শুক্রবার ২৬ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৩ বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রক্তাক্ত শ্রীলঙ্কায় নিহতের সংখ্যা ২৯০

বিবিএনিউজ.নেট   |   মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০১৯   |   প্রিন্ট   |   446 বার পঠিত

রক্তাক্ত শ্রীলঙ্কায় নিহতের সংখ্যা ২৯০

শোকে স্তব্ধ, বিস্ময়ে বিমূঢ় নতুন এক ভোর এসেছে ভারত মহাসাগরের দ্বীপদেশ শ্রীলঙ্কায়। আগের দিনের ভয়াবহ সিরিজ বোমা হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৯০ জনে।
গত রোববার ইস্টার সানডের মধ্যে দুই দফায় তিনটি গির্জা ও চারটি হোটেলসহ আট জায়গায় বোমা হামলার পর সন্ধ্যা থেকে পুরো শ্রীলঙ্কায় জারি করা হয়েছিল কারফিউ। সোমবার সকালে তা তুলে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। তবে মধ্যরাত থেকে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে।

শ্রীলঙ্কায় গৃহযুদ্ধের পর গত এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় এ হামলার দায় স্বীকার করেছে জামাত আল-তাওহিদ আল-ওয়াতানিয়া নামক এক জঙ্গিগোষ্ঠী। এদিকে পুলিশ সন্দেহভাজন হিসেবে ২৪ জনকে আটক করার কথা জানিয়েছে। তবে কারা ওই সমন্বিত হামলা চালিয়ে থাকতে পারে, সে বিষয়ে সরকার এখনও নিশ্চিত করে কিছু বলেনি।
এ হামলার শিকার হয়েছে দেশটিতে ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের তিনটি বড় গির্জা সেইন্ট অ্যান্থনির চার্চ, সেইন্ট সেবাস্টিয়ানের চার্চ আর জিয়ন চার্চ, যেখানে ইস্টার সানডের প্রার্থনায় সমবেত হয়েছিলেন হাজারো মানুষ। হামলার অন্যতম লক্ষ্য ছিলেন কলম্বোর পাঁচতারকা হোটেল শাংরি লা, কিংসবুরি আর সিনামন গ্র্যান্ডের বিদেশি পর্যটকরা।
শ্রীলঙ্কার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে অন্তত ২৭ বিদেশি নাগরিক রয়েছেন। পাঁচ শতাধিক মানুষ আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

এদিকে শ্রীলঙ্কায় ওই বোমা হামলায় আওয়ামী লীগ নেতা শেখ ফজলুল করিম সেলিমের নাতি জায়ান চৌধুরী নিহত হয়েছে, আহত হয়েছেন তার জামাতা মশিউল হক চৌধুরী প্রিন্স। বোমা হামলা চালানো একটি পাঁচতারা হোটেলে দুই ছেলে ও স্বামীকে নিয়ে উঠেছিলেন শেখ সেলিমের মেয়ে শেখ আমেনা সুলতানা সোনিয়া। তবে মশিউল হক চৌধুরী স্থানীয় একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
প্রসঙ্গত, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সংসদ সদস্য শেখ সেলিম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফুপাতো ভাই।
শ্রীলঙ্কায় হামলার পর পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম দুপুরে এক ব্রিফিংয়ে বলেছিলেন, বোমা হামলার ঘটনার পর থেকে এক শিশুসহ দুই বাংলাদেশির খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। তবে তাদের নাম-পরিচয় তিনি সে সময় প্রকাশ করেননি।

