আদম মালেক | রবিবার, ২৪ জানুয়ারি ২০২১ | প্রিন্ট | 519 বার পঠিত
নভেম্বরের তুলনায় ডিসেম্বর ২০২০ সালে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বেড়েছে পুুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ওষুধ ও রসায়ন খাতের ১৯ কোম্পানি। একই সময়ে পরিচালকদের বিনিয়োগক স্থিতিশীল রয়েছে। এ খাতে সাধারণ বিনিয়োগকারীসহ সব শ্রেণির বিনিয়োগ বাড়লে ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করছেন বাজার-সংশ্লিষ্টরা।
তাদের মতে, বাংলাদেশের ওষুধের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে বিদেশে। প্রতিবছর ওষুধ রফতানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছে ওষুধ ও রসায়ন খাতের কোম্পানিগুলো। এ খাতে বেক্সিমকো ফার্মা ও স্কয়ার ফার্মার মতো অনেক ভালো ভালো কোম্পানি রয়েছে। এ রকম মৌলভিত্তি কোম্পানিতে বিনিয়োগে ঝুঁকি নেই। তাই ভালো কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে মুনাফা হতে পারে।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালক ও সাবেক সভাপতি রকিবুর রহমান বলেন, কভিড-১৯ এর কারণে ওষুধের চাহিদা বেড়েছে। তাই ওধুধ খাত শক্তিশালী। এখানে ইচ্ছে করলেই কেউ রাতারাতি বড় মূলধনী ও মৌলভিত্তি সম্পন্ন কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়িয়ে দিতে পারবে না। এ সব কোম্পানিগুলোর মধ্যে যেগুলোর গুণগত মান ভালো সেগুলোর দাম বাড়বে। তবে এ খাতের সম্ভাবনা উজ্জল।
ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশ্যে এ পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ বলেন, ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের সতর্কতার সঙ্গে বিনিয়োগ করতে হবে। কোনোভাবেই তারা যেন স্বর্ন গহনা বা জায়গা জমি বিক্রি করে বিনিয়োগ না করেন। এ বিনিয়োগে সরকারি বেসরকারি বা ব্যক্তিগত ঋণ বর্জন করতে হবে।
আরেক পরিচলক শাকিল রিজভিও পুঁজিবাজারের ওষুধ খাত নিয়ে আশাবাদী। তিনি বলেন, আমাদের দেশে গার্মেন্টসের পরে ওষুধের অবস্থান। ওষুধ শিল্প অনেক সম্ভাবনাময়। তাই এ খাতে বিনিয়োগ সুফল বয়ে আনবে। বিনিয়োগ যত বাড়বে সুফল তত বাড়বে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে জানা যায়, নভেম্বরের তুলনায় ডিসেম্বরে ওষুধ ও রসায়ন খাতে ৩১ কোম্পানির মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বেড়েছে ১৯টি কোম্পানিতে। কমেছে ৮ কোম্পানিতে আর ৪ কোম্পানির বিনিয়োগ অপরিবর্তিত দেখা গেছে।
একই সময়ে পরিচালকদের বিনিয়োগ বেড়েছে মাত্র দুটি কোম্পানিতে আর ২৯টি প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ ছিল স্থিতিশীল। একটি কোম্পানিতে সরকারি বিনিয়োগ থাকলেও ৩০টি কোম্পানি সরকারি বিনিয়োগশূন্য। বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে মাত্র একটি কোম্পানিতে, কমেছে দুই কোম্পানিতে। বিনিয়োগ অপরিবর্তিত ৭ কোম্পানিতে। তবে ২১টি কোম্পানিতে কোনো বিদেশি বিনিয়োগ নেই।
