শুক্রবার ২৬ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৩ বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সম্রাট সাম্রাজ্যের পতন

বিবিএনিউজ.নেট   |   সোমবার, ০৭ অক্টোবর ২০১৯   |   প্রিন্ট   |   346 বার পঠিত

সম্রাট সাম্রাজ্যের পতন

প্রভাব-প্রতিপত্তি, অর্থ-বিত্ত, গাড়িবহরের শোভাযাত্রা সমেত রাজপথ দাপিয়ে বেড়ানো, চারপাশে অস্ত্রধারী নিরাপত্তারক্ষীদের তটস্থ প্রহরা, শানদার বেশভূষা, জৌলুসময় যাপিতজীবন, শীর্ষসন্ত্রাসীদের মাথার ’পর দোর্দণ্ড প্রতাপে ছড়ি নাচানো, একের পর একের আধিপত্য- এসব মিলিয়ে তিনি রীতিমতো এক সম্রাটই বৈকি, শুধু মাথায় নেই কোনো মুকুট। অনেকে বলতেন তিনি এ শহরের অঘোষিত সম্রাট। নামও তার সম্রাট। সেই অর্থে সার্থক নামকরণই বটে। কিন্তু তার এই সম্রাটতুল্য উত্থান মুদ্রার একপিঠ। অন্যপিঠে যে পতনও আছে, তা বোধ করি তার জানা ছিল না।

হ্যাঁ, পতন শুরু হয়েছে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটের এবং তার গড়ে তোলা সাম্রাজ্যের। র‌্যাব গত শনিবার গভীর রাতে সম্রাটকে গ্রেপ্তার করেছে। এর পর পরই যুবলীগ থেকে তাকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। গতকাল দিনভর তার বাড়ি, অফিস সর্বত্র চলছে র‌্যাবের অভিযান, বেরিয়ে আসছে একের পর এক কুকীর্তি। ভ্রাম্যমাণ আদালত ইতোমধ্যেই সম্রাটকে কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেছেন।

কদিন আগেও ঢাকার রাজপথে মোটরসাইকেল বহর তাকে স্বাগত জানাত। চারপাশ ঘিরে থাকত অস্ত্রধারী নিজস্ব নিরাপত্তারক্ষীরা। ক্ষমতার দাপটে ঢাকার কর্মব্যস্ত সড়কও তার জন্য উন্মুক্ত হয়ে যেত। প্রায় ত্রিশ বছরের রাজনীতির জীবনে হাজার হাজার নেতাকর্মী নিজ হাতে গড়েছেন, তৈরি করেছেন বিশাল বাহিনী। কিন্তু কর্মীবান্ধব নেতা হিসেবে পরিচিত সম্রাট গ্রেপ্তার হওয়ার পর তার দীর্ঘদিনের সহযোগী নেতাকর্মীদের তেমন কাউকেই দেখা যায়নি তার পাশে। গত মাসে শুরু হওয়া ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের ১৮ দিনের মাথায় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা সম্রাটকে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। এ সময় তার অন্যতম সহযোগী যুবলীগ নেতা এনামুল হক আরমানকেও গ্রেপ্তার করা হয়। র‌্যাব বলছে, ক্যাসিনো কারবারের সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রাজধানীর ক্যাসিনোগুলোর নিয়ন্ত্রণ ছিল তার হাতে। ক্যাসিনো থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা আয় করেছেন এ যুবলীগ নেতা।

রোববার দুপুর দেড়টার দিকে সম্রাটকে নিয়ে র‌্যাব অভিযান চালায় কাকরাইলের ভূইয়া ট্রেড সেন্টারে সম্রাটের রাজনৈতিক কার্যালয়ে। সেখানে একটি বিদেশি পিস্তল, ৬ রাউন্ড গুলি, বৈদ্যুতিক টর্চার মেশিন, ১১৬০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট, বিপুল পরিমাণ বিদেশি মদ ও দুটি ক্যাঙ্গারুর চামড়া পাওয়া গেছে। আইন অমান্য করে ক্যাঙ্গারুর চামড়া সংরক্ষণ করায় র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত বন্যপ্রাণী পাচার ও সংরক্ষণ আইনে সম্রাটকে ৬ মাসের কারাদ- দিয়েছেন। এর আগে অবৈধ পিস্তল রাখার দায়ে আরমানকেও ছয় মাসের কারাদ- দেওয়া হয়। সন্ধ্যা সোয়া সাতটার দিকে কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয় সম্রাট ও তার সহযোগী আরমানকে। এ সময় হাতকড়া বাঁধা সম্রাটের মাথায় ছিল র‌্যাবের হেলমেট।

সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে সম্রাটকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, বলেছেন র‌্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) বেনজীর আহমেদ। এদিকে গ্রেপ্তারের পর যুবলীগ থেকে সাময়িক বহিস্কার করা হয়েছে সম্রাট ও আরমানকে।

র‌্যাব জানায়, রোববার ভোর পাঁচটার দিকে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের আলকরা ইউনিয়নের কুঞ্জশ্রীপুর গ্রাম থেকে সম্রাট ও আরমানকে গ্রেপ্তারের পর সকাল ৯টার দিকে তাদের ঢাকায় আনা হয়। এর পর দুপরে সম্রাটকে নিয়ে কাকরাইলের ভূইয়া ট্রেড সেন্টারে তার রাজনৈতিক কার্যালয়ে তল্লাশি শুরু করে র‌্যাব। এর কিছুক্ষণ পর সম্রাটের শান্তিনগর ও মহাখালী ডিওএইচএসের বাসায় একযোগে অভিযান শুরু করে র‌্যাব। অভিযান চালানো হয় আরমানের মিরপুরের বাসায়ও।

এদিকে সম্রাটকে গ্রেপ্তারের তার পৃষ্ঠপোষক ও সহযোগীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। গা-ঢাকা দিয়েছেন অনেকেই। ১৮ সেপ্টেম্বর ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরুর পর এ কাণ্ডে সম্রাটের নাম ওঠে আসে। সেদিনই কাকরাইলের অফিসে অবস্থান নেন সম্রাট। তার পাহারায় নিয়োজিত হয় বিপুল পরিমাণ নেতাকর্মী। তখন তারা সম্রাটের পক্ষে নিরাপত্তামূলক নানা স্লোগান দিতে থাকেন। কিন্তু গতকাল গ্রেপ্তারের পর ওই একই কার্যালয় ও তার আশপাশে সেসব প্রতিবাদকারীদের দেখা মেলেনি।

রোববার দুপুরে র‌্যাব সদর দপ্তরে যুবলীগ নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটের গ্রেপ্তারের পর এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব মহাপরিচালক (ডিজি) বেনজীর আহমেদ বলেন, ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরুর দু-একদিন পরই ঢাকা ছেড়ে আত্মগোপনে ছিলেন সম্রাট। এক্ষেত্রে তিনি এমন সব পন্থা অবলম্বন করেছিলেন, যাতে সহজে তাকে খুঁজে না পাওয়া যায়। আমরা যেসব জায়গায় ক্যাসিনোর বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছি, সেসব জায়গা থেকে সম্রাটের নাম একাধিকবার এসেছে। আমাদের দীর্ঘ সময় লেগেছে তাকে লোকেট করতে। ক্যাসিনো ব্যবসায় যুক্ত থাকার সুস্পষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে সম্রাটকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সম্রাটের সঙ্গে এনামুল হক আরমান নামে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, সেও এই ক্যাসিনোর সঙ্গে যুক্ত।

তিনি আরও বলেন, আমরা অভিযান চালিয়ে ক্যাসিনো বন্ধ করেছি। ক্যাসিনোর সঙ্গে যারা সরাসরি জড়িত, তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। অভিযান চলমান রয়েছে। আমরা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে জঙ্গি, সন্ত্রাস ও মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রেখেছি। চলমান অভিযান একটা বড় ধরনের কৌশল। এর সুফল জনগণ আগামীতে ভোগ করতে পারবে। তবে এই ধারা ধরে রাখতে হলে শুধু একটি ফোর্স নয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সব ফোর্সকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। এ দেশে সবাই সমান অধিকার ভোগ করবেন। আইন মেনে চলবেন। কেউ যদি আইন অমান্য করেন, বেআইনি বা অবৈধ কাজে লিপ্ত হন, তাকে আইনের মুখোমুখি হতে হবে, শাস্তি পেতে হবে।

