শুক্রবার ২৯ মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

স্ববিরোধী নীতির কারণে বাস্তবায়ন হচ্ছে না সিঙ্গেল ডিজিট

আদম মালেক   |   সোমবার, ১৭ জুন ২০১৯   |   প্রিন্ট   |   539 বার পঠিত

স্ববিরোধী নীতির কারণে বাস্তবায়ন হচ্ছে না সিঙ্গেল ডিজিট

বারবার তাগাদা দেয়া সত্ত্বেও ব্যাংক ঋণের সুদহার সিঙ্গেল ডিজিটে নেমে আসেনি। প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার হুশিয়ারিও কোনো সুফল বয়ে আনেনি। তবে এর জন্য সরকারের স্ববিরোধী নীতিকে দায়ী করছেন ব্যাংকাররা।

তাদের দাবি, সরকার একদিকে সিঙ্গেল ডিজটে ঋণ দানের কথা বলছে অন্যদিক সরকার নিজেই ডাবল ডিজিটের মাধ্যমে সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে আমানত সংগ্রহ করছে। আবার সরকারী প্রতিষ্ঠন থেকেও ডাবল ডিজিটের নিচে আমানত পাওয়া যায় না। তার ওপর রয়েছে ঋণ খেলাপিদের দৌরাত্ম। তাদের বিরুদ্ধেও হার্ডলাইনে যাচ্ছে না সরকার। এজন্য ব্যাংকের ঋণের সুদহার সিঙ্গেল ডিজিট বাস্তবায়নে ব্যাংকগুলোর সঙ্গে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার ম সমন্বয় ও সহযোগিতার প্রয়োজন মনে করেন তারা।
ব্যাংক সংশ্লিষ্টদের দাবি, সিঙ্গেল ডিজিটে ঋণ দেয়াতো দূরের কথা সিঙ্গেল ডিজিটে আমানতও সংগ্রহ করা যায় না। আমানতের সুদহার অনেক বেশী। তারল্য সঙ্কটের কারণে ব্যাংকগুলোর মধ্যে আমানত সংগ্রতে চরম প্রতিযোগিত। এজন্য সরকারী প্রতিষ্ঠান থেকে আমানত সংগ্রহ করতে গেলেও ১২ শতাংশ পর্যন্ত সুদ গুণতে হয়। এদিকে সরকার সিঙ্গেল ডিজিটে ব্যাংক ঋণ দেয়ার কথা বললেও ১১.৫ শতাংশ হারে সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে ঋণ সংগ্রহ করছে। এই অসঙ্গত নীতিও ঋণ কার্যক্রম পরিচালনায় সিঙ্গেল ডিজিট বাস্তবায়নকে বাধাগ্রস্থ করছে বলে ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা জানান।