ব্রুনেই সফররত শেখ হাসিনা সেখানে প্রবাসীদের দেওয়া এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তব্যে নিজের স্বজনদের বোমা হামলার শিকার হওয়ার কথা প্রথম জানান। তিনি বলেন, ‘শেখ সেলিমের মেয়ে জামাই ও দুই বাচ্চা নিয়ে শ্রীলঙ্কায় ছিলেন। সেখানে জামাই প্রিন্স ও ছেলে সাড়ে আট বছরের ওরাও গিয়েছিল রেস্টুরেন্টে, সেখানে বোমা পড়েছে। জামাই আহত হাসপাতালে, বাচ্চাটার এখনও কোনো খবর পাওয়া যাচ্ছে না যে সে কোথায় আছে। আপানারা একটু দোয়া করেন, যেন ওকে পাই।’
এরপর শেখ সেলিমের একান্ত সচিব ইমরুল কায়েস বলেন, ‘আমরা যতদূর জেনেছি স্যারের (শেখ সেলিম) জামাই (মশিউল) ও নাতি আহত। এর মধ্যে জামাই শঙ্কামুক্ত, নাতি শঙ্কামুক্ত নয়।’
হামলার সময় হোটেলের নিচতলার রেস্তোরাঁয় সকালের নাস্তা করতে গিয়েছিলেন প্রিন্স ও তার বড় ছেলে জায়ান। ছোট ছেলে জোহানকে নিয়ে শেখ সোনিয়া ওই সময় হোটেলের কক্ষে ছিলেন।
ইমরুল জানান, খবর শোনার পর বেলা ৩টার দিকে শেখ সেলিমের স্ত্রী ও ছোট ছেলে শেখ ফজলে নাইম শ্রীলঙ্কার উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। ব্রুনেই থেকে শেখ ফজলে ফাহিমও শ্রীলঙ্কায় রওনা হচ্ছেন।
এদিকে সন্ত্রাসীরা শ্রীলঙ্কায় আরও হামলার পরিকল্পনা করছে বলে জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর থেকে নাগরিকদের দেশটি ভ্রমণে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। রোববার শ্রীলঙ্কার কয়েকটি অভিজাত হোটেল ও গির্জায় বোমা হামলায় ২৯০ জন নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন পাঁচ শতাধিক।

যুক্তরাষ্ট্র সময় রোববার জারি করা সংশোধিত ভ্রমণ সতর্কবার্তায় বলা হয়, ‘সামান্য আভাস বা কোনো আগাম সতর্কবার্তা ছাড়াই সন্ত্রাসী হামলা হতে পারে।’
হামলার সম্ভাব্য লক্ষ্যবস্তু হিসেবে পর্যটন কেন্দ্র, শপিং মল, হোটেল, বাস ও রেলস্টেশন, বিভিন্ন প্রার্থনা কেন্দ্র, বিমানবন্দর ও জনসমাগমপূর্ণ এলাকার কথা বলা হয়েছে।
যেভাবে হালমা চালানো হয়েছে: বিবিসি জানিয়েছে, তিনটি গির্জা ও তিনটি হোটেলে বিস্ফোরণের খবরটি আসে রোববার স্থানীয় সময় সকাল পৌনে ৯টায়। ‘যিশুর পুনরুত্থান’ দিবস উদ্যাপনে গির্জাগুলোতে তখন চলছিল বিশেষ প্রার্থনা।
বিস্ফোরণে প্রতিটি গির্জাই মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ছাদ উড়ে যায়। বিধ্বস্ত গির্জাগুলোর বেঞ্চ আর যিশুর ভাস্কর্যে রক্তের দাগ লেগে থাকতে দেখা যায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আসা ছবি ও ভিডিওতে। এক প্রত্যক্ষদর্শী বিস্ফোরণের শব্দ শোনার পর দৌড়ে সেইন্ট অ্যান্থনির চার্চে গিয়ে মেঝেতে লাশ পড়ে থাকতে দেখার কথা বলেছেন বিবিসিকে।
কামাল নামের ওই ব্যক্তি বলেন, পৌনে ৯টায় বিকট ওই বিস্ফোরণের শব্দ পান তিনি। এরপর মানুষকে দৌড়ে বের হয়ে আসতে দেখেন। তারা চিৎকার করে অনেক মানুষের মৃত্যুর কথা বলছিলেন। ‘আমরা দৌড়ে গির্জার ভেতরে গিয়ে লাশ পড়ে থাকতে দেখলাম। আমরা প্লাস্টিক দিয়ে সেগুলো ঢেকে দিলাম। এরপর পুলিশ এসে সবাইকে সেখান থেকে বের করে দিল।’

ইস্টার সানডের প্রার্থনার জন্য ওই গির্জায় পাঁচ শতাধিক লোক জড়ো হয়েছিল বলে জানিয়েছেন তিনি। বোমা হামলার পর কলম্বোর সেইন্ট অ্যান্থনি চার্চের সামনে শ্রীলঙ্কান সেনাসদস্যরা সতর্ক অবস্থান নেন। প্রায় একই সময়ে বিস্ফোরণ হয় কলম্বোর শাংরি লা, সিনামন গ্র্যান্ড ও কিংসবুরি হোটেলে। প্রতিটি হোটেলের রেস্তোরাঁয় তখন সকালের নাস্তা সারতে আসা পর্যটকদের ভিড় ছিল। আর সেই পর্যটকরাই ছিলেন আত্মঘাতী হামলাকারীদের টার্গেট।

Facebook Comments Box
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ২:০৫ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০১৯

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।