বুধবার ২৪ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১১ বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ব্যক্তিগত আক্রমণ আর অপমানের বন্যায় ভাসল বিতর্কের মঞ্চ

বিবিএনিউজ.নেট   |   বুধবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০   |   প্রিন্ট   |   237 বার পঠিত

ব্যক্তিগত আক্রমণ আর অপমানের বন্যায় ভাসল বিতর্কের মঞ্চ

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে সামনে রেখে ওহাইয়োর ক্লিভল্যান্ডে প্রথম বিতর্কে মুখোমুখি হয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প ও জো বাইডেন। প্রতিপক্ষকে সম্মান দেখানো বা যুক্তিপূর্ণ বিতর্কের বদলে এদিন একে অপরের প্রতি অনেকটাই ব্যক্তিগত আক্রমণের পসরা সাজিয়ে বসেছিলেন দুই প্রেসিডেন্ট প্রার্থী। ৯০ মিনিটের বিতর্ক অনুষ্ঠানে একে অপরের প্রতি কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য তো ছিলই, বাদ পড়েনি পরিবারের সদস্যদের আক্রমণও।

এসময় বাইডেন যেমন ট্রাম্পকে ভাঁড় বলেছেন, ট্রাম্পও বাইডেনের ছেলের নাম তুলে ব্যক্তিগত আক্রমণ করেছেন। তবে বিতর্কের প্রধান ইস্যু হয়ে উঠেছিল মূলত বর্ণবৈষম্য, শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদ, করোনাভাইরাস মহামারি, অর্থনীতি প্রভৃতি।

বর্ণবৈষম্য ও শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদ
অনুষ্ঠানে এই ইস্যুটি নিয়ে কথা হয়েছে অনেকক্ষণ। অনুষ্ঠানের সঞ্চালক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদের নিন্দা জানাবেন কি না প্রশ্ন করলে প্রথমদিকে হ্যাঁ-সূচক ভাবই ছিল তার। কিন্তু বামপন্থী গ্রুপ প্রাউড বয়েসের নাম তুলতেই মত বদলান ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘অ্যান্টিফা (অ্যান্টি ফ্যাসিস্ট অ্যাকশন) ও বামদের বিষয়ে কাউকে কিছু করতেই হবে।’

এর আগে ট্রাম্পকে উদ্দেশ্য করে বাইডেন বলেন, ‘এটা এমন এক প্রেসিডেন্ট যিনি বর্ণবাদী ঘৃণা ও বিভাজন তৈরি করতে সব কিছু করছেন।’

এসময় বাইডেন ১৯৯৪ সালের অপরাধ আইনে সমর্থন জানিয়ে আফ্রিকান-আমেরিকানদের ‘সুপার প্রিডেটর’ বলেছিলেন বলে পাল্টা দাবি করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। যদিও সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ডেমোক্র্যাট নেতা।

করোনাভাইরাস মহামারি
জো বাইডেন বলেছেন, ‘ট্রাম্প করোনাভাইরাস মহামারিতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন। অনেক লোক মারা গেছেন, আরও অনেকে মারা যাবেন, যতক্ষণ না তিনি (ট্রাম্প) আরও বুদ্ধিমান না হন।’

এসময় ডোনাল্ড ট্রাম্প বাইডেনের বুদ্ধিমান (স্মার্ট) শব্দটি ব্যবহারে তীব্র আপত্তি জানান। ডেমোক্র্যাট প্রার্থীকে তিনি বলেন, ‘আপনি ক্লাসের সর্বনিম্ন অথবা প্রায় সর্বনিম্ন থেকে গ্রাজুয়েশন করেছেন। আমার সঙ্গে কখনও স্মার্ট শব্দটি ব্যবহার করবেন না। আর কখনও না।’

ওহাইয়ো প্রশাসনের নিয়মানুসারে বিতর্ক অনুষ্ঠানে সবার মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক ছিল। কিন্তু ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প ছাড়া তাদের পরিবারের আর কোনও সদস্যের মুখে এদিন মাস্ক দেখা যায়নি।

