বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১২ বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ধার দেওয়ার সক্ষমতা কমেছে

ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানে তারল্য সংকট তীব্র হচ্ছে

বিবিএনিউজ.নেট   |   শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০১৯   |   প্রিন্ট   |   562 বার পঠিত

ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানে তারল্য সংকট তীব্র হচ্ছে

চলতি বছরের জানুয়ারি থেকেই তারল্য সংকটে ভুগছে দেশের ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। বর্তমানে সেই সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। প্রতিদিনই দৈনন্দিন চাহিদা ও মেয়াদপূর্তি হওয়া এফডিআরের অর্থ দিতে কলমানি বাজার থেকে ধার করছে। এছাড়া বেসরকারি খাতের কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানই অন্য প্রতিষ্ঠানকে অর্থ ধার দিতে পারছে না। সবাই শুধু ধার নিচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে এমন তথ্য।

সূত্রমতে, বর্তমানে দৈনিক গড়ে দেশের কলমানি বাজার থেকে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ৭০০ থেকে ৭৫০ কোটি টাকা ধার নিচ্ছে। গত ২৯ সেপ্টেম্বর ২৮টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান কলমানি বাজারে লেনদেন করে। এর মধ্যে বেসরকারি খাতের ২৬টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানই অর্থ ধার নিয়েছে ৭৫৫ কোটি টাকার ওপরে। এছাড়া ৩০ সেপ্টেম্বর ৭৬০ কোটি, ১ অক্টোবর ৭৫০ কোটি ও তিন অক্টোবর ৭৬২ কোটি টাকার ধার বেশি ধার নিয়েছে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। তথ্য বলছে, গত সপ্তাহেও ধার নেওয়ার প্রবণতা ও পরিমাণ প্রায় একই রকম রয়েছে।

তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বেসরকারি খাতের কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানই ধার দেওয়ার সক্ষমতায় নেই। তাদের ধারের চাহিদা পূরণ করছে ব্যাংকগুলো। শুধু সরকারি দুটি প্রতিষ্ঠান অর্থ ধার দিতে পারছে, তাও প্রয়োজনের তুলনায় সামান্য।

জানা গেছে, আটটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন সূচক ভালো যাচ্ছে না। এর মধ্যে সম্প্রতি বিভিন্ন অনিয়মের দায়ে পিপলস লিজিংকে অবসায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। উচ্চ আদালতের নির্দেশে অবসায়কও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এর পরই আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে বিভিন্ন ব্যাংক নিজেদের আমানত প্রত্যাহার করে নিতে শুরু করেছে। এমন পরিস্থিতিতে বেশ নামকরা প্রতিষ্ঠানও কিছুটা সংকটে পড়েছে। এতে উচ্চ সুদে আমানত সংগ্রহ ছাড়া অন্য কোনো গতি দেখছেন না আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নির্বাহীরা। ফলে সুদহার দ্রুত ফের বৃদ্ধি পেতে যাচ্ছে। অনেক প্রতিষ্ঠানই ১০ শতাংশের ওপরের সুদহারে আমানত সংগ্রহ শুরু করেছে।

জানা গেছে, তারল্য সংকট মেটাতে ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন বিএলএফসি’র প্রতিনিধিরা সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সেই বৈঠকে গভর্নরের কাছে তারা দাবি জানিয়েছেন, ব্যাংকগুলোকে একচেটিয়াভাবে আমানত প্রত্যাহার না করতে। বৈঠকে উপস্থিত একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, গভর্নর আমাদের আশ্বস্ত করেছেন, ব্যাংকগুলোকে বলবেন একচেটিয়াভাবে যেন আমানত প্রত্যাহার না করে। আর্থিক সূচক ভালো থাকা প্রতিষ্ঠানে যেন বিনিয়োগ করে ব্যাংকগুলো। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক সহায়তা করবে।

