বিবিএনিউজ.নেট | শুক্রবার, ২৬ জুলাই ২০১৯ | প্রিন্ট | 417 বার পঠিত
ব্যাংকের তারল্যের টানাটানি, ঋণের উচ্চ সুদহারসহ নানা কারণে ভাটা পড়েছে বেসরকারি খাতের ঋণে। প্রবৃদ্ধি ধারাবাহিক কমে বিগত ছয় বছরের সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমেছে। গত জুনে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি নেমেছে ১১ দশমিক ২৯ শতাংশে। এ হার ২০১৩ সালের জুনের পর সর্বনিম্ন। ওই সময়ে ঋণ প্রবৃদ্ধি ছিল ১১ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ।
সংশ্নিষ্টরা বলছে, বেসরকারি বিনিয়োগ কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ ব্যাংকগুলোর কাছে এখন পর্যাপ্ত তারল্য নেই। ঋণ আমানত অনুপাতের (এডিআর) সমন্বয়ের চাপ রয়েছে। এছাড়া আর্থিক খাতের নানা কেলেঙ্কারি ও সঞ্চয়পত্রে সুদ বেশি হওয়ায় ব্যাংকে আমানত প্রবৃদ্ধি কমে গেছে। ফলে একদিকে চাহিদা থাকা সত্ত্বেও ঋণ দিতে পারছে না ব্যাংকগুলো। অন্যদিকে উচ্চ সুদহারের কারণে ঋণ নিতেও আগ্রহী না উদ্যোক্তা ব্যবসায়ীরা। সব মিলিয়ে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি কমছে।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে বেসরকারি খাতের ঋণ হু হু করে বাড়ছিল। ফলে ঋণপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণে গত বছরের শুরুতেই ঋণ-আমানত অনুপাত (এডিআর) কিছুটা কমিয়ে আনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তারপর থেকে ঋণ প্রবৃদ্ধি কমতে থাকে। এরপর কয়েক দফা এডিআর সমন্বয়ের সীমা বাড়ানো হলেও নানা কারণে ঋণ প্রবৃদ্ধি বাড়ছে না। নিম্নমুখী ধারা অব্যাহত আছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৮ সালের জুনের তুলনায় চলতি বছরের জুনে বেসরকারি ঋণ প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১১ দশমিক ২৯ শতাংশ। মে মাসে যা ছিল ১২ দশমিক ১৬ শতাংশ। এর আগের মাস এপ্রিলে ছিল ১২ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ, মার্চে প্রবৃদ্ধি ছিল ১২ দশমিক ৪২ শতাংশ। ফেব্রুয়ারিতে ছিল ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশ এবং জানুয়ারিতে ১৩ দশমিক ২০ শতাংশ।
গত জুন মাস শেষে বেসরকারি খাতে বিতরণ করা ঋণস্থিতি দাঁড়িয়েছে ১০ লাখ ৯৯ হাজার ৮৮৩ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময় শেষে ঋণ ছিল ৯ লাখ ৭৫ হাজার ৩১৬ কোটি টাকা। এ হিসাবে এক বছরে ঋণ বেড়েছে এক লাখ ২৪ হাজার ৫৬৭ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দ্বিতীয়ার্ধের মুদ্রানীতিতে জুন নাগাদ বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন করা হয়েছে ১৬ দশমিক ৫০ শতাংশ। কিন্তু এর বিপরীতে ঋণ প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ১১ দশমিক ২৯ শতাংশ। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক কম। এর এর আগে প্রথমার্ধে গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৬ দশমিক ৮০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরা হলেও অর্জিত হয় মাত্র ১৩ দশমিক ৩০ শতাংশ।
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, বেড়েই চলছে খেলাপির ঋণ। যার কারণে সঞ্চিতি হিসাবে বাড়তি টাকা জমা রাখতে হচ্ছে। চাহিদা অনুযায়ী নতুন আমানত পাচ্ছে ব্যাংকগুলো। ফলে নগদ অর্থের টান থাকায় ঋণ দেয়ার মতো পর্যাপ্ত অর্থ পাচ্ছে না। এছাড়া অবকাঠামোগত সমস্যা আছে। ব্যবসা শুরুর খরচ বেশি। এসব বিবেচনায় ব্যাংক যে হারে ঋণের সুদ অফার করছে তাতে বিনিয়োগের আগ্রহী না উদ্যোক্তরা।
তিনি বলেন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির অন্যতম চালিকাশক্তি দেশের বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে এ খাতের বিনিয়োগ বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। তাই ঋণ প্রবৃদ্ধি বাড়াতে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের যুগোপযোগী পদক্ষেপ নিতে হবে।
এদিকে নতুন সরকারের অর্থমন্ত্রী হিসেবে আ হ ম মুস্তফা কামাল দায়িত্ব নেয়ার পরই ঘোষণা দেন খেলাপি ঋণ এক টাকাও বাড়বে না। এ রকম ঘোষণা সত্ত্বেও গত মার্চ প্রান্তিক শেষে রেকর্ড পরিমাণে খেলাপি ঋণ বেড়ে এক লাখ ১০ হাজার ৮৭৪ কোটি টাকা হয়েছে।
গত ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ ছিল ৯৩ হাজর ৯১১ কোটি টাকা। তিন মাসে বেড়েছে ১৬ হাজার ৯৬৩ কোটি টাকা। এর আগে এক প্রান্তিকে এত বেশি খেলাপি ঋণ বাড়েনি।
Posted ২:৫৪ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ২৬ জুলাই ২০১৯
bankbimaarthonity.com | Sajeed
এ বিভাগের আরও খবর
আর্কাইভ ক্যালেন্ডার
শনি | রবি | সোম | মঙ্গল | বুধ | বৃহ | শুক্র |
---|---|---|---|---|---|---|
১ | ২ | ৩ | ||||
৪ | ৫ | ৬ | ৭ | ৮ | ৯ | ১০ |
১১ | ১২ | ১৩ | ১৪ | ১৫ | ১৬ | ১৭ |
১৮ | ১৯ | ২০ | ২১ | ২২ | ২৩ | ২৪ |
২৫ | ২৬ | ২৭ | ২৮ | ২৯ | ৩০ | ৩১ |