কাকরাইল কার্যালয়ে নেওয়ার পর সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত সম্রাটের নিয়ন্ত্রণাধীন ৮তলা ভবনের সব কটি ফ্লোর ও কক্ষে তল্লাশি চালায় র‌্যাব। এ সময় চারতলায় সম্রাটের সুরক্ষিত শয়ন কক্ষ থেকে বিদেশি পিস্তল উদ্ধার করা হয়। একই ফ্লোরের ফ্রিজ থেকে বের হয় বিদেশি মদ। এ ছাড়া ক্যাঙ্গারুর চামড়া, ইয়াবা, ইলেকট্রিক শক মেশিনও জব্দ করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

ভবনটি ঘুরে দেখা গেছে, সম্রাটের শয়নকক্ষে রয়েছে টাকা রাখার একটি ডিজিটাল লকার। ক্যাডার বাহিনী দিয়ে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা ওই কক্ষে সম্রাট প্রায়ই রাতযাপন করতেন। এর পাশে রান্নাঘরও আছে। খালেদ মাহমুদ ভুইয়াকে গ্রেপ্তারের পরও সম্রাট সেখানে রাতযাপন করেন। শয়নকক্ষের পাশের কক্ষটি সম্রাটের মিটিং রুম। আর একই ফ্লোরের আরেকটি ইউনিটে ছিল তার অফিস কক্ষ।

জানা গেছে, রানাঘরে সম্রাটসহ তার দেহরক্ষী ও ক্যাডারদের জন্য প্রতিদিন রান্না করা হতো। সেখানকার ফ্রিজে রাখা আছে কাটা ইলিশ, গলদা চিংড়ি, খাসির মাংস। ৮তলা ভবনের বেশিরভাগই রয়েছে ফাঁকা। এসব কক্ষে সম্রাটের ক্যাডার বাহিনীর জন্য আড্ডাসহ রাতযাপনের ব্যবস্থা ছিল। ওই কক্ষে নারীদের ব্যবহৃত সামগ্রী দেখা গেছে।

ভবনটির ৮তলার ছাদের একপাশে কৃত্রিম বাগান তৈরি করেছেন সম্রাট। রঙবেরঙের আলোকসজ্জার পাশাপাশি ফোয়ারা আর সুরের মূর্ছনায় রাতে সেখানে দলীয় লোকজন ও বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা দিতেন তিনি। বাগানের শেষে বাংলোর মতো একটি সুবিশাল কক্ষ। এটি মূলত জলসাঘর। সপ্তম তলায় রয়েছে আরেকটি শয়নকক্ষ। সেখানে সম্রাটের বন্ধুরা নর্তকীর নাচে আর মদের নেশায় মত্ত হতো।

সম্রাটকে নিয়ে অভিযান শেষে তার কাকরাইল কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন র‌্যাব ১-এর অধিনায়ক ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক সারওয়ার বিন কাশেম। তিনি জানান, সম্রাটের অফিসে তল্লাশি চালিয়ে গুলিসহ একটি বিদেশি পিস্তল, ১১৬০টি ইয়াবা, ১৯ বোতল বিদেশি মদ, দুটি ক্যাঙ্গারুর চামড়া, দুটি বৈদ্যুতিক শক মেশিন ও দুটি লাঠি পাওয়া গেছে। সেগুলো নির্যাতন করার কাজে ব্যবহার হতো বলে তারা ধারণা করছেন। সম্রাট এতদিন কোথায় ছিলেন- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এটা তদন্ত ছাড়া বলা যাবে না। তাকে রিমান্ডে নিয়ে তথ্য জানার চেষ্টা করা হবে।

র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম বলেন, কাকরাইলের অফিসে অভিযানের সময় সম্রাটের বিরুদ্ধে ‘তিন ধরনের অপরাধের আলামত’ পাওয়া গেছে। এর একটি বন্যপ্রাণী আইনে, বাকি দুটি মাদক ও অস্ত্র আইনে।

