সোমবার ২০ মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সাউথইস্ট ব্যাংকের অনিয়ম খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন

নিজস্ব প্রতিবেদক:   |   বৃহস্পতিবার, ১০ আগস্ট ২০২৩   |   প্রিন্ট   |   151 বার পঠিত

সাউথইস্ট ব্যাংকের অনিয়ম খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বেসরসাকি খাতের সাউথইস্ট ব্যাংকের অনিয়ম খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

প্রতিষ্ঠানটির অতিরিক্ত পরিচালক মো. ফারুক হোসেনকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।

হাইকোর্টের নির্দেশের প্রেক্ষিতে এই কমিটি গঠন করা হয়েছে। হাইকোর্টের নির্দেশের প্রেক্ষিতে এই কমিটি গঠন করা

তদন্ত সম্পন্ন করে কমিশনের কাছে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য ৬০ দিন সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে বলে বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে।

তদন্ত কমিটি সাউথইস্ট ব্যাংকের ইনসাইডার ট্রেডিং বা সুবিধাভুগী শেয়ার লেনদেনের বাইরেও তাদের ধারণকৃত প্রকৃত শেয়ার সংখ্যা, ঋণ, বিনিয়োগ ইত্যাদি খতিয়ে দেখবে।

উল্লেখ, ইনসাইডার ট্রেডিং লেনদেন হচ্ছে কোম্পানির মূল্যসংবেদনশীল তথ্য আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করার আগে তা জেনে শেয়ার কেনাবেচা করা। সিকিউরিটিজ আইনে এই ধরনের শেয়ার লেনদেন নিষিদ্ধ।

উল্লেখ্য, সাউথইস্ট ব্যাংক দেশের অন্যতম শীর্ষ ব্যাংক। ব্যাংকটির কর্তৃত্ব নিয়ে ২০২১ সালে এর পরিচালকরা দুটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে প্রবল বিরোধে জড়িয়ে পড়েন।

পারস্পরিক বিরোধে বের হয়ে আসতে থাকে ব্যাংকটির অনিয়ম-দুর্নীতির নানা ঘটনা। গ্রুপ দুটি একে অন্যের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলতে থাকেন।

ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালে ওই সময় ব্যাংকটির পাঁচ প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক বর্তমান চেয়ারম্যান আলমগীর কবিরের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অনিয়ম ও অর্থ পাচারের অভিযোগ তোলেন।

তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরকে একটি চিঠিও পাঠিয়েছিলেন।

চিঠিতে বলা হয়েছিলো, চেয়ারম্যানের দুর্নীতি, জালিয়াতি এবং অর্থপাচারের কারণে ব্যাংকের আমানত ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

পরিচালকদের মধ্যে ছিলেন, ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান এম এ কাশেম; আজিম উদ্দিন আহমেদ; দুলুমা আহমেদ, ব্যাংকের বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান; রেহানা রহমান; এবং জুসনা আরা কাশেম।

চিঠিতে তখন আলমগীর কবির, তার সহযোগী ও সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছিলো। এতে আরও বলা হয়েছিলো, আলমগীর কবির গত ১৭ বছর ধরে ব্যাংকের নেতৃত্বে ছিলেন।

যা প্রতিষ্ঠাতা, পরিচালক, কর্মচারী এবং শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে অসন্তোষের জন্ম দেয়। তার একচেটিয়া ক্ষমতার উপর অন্যান্য পরিচালক এবং শেয়ারহোল্ডাররা ‘খুব বিরক্ত’ ছিলেন।

কারণ তার দুর্নীতি ও অনিয়ম আমানতকারীদের অর্থ ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছিল। এছাড়া কবির তার আত্মীয়দের ঋণ দিয়েছেন এবং নিয়ম-কানুনের তোয়াক্কা না করে বর্তমান ঋণের সুদ মওকুফ করেছেন বলেও অভিযোগ করেন পরিচালকেরা।

পরিচালকরা আরও দাবি করেন, কবির অন্য সব পরিচালককে পাশ কাটিয়ে বিভিন্ন ‘অযোগ্য কোম্পানি’কে ঋণ দিয়েছেন এবং ঋণ দেওয়ার জন্য তিনি গ্রাহকদের কাছ থেকে ‘বিশেষ সুবিধা’ নিয়েছেন।

