শুক্রবার ২৬ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৩ বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আভিভা ফাইন্যান্সসহ বেনামী প্রতিষ্ঠানে হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ

প্রশ্নবিদ্ধ ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের এজিএম

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   বৃহস্পতিবার, ১৫ জুলাই ২০২১   |   প্রিন্ট   |   303 বার পঠিত

প্রশ্নবিদ্ধ ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের এজিএম

বিনিয়োগকারীদের প্রশ্নের যথাযথ জবাব না দিয়ে এবং অধিকাংশ প্রশ্ন এড়িয়ে দায়সারা গোছে বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) করার অভিযোগ উঠেছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকিং খাতের প্রতিষ্ঠান ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের বিরুদ্ধে। এতে প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ হুমকির মুখে পড়ার পাশাপাশি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এমনটাই জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির একাধিক বিনিয়োগকারী।

জানা গেছে- গত ৭ জুলাই ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে অনুষ্ঠিত হয় ২২তম বার্ষিক সাধারণ সভা। সকাল ১০টায় শুরু হওয়ার পরপরই এজিএমের কর্মসূচিগুলো অনুমোদন করিয়ে নেন কোম্পানি সচিব অলি কামাল। এরপর ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের পক্ষ থেকে কম গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রশ্নের উত্তর দেয়া হলেও আর্থিক প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট প্রশ্নগুলো এড়িয়ে যাওয়ার অভিযোগ ওঠে। বার্ষিক সাধারণ সভার মতো গুরুত্বপূর্ণ সভায় বিনিয়োগকারীদের প্রশ্নের যথাযথ উত্তর না দেয়াকে অনেকেই আইন লঙ্ঘন বলে মনে করছেন। প্রশ্নের উত্তর দেয়ার পরিবর্তে কোম্পানির শরিয়াহ্ বোর্ডের চেয়ারম্যানকে বক্তব্য প্রদানের ফ্লোর দেন কোম্পানি চেয়ারম্যান মো. সাইফুল আলম। ব্যাংকের বার্ষিক সাধারণ সভায় শরিয়াহ বোর্ডের চেয়ারম্যানের দীর্ঘ আলোচনা হয়ে ওঠে গুরুত্বহীন। এরপর কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা ও চেয়ারম্যান নিজে বক্তব্য দেন। কিন্তু যাদের জন্য এতো আয়োজন সেই বিনিয়োগকারীদের কোনো প্রশ্নের জবাব না দিয়েই সভা সমাপ্ত ঘোষণা করেন কোম্পানি সচিব। অবশ্য প্রশ্নের জবাব না দিলেও প্রশ্নকারীদের নাম উল্লেখ করতে ভুল করেননি সচিব অলি কামাল। এ নিয়েও বিনিয়োগকারীদের মাঝে নানা সন্দেহের সৃষ্টি করে।

নাম প্রকাশ না করে এক বিনিয়োগকারী বলেন, আলোচ্য বছরে কোম্পানির ব্যবসায়িক অবস্থা আগের চেয়ে দুর্বল হয়ে পড়ায় এ নিয়ে আমাদের অনেক প্রশ্ন ছিল, কিন্তু কোম্পানির পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনা পর্ষদের যোগসাজশে তা এড়িয়ে গেছে। আবার ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের পক্ষে বলার জন্য যে স্বতন্ত্র পরিচালক থাকেন, তারা এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। আমরা কি এভাবেই নিঃস্ব হতে থাকবো?

জানা যায়, কোম্পানির মোট শেয়ারের ৬৬ শতাংশের অধিক রয়েছে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের কাছে, বিপরীতে ৩৩ শতাংশের কিছু বেশি রয়েছে পরিচালনা পর্ষদের কাছে। অথচ বিভিন্ন সময়ে এই বড় অংশের ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরাই বঞ্চনার শিকার হয়। কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ বিভিন্নভাবে লাভ-ক্ষতি দেখিয়ে নিজেরা ফায়দা লুটে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে।

সমাপ্ত বছরে কোম্পানির কার্যক্রম নিয়ে কি প্রশ্ন ছিল এমনটা জানতে চাইলে অপর এক শেয়ারহোল্ডার বলেন, গত বছর ব্যাংকটি প্রভিশন ঘাটতিতে ছিল প্রায় সাড়ে তিনশ কোটি টাকা। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংক দুটি চিঠিও পাঠিয়েছে ব্যাংকটিতে। কিন্তু আমরা বুঝতে পেরেছি এই ঘাটতির বিষয়টি বেমালুম চেপে গেছে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পর্ষদ। যদি এটি আমলে নিতো তাহলে কর-পূর্ব মুনাফা ৪৭৬ কোটির বদলে ১২৭ কোটি টাকায় নেমে আসতো। আর কর-পরবর্তী ২৭৬ কোটি টাকা মুনাফার বদলে ৭০ কোটি টাকা ঘাটতি থাকতো। এক্ষেত্রে শেয়ারপ্রতি আয় ২ টাকা ৯৪ পয়সার বদলে ঋণাত্মক ৭৩ পয়সায় দাঁড়াতো।

