| সোমবার, ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ | প্রিন্ট | 2141 বার পঠিত
চট্টগ্রামভিত্তিক বাদশা শিল্পগ্রুপের এমডি মোহাম্মদ ইসা বাদশা, যিনি মিডল্যান্ড ব্যাংক লিমিটেডের একজন উদ্যোক্তা পরিচালক। পাশাপাশি ব্যাংকটির অডিট কমিটির সদস্য। নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামে ইস্টার্ন ব্যাংক থেকে ২০১৩ ও ২০১৪ সালে ঋণ সুবিধা নেন তিনি। কিন্তু সময়মতো পাওনা পরিশোধে ব্যর্থতায় ব্যাংকটির খেলাপি তালিকায় উঠে এসে তার নাম। তার কাছে পাওনা ১৫৬ কোটি টাকা। এজন্য নিলামে উঠছে ইসা বাদশার বন্ধকি সম্পত্তি।
ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড সূত্রে জানা যায়, মোহাম্মদ ইসা বাদশার মালিকানাধীন দুটি প্রতিষ্ঠান এমএম ইন্টারপ্রাইজ ও ঝুমা এন্টারপ্রাইজের নামে ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড আগ্রাবাদ শাখা থেকে নেওয়া ঋণ এখন খেলাপি। প্রতিষ্ঠান দুটির কাছ থেকে ব্যাংকটির গত ২১ জানুয়ারি পর্যন্ত পাওনা ১৫৬ কোটি ৩৭ লাখ ৯৮ হাজার টাকা। এর মধ্যে রয়েছে এমএম এন্টারপ্রাইজের ৩৩ কোটি ৫১ লাখ ১৭ হাজার টাকা ও ঝুমা ইন্টারপ্রাইজের ১২২ কোটি ৮৬ লাখ ৮১ হাজার টাকা।
খেলাপি ঋণের পাওনা আদায়ে চট্টগ্রামের পাথরঘাটার ১৬ দশমিক ৯৪ ডেসিমেল জমি ও এর ওপর পাঁচতলা ভবন ইজারা রাখা হয়েছে। আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ জমি ও ভবনের নিলাম অনুষ্ঠিত হবে।
এ বিষয়ে বাদশা শিল্পগ্রুপের এমডি মোহাম্মদ ইসা বাদশার মালিকাধীন ব্যবসায়িক অফিসে গিয়ে যোগাযোগ করা হলে অফিস থেকে জানানো হয়, তিনি দেশে নেই। তার ফোনে যোগাযোগ করা হলে সংযোগটি বন্ধ পাওয়া যায়।
ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেডের আগ্রাবাদ শাখার কর্মকর্তারা বলেন, ‘গত ২১ জানুয়ারি ইসা বাদশার মালিকাধীন প্রতিষ্ঠানের নামে নেওয়া ঋণ খেলাপি হয়ে পড়ে। গত এক বছর তো তাদের সঙ্গে আমাদের কোনো যোগাযোগ নেই। আর এ পাওনা আদায়ে আইন অনুসারে বন্ধকিতে থাকা সম্পত্তি নিলামে বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছি। এ বিষয়ে আমাদের এমডি ভালো বলতে পারেন। তার সঙ্গে যোগাযোগ করুন।’
এ বিষয়ে জানার জন্য ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেডের এমডি আলী রেজা ইফতেখারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি পরিচয় জেনে মিটিংয়ে আছেন বলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। পরে কয়েক দফা চেষ্টা করলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। এসএমএস দিলেও তার কোনো উত্তর দেননি।
মিডল্যান্ড ব্যাংক লিমিটেড সূত্রে জানা যায়, ২০ মার্চ ২০১৩ সালে চতুর্থ প্রজšে§র একটি ব্যাংক হিসেবে যাত্রা করে মিডল্যান্ড ব্যাংক লিমিটেড। এ ব্যাংকের উদ্যোক্তা পরিচালক হিসেবে এককভাবে দুই কোটি দুই লাখ সাধারণ শেয়ার ধারণ করেন চট্টগ্রামভিত্তিক বাদশা শিল্পগ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ ইসা বাদশা, যা মোট শেয়ারের মধ্যে চার দশমিক ২১ শতাংশ। এছাড়া তার একটি প্রতিষ্ঠান আযান লিমিটেডের শূন্য দশমিক ৩৭ শতাংশ, বড় মেয়ে মুতাফিনা ইসার নামে শূন্য দশমিক ২১ শতাংশ ও ছোট মেয়ে মুমতাহিনা ইসার নামে শূন্য দশমিক ২১ শতাংশ শেয়ার আছে। অর্থাৎ ইসা ও তার অংশীজনদের নামে মোট ব্যাংকটির পাঁচ শতাংশ শেয়ার আছে।