এদিকে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে আছে ওরিয়ন ইনফিউশনস লিমিটেড। কোম্পানির শেয়ারে গত নভেম্বরে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ ছিল ৭ দশমিক ৬০ শতাংশ। ডিসেম্বরে বিনিয়োগ ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ বেড়ে ১১ দশমিক ৩৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ সবচেয়ে বেশি কমেছে অ্যাক্টিভ ফাইন কেমিক্যালসে। নভেম্বরে কোম্পানির শেয়ারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ ছিল ৩৩ দশমিক ০৩ শতাংশ। ডিসেম্বরে বিনিয়োগ ৩ দশমিক ২০ শতাংশ কমে ২৯ দশমিক ৮৩ শতাংশে নেমে আসে।
ডিসেম্বর মাসে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ এসিআই লিমিটেডে শূন্য দশমিক ৮৯ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ৩৮ দশমিক ৬৬ শতাংশ; এসিআই ফরমুলেশনে শূন্য দশমিক ১৩ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ; একমি ল্যাবরেটরিজে শূন্য দশমিক ৬৬ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ৩০ দশমিক ২২ শতাংশ; এমবি ফার্মাসিউটিক্যালসে শূন্য দশমিক ৬০ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ৬ দশমিক ২৬ শতাংশ; সেন্ট্র্রাল ফার্মাসিউটিক্যালসে ৩ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ১৫ দশমিক ৫১ শতাংশ; ফার কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিতে শূন্য দশমিক ০১ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ১৪ দশমিক ০১৬ শতাংশ; ইবনে সিনা ফার্মাউটিক্যালসে শূন্য দশমিক ৭০ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ২২ দশমিক ১৯ শতাংশে।
ইন্দো-বাংলা ফার্মাসিউটিক্যালসে শূন্য দশমিক ৬৩ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ৯ দশমিক ৭০ শতাংশ; সিরিঞ্জেস অ্যান্ড মেডিসিন ডিভাইসে শূন্য ০৮৯ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ৪ দশমিক ৬৭ শতাংশ; কেয়া কসমেটিকসে শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ৭ দশমিক ৮৫ শতাংশ; লিবরা ইনফিউশনসে ১ দশমিক ১৬ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ৬ দশমিক ৬৫ শতাংশ; ম্যারিকো বাংলাদেশে শূন্য দশমিক ২৬ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ; ওরিয়ন ফার্মাসিউটিক্যালসে ১ দশমিক ২২ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ৪০ দশমিক ৭০ শতাংশ; রেনাটা লিমিটেডে ১ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ১৯ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ।
অন্যদিকে ডিসেম্বরে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ অ্যাডভেন্ট ফার্মাসিউটিক্যালসে শূন্য দশমিক ২১ শতাংশ কমে ২১ দশমিক ১২ শতাংশ; বিকন ফার্মাসিউটিক্যালসে শূন্য দশমিক ১ শতাংশ কমে ৩৬ দশমিক ৯৭ শতাংশ; বেক্সিমকো ফার্র্মায় শূন্য দশমিক ০৮ শতাংশ কমে ২০ দশমিক ২৯ শতাংশ; গ্লোবাল হেভি কেমিক্যালসে শূন্য দশমিক ২৩ শতাংশ কমে ২০ দশমিক ২৮ শতাংশে; কোহিনুর কেমিক্যালসে শূন্য দশমিক ৬৫ শতাংশ কমে ১৪ দশমিক ৪৬ শতাংশ; রেকিট বেনকিজারে শূন্য দশমিক ৩৮ শতাংশ কমে দাঁড়ায় ৩ দশমিক ৭৩ শতাংশ। তাছাড়া বেক্সিমকো সিনথেটিক্স, ইমাম বাটন ইন্ডাস্ট্রিজ, ফার্মা এইড্স ও ওয়াটা কেমিক্যালসে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগের কোনো পরিবর্তন নেই।
