মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৩ বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

স্বাধীনতার ৫০ বছরে বীমা খাতের উন্নতি ও অন্তরায়

বীমায় দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে কাজ করছে ইন্স্যুরেন্স অ্যাকাডেমি: সাক্ষাৎকারে এস এম ইব্রাহিক হোসাইন

  |   শনিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২১   |   প্রিন্ট   |   344 বার পঠিত

বীমায় দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে কাজ করছে ইন্স্যুরেন্স অ্যাকাডেমি: সাক্ষাৎকারে এস এম ইব্রাহিক হোসাইন

জাতির পিতার স্মৃতিধন্য দেশের বীমা খাতটি বিগত ৫০ বছর ছিলো অনেকটাই নিরবে নিভৃতে। ছিল সবচেয়ে অবহেলার পাত্রও। তবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও জাতির পিতার কন্যা ২০০৯ সালে দেশের দায়িত্বভার গ্রহনের পর থেকেই এ খাতের উন্নয়নে নিয়েছেন নানা উদ্যমী পদক্ষেপ। ফলে ঘুরে দাঁড়াতে থাকে বীমা কোম্পানিগুলো। অর্থনীতির অন্যতম এই খাত নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সেই কার্যক্রম এখন আরো বেগবান।

স্বাধীনতার গৌরবোজ্জ্বল ৫০ বছরে বীমা খাতের উন্নয়ন, অগ্রগতি, অন্তরায় ও সম্ভাবনা নিয়ে কথা হয় ইন্স্যুরেন্স অ্যাকাডেমি-এর পরিচালক এস এম ইব্রাহিক হোসাইন-এর সাথে। নিম্নে তার সাথে কথোপকথনটি তুলে ধরা হলো:

ব্যাংক বীমা অর্থনীতি: বীমা অ্যাকাডেমি যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে নিয়ে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে তার কতটুক অর্জিত হয়েছে? বীমা খাতের উন্নয়নে আপনার প্রতিষ্ঠান কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে?

এস এম ইব্রাহিম হোসাইন: বীমা অ্যাকাডেমি ১৯৭৩ সালের ২৯ নভেম্বর জাতির পিতার হাতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তবে দুর্ভাগ্যবশত যে লক্ষ্য উদ্দেশ্য নিয়ে বাংলাদেশ বীমা অ্যাকাডেমির যাত্রা শুরু হয়েছিল তা আমরা পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে পারিনি, এটা স্বীকার করছি। কিন্তু অ্যাকাডেমির যে কাঠামো এবং জনবল রয়েছে তা দিয়ে যতটুক সম্ভব সেটা হয়েছে। আমাদের এখানে ফ্যাকাল্টি মেম্বার আছে ৬ জন। এই ৬ জন হলো প্রতিষ্ঠানের প্রাণ। স্বাধীনতার পর তখন দুটি করপোরেশন ছিল, সে সময়কার অর্গানোগ্রাম অনুসারে ৪২ জনবল দিয়ে দুটি করপোরেশনের শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে নেয়া সহজ ছিল। কিন্তু ৮৫ সালে বেসরকারি বীমা কোম্পানি এসেছে যার সংখ্যা বর্তমানে ৮১। এই ৮১ প্রতিষ্ঠানকে যে ধরণের বীমা শিক্ষা প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালানো দরকার সে অনুযায়ি অ্যাকাডেমির জনবল এখন কোনভাবেই যথেষ্ট নয়। স্বাধীনতার এতো বছর পর এই প্রতিষ্ঠানের কলেবর যতোটা বড় হওয়ার কথা ছিল ততটা বড় হয়নি। আপনারা জানেন, ইতোমধ্যে সাধারণ বীমা করপোরেশনে অর্গানোগ্রাম বড় হয়েছে। সেখানে জনবল ২ হাজারের ওপরে।

জীবন বীমা করপোরেশনও বড় হয়েছে, সেখানে জনবল দেড় হাজারের ওপরে। অথচ এতো বড় একটি সেক্টরকে সাপোর্ট দেয়ার জন্য ইন্স্যুরেন্স অ্যাকাডেমির জনবল এখনও ৪২ রয়ে গেছে এবং এখনও ফ্যাকাল্টি মেম্বার ৬ জন। তো এই জনবল দিয়ে এতো বড় একটি সেক্টরকে সাপোর্ট দেয়া আমাদের জন্য কঠিন হচ্ছে, এটা আমি স্বীকার করবো। তবে যদি আপনাকে একটি পরিসংখ্যান দেই তাহলে দেখবেন আমরা বর্তমানে প্রতিবছর গড়ে ১ হাজার থেকে ১২’শ জনকে প্রশিক্ষণ দেই। সে হিসেবে এ পর্যন্ত ৩৩ হাজার জনকে বীমার প্রশিক্ষণ দিয়েছি। ইন্স্যুরেন্স অ্যাকাডেমি বছরে ৩-৪টি সেমিনার আয়োজন করে। এই সেমিনারগুলোতে গড়ে ৩’শ থেকে ৪’শ জন অংশগ্রহণ করে। এখান থেকে বীমা ডিপ্লোমা কোর্স হয়ে থাকে এবং বছরে দুইবার পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এই পরীক্ষায় বছরে ৩’শ জনের মতো অংশগ্রহণ করে। সে হিসেবে অ্যাকাডেমি বছরে ১৫’শ থেকে ১৬’শ জনকে বীমা শিক্ষা প্রশিক্ষণ সেমিনারের আওতায় নিয়ে আসতে পেরেছে।

