০

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

রডের দাম বাড়ছে
(11188 বার পঠিত)

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।