বিবিএনিউজ.নেট | বুধবার, ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯ | প্রিন্ট | 430 বার পঠিত
ভারতের আসামে চূড়ান্ত নাগরিক তালিকা (এআরসি) প্রকাশিত হওয়ার পর বের হয়ে এসেছে এমন এক পরিবারের নাগরিকত্ব না পাওয়ার ঘটনা, যারা চার প্রজন্ম ধরে ভারতের সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়ে সে দেশের সেবা করে যাচ্ছেন। একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে আরো বহু পরিবারের ক্ষেত্রে।
দীর্ঘদিন ভারতের সেবা করেও ‘দেশহীন’ হয়ে পড়া বাঙালি, নেপালি পরিবারগুলো রাজনৈতিক কারো ওপরেই আস্থা রাখতে পারছে না। চার প্রজন্ম ধরে সেনাবাহিনীতে থাকার পরেও এনআরসি তালিকাবঞ্চিত হিসেবে জুটেছে দেশহীনের তকমা। সামরিক পদক ফেরানোর কথা ভাবছেন তাঁরা। স্বজনের বলিদানের বিনিময়ে পাওয়া জাতীয় শহীদের স্মারক নিয়েই বা কী করবেন বুঝছেন না অনেকে।
আসামের মন্ত্রীরা ভরসা দিচ্ছেন, যতক্ষণ নরেন্দ্র মোদী আছেন, অমিত শাহ আছেন, ততক্ষণ হিন্দুদের দেশহীন হওয়ার আশঙ্কা নেই। কিন্তু পরিস্থিতি যা দেখা যাচ্ছে, তাতে কারো ওপরেই ভরসা রাখতে পারছেন না তারা। এ অবস্থায় রাজ্যের শাসক দলের নেতারা বলছেন, এনআরসি পুনর্মূল্যায়নের দাবি ফের তুলবে রাজ্য সরকার।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত জওয়ান ধেমাজির শিলাপথারের বাসিন্দা দলবাহাদুরের লজ্জা আরও বেশি। কারণ তাঁর বাবা-মা থেকে নাতি-নাতজামাইয়ের নিয়ে পরিবারের মোট ১৩ জন সামরিক বাহিনীতে আছেন বা ছিলেন। কিন্তু তার পরেও তাঁর নিজের ও অনেকেরই নাম এনআরসিতে নেই। তাঁর বাবা শ্বেত বাহাদুর কামি ছিলেন ব্রিটিশ আমলের সেনাবাহিনীতে। কিন্তু গোমাংস খাওয়ার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে তিনি ১৯৪০-এর দশকে চাকরি খোয়ান। দেশ স্বাধীন হলে ফের কাজে যোগ দেন শ্বেতবাহাদুর। তাঁর স্ত্রী ভুবেশ্বরী কামি ছিলেন সেনাবাহিনীর নার্স। শ্বেতবাহাদুরের পাঁচ ছেলে ও পাঁচ জামাই সেনাসদস্য। দুই নাতি ও এক নাতজামাইও সেনাবাহিনীতে কর্মরত। কিন্তু এমন পরিবারের সিংহভাগ সদস্যের নাম না-আসায় ধেমাজিবাসী বিস্মিত। পরিবারের সদস্যরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সরকারের দেওয়া সব পদক ফেরত দেবেন।
১৯৭০ সালে ভারতের বিমান বাহিনীতে যোগ দেন তেজপুরের অবিনাশচন্দ্র দেব। সংগ্রাম পদকসহ তিনটি পদক পেয়েছেন তিনি। তাঁর সেই যোগ দেওয়ার নথিই যথেষ্ট ভেবে নিয়ে ছেলে অজয় দেব তা জমা দেন। কিন্তু প্রথম তালিকায় নাম আসেনি মরাভারলির বাসিন্দা দেব পরিবারের। ছোট মেয়ে অঞ্জনাদেবীর স্বামী বিপ্লব দাস বলেন, পরিচিতির সূত্র ধরে এনআরসির এক কর্মীর কাছে জানতে পারি, আমার স্ত্রীর বার্থ সার্টিফিকেটে সিলমোহর স্পষ্ট নয় বলে নাম বাদ পড়েছে। ফের সব নথি, পেনশনের কাগজ দেওয়ার পরেও অবিনাশবাবুর তিন ছেলেমেয়ে এবং অজয় ও অনিতার ছেলেমেয়েদের নাম তালিকায় ওঠেনি। অবিনাশবাবুর বাড়িতে ঝুলতে থাকা গর্বের তিনটি পদক এখন ছেলেমেয়েদের কাছে অর্থহীন মনে হচ্ছে।
ভারত স্বাধীন হওয়ার পরের বছর যোরহাটের চিত্তরঞ্জন চট্টোপাধ্যায় সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন। তাঁর পরিবারেরও নাম নেই এনআরসিতে।
আসাম আন্দোলনে মারা যাওয়া ভারতের ‘জাতীয় শহীদ’ মদন মল্লিকের নাম সন্দেহজনক ভোটার তালিকায় ঢোকানোয় তাঁর পরিবার যেমন খসড়াছুট, তেমনই, ছয়গাঁওয়ের ঢেকেনাবড়ির বাসিন্দা আর এক ‘জাতীয় শহীদ’ মৃণল ভৌমিকের পরিবারের ছয় জনের নামও এনআরসি থেকে বাদ পড়েছে। সরকারি স্মারক ও ৫ লাখ টাকা পাওয়া পরিবারটি বুঝতেই পারছে না কেন বিদেশিমুক্ত আসাম গড়তে প্রাণ দেওয়া জাতীয় শহীদের নামও তালিকা থেকে বাদ পড়ল।
শিলাপথার নগরের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত জ্যোতিষ দাসের ছেলে, গবেষক উত্তম দাস, স্ত্রী মিনতি দাস ও তাঁদের পরিবারের ১১ জনের নাম এনআরসিতে খারিজ হয়েছে।
এসব বিষয় নিয়ে গণমাধ্যমকর্মীরা আসামের পূর্ত স্বাস্থ্য ও অর্থমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মাকে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, এই তালিকায় ভয় পাওয়ার কিছু নেই। প্রধানমন্ত্রী ও অমিত শাহ আছেন। সব বিদেশির নাম বাদ ও ভারতীয়দের নাম না-ঢোকা পর্যন্ত তালিকা চূড়ান্ত নয়।
হিমন্তবিশ্ব শর্মা আরো বলেন, এনআরসি পুনর্মূল্যায়নের দাবি ফের তুলবে রাজ্য সরকার। এ নিয়ে তিনি আসু, আসাম পাবলিক ওয়ার্কস ও অন্য সব সংগঠনকে হাত মেলানোর ডাক দেন তিনি। সূত্র: আনন্দবাজার
Posted ১:০৪ অপরাহ্ণ | বুধবার, ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯
bankbimaarthonity.com | Sajeed