এদিকে বার্ষিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, আভিভা ফাইন্যান্স নামে একটি নামসর্বস্ব কোম্পানিতে ১২শ ৫৭ কোটি টাকা রাখা হয়েছে। কোনো কারণে যদি এই ফাইন্যান্স কোম্পানিকেও পিপল্স লিজিংয়ের ভাগ্যবরণ করতে হয়, তাহলে এর দায় নিবে কে? আমানতকারীরা যত টাকাই রাখুক না কেন, তারা তো এক লাখ টাকার বেশি পাবে না। আর বিনিয়োগকারীদের তো বলার কিছুই থাকবে না। কারণ তারা ব্যবসার অংশীদার। কি স্বার্থে বিপুল পরিমাণ টাকা অখ্যাত একটি ফাইন্যান্স কোম্পানিতে রাখা হলো তার জবাবও দেয়া হয়নি। আবার শ্রেণিভুক্ত ঋণের ক্ষেত্রেও শাখাভিত্তিক তালিকা প্রকাশ করেনি। মূলত আমানতকারী ও ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরাই হবে এই ক্ষতির আসল শিকার। তাছাড়া পুঁজিবাজারে ব্যাংকটির ইপিএস ও এনএভি অনেক কম। এমনকি আন্ডারভ্যালুতে চলে গেছে এর শেয়ার দর।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেট ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড রিসার্চ ফোরামের প্রেসিডেন্ট গোলাম ফারুকের কাছে জানতে চাওয়া হয়। তিনি জানান, সমাপ্ত বছরে প্রতিষ্ঠানটি ব্যবসায়িক কার্যক্রম অনেকাংশে মন্থর হয়ে পড়লেও বিনিয়োগকারীদের প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে সভা সমাপ্ত করা সঠিক হয়নি। প্রতিষ্ঠানটি কোথায় কোথায় ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে এমনটা জানতে চাইলে বলেন, আমি ঠিক ব্যর্থতা বলবো না, তবে ভালো করার সুযোগ ছিল। এর মধ্যে রিটার্ন অব ইনভেস্টমেন্ট কমে গেছে অর্ধেকেরও বেশি। গত বছর এটা ছিল ৪.৫৮ শতাংশ, যা এ বছর ২.৫৭ শতাংশে নেমে এসেছে। এ ছাড়া স্পেশাল মেনশন হিসাবে ১ হাজার ৭০৬ কোটি টাকার সঞ্চিতি দেখানো হয়েছে, যা অস্বাভাবিক।

তবে প্রোফিট সাসপেন্স ও ঋণের সুদহারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের সিঙ্গেল ডিজিট নির্দেশনা পরিপালন না করাকেই বড় করে দেখছেন পুঁজিবাজারের এই বিশ্লেষক। তিনি বলেন, সাধারণত অন্যান্য ব্যাংকের ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে প্রোফিট সাসপেন্স হাজার কোটি টাকার ওপর। এটা যত বেশি ভালো হবে, ব্যাংকের আর্থিক ভিত্তি তত মজবুত থাকবে। কিন্তু এই খাতে ব্যাংকটির সঞ্চিতি মাত্র ১৫৪ কোটি টাকা। এটা একেবারেই অপ্রতুল। এর বাইরে ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে দেখা গেছে তাদের সুদের হার ১০ শতাংশের বেশি। অথচ বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা রয়েছে সুদহার একক সংখ্যায় রাখার। এক্ষেত্রে ফার্স্ট সিকিউরিটির মতো প্রতিষ্ঠিত ও স্বনামধন্য ব্যাংকের আইন লঙ্ঘনের বিষয়টি মেনে নেয়া যায় না।

অভিযোগগুলির বিষয়ে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ ওয়াসেক মো. আলী’র সাথে যোগাযোগ করার জন্য তাকে ফোন করা হলে তিনি রিসিভ করেননি। এরপর যোগাযোগের কারণ জানিয়ে মোবাইলে ক্ষুদেবার্তা পাঠানো হলেও তিনি তার কোন প্রতিউত্তর দেননি। পরবর্তীতে কোম্পানি সচিব অলি কামাল এ প্রতিবেদকের সাথে যোগাযোগ করেন। যেসব বিনিয়োগকারী অভিযোগ জানিয়েছেন তিনি তাদের বিও আইডি জানতে চেয়েছেন এই প্রতিবেদকের কাছে।

 

Facebook Comments Box
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ১২:২১ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৫ জুলাই ২০২১

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।