মঙ্গলবার ১৯ মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৫ চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

পাল্টে যাচ্ছে ডাক বিভাগের সেবা

  |   শনিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯   |   প্রিন্ট   |   2515 বার পঠিত

পাল্টে যাচ্ছে ডাক বিভাগের সেবা

বাংলাদেশ পোস্ট অফিসের (ডাক বিভাগ) সেবার ধরন পাল্টে যাচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে সরকারি এ প্রতিষ্ঠানটি ই-কমার্স পণ্য ডেলিভারির জন্য নতুন সেবা চালু করেছে। দেশে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ব্যবসার সুযোগ বাড়িয়ে কর্মসংস্থানের জন্য এমন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডাক বিভাগের সংশ্লিষ্টরা। অনলাইনের বাজার শক্তিশালী করার এ উদ্যোগে স্বস্তির নিশ্বাস ই-কমার্স উদ্যোক্তাদের।

বাংলাদশ ডাক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, প্রায় আড়াই বছরের প্রস্তুতির পর এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ডাক বিভাগ প্রতিদিন সারাদেশে বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মের ৫০০ পণ্য ডেলিভারি দিয়ে থাকে। কয়েক মাসের মধ্যে দৈনিক ৫ হাজার ডেলিভারি ছাড়িয়ে যাবে বলেও ধারণা করছে বিভাগটি।

জানা গেছে, ডাক বিভাগ ই-কমার্সের পণ্য ডেলিভারির জন্য আলাদা করে কাউন্টার খুলেছে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জনবল দেয়া হয়েছে এ সেবার জন্য। দেশে পন্য ডেলিভারি দিয়ে অর্থ উপার্জন অনেক বড় মাধ্যম। ডাক বিভাগের আয়ের অন্যতম উৎস হতে পারে এটি।

জানা গেছে, ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) ও বাংলাদেশ ডাক বিভাগের যৌথ উদ্যোগে আজকেরডিল.কম, প্রিয়শপ.কম এবং বাগডুম.কমের বিভিন্ন পণ্য সারাদেশে ডেলিভারি দেয়া হবে।

দেশের অন্যতম ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আজকের ডিল.কম। এই প্ল্যাটফর্মের প্রতিষ্ঠাতা একেএম ফাহিম মাশরুর জানান, প্রতিদিন ডাক বিভাগের মাধ্যমে তারা সারাদেশে শতাধিক পণ্য ডেলিভারি দিচ্ছেন। ডাক বিভাগের সেবার মানও যথেষ্ট সন্তোষজনক। ফাহিম মাশরুর আরও জানান, সেবার মানের অনেক উন্নতি হয়েছে। আর সারাদেশে সার্ভিস চার্জ মাত্র ৩০ টাকা। যেটি কিনা আগের চেয়ে অর্ধেকে নেমেছে।

ই-ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল ওয়াহেদ তমাল জানান, ডাক বিভাগের জনশক্তিকে প্রশিক্ষণের জন্য আজকেরডিল.কম ১০০টি স্মার্টফোন দিয়েছে। উদ্দেশ্য হচ্ছে, কিছু মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে যাতে তারা পণ্যের অবস্থান জানতে পারেন। যাকে ট্র্যাকিং সিস্টেম বলে।

তমাল আরও জানান, মোবাইলের এ সেবা অবশ্য বেসরকারি খাতের ডেলিভারি কোম্পানিগুলোর জন্য নয়। ট্র্যাকিং সিস্টেমের জন্য ই-ক্যাব ইতোমধ্যে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আরও ৪০০টি স্মার্টফোন দেয়ার পরিকল্পনা করেছে।

তিনি বলেন, ‘আমাদের ই-কমার্স শিল্পের জন্য এটি অনেক বড় উদ্যোগ। এখন আমাদের পণ্য ডেলিভারির পরিমাণ দ্বিগুণ কিংবা তিনগুণও হতে পারে। যেসব প্রত্যন্ত অঞ্চলে পণ্য ডেলিভারি দেয়া আমাদের জন্য খুব কঠিন ছিল, ডাক বিভাগের মাধ্যমে এখন তা সহজেই পৌঁছে দেয়া সম্ভব।

ই-ক্যাবের দেয়া তথ্যমতে, ডাক বিভাগের ডেলিভারি খরচ অর্ধেক কমানোয় অনলাইনে অর্ডারের পরিমাণ বেড়েছে। প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠান প্রতিদিন গড়ে সাত শতাধিক পণ্য ডেলিভারি দিচ্ছে।

ডিজিটাল বাণিজ্যের গবেষণা প্রতিষ্ঠান সফটওয়্যার শপ লিমিটেডের (এসএসএল) তথ্যমতে, শুধু ই-কমার্স সেবায় প্রতিদিন ২৫ হাজার অর্ডার আসে। প্রতি মাসে এ অর্ডারের সংখ্যা ১০ শতাংশ হারে বাড়ছে।

ডাক বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, স্থানীয় উদ্যোক্তাদের পণ্য ডেলিভারি দেয়ার জন্য এটি অন্যতম ভূমিকা রাখবে। দেশের আরেকটি বড় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ডাক বিভাগের সঙ্গে কাজ করার জন্য উদ্যোগ নিচ্ছে বলেও জানান তিনি। এই প্রতিষ্ঠানটি বছরে কোটিরও বেশি পণ্য ডেলিভারি দিয়ে থাকে।

দারাজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মুশতাহিদাল হক জানান, পণ্য ডেলিভারি সহজ করার জন্য একটি পাইলট প্রজেক্টের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। এর মাধ্যমে বিপুল সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। ডাক বিভাগের সাড়া পেয়ে তারা সন্তষ্ট বলেও জানান তিনি।

তিনি বলেন, ডাক বিভাগের ব্যয় কম থাকায় আমরা খুব শিগগিরই তাদের সঙ্গে একটি দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতে যাচ্ছি। ই-কমার্সের প্রসারের জন্য আমরা আরও ডাকঘর প্রতিষ্ঠায় ডাক বিভাগের সঙ্গে কাজ করবো।

এদিকে দেশের ডাক ব্যবস্থা আধুনিকায়নের পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে প্রথমধাপে দেশের জীর্ণ পোস্ট অফিস ভবনগুলো সংস্কার করা হচ্ছে। প্রথমধাপে ৬টি বিভাগে ৬টি জিপিও ভবন, ২৪ জেলায় জেলা পোস্ট অফিস ভবন, ঢাকা মহানগর এলাকায় ৮টি এবং রাজশাহী মহানগর এলাকায় ১টিসহ মোট ৯টি সাব পোস্ট অফিস ভবন এবং রাজধানীর বনানীর ডাক জীবনবীমা অফিসের নিজস্ব ভবন নতুন করে নির্মাণ করা হবে।

জানা গেছে, অবিভক্ত ব্রিটিশ-ভারত আমলে এ দেশে গড়ে ওঠে ডাক ব্যবস্থা। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত এর পরিধি। প্রায় ২০০ বছরের পুরনো ডাক বিভাগ সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে অগ্রসর হতে পারেনি। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ ডাক অধিদফতর প্রতিষ্ঠিত হলেও নানা আমলাতান্ত্রিক জটিলতায়আধুনিকায়ন সম্ভব হয়নি। দেশের জনসংখ্যা বেড়েছে। একইসঙ্গে বেড়েছে নতুন বিভাগ, সিটি করপোরেশনের সংখ্যাও। পাশাপাশি দেশের সব মহকুমা জেলায় উন্নীত হয়েছে। বিশেষ করে, শহর এলাকার জনগণ কয়েকগুণ বেড়েছে। কিন্তু ডাক অধিদফতরের অবকাঠামো সে হারে উন্নয়ন বা সম্প্রসারিত হয়নি। বর্তমানে দেশের ৮টি বিভাগের মধ্যে ৪টি বিভাগে জিপিও ভবন রয়েছে।

দেশের জেলা শহরগুলোয় পুরোনো ডাকঘরগুলোকেই জেলা ডাকঘর হিসেবে ব্যবহার করতে হচ্ছে। অন্যদিকে ডাক অধিদপ্তর বিভিন্ন ডাক সেবার পাশাপাশি এজেন্সি সেবা হিসেবে অর্থ বিভাগের কতিপয় আর্থিক সেবা, যেমন- ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংক, ডাকঘর সঞ্চয়পত্র, ডাক জীবন বীমা সেবা ইত্যাদি প্রদান করছে। বর্তমানে ডাক জীবন বীমা পলিসি গ্রহণকারীর সংখ্যা ২ লাখেরও বেশি, যা প্রতি বছর বাড়ছে। কিন্তু বীমা গ্রহণকারীদের উন্নত ও দ্রম্নত সেবা প্রদানের জন্য অধিদপ্তরের এখন পর্যন্ত কেন্দ্রীয় অবকাঠামো সুবিধা নেই।

আধুনিক যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার ব্যবহার বাড়ায় ডাক সেবা খাতে সাধারণ চিঠিপত্র কমে গেছে। তবে ই-কমার্সের জনপ্রিয়তা বাড়ায় দেশে এবং বিদেশে পার্সেল ও লজিস্টিক পরিবহন সেবার পরিধি বেড়েছে। কিন্তু ডাক অধিদফতরের বিদ্যমান পুরনো ডাকঘরগুলোয় বিভিন্ন আকৃতির ও ওজনের পার্সেল ও লজিস্টিক গ্রহণ, প্রসেসিং ও বিতরণের প্রয়োজনীয় স্পেস নেই।

এবার ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় জোরেশোরেই আধুনিকায়নে কাজ শুরু করেছে। প্রথম পর্যায়ে ডাক অধিদপ্তর দেশের প্রায় ২ হাজার ৮৭৯টি জরাজীর্ণ নিজস্ব ভবন সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, জরাজীর্ণ পোস্ট অফিস ভবন সংস্কার সংক্রান্ত একটি প্রকল্প একনেকের অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়। প্রকল্প প্রস্তাবনায় উল্লেখ, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ ডাক অধিদফতরের নিজস্ব জমিতে সিলেট, কুমিল্লা, বরিশাল, ময়মনসিংহ বিভাগীয় সদরসহ কুমিলস্না সিটি করপোরেশন ও ফরিদপুর জেলা সদরে জিপিও ভবন, জরুরি ভিত্তিতে ২৪ জেলায় জেলা ডাকঘর, ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় ৮টি এবং রাজশাহী মেট্রোপলিটন এলাকায় ১টি উপ-ডাকঘরসহ বনানীতে ডাক জীবন বীমা ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

Facebook Comments Box
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ১:৫২ অপরাহ্ণ | শনিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

রডের দাম বাড়ছে
(11156 বার পঠিত)

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০৩১  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।