অপরদিকে তার পরিবারের মাধ্যমে পরিচালিত নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান বে লিজিং অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডকে একতরফাভাবে যথেষ্ট ঋণ মঞ্জুর করেছেন।

বে লিজিংয়ের ব্যালেন্স শীটে ৪০০ কোটি টাকার বেশি ঋণ দেখানো হয়নি। এছাড়াও কবিরের এক নিকটাত্মীয়ের মালিকানাধীন লুব-রেফ বাংলাদেশ লিমিটেডকে ব্যাংকটি অবৈধভাবে ৫৪ কোটি টাকার সুদ মওকুফ সুবিধা দিয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়, সাউথইস্ট ব্যাংক ২০২০ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে সুদের আয় দেখিয়েছে ২৮১ কোটি টাকা। তবে প্রকৃত সুদের আয় ছিল ৭৮১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। এখানে ৫০০ কোটি টাকার অনিয়ম হয়েছে।

এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন বিভাগের এক তদন্তে সাউথইস্ট ব্যাংকের শেয়ারজিবাজারে বিনিয়োগ সংক্রান্ত বিভিন্ন অনিয়মের ঘটনা উঠে আসে।

ওই পরিদর্শন প্রতিবেদনে বলা হয়, সাউথইস্ট ব্যাংক চেয়ারম্যান আলমগীর কবিরের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি হলো শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স।

তিনি বীমা কোম্পানিটির একজন উপদেষ্টা। ব্যাংক কোম্পানি আইন লঙ্ঘন করে সাউথইস্ট ব্যাংক দীর্ঘদিন ধরে ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্সের সীমাতিরিক্ত শেয়ার ধারণ করছে।

ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুসারে, একটি ব্যাংক তার মোট মূলধনের ৫ শতাংশের বেশি অর্থ দিয়ে নির্দিষ্ট কোনো কোম্পানির শেয়ার কিনতে পারবে না।

কিন্তু সাউথইস্ট ব্যাংক ব্যাংক কোম্পানি আইনকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে ন্যাশনাল লাইফের শেয়ারে ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধনের ৯.৮৩ শতাংশ অর্থ বিনিয়োগ করে।

অন্যদিকে, বিএসইসির উল্লেখযোগ্য শেয়ার ধারণ বিধি অনুসারে কোনো বিনিয়োগকারী একটি কোম্পানির মোট শেয়ারের ১০ শতাংশের বেশি ধারণ করতে পারে না।

কিন্তু সাউথইস্ট ব্যাংক নিয়ন্ত্রক সংস্থার বিশেষ কোনো অনুমতি ও ঘোষণা ছাড়াই ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ২২.০৫ শতাংশ শেয়ার কেনে।

এসব অনিয়মের কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক সাউথইস্ট ব্যাংককে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করে।

এছাড়া পর্ষদের অনুমোদন বা উপস্থাপন ছাড়াই আলমগীর কবিরের স্বার্থসংশ্লিষ্ট আরেক প্রতিষ্ঠান বিএলআই ক্যাপিটাল লিমিটেডকে সাউথইস্ট ব্যাংক ২০০ কোটি টাকা ঋণ দেয় বলে পরিদর্শন প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

বিএলআই ক্যাপিটাল লিমিটেড হচ্ছে একটি মার্চেন্ট ব্যাংক, যা পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বে লিজিং অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ।

আলমগীর কবির এবং তার ছেলে রাইয়ান কবির বে লিজিংয়ের শেয়ারহোল্ডার।

সাউথইস্ট ব্যাংক ২০১৮ সালে ইএম পাওয়ার নামের একটি কোম্পানির প্লেসমেন্ট শেয়ারে ২২ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে।

এ কোম্পানির ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের শেয়ার ৫ টাকা প্রিমিয়ামসহ ১৫ টাকা করে কেনা হয় বলে বিনিয়োগ হিসাবে দেখানো হয়।

কিন্তু পরিদর্শন প্রতিবেদনে উঠে আসে, প্রিমিয়ামের সাড়ে ৭ কোটি টাকা ইএম পাওয়ারের একাউন্টে জমা হয়নি। এই টাকা প্রিমিয়ামের নামে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে সন্দেহ করা হয়।

পরিদর্শন প্রতিবেদনে উঠে আসা অনিয়মের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক ২০২১ সালে সাউথইস্ট ব্যাংককে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করে।

 

Facebook Comments Box
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ২:৫২ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১০ আগস্ট ২০২৩

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।