এদিকে গত শনিবার সরেজমিনে জানা যায়, মোহাম্মদ ইসা বাদশার পারিবারিক মালিকানাধীন শিল্পগ্রুপ বাদশা। তার বাবা বাকলিয়ার বাসিন্দা মরহুম বাদশা মিয়া সওদাগরের উদ্যোগে ‘তালা মার্কা সাবান’ ব্যবসার মাধ্যমে এ গ্রুপের যাত্রা শুরু। পরে বিভিন্ন ধরনের ব্যবসায় আসেন প্রতিষ্ঠানের কর্ণধাররা। বর্তমানে এ গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে আযান লিমিটেড, এমএম ইন্টারপ্রাইজ, ঝুমা এন্টারপ্রাইজ, বাদশা অয়েল মিলস অ্যান্ড সোপ ফ্যাক্টরি ও মুসা অ্যান্ড ইসা ব্রাদার্স প্রভৃতি প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানের বাণিজ্যিক অফিস চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ এলাকার বাদশা মার্কেটের তৃতীয় তলায়। সেখানে বেশ কয়েকটি চেয়ার-টেবিল থাকলেও মাত্র একজন কর্মী অফিস করছেন।
পরিচয় দিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের ব্যবস্থাপক আছেন। উনি এলে তার সঙ্গে কথা বলবেন।’ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে জানা যায় তিনি আজ আসবেন না। মালিক পক্ষের লোকজন অফিসে আসেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, মাঝে মাঝে আসেন; তবে নিয়মিত নয়।’
একই এলাকার কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, ইসা বাদশা গত এক বছর ধরে দেশে নেই। শুনেছি ব্যাংকের সঙ্গে লেনদেন ভালো যাচ্ছে না। কারণ সাবান ব্যবসা থেকে হঠাৎ করে শিপব্রেকিং ব্যবসায় না বুঝে বিনিয়োগ করেন। এতে বেশ ভালোই লোকসান করেন। মনে হয় তিনি আর দেশে আসবেন না। তিনি পরিবার নিয়ে কানাডায় বসবাস করছেন।
ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯২ (২০১৮ সালে সংশোধিত) ১৭ ধারা অনুসারে, কোনো ব্যাংক পরিচালক যে ব্যাংকে ঋণখেলাপিতে পরিণত হন, সেই ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংককে অবহিত করে এবং বাংলাদেশ ব্যাংক খেলাপি পরিচালককে দুই মাসের মধ্যে ঋণ পরিশোধে নোটিস প্রদান করে। আর এ সময় ঋণ পরিশোধ করতে না পারলে পরিচালক পদ শূন্য হয়।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, ঋণখেলাপি হলে তো ব্যাংকের পরিচালক থাকার কথা নয়। বিষয়টির খোঁজ নেব। এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিদ্যমান ব্যাংক আইন অনুসারে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে মিডল্যান্ড ব্যাংক লিমিটেডের এভিপি ও প্রধান জনসংযোগ কর্মকর্তা রাশেদুল আলম বলেন, ‘চট্টগ্রামভিত্তিক বাদশা শিল্পগ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ ইসা বাদশা আমাদের একজন পরিচালক। যিনি নিয়মিত আমাদের বোর্ড মিটিংয়ে উপস্থিত থাকেন।’ কিন্তু গত এক বছর তো উনি দেশে ছিলেন না, তাহলে কীভাবে বোর্ড মিটিংয়ে উপস্থিত থাকেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চট্টগ্রামে থাকলে তখন তিনি মিটিংয়ে উপস্থিত থাকেন।
Posted ১০:২৭ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯
bankbimaarthonity.com | Sajeed