ভাঁড় ও মিথ্যাবাদী
ট্রাম্প-বাইডেনের বিতর্ক যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী ইতিহাসের অন্যতম আক্রমণাত্মক ও বিদ্বেষপূর্ণ ঘটনা বলে মনে করা হচ্ছে। মঙ্গলবার রাতের এ অনুষ্ঠানে জো বাইডেন ট্রাম্পকে বলেছেন, ‘আপনি হচ্ছেন আমেরিকার ইতিহাসের সবচেয়ে বাজে প্রেসিডেন্ট।’

তিনি আরও বলেছেন, ‘সবাই জানে তিনি (ট্রাম্প) একজন মিথ্যাবাদী।’

রুথ বেডার জিন্সবার্গের মৃত্যুর পর মার্কিন সুপ্রিম কোর্টে দ্রুততম সময়ে একজন রক্ষণশীল বিচারপতি নিয়োগের পক্ষে এদিন আবারও যুক্তি দেখিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করায় বাইডেনকে তার পছন্দের প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশের দাবি জানান রিপাবলিকান নেতা। একপর্যায়ে বাইডেন বলে ওঠেন, ‘আপনি কি চুপ করবেন?’

এছাড়া, কথার মধ্যে বার বাধা দেয়ায় একসময় বিরক্ত হয়ে ট্রাম্পকে উদ্দেশ্য করে এ ডেমোক্র্যাট নেতা বলেন, ‘এই ভাঁড়ের সঙ্গে কোনও কথা বলা কঠিন।’

পরিবার টেনে আনা
ডোনাল্ড ট্রাম্প সাবেক মার্কিন সেনা কর্মকর্তাদের ‘লুজারস’ বলেছিলেন বলে কিছুদিন আগে গণমাধ্যমে প্রকাশিত একটি খবরের প্রসঙ্গ তুলে কথা বলছিলেন জো বাইডেন। তার প্রয়াত পুত্র বিউ বাইডেন ইরাকে নিযুক্ত মার্কিন বাহিনীতে দায়িত্ব পালন করেছেন।

ছেলের কথা উল্লেখ করে জো বাইডেন বলেন, ‘সে লুজারস ছিল না। সে ছিল দেশপ্রেমিক।’

এসময় বাইডেনের আরেক ছেলে হান্টারের কথা টেনে আনেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘সত্যি? আপনি কি হান্টারের কথা বলছেন?’

‘আমি আমার আরেক ছেলের কথা বলছি, বিউ বাইডেন।’

ট্রাম্প বলেন, ‘আমি বিউকে চিনি না। হান্টারকে চিনি। হান্টারকে সেনাবাহিনী থেকে বের করে দেয়া হয়েছিল। কোকেন ব্যবহারের জন্য তাকে অপমান করে সঙ্গে বের করে দেয়া হয়েছিল। আপনি ভাইস-প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগপর্যন্ত সে আর কোনও কাজ পায়নি।’

এ কথায় প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয়ে বাইডেন চিৎকার করে বলেন, ‘অনেকের মতো বাড়িতে আমার ছেলেরও মাদকের সমস্যা ছিল।’

এগিয়ে কে?
যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের বাকি আর পাঁচ সপ্তাহ। বেশিরভাগ জনমত জরিপেই ট্রাম্পের চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন জো বাইডেন। তবে এখনও দেশটির প্রতি ১০ জনের একজন ভোটার কাকে ভোট দেবেন তা নির্ধারণ করেননি।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ৭৭ বছর বয়সী জো বাইডেনের লক্ষ্য যদি হয় বয়সের ভার তাকে কাবু করতে পারেনি, তিনি এখনও চাপের মুখে অবিচল থেকে নিজের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেন, কথার বাণে প্রতিপক্ষকে কাবু করার ক্ষমতা রয়েছে- এগুলো প্রমাণ করা, তবে মঙ্গলবার রাতে সেটি বেশ ভালোভাবেই করেছেন এ ডেমোক্র্যাট নেতা। ফলে প্রথম বিতর্কে তাকেই বিজয়ী হিসেবে ধরা যায়।

Facebook Comments Box
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ৩:৪৯ অপরাহ্ণ | বুধবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।