শনিবার ২৩ নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৮ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

Ad
x

নতুন উদ্যোক্তারা পাচ্ছেন না প্রত্যাশিত ঋণ

বিবিএনিউজ.নেট   |   বুধবার, ১১ ডিসেম্বর ২০১৯   |   প্রিন্ট   |   419 বার পঠিত

নতুন উদ্যোক্তারা পাচ্ছেন না প্রত্যাশিত ঋণ

পশুখাদ্য উৎপাদনে বিনিয়োগের জন্য একটি বেসরকারি ব্যাংকে ১ কোটি টাকার ঋণ আবেদন করেছিলেন ইকবাল হোসেন। শাখা থেকে সুপারিশসহ ঋণের সে আবেদন এসেছিল প্রধান কার্যালয়ে। কিন্তু বছরব্যাপী ব্যাংকে ঘুরেও ঋণ অনুমোদন করাতে পারেননি তিনি। বগুড়ার এ উদ্যোক্তার বক্তব্য, কাগজপত্র ঠিক থাকলেও তারল্য সংকটে ঋণ দিতে পারেনি ব্যাংক।

রাষ্ট্রায়ত্ত একটি ব্যাংকে ২ কোটি টাকার ঋণ আবেদন করেছিলেন তেজগাঁওয়ের কামাল উদ্দিন। নুর পোলট্রি নামের ওই প্রতিষ্ঠানটিকে ঋণ দেয়ার জন্য শাখা থেকে সুপারিশও করা হয়েছিল। কিন্তু বছরব্যাপী ব্যাংকারদের পেছনে ঘুরেও সে ঋণ অনুমোদন করাতে পারেননি তিনি। ব্যাংকারদের বক্তব্য হলো, কামাল উদ্দিনের জামানতের নথিপত্রে ঘাটতি আছে। যদিও কামাল উদ্দিনের দাবি, কাগজপত্র ঠিক থাকার পরও ঋণ পাননি তিনি।

জানা গেছে, উৎপাদন খাতে নতুন উদ্যোক্তার ঋণ অনুমোদন নেই বললেই চলে। যেসব আবেদন আসছে, শর্তের বেড়াজালে পড়ে সেগুলো বাতিল হয়ে যাচ্ছে। পুরনো উদ্যোক্তারাও মেয়াদি ঋণ পাচ্ছেন না ব্যাংক থেকে। এজন্য অফশোর ব্যাংকিং থেকে ঋণ নিচ্ছেন তারা।

এদিকে বিশেষ সুবিধা ঘোষণার পর ঋণখেলাপিরা নামমাত্র ডাউন পেমেন্ট দিয়ে পুনঃতফসিল সুবিধা নিচ্ছেন। পুনঃতফসিলের পর পাচ্ছেন গ্রেস পিরিয়ড। ঋণখেলাপিরা বেশি সুবিধা পাচ্ছেন—এমন যুক্তিতে অনেক নিয়মিত গ্রাহকও ঋণের সুদ পরিশোধ বন্ধ রাখছেন। এতে ব্যাংকগুলোর ব্যালান্সশিটে প্রতিনিয়ত সুদ যুক্ত হচ্ছে। সুদের এ প্রবৃদ্ধিকেই ব্যাংকগুলো বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি হিসেবে দেখাচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

গত এক বছরে প্রথম প্রজন্মের একটি বেসরকারি ব্যাংকের ঋণ বেড়েছে ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা। ব্যাংকটি ঋণের প্রবৃদ্ধি দেখাচ্ছে প্রায় ৫ শতাংশ। যদিও গত এক বছরে ব্যাংকটি বিশেষ অনুরোধের কিছু গ্রাহক ছাড়া নতুন কোনো ঋণই বিতরণ করেনি। বিতরণকৃত ঋণের সুদ আদায় না হওয়ায় তা ঋণের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে।

গত এক বছরে উল্লেখ করার মতো নতুন কোনো উদ্যোক্তাকে ঋণ দেয়নি বেসরকারি খাতের ঢাকা ব্যাংক লিমিটেডও। এ সময়ে ব্যাংকটির শীর্ষ নির্বাহীর দায়িত্বে ছিলেন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহবুবুর রহমান। সম্প্রতি মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের এমডি পদে যোগ দেয়া এ ব্যাংকার বলেন, গত এক বছরে আমরা নতুন কোনো উদ্যোক্তা থেকে ঋণ প্রস্তাবই পাইনি। এ সময় ঢাকা ব্যাংক থেকে যেসব নতুন ঋণ বিতরণ হয়েছে, তার বেশির ভাগই সরকারি অবকাঠামো নির্মাণ খাতের। ঠিকাদারদের ওয়ার্ক অর্ডারের বিপরীতে আমরা ঋণ দিয়েছি। শিল্প খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধিও সেভাবে হয়নি। উৎপাদন খাতে নতুন ঋণের প্রস্তাবও সেভাবে পাইনি। তবে পুরনো গ্রাহকদের কিছু ঋণ দেয়া হয়েছে।

সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, যুক্ত হওয়া সুদই বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি কিনা, সেটি নিশ্চিত নই। তবে এটি নিশ্চিত, বেসরকারি খাতে নতুন কোনো উদ্যোক্তা নেই বললেই চলে। তাছাড়া তারল্য সংকটের কারণেও আমাদের ঋণ বিতরণে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়েছে। ঋণ শ্রেণীকরণের সময়ও দীর্ঘ করা হয়েছে। এ কারণে নিয়মিত গ্রাহকরাও এখন ১৮০ দিন পর্যন্ত ঋণের কিস্তি পরিশোধ না করে সুযোগ নিচ্ছেন। তার বাইরে খেলাপি ঋণের সুদ তো আছেই। এভাবেই সুদ যুক্ত হয়ে ব্যাংকের ব্যালান্সশিট বড় হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০১৮ সালের অক্টোবর থেকে চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ১০ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। গত এক-দুই দশকে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধিতে এতটা খরা দেখা যায়নি। সর্বশেষ ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছিল ১১ দশমিক ৩২ শতাংশ। সেটিও ছিল এক দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন ঋণ প্রবৃদ্ধি।

বেসরকারি খাতে দৃশ্যমান ঋণ প্রবৃদ্ধি প্রকৃত ঋণ প্রবৃদ্ধি নয় বলে মনে করেন সাউথইস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. কামাল হোসেন। তিনি বলেন, বিবিএস কেবলসের মতো প্রতিষ্ঠানও ঋণ পুনঃতফসিলের জন্য আবেদন করছে। এ প্লাস রেটিংধারী প্রতিষ্ঠানও যদি ঋণ পুনঃতফসিল করতে চায়, তাহলে আমরা কাকে ঋণ দেব। ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে কেউই ফেরত দিচ্ছে না। তারা বলছেন, ব্যাংক থেকে টাকা নিলে ফেরত দিতে হয় না। এজন্য নতুন ঋণ দেয়া বন্ধ রেখেছি।

কামাল হোসেনের মতে, ব্যাংকগুলো বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির যে পরিসংখ্যান দিচ্ছে, তা ঋণের সঙ্গে যুক্ত হওয়া সুদের পরিসংখ্যান। অনাদায়ী সুদকে ঋণের প্রবৃদ্ধি হিসেবে দেখানো হচ্ছে। বেসরকারি খাতে ঋণের যে প্রবৃদ্ধি দেখানো হচ্ছে, তা প্রকৃত প্রবৃদ্ধি নয়।

চলতি অর্থবছরের জন্য ঘোষিত মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হয়েছে ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ। যদিও অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) লক্ষ্যের ধারেকাছেও যেতে পারেনি ব্যাংকগুলো। প্রথম চার মাসে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ১ দশমিক ৫৫ শতাংশ। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির খরার সময়েও প্রথম চার মাসে ২ দশমিক ৭৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল।

বেসরকারি খাতে নতুন উদ্যোক্তা একেবারেই নেই বলে জানান অন্তত ১০টি ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীসহ কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, উৎপাদন খাতে গত এক-দুই বছরে নতুন কোনো উদ্যোক্তা আসেননি। যারা এসেছেন, শর্তের বেড়াজালে পড়ে তারাও ঋণবঞ্চিত হয়েছেন। ঋণখেলাপিদের বড় ছাড় দেয়ার কারণে নিয়মিত গ্রাহকরাও টাকা দেয়া বন্ধ করেছেন। অনাদায়ী সুদ যুক্ত হয়ে ব্যাংকগুলোর ব্যালান্সশিট বড় হচ্ছে। এতে ব্যাংকের দৈনন্দিন লেনদেনও অনেক কমে এসেছে। ফলে নতুন করে ঋণ না দিয়ে ঋণ আদায়ে বেশি মনোযোগী হয়েছে ব্যাংকগুলো।

ঋণ বিতরণের চেয়ে এসএমই ও শিল্পে মেয়াদি ঋণের আদায়ও বেড়েছে। চলতি বছরের জুন পর্যন্ত এসএমই খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ। একই সময়ে শিল্পে মেয়াদি ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১০ দশমিক ৩৯ শতাংশ। যদিও একই সময়ে ব্যাংকগুলোর আদায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২১ দশমিক ৩৯ শতাংশ।

Facebook Comments Box
top-1
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ১:৪৪ অপরাহ্ণ | বুধবার, ১১ ডিসেম্বর ২০১৯

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
প্রকাশক : সায়মুন নাহার জিদনী
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।