নিজস্ব প্রতিবেদক | বৃহস্পতিবার, ১৬ জুলাই ২০২০ | প্রিন্ট | 485 বার পঠিত
শেয়ারবাজার ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন বাজারে পণ্যের বৈচিত্র্যতা আনয়নে ২০১৯ সালে (অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ড) বিধিমালা, ২০১৯ অনুমোদন দিয়েছেন৷
এতে অতালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজ যেমন-অতালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার, যে কোন ধরনের বন্ড, ডিবেঞ্চার, সুকুক, বে-মেয়াদী মিউচ্যুয়াল ফান্ড এবং বিকল্প বিনিয়োগ তহবিল নির্ধারিত শর্ত সাপেক্ষে এ বোর্ডে অন্তর্ভুক্তির সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে এবং সব ধরনের তালিকাচ্যুতি সিকিউরিটিজ এবং ওটিসি মার্কেটে থাকা কোম্পানি নির্ধারিত শর্ত পূরণ সাপেক্ষে এ বোর্ডে অন্তর্ভূক্তিরও সুযোগ তৈরী হয়েছে৷
অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ড বিধিমালা, ২০১৯ এর আওতায় ১৪ জুলাই ২০২০ তারিখে বাংলাদেশ একাডেমি ফর সিকিউরিটিজ মার্কেট (বিএএসএম) এবং ডিএসই ট্রেনিং একাডেমি কর্তৃক আয়োজিত “বিকল্প ট্রেডিং বোর্ডের (এটিবি) কার্যক্রম ও সম্ভাবনা” এর উপর এক অনলাইন ট্রেনিং অনুষ্ঠিত হয়৷
এতে অংশগ্রহণ করেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ও চট্রগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ, বিভিন্ন মার্চেন্ট ব্যাংক ও ইস্যুয়ার কোম্পানি এবং সিডিবিএল এর প্রতিনিধিবৃন্দ৷
বিএসইসি’র পরিচালক ও বিএএসএম এর অতিরিক্ত মহাপরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম এর সঞ্চালনায় ট্রেনিং প্রোগ্রামে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডিএসই’র প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা এম. সাইফুর রহমান মজুমদার৷
মূল প্রবন্ধে মজুমদার অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ডের লিস্টিং ফি, তালিকাভুক্তির যোগ্যতা, আবেদন প্রক্রিয়া, সিকিউরিটিজ ক্রয় বিক্রয় এবং সম্ভাবনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন৷ এসময় তিনি বলেন, রেগুলেশনস অনুযায়ী অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ডে ব্যবসায়ের সুবিধা পেতে তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজ বা তালিকাচ্যুত সিকিউরিটিজের জন্য নির্দিষ্ট ফরমে এক্সচেঞ্জে আবেদন করতে পারবে৷
এক্সচেঞ্জ এই জাতীয় আবেদন প্রাপ্তির ৩০ (ত্রিশ) কার্যদিবসের মধ্যে আবেদন গ্রহণ বা প্রত্যাখ্যান করবে৷ তিনি আরো বলেন, অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ড কার্যকর হলে জিডিপিতে পুঁজিবাজারের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি, এক্সচেঞ্জের রাজস্ব বৃদ্ধি; সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধি, প্রতিষ্ঠানসমূহের দৃশ্যমানতা নিশ্চিতকরণ, কর্পোরেট গভর্ন্যান্স অনুশীলন নিশ্চিত করা, ব্যয় ছাড়াই বিপণন এবং বৈদেশিক বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে৷
পরে প্যানেল আলোচনায় আংশগ্রহণ করেন বিএসইসি’র নির্বাহী পরিচালক ও বিএএসএম এর মহাপরিচালক মোঃ মাহবুবুল আলম, ডিএসই ব্রোকারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এর প্রেসিডেন্ট শরীফ আনোয়ার হোসেন এবং সিডিবিএল এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক শুভ্র কান্তি চৌধুরী।