এদিকে ডিসেম্বর মাসে পরিচালকদের বিনিয়োগ বেড়েছে একমি ল্যাবরেটরিজ ও সালভো কেমিক্যালসে। নভেম্বরে একমি ল্যাবরেটরিজের শেয়ারে পরিচালকদের বিনিয়োগ ছিল ৪১ দশমিক ৬১ শতাংশ। ডিসেম্বরে বিনিয়োগ শূন্য দশমিক ০১ শতাংশ বেড়ে ৪১ দশমিক ৬২ শতাংশে উন্নীত হয়। ডিসেম্বরে সালভো কেমিক্যালসে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ শূন্য দশমিক ২৭ শতাংশ বেড়ে ২২ দশমিক ৪১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
পরিচালকদের বিনিয়োগ স্থিতিশীল রয়েছে এসিআই লিমিটেড, এসিআই ফরমুলেশন, অ্যাকটিভ ফাইন, অ্যাডভেন্ট ফার্মা, এএফসি এগ্রো বায়োটেক, এমবি ফার্মাসিউটক্যাল্স, বিকন ফার্মা, বেক্সিমকো ফার্মা, বেক্সিমকো সিনথেটিক্স, সেন্ট্রাল ফার্মা, ফার কেমিক্যাল, গ্লোবাল হেভি কেমিক্যাল, ইবনে সিনা ফার্মা, ইন্দো-বাংলা ফার্মা, ইমাম বাটন ইন্ডাস্ট্রিজ, সিরিঞ্জেস অ্যান্ড মেডিসিন ডিভাইসেস, কেয়া কসমেটিক্স, কোহিনুর কেমিক্যাল্স, লিবরা ইনফিউশনস, ম্যারিকো বাংলাদেশ, ওরিয়ন ইনফিউশনস, ফার্মা এইড্স, রেকিট বেনকিজার, রেনাটা লিমিটেড, সিল্কো ফার্মা, সিলভা ফার্মা, স্কয়ার ফার্মা ও ওয়াটা কেমিক্যালে। এদিকে সরকারি বিনিয়োগ রয়েছে শুধু রেকিট বেনকিজারে। বাকি ৩০টি কোম্পানিতে কোনো সরকারি বিনিয়োগ নেই।
বিদেশি বিনিয়োগ সবচেয়ে বেশি বেড়েছে একমাত্র স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যাল্সে। নভেম্বরে এ কোম্পানিতে বিদেশি বিনিয়োগ ছিল ১২ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ। ডিসেম্বরে বিনিয়োগ শূন্য দশমিক ৩৩ শতাংশ বেড়ে ১২ দশমিক ৩৮ শতাংশ দাঁড়িয়েছে। বিদেশি বিনিয়োগ সবচেয়ে বেশি কমেছে বেক্সিমকো ফার্র্মায়। নভেম্বরে কোম্পানিতে বিনিয়োগ ছিল ২৯ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ। ডিসেম্বরে বিনিয়োগ শূন্য দশমিক ৬৪ শতাংশ কমে ২৮ দশমিক ৩১ শতাংশে নেমে আসে। এসিআই লিমিটেড, এসিআই ফরমুলেশনস, অ্যাডভেন্ট ফার্মা, এএফসি এগ্রো বায়োটেক, এমবি ফার্মা, বিকন ফার্মা, সেন্ট্রাল ফার্মা, ফার কেমিক্যাল, গ্লোবাল হেভি কেমিক্যাল লিমিটেড।
ইবনে সিনা ফার্মা, ইন্দো-বাংলা ফার্মা, ইমাম বাটন ইন্ডাস্ট্রি, সিরিঞ্জেস অ্যান্ড মেডিসিন ডিভাইসেস, কেয়া কসমেটিক্স, কোহিনুর কেমিক্যাল্স, লিবরা ইনফিউশন্স, ওরিয়ন ইনফিউশনস, ফার্মা এইড্স, সালভো কেমিক্যাল্স, সিল্কো ফার্মা ও ওয়াটা কেমিক্যালসে কোনো বিদেশি বিনিয়োগ নেই। তাছাড়া একমি ল্যাবরেটরিজ, অ্যাকটিভ ফাইন, বেক্সিমকো সিনথেটিক্স, ওরিয়ন ফার্মা, রেকিট বেনকিজার, রেনাটা লিমিটেড ও সিলভা ফার্মাসিউটিক্যালসে বিনিয়োগ স্থবির।
Posted ১০:৪০ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ২৪ জানুয়ারি ২০২১
bankbimaarthonity.com | rina sristy