আদম মালেক | সোমবার, ৩০ নভেম্বর ২০২০ | প্রিন্ট | 274 বার পঠিত
অক্সফোর্ড ভ্যাকসিনের হাওয়া লেগেছে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানির গায়ে। যেদিন থেকে ভ্যাকসিন আমদানি আলোচনায় এসেছে, সেদিন থেকেই ফুলে ফেঁপে উঠছে এ কোম্পানির শেয়ারের দর। আমদানির বিষয়টি যতোই অগ্রগতিতে আসছে, ততোই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে দর। মাত্র ছয় মাসের ব্যবধানে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে এ কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে দ্বিগুণ, অন্যদিকে এক বছরের মাথায় লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জে দর বেড়েছে ৩গুণ। অক্সফোর্ডের এই ভ্যাকসিন বাংলাদেশ এলে এ কোম্পানির শেয়ার দর আরো বাড়বে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও অ্যাস্ট্রাজেনেকা করোনাভাইরাসের যে টিকা তৈরি করছে, তার উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া। ওই টিকার তিন কোটি ডোজ কিনতে চলতি মাসের শুরুতে সেরাম ইনস্টিটিউট ও বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তিও করেছে সরকার। এর বাইরে বেসরকারি পর্যায়ে আরো ১০ লাখ ডোজ আমদানির বিষয়টি কোম্পানির বিবেচনাধীন রয়েছে বলে জানা গেছে। সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত টিকার ‘এক্সক্লুসিভ ডিস্ট্রিবিউটর’ হিসেবে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসই বাংলাদেশ সরকারকে এ ভ্যাকসিন সরবরাহ করবে। চুক্তি অনুযায়ী প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ হিসাবে ছয় মাসে তিন কোটি ডোজ টিকা পাওয়া যাবে। এ টিকা বাংলাদেশ ২ থেকে ৮ সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা সম্ভব, যা বাংলাদেশ সহনীয়। কিন্তু আরো অনেক টিকা আছে, যা এ তাপমাত্রায় সংরক্ষণের সুযোগ নেই।
প্রতি ডোজ টিকার জন্য ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটকে বেক্সিমকো ফার্মা দেবে ৮ ডলার। এর সঙ্গে আমদানি ব্যয় ও অন্যান্য খরচ মিলে প্রতি ডোজ টিকার দাম পড়বে ১১০০ থেকে ১২০০ টাকা। আমদানির অনুমোদন পেলে ডিজিডিএর প্রাইসিং পলিসি অনুযায়ী দাম নির্ধারিত হবে। এসব টিকা বিক্রির মাধ্যমে কোম্পানিটি প্রায় ১ হাজার ১২৭ কোটি টাকা আয় করতে পারবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বাজার-বিশ্লেষকরা বলছেন, যেহেতু অক্সফোর্ডের টিকা সেরামের মাধ্যমে বেক্সিমকো পাচ্ছে, সেহেতু লাভের অংশ সেরামের সঙ্গে বেক্সিমকোর ঘরেও যাচ্ছে। এজন্য যেদিন থেকে বেক্সিমকো অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন আমদানির বিষয়ে আলোচনায় এসেছে, সেদিন থেকেই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে শেয়ারটির দর।
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ৪ জুন শেয়ারটির দর ছিল ৬১ টাকা ১০ পয়সা। ৩০ জুলাই দর বেড়ে ৮০ টাকায় উঠে যায়। ৮ সেপ্টেম্বর শেয়ারটির দর আরো বেড়ে দাঁড়ায় ১২৪ টাকা ৮০ পয়সায়। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের বাজার থেকে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের দুটি ওষুধ প্রত্যাহারের খবর প্রকাশের পর দেশের পুঁজিবাজারে ওষুধ কোম্পানির শেয়ারের বড় দরপতন হয় এবং ১৩ সেপ্টেম্বর বেক্সিমকো ফার্মার শেয়ার দর ১১৮ টাকা ৫০ পয়সায় নেমে আসে। ১৪ অক্টোবর শেয়ারটির দর আরো কমে দাঁড়ায় ১০৯ টাকা ৬০ পয়সা।
একইভাবে ভ্যাকসিন আমদানির বিষয়টি নতুনভাবে আলোচিত হলে শেয়ারটির দর আবারো বাড়তে থাকে। এর ফলে ১৪ অক্টোবরের ১০৯ টাকা থেকে দর বেড়ে ২৯ নভেম্বর দর উঠে আসে ১৪৯ টাকায়। তবে দিনশেষে শেয়ারটি দর স্থির হয় ১৪৭ টাকা ৬০ পয়সায়।
এদিকে লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জেও শেয়ারটির দর করোনা ভ্যাকসিন আমদানির খবরে বেড়েইে চলছে। এক বছর আগে শেয়ারটির দর ছিল ৩১ দশমিক ৫০ সেন্ট। এখন তা বেড়ে ৯০ দশমিক ৫০ সেন্টে উঠে আসে। এক বছরে শেয়ার দর বেড়েছে ৩গুণ। এর মধ্যে ১০ শতাংশ বোনাস ও ১৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিলে শেয়ারটির দাম ২৬ নভেম্বর মাত্র ১ শতাংশ কমে ৮৯ দশমিক ৫০ সেন্টে অবস্থান করছিল।
উল্লেখ্য, ১৯৮৬ সালে দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের শেয়ার পুঁজিবাজারে লেনদেন হচ্ছে ‘এ’ ক্যাটাগরিতে।
পুঁজিবাজারে কোম্পানিটির মোট ৪০ কোটি ৫৫ লাখ ৫৬ হাজার ৪৪৫টি শেয়ার রয়েছে। এর মধ্যে ১৩ দশমিক ১৯ শতাংশ পরিচালকদের কাছে, ৩৬ দশমিক ৪৪ শতাংশ শেয়ার প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে, ৩৪ দশমিক ০৭ শতাংশ বিদেশিদের কাছে এবং ১৬ দশমিক ৩০ শতাংশ শেয়ার রয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে।
কোম্পানির অনুমোদিত মূলধন ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। পরিশোধিত মূলধন ৪০৫ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। রিজার্ভের পরিমাণ ২ হাজার ২৬ কোটি ৫১ লাখ টাকা। বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যাল ২০১৭ সালে মুনাফা করেছে ২২২ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। শেয়ারপ্রতি লভ্যাংশ দিয়েছে ১ টাকা ২৫ পয়সা। ২০১৮ সালে মুনাফা করেছে ২৫৪ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। লভ্যাংশ দিয়েছে শেয়ারপ্রতি ১ টাকা ২৫ পয়সা। ২০১৯ সালে মুনাফা করেছে ৩০৩ কোটি ৩৪ লাখ টাকা এবং লভ্যাংশ দিয়েছে শেয়ারপ্রতি ১ টাকা ৫০ পয়সা।
Posted ১১:৪৫ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ৩০ নভেম্বর ২০২০
bankbimaarthonity.com | Sajeed