বিএসইসি’র নির্বাহী পরিচালক মোঃ মাহবুবুল আলম বলেন, বিনিয়োগের জন্য প্রধান ৩টি বিষয় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ৷ আর তা হলো নিরাপত্তা, তারল্য ও প্রবৃদ্ধি৷ এটিবিতে অনেক কোম্পানি থাকার কারণে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের বিকল্প বাড়বে৷ যারা বিশ্লেষণ করে বিনিয়োগ করতে পারবে তারাই মূলতঃ এখানে বিনিয়োগ করবে৷ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী এবং অধিক সম্পদশালী ব্যক্তির অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ডে তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজে বিনিয়োগে উৎসাহিত করা উচিত৷
তিনি আরো উল্লেখ করেন যে, ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের এটিবি’র সিকিউরিটিজে বিনিয়োগে উৎসাহিত না করাই ভালো৷ কারণ হলো এটিবিতে তালিকাভুক্ত ডেট ও ইক্যুইটি সিকিউরিটিজে ঝুঁকির পরিমান মেইন বোডের তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজের চেয়ে অনেকটাই বেশী৷ আর এই বোর্ডে বিনিয়োগ ঝুঁকি বেশী থাকার কারণে শুধুমাত্র বৃহৎ বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে হবে। আর এই বোর্ড সফল করার জন্য এক্সচেঞ্জগুলোকে সক্রিয়ভাবে প্রচারণামূলক কার্যক্রম ও সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে৷
তিনি এটিবিতে তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজে ব্রোকারেজ কমিশন, লিস্টিং ফি এবং সিডিবিএল চার্জ কম ধার্য করার জন্য অনুরোধ করেন৷
ডিএসই ব্রোকারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এর প্রেসিডেন্ট শরীফ আনোয়ার হোসেন বলেন, বর্হিবিশ্বের বিভিন্ন পুঁজিবাজারে দেখা যায় যে, বিদ্যমান ইক্যুইটির বাজারে বাইরে, বিকল্প বাজার সৃষ্টির ব্যাপক সুযোগ রয়েছে৷ যার মাধ্যমে এক্সচেঞ্জের লেনদেন এবং মুনাফা বৃদ্ধির সুযোগ রয়েছে৷ বর্তমানে বাংলাদেশে এক লাখের বেশি নিবন্ধিত কোম্পানি রয়েছে, যার শেয়ার মূল্য নির্ধারনের এবং লেনদেনের জন্য কোন প্লাটফর্ম নেই৷ উক্ত কোম্পানিগুলো অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ডে তালিকাভুক্ত হয়ে শেয়ার লেনদেন এবং মূল্য নির্ধারন করতে পারবে৷ অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ড চালু হলে অনেক নতুন বিনিয়োগকারী বাজারে আসবে৷ আর এখানে সবচেয়ে বেশী খেয়াল রাখতে হবে কমপ্লায়েন্স৷ যদি প্রয়োজনীয় সকল নিয়ম কানুন সঠিকভাবে পালন করা যায় তাহলে বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়বে এবং বাজার আরো বেশী সম্প্রসারিত হবে৷
সিডিবিএল এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক শুভ্রকান্তি চৌধুরী বলেন, পুঁজিবাজার উন্নয়নের জন্য অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ড একটি সময়োপযোগী পদক্ষেপ৷ করোনা মহামারীর কারণে সমগ্র বিশ্বের সাথে দেশের অর্থনীতি মন্দা আসার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। আর এই মন্দা থেকে মুক্তির উপায় হলো প্রণোদনা প্রদানের মাধ্যমে ক্ষুদ্র ও মাঝারী কোম্পানির উৎপাদন বৃদ্ধি করা। দেশে অনেক ছোট কোম্পানি ভাল ব্যবসা করছে। এই কোম্পানিগুলোকে এটিবিতে তালিকাভুক্ত করা গেলে বিনিয়োগকারীগণ মানসম্পন্ন কোম্পানিতে বিনিয়োগের সুযোগ পাবে। এতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি এবং বিনিয়োগকারী উভয় উপকৃত হবে।
প্যানেল আলোচন্রা শেষে অংশগ্রহণকারীদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন বিএসইসি’র পরিচালক ও বিএএসএম এর অতিরিক্ত মহাপরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম এবং ডিএসই’র প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা এম. সাইফুর রহমান মজুমদার৷ এসময় উপস্থিত ছিলেন ডিএসই’র সিনিয়র ম্যানেজার এবং ডিএসই ট্রেনিং একাডেমির ইনচার্জ মুহাম্মদ রনি ইসলাম।
Posted ২:৫০ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৬ জুলাই ২০২০
bankbimaarthonity.com | saed khan