ক্যাঙ্গারুর চামড়া পাওয়ার কারণে সম্রাটকে বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ) আইনে তাৎক্ষণিকভাবে ছয় মাসের কারাদ- দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ ছাড়া মাদক ও অস্ত্র পাওয়ায় তার বিরুদ্ধে রমনা থানায় আরও দুটি মামলা হবে, জানান র‌্যাবের ম্যাজিস্ট্রেট।

সারওয়ার আলম বলেন, কুমিল্লায় অভিযানের সময় যুবলীগ নেতা আরমানকে মদ্যপ অবস্থায় পাওয়া যায়। এ কারণে ভ্রাম্যমাণ আদালত তাৎক্ষণিকভাবে তাকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়েছে।

অভিযান শেষে সন্ধ্যা ৭টা ১০ মিনিটে সম্রাটকে নিয়ে তার অফিস থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় যুবলীগের কিছু কর্মী-সমর্থক ‘জয় বাংলা’, ‘সম্রাট ভাই তোমার ভয় নাই, আমরা আছি তোমার সাথে’ ইত্যাদি স্লোগান দেন। এ সময় সম্রাট ছিলেন র‌্যাবের সাদা মাইক্রোবাসে। একপর্যায়ে পুলিশ বাঁশি বাজিয়ে সমবেতদের সরিয়ে মাইক্রোবাসের যাওয়ার পথ করে দেয়। কর্মী-সমর্থরা সম্রাটের গাড়ির পেছন পেছন স্লোগান দিতে দিতে মোড় পর্যন্ত যান।

এর আগে, মতিঝিলের ক্লাবপাড়ায় মোহামেডান, আরামবাগ, দিলকুশা, ওয়ান্ডারার্স, ভিক্টোরিয়া ও ইয়ংমেনস ক্লাবে ক্যাসিনোয় হানা দেয় র‌্যাব। এ ছাড়া বনানীর বাংলাদেশ গোল্ডেন ঢাকা ও কলাবাগান ক্রীড়া মঞ্চ ক্যাসিনোতেও অভিযান চালায় র‌্যাব। এ নিয়ে দেশজুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। এর মধ্যে ইয়ংমেনস ক্লাবের ক্যাসিনো চালাতেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। এ ছাড়া ঢাকার বেশিরভাগ ক্লাবে ক্যাসিনো কারবার চলত সম্রাটের ইশারায়। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড দিয়ে শুরু হলেও যুবলীগের রাজনীতিতে খালেদের উত্থান এই সম্রাটের হাত ধরে।

জানা গেছে, সম্রাটের ক্যাসিনো কারবারের সমন্বয়ক ছিলেন ওয়ার্ড কাউন্সিলর কেএম মমিনুল হক সাঈদ। শুরুর দিকে সম্রাট, খালেদ ও জিকে শামীম টেন্ডার বাগিয়ে নিতেন শীর্ষসন্ত্রাসী জিসানের নামে। এর পর একসময় জিসানের টেন্ডারবাজিসহ আন্ডারওয়ার্ল্ডের জায়গা দখল করে নেন সম্রাট। অনেক বছর ধরে ভারতের পাসপোর্ট নিয়ে দুবাইয়ে বসবাস করা জিসান সম্প্রতি স্থানীয় পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে।

গত ১৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় ঢাকা দক্ষিণ মহানগর যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁঁইয়া গ্রেপ্তার হওয়ার পর সম্রাটসহ অনেক রাঘববোয়ালের বিরুদ্ধে চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসতে থাকে। খালেদ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জিজ্ঞাসাবাদে জানান, সরকারদলীয় প্রভাবশালী ৬ নেতাকে মোটা অঙ্কের বখরা দেন তাদের কাছ থেকে প্রটেকশন পাওয়ার বিনিময়ে। তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন সম্রাট। সম্রাটকে এক দফায় ৬০ লাখ টাকা দেন বলে স্বীকার করেন তিনি।

ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে সম্রাটের নাম আসার পর থেকেই তাকে নিয়ে নানা গুঞ্জন শুরু হয়। তার আটক হওয়ার গুঞ্জন নিয়ে গণমাধ্যমেও সংবাদ হয়। এসবের মধ্যেই তার দেশত্যাগেও নিষেধাজ্ঞা জারি হয়।