এনআরবি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মেহমুদ হোসেন বলেন, সিঙ্গেল ডিজিট বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অবশ্যই পালনীয়। তবে এক্ষেত্রে কিছু সমস্যা আছে। বেসরকারী ব্যাংকগুলো সিঙ্গেল ডিজিটে আমানত সংগ্রহ করতে পারে না। সরকারী প্রকল্প থেকে আমানতের জন্যও বেসরকারী ব্যাংকগুলোকে চড়া সুদ দিতে হয়। তাই সরকারের সকল সংস্থার মধ্যে সমন্বয় আনতে হবে। সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সহযোগিতার হাত প্রসারিত করতে হবে। সঞ্চয়পত্রের দিকেও সরকারের মনযোগ বাড়াতে হবে। পেনশনারদের আড়ালে অন্য কেউ অতিমাত্রায় সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করলে তা প্রতিরোধ করতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়শনের সভাপতি ও ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রী চাইলে ব্যাংকগলোকে সিঙ্গেল ডিজিট বাস্থবায়ন করতেই হবে। তবে এটি দুরহ। উচ্চ মূল্যে ব্যাংকগুলোকে আমানত সংগ্রহ করতে হয়। সরকারী প্রতিষ্ঠানের আমানতের জন্যও আমাদের ১২ শতাংশ পর্যন্ত সুদ দিতে হয়। এ অবস্থায় সিঙ্গেল ডিজিট বাস্তবায়ন করতে গেলে ব্যাংকগুলোকে লোকসানে পড়তে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দেশের ৫৭টি ব্যাংকের মধ্যে ৫৪টিই এখনো দুই অঙ্কে সুদ নিচ্ছে। এর মধ্যে শিল্পপ্রতিষ্ঠানে দেয়া ঋণের বিপরীতে ১৫ শতাংশেরও বেশি হারে সুদারোপ করছে কোনো কোনো ব্যাংক। সরকারি- বেসরকারি মিলে মাত্র তিনটি ব্যাংক ঋণের বিপরীতে সুদহার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে এনেছে। এর মধ্যে রয়েছে— একটি বেসরকারি ব্যাংক, একটি বিশেষায়িত খাতের ব্যাংক ও একটি বিদেশি খাতের ব্যাংক। ২০১৯ সালের মার্চ মাসের তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বেসরকারি খাতের এনআরবি গেøাবাল ব্যাংক ঋণে ৯ শতাংশ হারে সুদারোপ করেছে। এছাড়া সরকারি খাতের বিশেষায়িত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ও বিদেশি খাতের সিটি ব্যাংক এনএ ৯ শতাংশ হারে সুদ নিচ্ছে। বাকি সব ব্যাংক এখনো গ্রাহকদের ডাবল ডিজিট (দুই অঙ্কে) সুদে ঋণ দিচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, রপ্তানি খাতে ৭ শতাংশ ও কৃষিতে ৯ শতাংশ সুদে ঋণ বিতরণ করছে ব্যাংকগুলো। তবে এসএমই ঋণ, ভোক্তা ঋণ, গৃহ ঋণ, ট্রেডিংসহ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণ করছে ১৬ থেকে ১৮ শতাংশ হারে। গত ফেব্রæয়ারি মাসে ৩১টি ব্যাংক তাদের ঋণের গড় সুদহার বাড়িয়েছে। আগের মাসে (জানুয়ারি) ঋণের সুদহার বাড়িয়েছিল ২৮টি ব্যাংক। আর ডিসেম্বরে এ সংখ্যা ছিল ২৭টি। অর্থাৎ প্রতি মাসে ঋণের সুদহার বাড়ানো ব্যাংকের তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে। গত ফেব্রæয়ারিতে যেসব ব্যাংক ঋণের সুদহার বাড়িয়েছে তার মধ্যে বেসরকারি ব্যাংকই রয়েছে ২১টি। এছাড়া, বিদেশি ছয়টি, রাষ্ট্রায়ত্ত দুটি ও বিশেষায়িত একটি ব্যাংক রয়েছে এ তালিকায়।

একাধিক ব্যাংকার বলেন, ডাবল ডিজিট সুদে আমানত সংগ্রহ করে সিঙ্গেল ডিজিটে ঋণ বিতরণ করা মানেই ব্যাংককে লোকসানের দিকে নিয়ে যাওয়া। খেলাপি ঋণ বাড়ার কারণে ঋণের সুদহার এক অঙ্কে নামানো সম্ভব হচ্ছে না। তারা বলছেন, বর্তমানে ১২ শতাংশ হারেও আমানত নিতে হচ্ছে। ১০ শতাংশের কমে কোনো সরকারি আমানত পাওয়া যাচ্ছে না। তাহলে কীভাবে সিঙ্গেল ডিজিটে ঋণ দেবে ব্যাংক। কম সুদে সরকারি আমানত যদি পাওয়া যায়, তাহলে কম সুদে ঋণ দেওয়া সম্ভব।

Facebook Comments Box
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ১০:৪৫ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ১৭ জুন ২০১৯

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

রডের দাম বাড়ছে
(11169 বার পঠিত)

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০৩১  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।