অ্যাকাডেমির এই পর্যন্ত অর্জন হলো প্রায় ৫০ হাজার জনকে বীমা শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও সেমিনারের আওতায় আনা। এর বাইরেও বিভিন্ন বীমা কোম্পানির চাহিদা মোতাবেক অ্যাকাডেমি প্রশিক্ষণ কোর্সের আয়োজন করে থাকে। আমরা বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও বিমান বাহিনীর জন্য প্রশিক্ষণ কোর্সের আয়োজন করেছি। আমরা ৩৩ জন কমিশন্ড অফিসারের জন্য প্রশিক্ষণ কোর্সের আয়োজন করেছিলাম। আমরা সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের জন্য প্রশিক্ষণ কোর্স আয়োজন করি। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ডিজি থেকে অ্যাসিসটেন্ট সেক্রেটারি পর্যায়ের জনবলের জন্য কোর্স আয়োজন করেছি। অ্যাকাডেমি থেকে সাড়ে ৬’শ জনকে বীমা ডিপ্লোমা প্রদান করেছি।

এছাড়া তাকাফুল ইন্স্যুরেন্সে বীমা অ্যাকাডেমির একটি বড় অবদান রয়েছে। ১৯৯৯ সালে যখন তাকাফুল ইন্স্যুরেন্সের অনুমোদন দেয়া হয় লাইফ ও নন-লাইফ সেক্টরে, তখন অ্যাকাডেমি তাদের চিন্তা মাথায় রেখে মালয়েশিয়ান ইন্স্যুরেন্স ইনস্টিটিউটের সহযোগিতায় ৩ থেকে ৪ বছরের জন্য সেখানের বেশ কিছু বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের জনশক্তিতে অ্যাকাডেমিতে নিয়ে এসেছি। ওই ৩-৪ বছরে তাদের জন্য অনেকগুলো প্রশিক্ষণ ও সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে।

আমাদের সেই প্রশিক্ষণের ওপর ভিত্তি করেই তাকাফুল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিগুলো শরীয়াহ ভিত্তিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এটি আমাদের একটি বড় অবদান। আরেকটি বিষয় হলো সার্ভে কোম্পানির ক্ষেত্রে। বাংলাদেশে নন-লাইফের ক্ষেত্রে ক্ষতির অ্যাসেসমেন্টগুলো সার্ভে কোম্পানি করে থাকে। সার্ভে কোম্পানির ক্ষেত্রেও অ্যাকাডেমি একই ভূমিকা পালন করেছে। আজকে সার্ভেয়ারদের রিপোর্টের যে মান তা পুরোটাই ইন্স্যুরেন্সে অ্যাকাডেমির অবদান।

১৯৯৭-২০০০ সালে আমরা এজন্য নিউজিল্যান্ড থেকে একজন বিশেষজ্ঞ নিয়ে এসেছিলাম মিস্টার নোয়েল সেক্সপিয়ার, এছাড়া আমরা ভারত এবং অন্যান্য দেশ থেকে এক্সপার্ট নিয়ে এসেছিলাম। যাদের মাধ্যমে বাংলাদেশের সার্ভে কোম্পানি গুলোর রিপোর্টিং মান তা একটি পর্যায়ে এসেছে। এর আগে তাদের এই রিপোর্র্টিং স্ট্যান্ডার্ড ছিলো না। সম্প্রতি আইডিআরএ এবং বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন থেকে তাদের দক্ষতা বৃদ্ধির ওপর ফের জোর দেয়া হচ্ছে। আইডিআরএ তাদের জন্য তিন দিনের প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করেছে। তা না হলে আইডিআরএ তাদের লাইসেন্স নবায়ন করবে না। সম্প্রতি তাদের জন্য নতুন সিলেবাস প্রণয়ন করা হয়েছে এবং ইতোমধ্যে দুটি কোর্স সম্পন্ন করা হয়েছে। আশা করছি সার্ভেয়ারদের মান খুব দ্রুতই কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় নিতে পারবো।

ব্যাংক বীমা অর্থনীতি: একাডেমিতে কী শুধু প্রফেশনালরাই আসতে পারে নাকি বাহির থেকেও কেউ প্রশিক্ষণ নিতে পারে?