র‌্যাব-৩ অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শফিউল্লাহ বুলবুল জানান, শান্তিনগরে ১৮তলা শেলটেক টাওয়ারের পঞ্চম তলায় সম্রাটের একটি বাসা আছে। একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে সেখানেও অভিযান চালানো হয়। তবে সেখান থেকে অবৈধ কিছু উদ্ধার করা যায়নি। র‌্যাব ২-এর অধিনায়ক আশিক বিল্লাহ বলেন, মহাখালী ডিওএইচএসের ২৯ নম্বর সড়কের ৩৯২ নম্বর হোল্ডিংয়ে সম্রাটের আরেকটি বাসায় অভিযান চালানো হয়। ওই বাসায় সম্রাটের দ্বিতীয় স্ত্রী শারমিন থাকেন। সেখান থেকেও অবৈধ কিছু উদ্ধার হয়নি।

মহাখালীর বাসায় অভিযান চালানোর সময় সম্রাটের স্ত্রী শারমিন চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘অবৈধ টাকা ও (সম্রাট) সংসারে খরচ করত না। তার ফ্যামিলি মেম্বাররা অবৈধ টাকা খাবে না- এটা তার মাথায় ছিল সব সময়। আর দল পালতে কিন্তু… আগের সময়টা কিন্তু নাই যে, ঘরের ধান খেয়ে, গরুর দুধ খেয়ে ডাক দিলেই চলে আসবে। এখন কিন্তু সময় চেঞ্জ হয়েছে। এখন ছেলেদের যদি ও রকম টাকা না দিত, তা হলে কিন্তু ওরা মিছিল-মিটিংয়ে আসত না। সে জন্য কিন্তু বিশাল অঙ্কের টাকা লাগত। আমার মনে হয় সে কারণেই ও ক্যাসিনোতে জড়িয়ে পড়েছে।’

শারমিন আরও বলেন, ‘ওর সম্পদ বলতে কিছু নাই। ও যা ইনকাম করে ক্যাসিনো চালিয়ে, তা দলের জন্য খরচ করে, দল পালে। আর যা বোধ হয় রাখে, সিঙ্গাপুর কিংবা এখানে জুয়া খেলে। ও সিঙ্গাপুরে জুয়া খেলতেই যেত। জুয়া খেলা তার নেশা, কিন্তু সম্পত্তি করা তার নেশা না।’

এদিকে আরমানের মিরপুরের বাসা থেকে জমির কাগজপত্র, ব্যাংকের চেকসহ বেশ কিছু জিনিস জব্দ করার কথা জানিয়েছেন র‌্যাব ৪-এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মোজাম্মেল হক।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক সূত্র জানায়, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে যে এলাকা থেকে সম্রাটকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে সেই কুঞ্জশ্রীপুর গ্রামটি সীমান্ত থেকে পাঁচ থেকে ছয় কিলোমিটার দূরে। ধারণা করা হচ্ছে, সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালিয়ে যেতে চেয়েছিলেন তিনি।
র‌্যাব-১১ কুমিল্লা কোম্পানির ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার প্রণব কুমার বলেন, শনিবার সন্ধ্যা সাতটার পর থেকে র‌্যাবের ১২ থেকে ১৪টি গাড়ি কুঞ্জশ্রীপুর গ্রামের আশপাশে অবস্থান নেয়। র‌্যাব বিভিন্ন সড়কের মধ্যে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়।

ক্যাসিনোকাণ্ডে আটক ও জড়িতদের অর্থ, সম্পদ খতিয়ে দেখা শুরু হয়েছে অভিযানের প্রথম থেকে। প্রথম দিনে খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া ও জিকে শামীম আটকের পর তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ ও হিসাব তলব করে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এর আগে গত ২২ থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর এমপি নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন ও তার স্ত্রী ফারজানা চৌধুরী, সম্রাট ও তার স্ত্রী শারমিনের অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হয়। গত ৩ অক্টোবর যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীর হিসাব তলব করা হয়।

Facebook Comments Box
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ৯:৫৩ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ০৭ অক্টোবর ২০১৯

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।