জানা গেছে, দ্রুত সময়ে সহজে অর্থ সংগ্রহের জন্য কলমানি বাজার থেকে অর্থ ধার নিতে পারে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। স্বল্প সময়ের জন্য এর বিপরীতে বাজারের চলমান সুদহারের চেয়ে বেশি দিতে হয়। বর্তমানে এই হার পাঁচ দশমিক ৫০ শতাংশ।

সাধারণত উদ্বৃত্ত বা বিনিয়োগযোগ্য অর্থ থাকলে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো কলমানি বাজারে ধার দেয়। অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো স্বল্প সময়ের জন্য এখান থেকে ধার নেয়। জামানত হিসেবে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে থাকা বিভিন্ন বন্ড ও সিকিউরিটিজ জমা দেয়। এজন্য অনেক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানই স্বল্প সময়ের জন্য কলমানি বাজারে অর্থ লগ্নি করে। এ খাত থেকেও প্রতিষ্ঠানটির সুদ আয় বার্ষিক মুনাফাকে বাড়িয়ে দেয়। নিরাপদ এ ব্যবস্থায় সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানই ধার দেওয়া পছন্দ করে।

আগে এক আর্থিক প্রতিষ্ঠান আরেক আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থ ধার নিতে পারত। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ের তথ্য বলছে, বেসরকারি খাতের কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানই ধার দেওয়ার সক্ষমতায় নেই। সবাই শুধু ধার নিচ্ছে। এই সুযোগে সরকারি তিনটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দুটি প্রতিষ্ঠান ধার দিয়ে সুদ আয় করছে, কিন্তু পরিমাণে তা উল্লেখযোগ্য নয়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর তারল্য সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। এজন্য অনেক প্রতিষ্ঠানই টাকা ধার নিলেও তা ফেরত দিতে পারছে না, আবার ধার নিতে হচ্ছে। এতে অর্থ লেনদেন হচ্ছে না। শুধু কাগজে-কলমে অর্থ ধার-দেনা চলছে। উচ্চ সুদের এসব ধার আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর তহবিল ব্যয় ব্যবস্থাপনা খরচ বাড়িয়ে দেবে। যদিও বর্তমানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে এই ব্যয় ১০ শতাংশের মধ্যে রাখার জন্য মোটিভেশন করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন বিএলএফসি’র চেয়ারম্যান ও ন্যাশনাল হাউজিং ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালন মো. খলিলুর রহমান বলেন, গত জানুয়ারি থেকে তারল্য সংকট চলছে ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতে। কিন্তু সবার জন্য এই সংকট সমান নয়। কিছু প্রতিষ্ঠান এখনও ভালো অবস্থানে রয়েছে। মাত্র কয়েকটি সমস্যায় রয়েছে। মেয়াদপূর্তিতে গ্রাহকের আমানত কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ফেরত দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। এজন্য একটু চাপ তো আছেই। কলমানি বাজারেও অর্থের চাহিদা বেড়েছে।

তহবিল ব্যয় ব্যবস্থাপনা খরচ বৃদ্ধি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কিছু তো বাড়বে। আবার আমানত সংগ্রহ করতে পারলে অবস্থার উন্নতি হবে। অনেক গ্রাহক আস্থাহীনতায় টাকা তুলে নিচ্ছেন। আমরা আশা করছি এমন পরিস্থিতি বেশিদিন থাকবে না। গ্রাহকদের আস্থা বৃদ্ধিতে আমরা কাজ করছি।

সূত্র জানিয়েছে, কিছু প্রতিষ্ঠান থেকে গ্রাহকরা মেয়াদপূর্তির আগেই আমানত তুলে নিচ্ছেন। এজন্য চাহিদামতো অর্থ দিতে কলমানি বাজার থেকে অর্থ নেওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রসঙ্গত, বর্তমানে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে দেশে ৩৪টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ব্যাংকের মতো আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর লাইসেন্স প্রদানকারী ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

আরো পড়ুন : ভয়াবহ সংকটে ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক খাত

Facebook Comments Box
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ১২:৫০ অপরাহ্ণ | শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০১৯

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

রডের দাম বাড়ছে
(11192 বার পঠিত)

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।