এস এম ইব্রাহিম হোসাইন: আমাদের ডিপ্লোমাতে একটা নতুন প্রবণতা লক্ষ্য করছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্রেশ স্টুডেন্ট যারা অনার্স শেষ করেছে বা মাস্টার্স করছে তারাও আমাদের ডিপ্লোমা কোর্সে আসে। কারণ হলো- তারা জানে জব মার্কেটে যেতে হলে আলাদা দক্ষতা ও গুণাবলী লাগবে। এজন্য তারা এখানে আসছে। যারা ব্যাংকে আছে তাদের মধ্যেও বীমা প্রশিক্ষণ গ্রহণের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এমনকি বিভিন্ন করপোরেট হাউজ এবং ক্যাডার কর্মকর্তারাও এখানে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। অর্থাৎ জব মার্কেট বিবেচনায় যে কোনো ধরনের লোক এখানে প্রশিক্ষণ নিতে আসছে।

ব্যাংক বীমা অর্থনীতি: এক্ষেত্রে যারা চাকরিবিহীন বা ফ্রেশার আছে তাদের জবের জন্য আপনার কোনো সুযোগ দিচ্ছেন কিনা?

এস এম ইব্রাহিম হোসাইন: আপনি জেনে থাকবেন প্রতিবেশি ভারতে বীমায় চাকরির ক্ষেত্রে এই পেশার বিভিন্ন ডিগ্রি অর্জনকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। যারা ইতোমধ্যে জবে আছেন তারাও ডিগ্রিধারী এবং যারা নতুন করে এখানে চাকরি করতে চান তাদেরও এই পেশায় ডিগ্রিধারী হতে হবে। এমনকি যারা কেরানী হিসেবে ঢুকবে তাদেরকে সার্টিফিকেট কোর্স সম্পন্ন করতে হয়। উন্নত দেশগুলোতে টেকনিক্যাল সাইডে যারা কাজ করেন তাদের জন্য ডিপ্লোমার মতো প্রফেশনাল ডিগ্রি বাধ্যতামূলক। আমাদের করপোরেশনগুলোতে যারা কর্মকর্তা তারা এই ডিগ্রি ছাড়া পদোন্নতি পায় না। সম্প্রতি আইডিআরএ থেকে সার্কুলার হয়েছে প্রাইভেট কোম্পানিতে যারা এই ডিগ্রিধারী তাদের যেন আলাদা অগ্রাধিকার ও ইনশেনটিভ দেয়া হয়। এর ফলে আমাদের ডিপ্লোমা কোর্সে ভর্তি বেড়ে গেছে। আগে যেখানে বছরে দেড়শ শিক্ষার্থী ভর্তি হতো এখন সেখানে দুইশ’র অধিক ভর্তি হচ্ছে। কোম্পানিগুলোও এখন এই বিষয়ে অগ্রাধিকার দিচ্ছে, তবে সবাই নয়। আইডিআরএ থেকে যখন এটাকে বাধ্যতামূলক করা হবে তখন এর গুরুত্ব আরো বেড়ে যাবে। আর যারা চাকরিদাতা তারাও যে ডিপ্লোমা করেনি তার চেয়ে যে করেছে তাকে অগ্রাধিকার দেবে।

ব্যাংক বীমা অর্থনীতি: ভবিষ্যতে কোন কোন বিষয়ে প্রশিক্ষণ চালুর পরিকল্পনা রয়েছে আপনাদের?

এস এম ইব্রাহিম হোসাইন: বীমা হলো জীবন ও সম্পদের সুরক্ষা। তাই এই বিষয়ে জ্ঞান প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হয় এবং নতুন করে সংযোজিত হয়। সে বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রেখে এবং আগামীতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়তে বীমাকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে আমরা বিভিন্ন উন্নত প্রোগ্রাম চালু করছি। এর মধ্যে থাকবে- অ্যাকচুয়ারিয়াল সাইন্সে ডিপ্লোমা, তাকাফুল ইন্স্যুরেন্স ডিপ্লোমা, সার্টিফিকেট কোর্স ইন লস অ্যাডজাস্টিং, সার্টিফিকেট কোর্স ইন লাইফ অ্যান্ড নন-লাইফ ইন্স্যুরেন্স আন্ডাররাইটিং, ফেলোশিপ অব বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাকাডেমি, সিডিপি, ইন্টার্নশিপ সুযোগ ও এজেন্সি ম্যানেজমেন্ট কোর্স। এজন্য দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে আমরা সম্পর্ক স্থাপন করবো পাশাপাশি বেশ কিছু অবকাঠামো নির্মাণ করবো। এর মধ্যে থাকবে- অডিটোরিয়াম, ডরমেটরি, ইন্স্যুরেন্স ল্যাব, কম্পিউটার বেইজড ট্রেনিং সেন্টার এবং ল্যাঙ্গুয়েজ ল্যাব প্রতিষ্ঠা।

/এস

Facebook Comments Box
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ১:১১ অপরাহ্ণ | শনিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২১

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।